সময় হয়েছে আজ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠার; দৃপ্ত শপথ করে সম্মুখে পা ফেলে ছুটে চলার চিরন্তন সত্য ও সুন্দরের পথে......
বর্ষাকাল থেকেই আলাপচারিতায় মুখর গ্রামটি। পরিবারের ছোটছোট ছেলেমেয়েরাও নিজ নিজ আকাঙ্খার কথা ব্যক্ত করছে। সাথীদের সাথে। সারাদিন মাছ ধরার পর বিকেলে বাজারে সেই মাছ বিক্রি করে কিছু টাকা দিয়ে খাদ্যের ব্যবস্থা করা আর বাকি টাকাগুলো সোনালী স্বপ্নে'র জন্য জমিয়ে রাখা।
দিন কাটতে লাগলো।
চলে গেলো বর্ষা। মাছ ধরার সময় প্রায় শেষ বললেই চলে। কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন স্থানে উপার্জনের জন্য চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ শাকসবজি চাষের চিন্তা করছে। যে যার মতো করে দিনাতিপাতের চেষ্টায়ই ব্যস্ত।
আর প্রত্যেকেরই স্বপ্ন প্রায় অভিন্ন। শরতের আকাশখানি বেশ ঝলমলে। ছেলেমেয়েরা তাদের খেলাধুলায় মগ্ন। কেটে যাচ্ছে দিন। এগিয়ে আসছে প্রতিক্ষীত সময়।
চলে আসলো হেমন্ত। সবার ব্যস্ততা যেন বেড়ে গেছে। সবাই ধান পানিতে ভিজিয়ে রাখছে। কারো কারো বীজে অংকুর দেখা দিচ্ছে। হাওড়ে সবাই বীজ বপন করার জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজায় ব্যস্ত।
কেউ কেউ দুর্বা ঘাসে ঢাকা স্থানেই বীজ বপন করছে ঘাসগুলি উপড়ে ফেলে। কেউ কেউ শক্ত মাটি কাদা করার জন্যে অনেক পথ হেঁটে নদী থেকে বালতি দিয়ে পানি আনছে। তৈরী করছে বীজতলা। বপন করছে বীজ।
কিছু দিন পর অংকুরগুলি সবুজ ঘাসে পরিণত হলো।
সার দিয়ে কৃষকরা পরিচর্যা করতে লাগলো। অপরদিকে চলতে লাগলো জমি তৈরীর কাজ। গরুওয়ালা গৃহস্থের যেন বিশ্রাম নেই! লাঙলের ফাল কঠিন মাটির বুক ভেদ করে এগিয়ে যায়। গরুগুলি একটু দাঁড়িয়ে গেলেই হালচাষীর কণ্ঠে রে রে রে রে রে....।
আর এইদিকে ধানের চারাগুলো জমিতে রোপনের উপযুক্ত হয়ে গেছে।
তাই ক্ষেতে বপন করায় সবাই ব্যস্ত। কিছুদিন পর বপন কাজ শেষ হয়ে এলো সবার। এবার সঠিক পরিচর্যার পালা। বাজারে লাইনে দাঁড়িয়ে কৃষকরা সার কিনছে। আর মুনাফাখোরদের লোভী চোখ ক্রমান্বয়ে নির্দয় হয়ে যাচ্ছে।
বাড়িয়ে দিয়েছে সারের দাম। গরীব কৃষকদের টাকা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। অপরদিকে পকেট ভারী হচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীদের।
শীতের প্রকোপ ক্রমশই বাড়ছে। হাড়কাপুনি শীত উপক্ষা করেই কৃষকেরা জেগে উঠছে।
অন্যদিকে গৃহকত্রীও বসে নেই! ভোরে উঠে রান্নাবান্না শেষে স্বামীকে দুপুরের খাবারের পাত্র হাতে তুলে দিচ্ছে। আর কৃষক ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে এগিয়ে যাচ্ছে তার কর্মস্থলে তথা স্বপ্ন পরিচর্যায়। দুপুর গড়িয়ে এলো। কিকেলের সূর্যটা প্রায় নিভুনিভু। তাই সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফিরে এসেছে ঘরে। এবার গোসল সেরে ছেলে মেয়েকে নিয়ে উদও পূর্তি শেষে আবার নিদ্রায় এলিয়ে দিচ্ছে কান্ত দেহটা। অন্ধকারের ঘোর কমে যাচ্ছে। নিদ্রাকাতুর চোখের চাওয়া উপেক্ষা করে জেগে উঠছে কৃষক তাদের কর্মস্থলে তথা যাকে কেন্দ্র করে তাদের লালিত স্বপ্ন সেই স্থলে যাবার জন্যে।
গল্পঃ সোনালী স্বপ্ন ও বীভৎস বাস্তবতা: পর্ব-২ (শেষ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।