দৃশ্য শিকারের বন্দুক
যোগসূত্র
এক স্কুলমেট হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলো—
বন্ধু, তোর ওজন এখন কত কেজি?
এ প্রসঙ্গে আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম—
বন্ধু, আমার জুতাই কেবল সঠিক ওজন বলতে পারে এখন
স্কুলমেট পায়ের দিকে তাকালে আমার একটা জুতা বলে ওঠলো—
আমাকে হাতে নিলে অন্যটারও ওজন বুঝতে পারবেন
আর দুটোকে যোগ করলেই আপনার মনে হবে—
অংক অনেকদিন না করলে মানুষ কত সহজে সূত্র ভুলে যায়!
ছায়া
ছায়া ওয়াটারপ্রুফ।
এত ঝাপাঝাপি করেছি, ছায়ার সর্দি হয়নি, জ্বর হয়নি;
ওকে ঈর্ষা করে করে এত বড় হয়েছি। একদিন—
ওকে আমি বাঁচাতে পারিনি।
রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আমি সরে দাঁড়ালেও
আমার ছায়ার উপর দিয়ে চলে গেছে ট্রাক।
ঘুম ছাড়া, অন্ধকার ছাড়া, হাঁটতে এখন বিব্রতবোধ করি।
ছায়া নেই, ছায়াহীন, ঈর্ষাহীন জীবন নিয়ে
আয়নার সামনে অর্ধেক প্রতিবিম্ব হয়ে আছি।
জলদি আসিস
ভরা কলসির জলকে যে তাই সাক্ষী মানতে সন্দেহ হয়
আবার যা–লো ঘরের লক্ষèী চাঁদের হাটে, সাক্ষি চাই না
জলদি আসিস, জলদি আসিস
কী-যে ভাবি কেন ভাবি বাদসাধিস না
পরের গ্রহের সিঁদেল পথে আর বাড়িস না
কালির মাথার দিব্যি খেয়ে কসম দিস না
জলদি আসিস
জলদি আসিস পরের গ্রহের লক্ষèী আমার মুখ লুকিয়ে
জলদি আসিস হৃদয় ঘষে শরীর নেব ছোবল দিয়ে
জলদি আসিস শীতল জলে øান করিবে পদ্মলোচন
জলদি আসিস বুকের সাথে বুক ঠেকিয়ে আততায়ী
গুপ্ত হিমাগার
আমার চোখ লবণের গুপ্ত হিমাগার।
এটা জেনে :
চোখের জলে রান্না করছি সবুজ সবজি।
এটা জেনে—
চাটছি আমার তরল ক্রোমোজোম।
আমিষ লেহনে মনোরঞ্জন ঘটে
আমিষ মন্থনে শক্তিমত্তা বাড়ে
এটা জেনে—
আমার গুপ্ত হিমাগারে শুকিয়ে যাচ্ছে লবণের তৃণভূমি।
ফুল
এর নাম ফুল, একে আমি বিশ্বাস করি না;
স্বার্থের মোম থেকে সে
পাপড়িতে রঙ মেখে, গন্ধ মেখে—ফুটে থাকে মৌমাছির জন্য।
এর কথা বলি না তোমাকে, তুমি ফুল হয়ো না।
তারচে’
কাঁটায় কাঁটায় গেঁথে রাখো মনোবড়শিতে
আমি মাছ
একাই সাঁতার কাটি নদীতে
প্রাইভেট মাস্টার
একদল ছাত্রছাত্রী উড়ে এসে বসে পড়লো যার যার বেঞ্চিতে
গাছের জামা–জুতো গাছের গায়ে জড়াতে থাকলো তারা
সকাল এসে ক্লাশে ঢুকলো, ব্রেকফাস্ট হয়ে চলে গেলো
দুপুর এসে ক্লাশে ঢুকলো, লাঞ্চ হয়ে চলে গেলো
একদল ছাত্রছাত্রী উড়তে উড়তে রাতের ক্লাশে পড়তে বসলো
অন্ধকারের ঘ্রাণশক্তি নিয়ে আলো ধরতে ঘুমিয়ে পড়লো তারা
জলপুস্তক–জলপেন্সিলের দেহে
অবাক হরিণ
ফ্লপিডিস্কের সবুজ–ড্রয়ারে হরিণের ফাইল ফটো
বিভিন্ন ভাইরাস বহুভাবে খাচ্ছে
হরিণীর দুধ
হরিণ—
সরল ঘাসের চোখে অবাক পুরুষ।
অভিভাবক
দূরের ব্রহ্মপুত্রের উপর
ভোরের গান ও শ্মশানের ধোঁয়া উড়ছে
শুভ–প্রস্থানের মুখ
রোদ–অসুখের ব্রন
শরতের কাশফুল দুলছে
রহস্যের আমি
ব্রিজ থেকে খরগোশের নৃত্যদৌড় ও শরীরচর্চার ভাষা অনুবাদ করছি
আকাশ আমার কাছাকাছি গম্ভীর অভিভাবক হয়ে আছে
ডাকাতশিশু
প্রথম চোখ মেলে শিশু তাকেই দেখে, তাই
সূর্য তার প্রথম খেলনা।
হিরার বল অথবা বরফের লজেন্স হয়ে এই খেলনাটা
ঝুলে থাকে দূরে।
তাকে ধরার জন্য ডাকাতশিশু বাড়তে থাক দ্রুত!
২
সন্ধ্যায়
ভাঙা জাহাজের দুশ্চিন্তা নিয়ে উড়ে আসে বক
সন্ধ্যায় বাঁশঝাড় মাজে দাঁত
হলুদ পাতারা বসে বিয়ের পিড়িতে
সন্ধ্যায় শিশিরের বদলে টুপটাপ পড়ে শুভ্র মেঘের দুধ
সন্ধ্যায়
ডাকাতশিশু দৌড়ে আসে উলঙ্গ তরবারি হাতে
সাপ
মনে হচ্ছে সাপ, আমার শরীরে থাকে, একে আমি চিনি না;
বাঁকিয়ে লেজ, প্যাঁচিয়ে ধরে আমাকে; বিষ দেয়—শ্বাসটানে
জিভের প্রহারে;
দুধ চায়, মাছ-ব্যাঙ, জলজ-আমিষ;
চায় ঘাসফড়িঙ-তেলেভাজা কৈ!
একে আমি চিনি না। আমার শরীরে থাকে;
কেনো যে ঘুমায়, কেনো যে জাগে!
মৌমাছি
উজ্জ্বল ব্রিজ নিচে ফেলে উড়ে যাচ্ছি মৌমাছি
উড়ে উড়ে
স্বপ্ন থেকে ফেলে দিচ্ছি মধু
মধু থেকে ফেলে দিচ্ছি মিষ্টতা
মেঘে ভিজে ভিজে
চোখ থেকে ফেলে দিচ্ছি দৃষ্টিক্ষমতা
২
নীল মৌমাছি, অভুত্থানের ভিতর বসে যাও আরও একদম।
সাব–স্টেশনের মধ্যে সতর্কিত হচ্ছো মাছি
মুখ খুললেই বাজবে দারুণ সাইরেন
মধুর মধ্যে ডুবে আছে গ্রাম
মধুর মধ্যে ডুবে আছো মাছি
তুমি উড়ে গেলেই ভেঙে ফেলবে মৌচাকের তালা।
ঘোড়া
ঘোড়ারা ডিঙিয়ে যায় ঘোড়াকে টগবগিয়ে
আমি গ্রহের রেসে আকাশ ডিঙাতে পারি না
ঘোড়ারা ডিঙিয়ে যায় আমাকে টগবগিয়ে
স্বপ্নমৃত আমি মৃতদেহ কাঁধে দাঁড়াতে পারি না
২
দুজন ঘর পরস্পরকে করছে চুমাচুমি
পাখিকে সঙ্গি করে উড়ছে তার নিরাপদ ছায়া
স্বপ্নে হেসে হেসে কেঁদে ফেলেছে জমজ ক্যামেরা
পরীরা গোসলে এসে ফেঁসে গেছে মাছেদের জালে
মনের হাওড়ে–বাওড়ে ঘটে গেছে বিপুল ঘটনা
তুমি দৌড় দাও ঘোড়া—
গোপনে তোমার ঘুড়ি করছে বিনোদন
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার গান
শব্দ করে পাতা পড়ে গেল
শব্দ করে মাড়িয়ে এলাম আমি
শব্দ দুটো আকাশে উড়ে গেলো
বাতাস শুনতে পেল
মৃতপাতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার গান
মেঘের দোকান
আকাশের বাজারে বিস্তারিত মেঘের দোকান
বাজারে নতুন এসেছি
পকেট–ভর্তি বৃষ্টি;
বৃষ্টির দামে কিনতে হবে সব
জলীয় অলংকার
দুধপান
বাছুর পলকে পলকে ওলানের পানে চায়
বাছুর বুঝে না—কেনো তার মায়ের দুধ
মানুষে খেতে চায়
ক্ষুধা
বাঘ একটি ডোরাকাটা অধ্যায়
এর চোখের প্রতি পৃষ্ঠায়
হরিণ এক নতুন কবিতা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।