আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কখনো কোন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথাও বলিনি। যতদূর মনে পড়ে, একবার একটি লোক এসে আমার কাছে টাকা চেয়েছিল। তাঁর হাতে বাধাই করা পত্রিকার একটি প্রতিবেদন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
আজ ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন। তাঁর জীবন বাজি রেখে অর্জিত স্বাধীন দেশে তিনি নিজেই পরাধীন।
ঘটনা বেশ কয়েক বছর আগের। তখন বয়স কম ছিল। ১০-১৫ মিনিট ঘটনাটি নিয়ে চিন্তা করে ভুলে গিয়েছিলাম।
কিন্তু আজও মনে পড়ে আমার সেই ঘটনাটি। তাঁর অভিমানের দু’চোখ, ছেঁড়া শার্টের ভেতর থেকে চিৎকার করে বের হয়ে থাকা পাঁজড়ের হাড় এবং নীরব আর্তনাদে নির্লিপ্ত হয়ে থাকা তার চাহুনি – আমি ভুলিনি। ভুলব না। এটাই কি বাঙলাদেশ? সেই সোনার বাঙলা, যাকে আমি ভালবাসি?
৩৮ বছর পার হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার। অনেক না পাওয়ার মধ্যেও সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো আমাদের বাঙালীত্ব, অপরাধীনতা এবং ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ধর্ষিত ও রক্তাক্ত বিরাণভূমি।
যাদের জন্য আমি এবং তুমি বাঙালী, যাদের জন্য আমরা আজ ভারি বুটের শব্দহীন রাস্তা ধরে হাঁটতে পারছি, যাদের জন্য তুমি আর আমি পারছি একে অপরের হাত ধরে অন্য এক ভুবনে ঘুরতে, তাঁদেরকে আমরা কি দিতে পেরেছি, গুটিকয়েক পত্রিকার প্রতিবেদন ছাড়া – যা দিয়ে তাঁরা দু’মুঠো ভাত বন্দোবস্ত করতে পারে?
তাঁদের ক্রন্দনহীন চোখ আমাকে লজ্জা দেয়। আমি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি না এই সোনার মাটিতে। আমার মনে হতে থাকে এই মাটি আমাকে দু’পাশ থেকে গ্রাস করে ফেলবে। আমাকে বিলীন করে ফেলবে। শত শত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টুকরা কণা করে আমাকে আকাশের দিকে ছুঁড়ে ফেলবে।
প্রত্যাখ্যান করবে আমাকে তার দেহ থেকে।
এই লেখাটি এক অর্থে আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই না। বিগত ৩৮ বছরে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের হারিয়ে ফেলেছি। তাঁদের বিদেহী আত্মা আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে – করুণা করে, আমাদের অকৃতজ্ঞতাকে।
অমর হয়ে থাকুক স্বাধীনতাযোদ্ধারা।
আমি তাঁদের আজ স্মরণ করছি অসীম শ্রদ্ধা নিয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।