মনের জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবনাগুলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখি। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ হয়ে, ঐ দূর দিগন্ত পানে...
একজনের সাথে কাল আলাপ হচ্ছিল। কথায় কথায় কথা উঠলো বাঙ্গালী বধূরা কেন তাদের সত্যিকারের স্কিন হাইড করে রাখে।
আমিঃ হাইড করে রাখে মানে?
সেঃ সাদা রঙে নিজেদের পেইন্ট করার কথা বলছি।
আমিঃ (ধুম করে বলে বসলাম) এই প্রথাতো যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
সেঃ (হেসে) মনে হয় না।
আমিঃ (নিজেকে হঠাৎ বোকা বোকা মনে হল। বুঝলাম সে কি বুঝাতে চাইছে। আগের কথার সাফাই গেয়ে বললাম) আমি বলতে চাইছিলাম সাদা রঙে হয়তো নয় কিন্তু হলুদ দিয়েতো করে আসছে।
সেঃ (তার আগের আগের কথার খেই ধরে বলতে লাগলো) আমার মা করেনি।
দাদী করেনি। এমনকি আমার ফুফুরাও করেনি। এটি খুবই নতুন এবং সাম্প্রতিক। ২০ এবং ৩০ এর কোঠায় যারা তারাই এর অনুরক্ত। তো এটা যদি তুমি প্রথা বলো আমি দ্বিমত পোষণ করবো।
আমিঃ এই পার্লারের যাওয়া এবং নিজেকে ডেকোরেট করাটা নতুন
সেঃ সেটায়! তো পার্লার কেন একি রঙে সাজায় না? এই ব্রাউন কালারে
আমিঃ (আমার আগের কথাটা তার গোচর হয়নি ভেবে আবার বললাম) আমি হলুদ দেওয়াকে বুঝাচ্ছিলাম। কিন্তু হ্যাঁ তোমার কথা ঠিক।
সেঃ আমার মনে হয় মানুষ inferior complex-এ ভুগে। তারা সাদা চামড়ার অধিকারী হতে চায়। তারা মনে করে এটি সৌন্দর্যের লক্ষণ।
এটি যদি স্রেফ একটি মহৎ অনুরক্তি হত তাইলে দেখা যত ১/৩ বধূরা সাদা রঙে সাজছে, আর ১/৩ বধূরা নিজেদের স্বাভাবিক স্কিন কালার পছন্দ করছে আর বাকী ১/৩ সাজছে কালো রঙে। বুঝানো গেল কি? কিন্তু দেখ এখন ৯৯.৯% বধূরাই সাদা রঙ পছন্দ করছে।
আমিঃ মানলাম
সেঃ এই অভ্যাস কালো রঙের মেয়েদের উপর এমন একটা অনুভূতি দাড় করাবে যে কালো রঙ আকাঙ্ক্ষণীয় নয়। এটি বরঞ্চ এমন কিছু যাতে তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। এ সৌন্দর্যের লক্ষণ নয়।
তাদের এই মনে হবে। কারণ দেখো পুরুষের সাথে বিবাহ হচ্ছে নারীর উর্বরা শক্তির, সৌন্দর্যের প্রতীক
আমিঃ তোমার কথায় যুক্তি আছে
সেঃ তারা হয়তো বর্ণবাদী নয়, কিন্তু তারা নিঃসন্দেহে সাদা গায়ের রঙ প্রমোট করছে। তারা কালো রঙধারীর চাইতে সাদা রঙধারীকে উচুঁ সম্মান দেয়। আমি এই দেখেছি।
আমিঃ (এই কথাগুলো নিয়ে সে আমার আগে আরেকজনের সাথে তর্ক করছিল।
জানতে চাইলাম) ___ তার মনোভাব কি এই বিষয়ে?
সেঃ ও মনে করে আমি অযথা বেশী বেশী ভাবি। কারণ আমি আমার কাজিনদের বিদ্রুপ করছিলাম। এ আমার একেবারেই অপছন্দ। আমি কেয়ার করিনা তারা আমার কাজিন বা অন্যকিছু কিন্তু এ আমি কিছুতেই ওভারলুক করতে পারিনা। আমি হয়তো তাও তাদের বিয়েতে যাব কিন্তু তাদের সাজসজ্জা দেখে আমার খুব সম্ভবত নাক মুখ চোখ উল্টিয়ে ভমি করার দশা হবে।
আমিঃ (হা হা হা করে হেসে উঠলাম)
সেঃ ...তারা হয়তো দেখতে অতুলনীয় রুপসী মনে হতে পারে কিন্তু পুরোটাই নকল। স্কিনকালার পেইন্ট করে মানুষকে সহজেই ধোঁকা দেয়া যায়। আমার পয়েন্টটা বুঝানো গেল?
আমিঃ জ্বী হ্যাঁ (এমন অকাট্য যুক্তির পর না বলি কি করে)
সেঃ ...আমার কোন সমস্যা থাকতো না যদি এটি ১/৩ হিসেবটা হত। কিন্তু তা নয়। তারা নিঃসন্দেহে inferior complex-এ ভুগে।
এই সাদা রঙে পেইন্ট করাটা নতুন অবশ্যই। কারণ আমি যখন আগেকার বিয়ের ছবিগুলো দেখি বাঙ্গালী বধূরা কাওকেতো ওমন করে রাঙাতে দেখলাম না।
আমিঃ তা ঠিক। আমি আমার কোন আন্টিকেও দেখলাম না এমন করতে।
সেঃ এটি আমার স্রেফ বিরক্তিই উৎপাদন করে।
মনে হয় যেন তারা পেছন দিকে চলছে। বিবাহ এখন এমন একটা প্রতিযোগীতা হয়ে গেছে। তারা মনে করে "ওহ তারা ওমন করেছে তাই আমিও করবো। যদি না করি তাইলে যথাযত এবং পূর্ণাঙ্গ বিবাহ মনে হবে না"। এটি শুধু ক্রমাগত নিরর্থক এবং জটিল হয়ে উঠছে।
আমিঃ কিন্তু একটি মধ্যভিত্ত পরিবারে যেখানে অধিকাংশই এরেঞ্জড ম্যারিজ হয় সেখানে বধূর ইচ্ছাটাই তো প্রধান নয়। সে নিজে হয়তো ওমন উদ্ভত করে না সাজতে চাইতে পারে কিন্তু তার গুরুজনেরা হয়তো তাকে বাধ্য করছে।
সেঃ আমার তা মনে হয়না। আমার কাজিনরা দুর্বল নয় (হেসে)। তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
আমিঃ আমি সাধারণ অর্থে বলছিলাম
সেঃ ওহ্ হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয়না। প্রধানত যখন তাদের মায়েরা এমন করে সাজার কথা ভাবেনি। আমার ধারণা গুটি কজন এমন করা শুরু করেছে আর বাকীরা তাদের কপি করতে শুরু করেছে
আমিঃ হুম
সেঃ ...আর শীঘ্রই সেটি স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত হয়ে উঠবে
(আলাপের মূল ভাবটা শুধু তুলে ধরলাম)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।