সরকারের শেষ সময়ে এসে এক সময়ের এশিয়ার সর্ববৃহৎ বস্ত্রকল কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী মোহিনী মিল নিয়ে ফের নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মিলটির বিশাল ভূ-সম্পত্তির দিকে নজর পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার। ওই নেতাদের সহযোগিতায় মিলের যন্ত্রপাতিসহ প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ৪৮ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। মিলের শতাধিক বিঘা জমি এখন প্লট বানিয়ে বিক্রির পাঁয়তারা করছেন নেতারা। এ ব্যাপারে আন্দোলনে নেমেছে মোহিনী মিল রক্ষা পরিষদ।
জানা গেছে, দীর্ঘ ২২ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসলে খেলাপী ঋণ আদায়কারী প্রতিষ্ঠান দি পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস করপোরেশন (পিডিএসসি) লিমিটেড উদ্যোগী হয়ে ব্যাংকের দেনা পাওনা পরিশোধ ও মামলা মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করে দেবার শর্তে সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পিডিএসসি ও মিলের সাবেক মালিক পক্ষের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী মালিক পক্ষ মিলের উৎপাদিত সুতা বিক্রির টাকায় সরকার ও ব্যাংকের দায়-দেনা পরিশোধ, বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিক-কর্মচারীদেও বেতন-ভাতা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। এক পর্যায়ে ব্যাংক মিলের সাবেক মালিকের চুক্তি বাতিল করে পাওনা ২৫৮ কোটি টাকা আদায়ের জন্য তাগিদ দিলে মালিক পক্ষ মিলটিতে উৎপাদন বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়। ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অংশ হিসেবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের লিকুইডিশন সেল মিলের খেলাপি ঋণ আদায়কারী প্রতিষ্ঠান দি পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস করপোরেশনকে (পিডিএসসি) চিঠি দিয়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে মিল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে অনুরোধ জানান। পিডিএসসির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান ওই টাকা পরিশোধ করে ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিল পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নতুন যন্ত্রাংশ স্থাপন করে মিলের বিএমআরই (ব্যালেন্সিং মর্ডানাইজিং রিকনস্ট্রাকটিং ইঞ্জিনিয়ারিং) প্রকল্পটি চালু করে আবারও উৎপাদন শুরু করেন। মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, আগের মালিক নানান কারসাজি করে পিডিএসসির ওপর চাপ সৃষ্টি করায় মিলটি ফের বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় মিলটির তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ পিডিএসসিকে না জানিয়ে এবং কোনো দরপত্র আহ্বান না করেই গোপনে নামমাত্র মূল্যে আবারও মিলটি যমুনা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক আরিফুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। এদিকে মিল বিক্রির খবর পেয়ে পিডিএসসি লিমিটেড ৩ এপ্রিল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ত্রিপক্ষীয় চুক্তির শর্তানুযায়ী পিডিএসসির সঙ্গে আলোচনা না করে তাদের বিনিয়োগকৃত ৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ না করে মিল বিক্রি করা চুক্তির বরখেলাপ। প্রয়োজনে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন।
মোহিনী মিলের পুরনো শ্রমিক ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, দীর্ঘদিন পর মিল চালু হলেও মহল বিশেষের ষড়যন্ত্রে আবারও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শুনছি সরকার গোপনে ৪০০ কোটি টাকার মিলটি মাত্র ৪৮ কোটি বিক্রি করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত দুই নেতার সহযোগিতায় আরিফুর রহমান নামমাত্র দামে মিলটি গোপনে কিনেছেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা তার পার্টনার। নেতারা তাদের নামে না কিনে আরিফুর রহমানের নামে কিনেছেন। যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তারা এখানে প্লট বানিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য আওয়ামী লীগের ওই নেতারা ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
আরিফুর রহমান মিলটি ৪৮ কোটি টাকায় কেনার কথা স্বীকার করেছেন। মোহিনী মিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলী জানান, ৯৯ বিঘা সম্পত্তির ওপর গড়ে ওঠা দেশের বৃহৎ এই বস্ত্রকল মোহিনী মিলের সম্পত্তি নিয়ে ফের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তারা মিল কেনার নামে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।