আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমার ঘেন্নার থুথুতে এবার যদি আমার সুস্থ্যতা মেলে!

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

ফারহানাকে জিয়া উদ্যানে নিয়ে যাবার পর কত গুলো মেয়েলি আবদারের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। না কিছু খেতে চায়নি, সাধলেও খাবেনা। স্বেচ্ছা, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে জোরা জুরি করবার লোক আমি নই। পকেটে নতুন মাসের বেতন, কিছু একটা কেনার জন্য মানবীয়ভাবে মনটা খচ খচ করছিল। -তা বলো কী বলবে? পড়াশোনা কেমন চলছে? বাচাল প্রজাতির মানুষ গুলো ঠিক এ সময়ে এসে ভীষণ আড়ষ্ঠ হয়ে পড়ে, কিছু মাত্র বলবার বা প্রশ্ন করার কৌতূহল হারিয়ে ফেলে।

-তুমি বলো! তোমার জীবনের গল্প শোনাও! আমি জানি জ্ঞান গল্প করতে গেলে ঘুমিয়ে পড়বে আর জীবন নিয়ে কথা বলতে গেলে সহসাই তর্ক বেধে যাবে। আপাত কোন বুদ্ধি না পেয়ে অন্যদিকে আনমনে তাকিয়ে থাকবার ভান করতে থাকলাম , সেই বরং ফিরে আসুক তার সহজ-বাচাল ভাব নিয়ে। হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে, -কেমন আছো? কেমন ছিলে এদিন? ফালতু প্রশ্নের জবাব দিবার ফাকে স্মৃতি হাতড়ে কিছু পুরনো কাজের দিন তারিখ গুলো স্মরণ করতে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সামনে বক বক করার বিষয়ের অভাব হয়না। প্রযুক্তির যাদুতে সম্মোহিত মুখ ও প্রশ্ন পেতে বরাবরই ভাল লাগে।

কিন্তু ফারহানা তো আমার ছাত্রী নয়। -এই তো ছিলাম ,যেমন থাকে ছা পোষা চাকুরিজীবীরা। জড়তার পর্ব কাটাতে নিজের জীবনের অনুসন্ধানী প্রশ্ন গুলো হালকা মেয়েলি চালে করতে থাকি। তার স্বপ্ন চাওয়া একটাই, নিরীহ- ভাল মনের পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজন। চশমাটা খুলে পাল্টা প্রশ্ন করি, -ডু ইউ নো, আই এ্যাম আন্ডার মেডিকেইশান ফর মাই পারপেচুয়াল ইনসেইনিটি? আই বিলিভ ইউ আর বিসাইড এ রং পারসন, ওয়েস্টিং ইউর টাইম এন্ড টেইস্ট! বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ফারহানা শুদ্ধ বাংলায় বলল, - আমি জানি তুমি পাগলামির ভান করো, তোমাকে আমার কখনই ক্রেইজি মনে হয়নি।

এরপর সময় ও কথার হাত ধরে সম্পর্কের দূরত্ব কমতে থাকে। নিজের ভাল লাগাটা যোগাযোগের আগ্রহ প্রকাশ করেই দেখাতাম, অন্য কৌশলে নয়। চেহারাটা তার বলকান মেয়েদের মত ধারাল, কিন্তু ককেশীয়দের মত উজ্জ্বল। বোহেমিয়ান হিসেবে সংসার ধর্ম পালনের স্বপ্নটা তখনও দেখা হতনা। তবে তাকে একটি বারের মত স্পর্শ করার ধৃষ্টতা দেখাইনি।

হয়তবা এ কারণেই ক্ষীণকায়, কৃষ্ণকায় নিম্ন মধ্যবিত্তের এক অসুস্থ্য যুবকের ব্যাপারে একান্ত আগ্রহ দেখাত। বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষে ওঠার পর থেকে সম্পর্ক রক্ষার ধরনটা বদলে যায়। ঢাকায় বাসা হবার সুবাদে রান্না ঘরে ঢুকে দু'চার পদ রেধে লুকিয়ে আমার হাতে পৌছে দেয়ার পুরনো অভ্যেসও আর নেই। রান্না ভক্তির চাইতে মানবিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতাম। নচেৎ হোটেল থেকে ২০ টাকার হালিম এনে চারটা ভাত দিয়ে খেয়ে রাতে ঘুমের কোন ব্যাঘাত হতনা।

দু'বছর বাদে সেই জিয়া উদ্যান, কিন্তু অন্য কোন স্পটে। বাস্তবতা বুঝে কারো মুখে কোন কথা নেই, শুধুই সেই পুরনো দূরত্ব রেখে পাশাপাশি বসে থাকা। -আমি হাপিয়ে উঠছি, আমার কিছু ভাল লাগেনা, মরে যেতে ইচ্ছে করে.... -আমার তো অভিযোগ নেই, ফারহানা। সংসার ধর্ম অনুযায়ী সম্পর্ক পোক্ত করার জন্য পারিবারিক, সামাজিক ও 'আব্বু-আম্মু' গত প্রতিবন্ধকতার জটিলতা আমাকে এলোমেলো ভাষায় বোঝাতে থাকে সে। -বাঁচার ক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাঁচতে শিখো ফারহানা, আমি কোন প্রেমান্ধ মানবী বা আব্বু-আম্মু বাধা পরজীবী হতে বলিনা তোমাকে।

-আমাকে ভুল বুঝোনা...তোমাকে আমার সারা জীবন মনে থাকবে.... এরপর মেয়েদের চোখের পানি ফেলার সহজাত ও মৌলিক অধিকার থেকে বাড়তি কোন আবেগ, অপরাধবোধ ও দুঃখবোধের অনুভূতি সঞ্চয় করতে পারলামনা। কেইস স্টাডির ধুলো জমা নথি ঘেটে বের করলাম, তার এ যাবত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার ভূমিকা ছিল 'দেহ রক্ষীর' মতই। দৃশ্যত সম্পর্কে জড়ানো মানবীরা পরপুরুষের আগ্রহের দৃষ্টি ও উৎপাত থেকে নিরাপদ থাকে। ভেঙ্গে যাবার পিছনে একদিনের সাজানো ঘটনার ময়না তদন্তের ফলাফলটাও মাথায় ছিল। তাকে আমি আমার মতই শিক্ষকতার পেশায় দেখতে চেয়েছিলাম।

তার আগ্রহ রঙ্গিন কর্পোরেট জগৎ। আমার অপছন্দের ব্যাপারটি জেনেই সেদিন উস্কে আমার ধৈর্য্য, মেজাজ ও মানসিক সুস্থ্যতার চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়েছিল। পকেট হাতড়ে ডিপ্রেশনের পিল গুলো বের করার আগেই, মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় কথা গুলো। আমার মানসিক রোগ ধরে ফেলার গোপন উৎসাহে থুথু ছিটানোর ভঙ্গিতে কথা গুলো আমাকে শোনাল, -ছি! সো সিক ইউ আর! তোমার মত অসুস্থ জীবের সাথে কথা বলেছি ভেবে ঘেন্নায় আমার গা রি রি করছে..... আই হেইট ইউ....... ভাষা প্রকাশের আকস্মিকতায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম, আপত্তিকর কথা গুলো তাকে নাও বললে পারতাম, যেখানে ভবিষ্যত সম্পর্কের কোন শর্ত, দায়, প্রতিশ্রতি নেই সেখানে ব্যক্তি অধিকারে বল প্রয়োগ তো মানায় না। তাহলে কী কোন দুর্বল মুহূর্তে অধিকারের সম্পর্ক গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম আমি? দুঃখ প্রকাশের প্রতি উত্তরটা ছিল ভয়ংকর রকমের রূঢ়, যেটি আমার অপরাধের কথাই আবার স্মরণ করিয়ে দিল ঘেন্নার থুথু সমেত।

নিজের অযোগ্যতা আর অপরাধবোধ থেকে সম্পর্ক জোড়া লাগানোর কোন সাহস পাইনি। শী ডিজার্ভড টু শো হার ব্যাক। এন্ড আই ওযাজ লেফট এলোন টু পন্ডার এন্ড হিল মাই ইনসেইন এন্ড রিমোর্সফুল স্পিরিট স্মিয়ার্ড বাই হার স্পাইটফুল স্পিট। কফির মগে চুমুক দিয়ে জানালার ধারে দাড়িয়ে এখন সুস্থ্য মানুষের গান শুনি, হয়ত কোন স্বপ্নবাজ আশাবাদী মানবী "সুস্থ্য পুরুষে"র সন্ধানে এমন গান শুনে, গান গায়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.