~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
বন্ধু চান্দু (কোম্পানী ছায়াছবির নায়ক বিবেক ওবেরয় নহে, বাস্তবেই উহার নাম চাঁদ) মনে হয় প্রেমে পড়িয়াছে। সে এক ভয়াবহ অবস্থা। বেচারা সারাক্ষন উদাস হইয়া থাকে। আড্ডায় বসিয়া ১৮+ গল্প আর রাজ্জ্যের খিস্তিখেউরের বদলে কলেজ মাঠে প্রজাপতির উড়াউড়িতে উহার মনযোগ বেশী আমাদের সঙ্গে থাকিয়াও যেন সে এইস্থানে নাই। কাহাতক আর সহ্য করা যায়।
একদা উহাকে ধরলা নাদীর পাড়ে তুলিয়া লইয়া গিয়া ভাঙ্গা একখানি নৌকার উপর বসাইয়া শুধাইলাম তাহার সমস্যা কি? সে শীতল মস্তিস্কে যাহা বলিয়া গেল তাহার সারমর্ম হইলো - সে তাহার কনিষ্ঠা ভগ্নীর প্রিয় বান্ধবীর প্রেমে পড়িয়াছে। ইঙ্গিতে তাহার ভগ্নী কইন্যাকে প্রেম সম্পর্কে তাহার দৃষ্টিভঙ্গি বর্ননা করিতে বলিলে কইন্যা বলিয়াছে যে প্রেমে তাহার অরুচী নাই, কিন্তু উহার এক দজ্জালনী জৌষ্ঠা ভগ্নী রহিয়াছে, যিনি প্রেম সম্পর্কে বড়ই কঠোর মনোভাব পোষন করেন, ও সদ্য অষ্টম শ্রেনীতে উত্তরন পাওয়া তাহার কনিষ্ঠাকে প্রেমের ভয়াবহ কুফল হইতে রক্ষায় সদা স্বচেষ্ঠ। কনিষ্টা যদি আনমনে বাদামওয়ালা অথবা রিক্সাওয়ালার পানেও কিছুক্ষন তাকাইয়া থাকে, তবুও তাহার সন্দেহের দৃষ্টিতে পড়িতে হয়
প্রিয় বন্ধুকে এই বিপদ হইতে রক্ষার মহান দায়িত্ব কাঁধে লইয়া আমরা ঝাপাইয়া পরিলাম। একেকজন এক এক রকম বুদ্ধি বাহির করিতে লাগিলো। পরে আমার দেয়া বুদ্ধিটিই সকলের মনে ধরিলো।
তাহা হইলো - কোন না কোন ভাবে প্রেম কইন্যার বড় ভগ্নীকে কাহারও প্রেমে ফেলিতে হইবে, যাহাতে সে ছোটটির ব্যাপারে আর নাক বা মাথা না গলায় কিন্তু সমস্যা হইয়া দাড়াইলো - উক্ত দজ্জালনীকে ভালবাসার জালে আটক করিবার সাহস কাহারও নাই সকলেই নানা কারন দেখাইয়া পিছাইয়া যাইতেছে, কিন্তু কেহই প্রকাশ করিতেছেনা যে সে ভীত এমতাবস্তায় এই অধম অসীম সাহসিকতার সহিত সবার সামনে শার্টের কলার তুলিয়া দিয়া, বুকের বোতাম একটা খুলিয়া মাস্তান মাস্তান ভাব ধরিবার লোভ কিছুতেই সম্বরন করিতে পারিলোনা। কইন্যা না দেখিয়াই নিজেকে উহার প্রেমিকের পদে নিযুক্ত করিয়া ফেলিয়া সেইদিন বন্ধু মহলে ব্যাপক আলোরনের সৃষ্টি করিলাম।
পরদিন মহা উৎসাহে জিন্স প্যান্টের ভিতরে ফুলহাতা শার্ট যথাসম্ভব গুজিয়া, ঢাকা হইতে সদ্য কেনা নতুন কেডস জোড়া পড়িয়া চকচকে নতুন হোন্ডা সিডিআই ১০০ বাইকে চাপিয়া কইন্যা দেখিতে গেলাম। কিন্তু চান্দু যখন আমাদিগকে কইন্যার বাড়ীর সামনে লইয়া গেল, তখন ভয়ে আমার কলিজা কাঁপিয়া উঠিলো কইন্যার পিতা আমার পিতার অধিনস্ত কর্মকর্তা যিনি দুর্ভাষী, রগচটা ও অত্যন্ত কঠিন প্রকৃতির মানুষ বলিয়া বিখ্যাত কিন্তু আমি ততক্ষনে বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়া পড়িয়াছি, বাহির হইতে খাঁচার দরজা বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াচে, কাজেই বাহির হইবার আর পথ নাই সামনে জলজ্যান্ত ছানাপোনা সমেত বাঘ এবং বাঘিনী, মাঝখানে অল্প কয়েক কদমের ব্যাবধান প্রান বুঝি যায় এইক্ষনে আমার
পরদিন সকাল ৬ ঘটিকায় মাতৃদেবীর আগমন আমার হোষ্টেলে, কহিলেন - "রেডী হয়ে নে, রংপুর যাবো, স্বপন মামা অসুস্থ"। অনিচ্ছা স্বত্বেও বাহির হইয়া দেখিলাম পিতার আফিসের বিশাল সাদা ল্যান্ড রোভার জীপখানি দাড়াইয়া রহিয়াছে, সুধাইলাম - "এইটা কেন? ছোট গাড়ী কই?" মাতৃদেবী কহিলেন সঙ্গে আরও কয়েকজন যাইবেন, উহাদের কাউনিয়া ষ্টেশনে ড্রপ করিয়া দিতে হইবে যাহাতে উহারা ট্রেন ধরিয়া ঢাকা যাইতে পারেন।
অতএব আমার অত্যান্ত অপছন্দের এই গাড়ীটিতেই চড়িয়া বসিলাম। দুই মিনিট পরে আমার হৃৎপিন্ডের স্পন্দন থামাইয়া দিয়া গাড়ীটি আমার হবু প্রেমিকার বাড়ীর সামনে আসিয়া দাড়াইলো ভয়ে কলিজা কাঁপিয়া যাওয়ার অনুভুতী পাইতে পাইতে দেখিলাম উক্ত বাড়ী হইতে একে একে কইন্যার পিতা মাতা ও দুই খানি কইন্যা বাহির হইয়া আসিলেন। উহাদের দেখিয়া আমার চক্ষু কোটর হইতে বাহির হইয়া আসিবার উপক্রম হইলো কারন কইন্যাদ্বয়ের বড়টিকে হাইস্কুল পড়ুয়া মনে হইলেও ছোটটি কোনভাবেই ক্লাস থ্রী বা ফোরের উপরে পড়ে না। তবে কি বন্ধু চান্দু এই শীশুটির প্রেমে পড়িল?
উহারা আসিয়া উহাদের বাক্সপেটরা গাড়িতে তুলিতে লাগিল। এমন সময় হঠাৎ ডাইরেক্ট মধ্যগগনে সুর্যদয়ের অনুভুতিতে বেকুব হইয়া আশেপাশে তাকাইয়া দেখিতে পাইলাম উহাদের বাড়ী হইতে এক অপরুপা তরুনী বাহির হইয়া আসিলো এবং কঠিন ভাবের সহিত সোজা গাড়ীতে উঠিয়া উপবেশন করিলো এক্ষনে আমি বুঝিলাম - এই সেই কইন্যা, আমি যাহার প্রেমে পতিত হইবো বলিয়া ষরযন্ত্র করিয়াছি মাতৃদেবীর আহবানে সম্বিত ফিরিয়া পাইয়া আগাইয়া গিয়ে শুনিলাম গাড়িতে লোক একজন বেশী হইয়া গিয়াছে।
উহাদের কাহাকেও ফেলিয়া রাখিয়া যাওয়া চলিবে না, এদিকে মাতৃদেবীরও আমাকে প্রয়োজন, উনার স্বপন মামার নিবাস আমি ছাড়া আর কেহ চিনেনা। কাজেই ঠিক হইলো ড্রাইভার সয়ং থাকিয়া যাইবে, আমি গাড়ী লইয়া যাইবো। এক্ষনে কইন্যাটিকে ড্রাইভারের পেছনের সিটে উপবিষ্ট দেখিয়া আনন্দে আপ্লুত হইলাম। যদিও আমি এই বেয়াড়া গাড়ীটিকে চালাইতে কখনই স্বাচ্ছন্দ বোধ করিনা, তথাপি আজিকের দিনে উহাই আমার সবচাইতে প্রিয় গাড়ীতে পরিনত হইল।
যাহা হউক, আমিও যথারিতি ভাবের সহিত গাড়ীতে উপবেশন করিয়া রিয়ারভিউ মিররে কইন্যার পরিবারের অস্বস্থি উপলব্ধি করিতে পারিলাম।
সফেদ গুম্ফপরিমন্ডিত চালকের বদলে এই পুঁচকা ছোড়া গাড়ী চালাইয়া লইয়া যাইবে ভাবিতে অনেকেরই সন্দেহ হইতে পারে। মাথায় শয়তানী খেলিয়া গেল যে প্রেম হউক আর না হউক, আজিকে উহাদের জানের ডর দেখাইয়া ছাড়িব শীতের ওই শান্ত সকালে আমি তীরবেগে গাড়ী লইয়া কুড়িগ্রাম শহর হইতে বাহির হইয়া আসিলাম।
ক্রমশ ...
আগের পর্বঃ
আমার প্রেমিকারা - চম্পা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - ইলোরা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - হুমায়রা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - জেনী পর্ব
আমার প্রেমিকারা - কাঁকন পর্ব
আমার প্রেমিকারা - লোপা পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।