আমি নির্বাক হয়ে গেলে তোমার পতন অনিবার্য !
দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই। যেকোনও মূল্যে জাতীয়ভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখা যাবে। তাছাড়া যত কিছুই করা হোক না কেন, সাফল্য আসবে না।
দারিদ্র্যের করালগ্রাস থেকে সাধারণ মানুষও কোনওদিন মুক্তি পাবে না। এ কথা শতভাগ সত্য।
এবার আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য নিরসন দিবস ক্যাম্পেইন জাতীয় কমিটির স্লোগান ছিল ‘জাতীয় ঐক্য রুখবে দারিদ্র্য’। দারিদ্র্য নিরসনে এবারের স্লোগানটি বাস্তবিক অর্থেই সঠিক। জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ না হয়ে কোনওদিন দারিদ্র্য নিরসন করা সম্ভব নয়।
আশা ছিল এবার আমাদের দুই নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া দারিদ্র্য বিমোচন সম্মেলনে একই মঞ্চে উঠবেন। দারিদ্র্য নিরসন দিবসের দুই দিন আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট সরকারি ও বিরোধী দলের চিফ হুইপকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। স্পিকার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘একমঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীর দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বানের ক্ষণটি হবে অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। ’ স্পিকারের এই কথায় সারাদেশের সাধারণ মানুষের মনে আশারও সঞ্চার হয়েছিল। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীকে একমঞ্চে দেখতে।
কিন্তু সেই আশা ভঙ্গ হয়েছে। প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া একদিন পর গুলশানের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দারিদ্র্য বিমোচন সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর স্বপক্ষে তিনি কিছু যুক্তিও তুলে ধরেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্য নিরসনে সরকারের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে বিরোধী দলের তেমন কিছু করার নেই।
আর গত দশ মাসে বিএনপি এমন কোনও কর্মসূচিও দেয়নি যাতে উন্নয়ন ব্যাহত হয়। ’ এ কথা সত্য। দারিদ্র্য নিরসনে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। তাই বলে বিরোধী দলের ভূমিকাও কম নয়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে কাজের গতি আরও বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু সাধারণ মানুষ কোনও অজুহাত কিংবা যুক্তি শুনতে চায় না। তারা কাজের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। জন্মলাভ করার পর থেকেই এই দেশ দারিদ্র্যের করালগ্রাসে আক্রান্ত। বিশ্বের দরবারেও বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র ও দরিদ্র দেশ হিসাবে অধিক পরিচিত। আমাদের এই দারিদ্র্য নিরসনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
কিন্তু এই দেশ থেকে দরিদ্রতার মূলোৎপাটন তারা করতে পারেননি। এর কারণ হিসাবে একটি কথাই বলা যেতে পারে আমাদের জাতীয় ঐক্যের অভাব রয়েছে। রাজনীতিতে গণতন্ত্র চর্চার অভাব রয়েছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই দেশ চলে যায় সামরিক শাসকদের হাতে। আর বাকি সময়গুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহনশীল রাজনীতির অভাবে জাতি সামনের দিকে আশানুরূপ এগিয়ে যেতে পারেনি।
রাজনৈতিকভাবে আমাদের দেশে কখনও সরকারি দল ও বিরোধী দল কোনও জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। যার ফলে স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরেও দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর হয়নি।
সরকারের পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে ২০ হাজারেরও বেশি এনজিও কাজ করছে দারিদ্র্য নিরসনকে লক্ষ্য করে। কিন্তু তারপরও কেন আশানুরূপ কোনও সুফল আসছে না। কী উপায়ে দারিদ্র্যের করালগ্রাস থেকে জনগণ মুক্তি পাবে তার পরিপূর্ণ কোনও দিকনির্দেশনা নেই।
যতটুকু আছে তাও সঠিকভাবে মানা হয় না। খালি কথার ফুলঝুরি ছিটিয়ে লাভ নেই। হাতে-কলমে কাজ করে দেখানোর সময় এসেছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দারিদ্র্য বিমোচনের ঘোষণা দিয়েছে। তারা প্রতিটি পরিবার থেকে একজনের চাকরিতে নিয়োগকে দারিদ্র্য নিরসনের কৌশল হিসাবে উল্লেখ করেছিল।
কিন্তু পাঁচ বছর মেয়াদি সরকারের এক বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু এই নিয়োগের তেমন কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। জাতীয় দারিদ্র্যসীমা জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৬ কোটি মানুষ দরিদ্র। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ মানুষ মাত্রাতিরিক্ত অর্থনৈতিক দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে।
আর ১০ শতাংশ মানুষ দুবেলা বা এর চেয়ে কম খেয়ে দিন অতিবাহিত করে।
দারিদ্র্য বিমোচন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ওপরে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। ’ এ কথাও সত্য যে দুর্নীতি নির্মূল করতে না পারলে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব না।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যেকোনও মূল্যে দেশ থেকে দারিদ্র্য নিরসন করতে হবে।
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য নিরসনের ঘোষণা দিয়েছে। শুধু কথা নয় সেই অনুযায়ী কাজেও অগ্রগতি হতে হবে। অন্য কিছু বাদ দিলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিরোধী দলকেও দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
(বি. দ্র. লেখাটি চলতি সংখ্যা সাপ্তাহিক ২০০০ এ প্রকাশিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।