সুরঞ্জনা, বলো নাকো কথা ঐ যুবকের সাথে.. :)
জুনের এক দুপুর ।
উত্তরার জসিমউদ্দিন রোডে রিক্সা থামিয়ে আমি আর আমার রিক্সাওয়ালা রাস্তার পাশের লেবুর শরবত খাচ্ছি।
হঠাৎই "আরে অনন্ত ভাই ই ই " বলে কেউ একজন গায়ে বাইক একটা প্রায় তুলেই দিলো, ডানে ডাইভ দিয়ে তবে রহ্মা ।
"হে হে , চিনতে পারছেন ?"
হেলমেট খোলার পর চেনা গেলো , এখানকার ফ্রেন্ড সার্কেলের এক পরিচিত বড় ভাই ।
" আপনার তো খোজই নাই, হে হে ",
জবাবে আমি শুকনো হাসি হেসে অবশিষ্ট শরবতের দিকে মনযোগ দিলাম ।
আমার খোজ ওনার কাছে না থাকার কারনটা উনি নিজেই। মহাচালবাজ লোক, কাকে কাকে ধরে টরে একবার একটা কলসেন্টার দিয়ে বসেছিলো। অল্প বয়েসী কিছু ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্টদের যোগাড় করে এজেন্ট সাজিয়ে বসিয়েও দিলো । আমাকে মহাজোরাজুরী করে নিয়ে গেলো ওদের ট্রেনিং দিতে আর বেসিক কিছু প্রোগ্রামিং করে দিতে । গিয়ে দেখি আসলে কলসেন্টারের আড়ালে অবৈধ্য ভিওআইপির ব্যবসা করার ইচ্ছা।
"এইটাতো ভাই লিগাল না । " আমি ভয়ে ভয়ে বল্লাম ।
সে হেসেই বাচে না, "আরে ভাই ব্যাপার না, সস্তায় বিদেশী ফোন করার ব্যাপক ডিমান্ড এই উত্তরায় । আপনেরেও পার্টনার কইরা নেই, কি বলেন ?"
সেদিন থেকে এই দিকে আসাই বন্ধ করে দিলাম , এর ফোন নাম্বারও চলে গেলো ব্লক লিস্টে ।
"রোদে রোদে ঘুইরা আপনের একি চেহারা হইছে, এহ হে !"
চুকচুক করতে করতে উনি ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে লাগলেন ,
আমি আমার খোচা খোচা দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে উদাস চোখে বিলবোর্ডের মেহজাবিনকে দেখতে থাকলাম ।
ভদ্রলোকের চেহারার সাথে প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্নের কোথায় যেনো মিল আছে, প্লাক করা উদ্ভট ভুরুতে নাকি মুখের চকচকে ভাবটাতে ঠিক জানিনা । আমি আরেক গ্লাস শরবত দিতে বল্লাম ।
উনি নাক শিটকালেন এবার , "কি খাইতেছেন্? এগুলা কি ভালো?"
" জি না, ভালো না। পানিটা ওয়াসার , মিষ্টি করার জন্য স্যাকারিন দেয়, লেবুগুলা বাজারের না বিক্রি হওয়া বাতিল, রাস্তার ওপরেই বসে আছে বলে ধুলাবালিও প্রচুর । "
-"তাইলে খাইতেছেন কেনো? ওই তো ওই দিকে জ্যুসের দোকান দেখা যায়, এসি ওয়ালা।
"
" মজা লাগে এই জন্যে খাই। আমরা এমনই, যা একবার ভালো লাগে তার হাজার দোষ থাকলেও সেইটাই ভালো লাগে, চট করে মন চেইঞ করতে পারি না। রাস্তার ধুলায় কিছু একটা মশলা আছে, টেস্টটা অন্যরকম করে দেয় । "
কাছের দোকানটায় টিভিতে খবর হচ্ছে, ক্রন্দনরত অনুতপ্ত আশরাফুল আর তাকে ঘিরে থাকে সাংবাদিকের দল ।
"আশরাফুল আসলেই টাকা খাইয়া ম্যাচ হারছে?"
"হুম , তাই তো শুনি ।
"
"কারনটা কি? ওর কি টাকার অভাব ছিলো?"
"অভাব না, স্বভাব । আমাদের স্বভাব হোলো অখাদ্য খাওয়া। ফেসবুকের মধ্যে পর্যন্ত একদল নাকি কাঠাল পাতা খায়, আরেকদল ঘাসপাতা খায়। ইদানিং সবাই সবার স্ট্যাটাসও খাইতেছে। " আমি আমার হাতের শরবতে চুমুক দিলাম ।
" স্যান্ডেল দিয়া বাইরানো দরকার এই আশরাফুলরে। "
আমি হাসলাম, " শোনেন , আশরাফুল টাকা যেমন খেয়েছে, তেমন একটা নতুন জিনিস ও দেখিয়েছে। ও দোষ স্বীকার করে হ্মমা চেয়েছে। তাতে দোষ মাফ হয় নাই, কিন্তু হ্মমা চাওয়াটাও সহজ ব্যাপার না। কত মন্ত্রীর কালো বিড়াল বের হলো, সংসদে মিথ্যা বললো, সিএনএন হাসাহাসি করলো , কেউতো স্বীকার করলো না যে ভুল করেছি।
ও এটা করেছে, সে জন্যে ও অন্তত গালাগালি থেকে মাফ পেতে পারে নাকি?"
সরবতের গেলাসে শেষ চুমুক দিয়ে গলন্ত পিচে আকাশের প্রতিবিম্ব দেখতে থাকি ।
"হুম্" কি যেনো ভাবলেন ." আমাকেও একগ্লাস দ্যান দেখি। "
"শোনেন্" আমি বল্লাম্," আমিও আপনার কাছে হ্মমাপ্রার্থী। না বলে আপনার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা ঠিক হয়নাই, আমার ব্যাখ্যা করা উচিত ছিলো। দেখেন এই জিনিসটা আমাকে আশরাফুল শিখাইলো ।
"
" আমি ওই বিজনেসে আর নাই, কিন্তু আপনি রাজি থাকলে আবার শুরু করতে পারি, এবার একটু অন্যভাবে....."
" আমি রাজি না। আপনার সাথে কোনো ব্যাপারেই আমি নাই, কারন আমি আপনার টাইপের লোক না। দেখেন এই ‘না ‘বলতে পারাটা আশরাফুল আমার কাছ থেকে শিখতে পারতো। ঠিক সময়ে না বলতে পারলে আজ আর এই অবস্থা হয় না। "
জৈষ্ঠের রোদে ঝকমক করছে তখন পল্লীকবির ম্যুরল ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।