আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাবি জাবি দিনলিপি............. শুধু কী-বোর্ডের সাথে যুদ্ধ করলাম, কি লিখলাম নিজেও জানিনা!!

পরাঞ্জয়ী...

গত কয়েকদিন যাবৎ মনের সাথে পালা করে শরীরটাও খারাপ হচ্ছে!! হৃদয় বাবাজী প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লাফায়, সাথে হাতের কব্জির নীচে যে রক্তের টানেল টা আছেন উনিও! এই দেখেই ডাক্তার সাহেব রা চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে বলেন "সংসার নেই, ছেলেপুলে নেই কিসের এত চিন্তা?" এগুলা মেডিকেলে পড়ার সময় মনে হয় ভাতের মাড় আর ঘাসের সব্জি খেত, আমি দূ:শ্চিন্তা করি আর আমি জানিনা? যাক সে সব। পরশু রাত থেকে ঠান্ডা জ্বর। সিজন চেইণ্জের জন্য মনে হয়। আজ সকাল থেকে জ্বর টা গেছিলো ঠান্ডার ভাবটা ছিল! রিয়াদ দুপূরে ১২ টার দিকে ফোন দিয়ে বললো ৩ টার দিকে রেডী হয়ে থাকতে। ওর কাজিন আদনান ভাই ইতালি থেকে এসছে, ওনার বার্থডে।

মনটা খুব পালাই পালাই করছিল কয়েকদিন ধরে। তাই মাকে অনেক করে ধরে সন্ধ্যার মধ্যে ফেরার কথা দিয়ে বের হলাম। ওনাদের বাসা নবীনগরে। আমি ঐ এলাকা ভাল চিনিনা। রিয়াদ গাড়ি এনেছিল।

ওকে ধীরে ড্রাইভ করতে বলে আমি জানলা দিয়ে দেখছিলাম আশেপাশে। শীতের আমেজটা শুরু হয়ে গেছে! ঝির ঝিরে ঠান্ডা বাতাসটা ভালোই লাগছিলো। মনটা অনেকদিনপর যেন হারিয়ে গেল। গান ধরলাম আমি আর রিয়াদ মিলে " আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইলো না কেহ".............. রিয়াদ ওর কাজিনের সাথে ডিসেম্বরে চলে যাবে। রুহি নেই, রিয়াদ থাকবে না আরেকজন চলে গেল পরশু রাতে।

আশেপাশে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সবাই। ভাল লাগেনা। ওনাদের বাসাটা নবীনগরের বাজার থেকে একটু ভেতরে। বাসায় গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড। ছোটখাটো পার্টি কিন্তু খুব সাবলীল! আদনান ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড কাম ফিয়ন্সে এলি (ইতালিয়ান) ও আসছে।

আদনান ভাই দেখেই চিনলো আমাকে। এলির সাথে কথা বললাম। জড়ানো ইংরেজীতে বললো "বাংলাদেশ তার খুব ভাল লেগেছে, মানুষগুলো খুব ইনোসেন্ত (টি কে ত উচ্চারন করছিলো)। ২০-২৫ জনের একটা গ্যাং। হালকা গোলাপী গাউনে এলি কে অপূর্ব লাগছিল! আসার পথে আইল্যান্ড থেকে কিছু ফুল ছিঁড়েছিলাম, ওগুলো আমার হাতে ডেখে নাম জানতে চাইলো, আমি নিজেো নাম জানিনা।

ওর কার্লি চুলগুলো একপাশে সরিয়ে যখন ফুল গুলো ক্লীপ দিয়ে আটকে দিলাম, কি যে খুশি হল!! আমি খালি মুগ্ধ হয়ে তাকাচ্ছিলাম ওর দিকে, চেহারাটায় কিসের যেন মায়া!! হালকা নাস্তা করে সবাই গল্প করছিলাম। আদনান ভাই পার্টিটা সরেস করার জন্য একটা মিউজিক অন করলো, ইন্সট্রুমেন্টাল। ফ্রেন্স হবে মনে হয়। এলি আর আদনান ভাই সালসা শুরু করলো। আমি বিস্মিত।

সেই তখন মাত্র ক্লাশ ফাইভে পড়ি, বড় দাদু প্যারিস গেল তার কালচারাল টিম কে নিয়ে। আসার সময় আমার জন্য নিয়ে আসলো কিছু সালসার ভিডিও। ওডিসি ডান্সে আমার অনেক আগ্রহ ছিল। কিন্তু সালসার খোঁজ মফস্বলের একটা মেয়ে আমি তখনও পাইনি। কি সুন্দর বডি ব্যালান্স, কন্ট্রোল।

আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। ঘরে দরজা দিয়ে ভঙ্গিমা গুলো আয়ত্ব করার চেষ্টা করতাম। অনেক বছরের চেষ্টায় যদিও পারলাম তখন হল পার্টনার ক্রাইসিস!! আজ ওদেরকে দেখে মনে হল "পেয়েছি!!!" রিয়াদ ওদেরকে বললো আমার সালসা প্রিতীর কথা! আদনান ভাই হাত বাড়ালো, আমার শরীরে একট চমক খেললো, সালসা আমার প্যাশন, আজ সূযোগ পেলাম!! আদনান ভাই অসম্ভব ভালো নাচে! এলি নাচ শেষে এসে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। তার ধারনা ছিল বাংলাদেশে ওডিসি ডান্স ছাড়া অন্য কোন নাচের চর্চা খুব বেশি নেই। এলির বাবা নেই, মা অন্য যায়গায় বিয়ে করেছে।

সে তার দাদুর সাথে থাকে। খুব মায়াময় চেহারা। আদনান ভাইয়ার মায়ের আদর পেয়ে মেয়েটা থেকে যেতে চায় বাংলাদেশে। আন্টির মাঝে সে সব বাংলাদেশিদের খুঁজে পেয়েছে। তার ধারনা বাংলাদেশের সব মানুষই আন্টির মত।

একটু আগে ফিরলাম! খুব ভাল্লাগছে। এলির কথা খুব মনে পড়ছে। অধিকাংশ মানুষ ইদানীং শুধু পালাতে চায়, পালিয়ে থাকতে চায়। জীবন থেকে, দেশ থেকে, কাছের মানুষগুলো থেকে। এলি চায় ওর দেশ থেকে পালাতে, আর আমি চাই আমারটা থেকে! আসলে এই পালানো কি নিজের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা? নিজের থেকে কি পালানো যায়? পাঠকদের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি পারলে মাফ করবেন।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।