জীবন অনেক দামী..কাজ প্রচুর...সময় কম।
আমাদের দেহ কেমন করে কাজ করে? কেমন তার জটিলতা ? কোথায় কোনটি থাকে? কার কাজ ই বা কি ? সহজভাবে তা নিয়ে খুব একটা লেখালেখি হয়েছে বলে মনে হয় না। ব্লগে তো নয়ই। অথচ প্রত্যেকেরই এই গাড়ি নিয়ে নিত্য কারবার। স্কুল-কলেজে biology না থাকা ব্লগার তো কম নয় বলেই ধারনা।
আবার biology তে Human biology নিয়ে খুব বিস্তারিত আলোচনা হয় না। শারীরবৃত্তীয় নানা খুটিনাটি, যা আমাদের অগোচরে সর্বক্ষন কাজ করে যাচ্ছে তার কিছু ধারনা দেবার চেষ্টায় এই পোষ্ট।
লেখাটাতে যেটা বেশী প্রচলিত বা সহজবোধ্য সেই term ই ব্যবহার করা হয়েছে, English বা বাংলা যেটাই হোক। অন্যটি প্রয়োজনে ব্রাকেটে দেয়া আছে। আর সহজবোধ্য করার জন্য technical details ও কিছুটা পরিহার করা হয়েছে।
Respiratory System (শ্বষন তন্ত্র)
প্রথমেই দেখা যাক শ্বাস-প্রশ্বাস কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা প্রতিবার প্রায় আধা লিটার(৫০০ মি.লি.) বাতাস নিঃশ্বাসে গ্রহন করি, আবার আধা লিটার বাতাস ছেড়েও দেই। প্রায় সকলেরই জানা আছে, নেওয়ার সময়ে অক্সিজেন এবং ছাড়ার সময়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। এভাবে মিনিটে স্বাভাবিক অবস্থায় ১২-১৮ বার শ্বাস-প্রশ্বাস চলে যা আমাদের মনের অজান্তেই চলতে থাকে। অর্থাৎ মিনিটে আমরা প্রায় ৬ লিটার বাতাস গ্রহন করে থাকি।
বায়ুমন্ডলে কিন্তু মাত্র ২১% অক্সিজেন। অবশিষ্ট সিংহভাগই নাইট্রোজেন। উদ্ভিদের প্রয়োজন তো আছেই (যা মূলতঃ এই নাইট্রোজেন) মানুষের জন্যও এটা ক্ষতিকর হোত যদি ২১% অক্সিজেনের বদলে বায়ুমন্ডল ১০০% অক্সিজেন দিয়ে পূর্ন থাকত।
এই অক্সিজেন নাকের ছিদ্র দিয়ে ঢোকার সময়ে নাকের পশম আবর্জনাকে কিছুটা filter করে, আরও ছোট ছোট ধুলিকনাকে filter করার জন্য আরেকটু অভ্যন্তরে শ্বাসনালীর গায়ে অতি সূক্ষ রোমের মত cilia থাকে। এসবের ফলে আবর্জনা বের করার জন্য সময়ে সময়ে যে হাচি দেয়া হয় তার গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৯৬৫ কি.মি. বা ৬০০ মাইল।
কাশির সময়েও এই গতিবেগে বাতাস বের করা হয়।
এরপর আরও খানিকটা পথ পাড়ি দিয়ে একদম ফুসফুস পর্যন্ত চলে যায় এই বাতাস। ফুসফুসে রয়েছে অসংখ্য বায়ু কুঠুরি বা alveoli। এই alveoli এর চারপাশের দেয়ালের অপর প্রান্তে জালের মত রক্তনালীর শাখা বিদ্যমান থাকে যার ফলে অক্সিজেন এই alveoli থেকে রক্তে মিশে যায়, অপরদিকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড রক্ত থেকে এই alveoli এ চলে আসে। লক্ষনীয় যে একই জায়গায় অক্সিজেন ফুসফুস থেকে রক্তে চলে যাচ্ছে অপরদিকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড রক্ত থেকে যাচ্ছে ফুসফুসে।
আবার এই অক্সিজেন রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের সাথে সংযুক্ত হয়ে যখন দেহের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র cell (কোষ) এর পাশ দিয়ে যায়, তখন কিন্তু অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের থেকে পৃথক হয়ে কোষের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। সেই সাথে cell থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড রক্তে মিশে যাচ্ছে ( হিমোগ্লোবিনের সাথে নয়)। এখানে জটিল কিছু প্রক্রিয়া কাজ করছে বলে এটা সম্ভব হচ্ছে। Pressure difference এবং অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে বলেই এ রকম খাপে খাপ ঘটনা ঘটে। আর ফুসফুসের যে পরিমান জায়গা জুড়ে এই গ্যাসীয় আদান প্রদান চলে তার আয়তন একটা প্রায় ১৮ফুট বাই ২০ফুট ঘরের সমান।
Cardiovascular (হৃদযন্ত্র) System
এখন জানা যাক আরেক গুরুত্বপূর্ন সিস্টেম রক্ত সরবরাহ এবং Heart এর কথা।
আমাদের হৃদপিন্ডে চারটি chamber আছে। দুইটি Ventricle দুইটি Atria.
হৃদপিন্ডের ডানদিকে উপরে থাকে Right atria তার নিচে Right Ventricle. সমস্ত শরীর থেকে দূষিত অর্থাৎ কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত এই Right atria তে এসে জমা হয়। Right atria বলা চলে একটা Collecting chamber. এখান থেকে রক্ত সাথে সাথে Right Ventricle এ পাঠিয়ে দেয়া হয়। Ventricle গুলোর পাম্প করার ক্ষমতা থাকে যা Atrium এর অতটা থাকে না।
Right Ventricle থেকে এই রক্ত একটা মোটা রক্তনালী (Artery) দিয়ে Lungs (ফুসফুসে) এ চলে যায়। Lungs এ গিয়ে এই রক্ত সমস্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে ছড়িয়ে পড়ে। রাজপথ যেমন ছোট রাস্তায়, তার পর আরেকটু ছোট রাস্তায় এরপর গলিতে ভাগ হয়ে যায়, Artery গুলোও ছোট হতে হতে সবশেষে Capillary –তে পরিনত হয়। এই অতিক্ষুদ্র Capillary, Lungs এর ক্ষুদ্রতম অংশ Alveoli এর চারপাশ ঘিরে অবস্থান করে এবং Alveoli থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে নেয় আর অক্সিজেন চালান করে দেয়।
অর্থাৎ সমস্ত শরীরের কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত Right atria সংগ্রহ করে ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয় যার ফলে রক্ত সেখানে গিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মুক্ত হয়ে অক্সিজেন এ ভরপুর হয়ে ফিরে আসে Left atrium এ।
এই Left atrium থেকে আবার Left Ventricle হয়ে সমস্ত শরীরে রক্ত পৌছে যায়। অক্সিজেনে পরিপূর্ন রক্ত পৌছে যায় মস্তিষ্কে, পাকস্থলী এবং অন্ত্রে (Intsetine) , কিডনীতে এবং অন্যান্য অঙ্গে, মাংসপেশীতে, ত্বকে। চোখে,নাকে,অস্থির জোড়ায় জোড়ায় (Joint) ও এই রক্ত পৌছে দেয় অক্সিজেন এবং আরো কিছু উপাদান (পুষ্টি) । এই ভাবে সমস্ত cell এর চারপাশ ঘিরে capillaryর network রক্ত চলাচল করে চলেছে। সমস্ত শরীরে যে পরিমান capillary আছে তার surface area একটা ফুটবল মাঠের সমান।
অর্থাৎ এত বিশাল জায়গা জূড়ে সে gas exchange করছে, খাদ্য আদান-প্রদান করছে।
এ কারনে হার্ট কিছুক্ষন বন্ধ থাকলেই এই রক্ত চলাচল তথা অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। প্রথমেই আক্রান্ত হয় মস্তিষ্ক। কয়েক সেকেন্ড অক্সিজেনের ঘাটতিতেই মস্তিষ্ক সাময়িক ভাবে বিকল হয়ে যায়, পরিনামে মানুষ অচেতন হয়ে পড়ে। আরো বেশীক্ষন এই ঘাটতি চলতে থাকলে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়, প্রানে বেচে গেলেও এই ঘাটতি আর পূরন হয় না।
হার্ট মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার (যেটা অনেকের কাছে মিনিটে ৭২ বার বলে জানা আছে) পাম্প করে সমস্ত শরীরে রক্ত সরবরাহ করে। কারো যদি ৬০ বার পাম্প করে, তবুও এটা যথেষ্ট আবার কারো ১০০ বার করলেও এটা স্বাভাবিক।
সাধারনতঃ ঘুমের সময়ে হৃদস্পন্দন কমে আসে আবার উত্তেজিত অবস্থায় এটা বেড়ে যায় কারন শরীরের চাহিদা বেড়ে যায়। যেমন জ্বরের সময়, অথবা দৌড়ের সময় মাংসপেশীতে অনেক রক্ত সরবরাহ করতে হয়। যারা ব্যয়াম করে অভ্যস্ত (athlete) তাদের স্বাভাবিক ভাবেই হৃদস্পন্দন কিছুটা কম থাকে কারন তাদের হার্টের মাংসপেশী কিছুটা সবল থাকে যার ফলে একবার পাম্পেই অনেকটা রক্ত পাঠিয়ে দেয়।
তবে গড়ে প্রতিবার হার্ট প্রায় ৭০ মি.লি. রক্ত পাম্প করে। এভাবে কারু হার্ট ৮৫ বার পাম্প করলে মিনিটে প্রায় ৬ লিটার রক্ত হার্ট থেকে সমস্ত শরীরে যাচ্ছে। চাহিদা বেড়ে গেলে হার্ট মিনিটে এমনকি ১৫০ বার পর্যন্ত পাম্প ও করে থাকে। অর্থাৎ চাহিদা অনুযায়ী যদি ১৫০ বার Heart Beat হতে থাকে তাহলে প্রায় ১০ লিটার রক্ত প্রতি মিনিটে হার্টের মধ্যে দিয়ে ঘুরতে থাকে। এই রক্ত কিন্তু একই রক্ত।
Total রক্তের পরিমান একই থাকছে ( ভিন্ন পরিস্থিতিতে সেটা যদিও বাড়ে)। অর্থাৎ একই রক্ত বারবার হার্ট হয়ে ফুসফুসে যাচ্ছে বেশী বেশী অক্সিজেন আনার জন্য। এই অবস্থায় নিঃশ্বাস ও ঘন হয়ে যায় বেশী অক্সিজেন ভিতরে পাঠিয়ে ভেতরের অতিরিক্ত জমে যাওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড দ্রুত খালি করার জন্য।
Blood Circulation System (রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র)
শরীরের মোট রক্তের পরিমান প্রায় ৫ লিটার। এর মধ্যে ৫৫% বা প্রায় ৩ লিটার জলীয় অংশ বাকী ৪৫% Cellular component বা কোষ।
রক্তের মধ্যে তিন ধরনের কোষ থাকে। Red Blood Cell / RBC বা লোহিত রক্ত কনিকা অক্সিজেন আদান প্রদান করে থাকে, রক্তে আরও দুই প্রকারের cell আছে। White Blood Cell/WBC (শ্বেত রক্তকনিকা) এবং Platelet (অনুচক্রিকা)। বলা বাহূল্য এদের মধ্যে RBC সবচেয়ে জরুরী কাজটি করে কিন্ত অন্যরাও গুরুত্বপূর্ন। WBC আমাদের শরীরের প্রহরীর ভূমিকা পালন করে, অর্থাৎ রোগজীবানু প্রবেশ করলে তাদের প্রতিহত করে (এই কাজের মধ্যেও অনেক আকর্ষনীয় দিক আছে)।
আর Platelet এর কাজ মূলতঃ রক্ত জমাট বাধা। যেমন রক্তনালী ছিড়ে গেলে Platelet আরো কিছু বাহিনীর সহায়তায় এটা আটকে দেয়।
RBC এর life span বা আয়ুষ্কাল ১২০ দিন বা চার মাস। এ কারনেই চার মাস পরপর রক্তদানের অনুমতি দেয়া হয়। যদিও যেই রক্ত দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে সব বয়সী RBC ই বিদ্যমান থাকে তবে ৪৫০ মি.লি. রক্ত দিলে শরীর সেটাকে পুষিয়ে নিতে সক্ষম।
পুরুষের দেহের ওজনের প্রায় ৬০% (মেয়েদের ওজনের ৭০%) জলীয় অংশ। অর্থাৎ ৬০ কেজি ওজনের একজন পুরুষের জলীয় অংশই ৩৬ কেজি।
WBC এর অবস্থা যা বলছিলাম; শরীরে Foreign body বা শত্রুবাহিনী ঢুকলে প্রথমে এদের মধ্যে একদল এগিয়ে আসে। এরা পারলে তো ভাল নইলে দ্বিতীয় সারির দল কে খবর দেয়, শত্রুর প্রকৃতি বর্ননা করে। দ্বিতীয় দল সেইভাবে প্রস্ততি নিয়ে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
এমনকি আরেকদল এই যুদ্ধক্ষেত্রের চারপাশ ঘিরে ফেলে যেন শত্রুবাহিনী খাদ্যের যোগান না পায়। এক পর্যায়ে কুপোকাত করে ফেলার পরও তার কাজ শেষ হয় না। সে একটা memory cell করে রাখে যেন পরবর্তীতে এ ধরনের শত্রু আসলে নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় সারা জীবন সে এই শত্রুকে মনে রাখে ( যেমন chicken pox এর জীবানু , যার ফলে একজনের দ্বিতীয়বার আর chicken pox হয়না, গুটিকয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া)। রক্ত বন্ধ করবার জন্যও এরকম কয়েক স্তরের ব্যবস্থা আছে।
Platelet এদের প্রধান বলা চলে। আর যে সমস্ত উপাদান একাজে নিয়োজিত তাদের মধ্যে কিছু Coagulation Factors রয়েছে যার বেশীরভাগ Liver থেকে তৈরী হয়। একারনে Liver এর রোগে ( Especially Cirrhosis) অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হয়ে থাকে যেহেতু রক্তকে জমাট রাখার উপাদান তৈরী হতে সমস্যা হয়।
আর একটি জিনিষ জানিয়ে প্রথম পর্ব শেষ করছি। রক্ত থেকে কোষে কোষে এই আদান প্রদান করার জন্য Blood Pressure একটা মূখ্য ভূমিকা রাখে।
বলাই বাহুল্য pressure যদি fall করে তবে পুরো সিস্টেম ই collapse করে যায়। তবে এর মধ্যেও গুরুত্ব অনুযায়ী শরীর আচরন করে থাকে। যেমন Brain যেহেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সেহেতু Brain এ রক্ত পৌছানোর জন্য শরীর সবচেয়ে সচেষ্ট থাকে। দরকার হলে লোড-শেডিং এর মত অন্য জায়গায় রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। শুরুতেই Skin এ বন্ধ করে দেয়, মাংসপেশীতে বন্ধ করে দেয়।
এরপর kidney তে বন্ধ করে দেয়। এজন্য দেখা যায় কারু ডায়রিয়া বা প্রচুর রক্তক্ষরন হলে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়, কিছু পরে প্রসাবও বন্ধ হয়ে যায়। Brain, Heart, Lungs এগুলোতে কিন্তু শেষ সময় পর্যন্ত রক্ত সরবরাহের চেষ্টা চলতে থাকে।
দ্বিতীয় পর্ব শরীরের যত কলকব্জা (২)
শেষ পর্ব শরীরের যত কলকব্জাঃ উপসংহার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।