আমার ‘শাদা প্রজাপতি’ পাঠানুভূতি এবং শরিফ খোকন- এর ‘শাদা প্রজাপতি’
শাদা প্রজাপতি
এহসান হাবীব
প্রকাশক: পাঁচিল
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৯
১
কতগুলো ‘শাদা প্রজাপতি’ এনে টেবিলে রেখেছিল কমল। একটি টেনে নিয়ে চোখ বুলালাম। একটি কবিতাও পড়িনি তখন। কমলকে বলেছিলাম – আমাকে একটা ‘শাদা প্রজাপতি’ দিও। অনেক দিন পর কমলের কাছ থেকেই কিনে আনি ‘শাদা প্রজাপতি’।
কারণ চোখ আটকেছিল ‘অন্ধকার’ কবিতাটি।
‘অন্ধকারে কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না
এককাঠি চুরুট, একবাক্স দিয়াশলাই
শিশ্নের অগ্রভাগ, প্রিয় নাম, মুখ!’
মনে হলো আমাদের চারপাশের অন্ধকারের কথা। অথচ অন্ধকার ভালোবেসে সাধু বসে আছে হাতড়ালে ছুঁতে পারে পৃথিবীর মুখ। এরকম অদ্ভুত দ্বিমুখিতায় আমার মনে হয় কবি অন্ধকারকে নতুনভাবে দেখতে শেখায়।
‘আলো তো রঙের বাহার: মুখোশের কারসাজি,
নিয়েছি নকলের অমিত প্ররোচনা...’ (অন্ধকার ৩: শাদা প্রজাপতি)
২
৯ অক্টোবর, ২০০৯ তারিখে যুগান্তরের সাহিত্য সাময়িকীতে শরিফ খোকন এর ‘শাদা প্রজাপতির’ বুক রিভিউ পড়ে খুব ভাল লাগলো।
তবে তাঁর কয়েকটি মতের সাথে আমার মত মিল পড়েনি।
(‘আমার জন্য’ কবিতায় স্পষ্টই জানিয়েছেন, ‘নিজেকে খুশি করা ছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই। ’ এখানে কবির প্রিয়তমার গোয়ার্তুমিকে মেনে নিয়ে অকাল বৈধব্য বা উন্মুখ মানুষের মুখে থুতু ছিটিয়ে তারই পায়ের কাছে বসে থাকার আপসমূলক কাজ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। এসবও শুধু নিজেকে খুশি করার জন্য। কবিকে ছেড়ে যাওয়া শাদা প্রজাপতিটির জন্য মাতম করতেও অনুমতি দিয়েছেন তিনি।
যদি সে খুশি হয়। এ কবিতায় শাদা প্রজাপতির অর্থ বদলে গেছে। - শরফি খোকন)
শরিফ খোকন- এর সাথে এইখানটায় আমার মত মিলে না। কবি লিখেছেন-
‘গোর্য়াতুমিতে সুখ খুঁজে পাওয়া গেলে মেনে নেওয়া যাক-
অকাল বৈধব্য অথবা সদর স্ট্রিটে, পার্কে উন্মুখ মানুষের মুখে
ছিটিয়ে দেয়া যাক থুথু অথবা সারাটা দিন তোমার পায়ের কাছে
বসে থাকি। ...’
শরিফ খোকন মনে করছেন গোর্য়াতুমিটা প্রিয়তমার কিন্তু আমার মনে হয়েছে গোর্য়াতুমিটা কবির।
এই কবিতায় এবং অন্যান্য কবিতায় মনে হয়েছে- কবি আমাদের সমাজব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করার, আমাদের জীবনবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের অমিত সাহস দেখিয়েছেন। আর তাই আপসের প্রশ্নই আসে না।
‘হৃদগভীরে ঘাইমারা অনুভূতিগুলো’ কবিতায়-
‘.....তখন কী করে বুঝাই
অর্ধ-শিক্ষিত অধ্যাপিকার বকবকানি শুনার চেয়ে ছাত্রী হস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে টাঙ্কি মারা কত পুণ্যময় আর রিয়েলিস্টিক।
বাৎসায়ন জেনেছি আমি জনমের দোষে তাই থোড়াই কেয়ার ঐ অধ্যাপিকা-
গুরুজনে ভক্তি নেই, চোখ বিঁধে আছে সহপাঠিনীর স্তনে। ’
সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি এ যেন কবির বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন।
৩
‘শাদা প্রজাপতি’র ভাল লাগা কয়েকটি লাইন-
‘মেকাপের সমস্ত আয়োজন মুছে দিয়ে রাত নামলে
অন্ধও দেখে নেয় সকল সংক্রাম!’ (অন্ধকার:৩)
‘প্রতিটি কাচখণ্ড ধরে রাখে এক একটি পৃথিবী। ’ (কাচখণ্ড)
‘অন্ধকার ভালোবেসে সাধু বসে আছি
হাতড়ালে আমি ছুঁতে পারি পৃথিবীর মুখ। ’(অন্ধকার:১)
এবং আরো অনেক লাইন..............
৪
পরিশেষে কবি এহসান হাবীবকে ধন্যবাদ দশকের সেরা কাব্যগ্রন্থগুলোর একটি কাব্যগ্রন্থ উপহার দেয়ার জন্য- প্রতীক্ষায় আছি নতুন কবিতার, নতুন গ্রন্থের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।