আমার কখনো লোকাল গাড়ীতে করে খুলনা যেতে ইচ্ছা করেনা। আব্বু পৌঁছে দিবে। আর কোন এক শুক্রবার দেখে নিয়ে আসবে। এর আগে বলবে---"তুই গাড়ীতে করে আয়। "
তুমার আসতে হবেনা।
আমি বাড়িতে যাবনা।
--------------------এরপর আব্বু আসবে
সে দিন ও এর ব্যতীক্রম হলনা। তারপর আবার অফিস করে এসেছে।
রওনা হবার কিছুক্ষণ পর থেকেই টিপ টিপ করে বর্ষা শুরু হল। মাথায় আব্বুর হেলমেটটা দিলাম।
বাবাসোনাকে হ্যান্ড ব্যাগের মধ্যে রেখে দিলাম। একটা ব্যাগ বাইকে বেঁধে অন্যটা ধরে রাখলাম। (যে ওজন ছিল। মনে হচ্ছিল ১ মণের ও বেশি )
রূপসা সেতূর মাইল খানেক আগে চারপাশ দেখতে এত সুন্দর লাগছিল। চারি দিকে সবুজ আর সবুজ।
শহুরে যান্ত্রিকতা দেখতে দেখতে হাপিয়ে উঠেছিলাম। টিপটিপ বৃষ্টির মাঝে বাইকে বসে অপরূপ প্রকৃতি দেখার সেকি মোহময় অনুভূতি তা অনেকেই হৃদয়াঙ্গম করতে পারবেনা। সেতূর আধা কি.মি আগে হঠাত করে বাইকটা থেমে গেল। কিছুতেই স্টার্ট নিলনা।
আশেপাশে কোন দোকানপাট নেই।
তেল শেষ। মানুষকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল ব্রীজের নিচে তেল পাওয়া যাবে। কিন্তু কিভাবে ওখানে পৌঁছাব?অবশেষে বাইকের ওপর ব্যাগটা রেখে একহাতে ধরে হাটতে থাকলাম। প্রায় আধা ঘন্টা হাটলাম। অবশেষে গন্তব্যে পৌছালাম।
দেখাগেল তেল আছে কিন্তু অন্য কোন সমস্যা। প্রায় ২ ঘন্টা বসে থেকে ঠিক করা হল। ২ঘন্টা বসে থাকলাম। একসময় ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে গেল। কিন্তু কি আর করা? মনে করতে থাকলাম এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা তো চাইলেও পাওয়া যায়না।
ইয়াহুহুহুহুহুহুহুহুহুহুহুহুহুহুহুহু ঠিক হয়ে গেছে। রওনা দিলাম। কিন্তু কেমন যেন। ঠিক করা হল শিববাড়ি গিয়ে ভাল করে গাড়ীটা ঠিক করা দরকার। এবার ঘটল আরও মজার কান্ড।
যে জায়গাতে বাইক নষ্ট হয়েছিল ঐ খানে আবার নষ্ট হল। ডিভাইডারে ১৫ মিনিট বসে থাকার পর একটা ভ্যানের দেখা পেলাম। ওইটাতে বাইকটাকে বেঁধে ব্যাগ ২টা দিয়ে বসলাম। উফ্ বসার তেমন জায়গা ছিলনা। কিভাবে যে বসে ছিলাম আমি নিযেও জানিনা।
এদিকে ইফতারীর সময় হয়ে গেল। রাস্তার পাশ থেকে কিছু ইফতারী কিনল। আহা কতইনা মর্মান্তিক---হৃদয়বিদারক দৃশ্য। আম্মু না জানি কত রকমের ইফতারী বানায়ে রেখেছে।
ভালমত বর্ষায় ভিজতে ভিজতে চললাম।
রাস্তায় আমাদের ভ্যান ছাড়া কোন যান নাই। আমি ভ্যানে বসে গুণগুণ করলাম--------------
আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি একেছি------
আমি রোদে পুড়ে ঘুরে ঘুরে অনেক কেদেছি------
আমার আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি------
শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নে ও ভাবিনি।
অবশেষে গ্যারেজে পৌঁছালাম। ঠিক করে খালার বাসায় ফিরলাম। পথে প্রচুর বৃষ্টি হল।
কাক ভেজানা, শিয়াল ভেজা দিয়ে বাসায় পৌঁছলাম। আমার কাছে এগুলা কোন কষ্টইনা যতটা কষ্ট হল ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠতে। কি আর করা। রওনা হলাম। গোয়ালখালী এসে ভাগ্যের পুণরাবৃত্তি।
এবার তেল নাই। নতুন করে পুরোন ঢংএ হাটা শুরু করলাম। বয়রা পর্যন্ত হাটার পর ১ ভ্যানে করে জোড়া গেটে আব্বুর জন্য অপেক্ষা করলাম। আর আব্বু বাইক ঠেলতে ঠেলতে আসল।
অবশেষে তেল নিয়ে রওনা হলাম।
রূপসা পার হবার পর এত জোরে বৃষ্টি শুরু হল যে একসময় অসহ্য লাগছিল। কিন্তু ইপভোগ্য----------
শেষমেষ ৯.৩০ এ বাসাতে পৌঁছালুম। তবে বাবাসোটার বেশ একটু কষ্ট হল কিন্তু কি করা? আমার সঙ্গে থাকতে হলে তো ওকে ও যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হবে।
প্রকৃতির সাথে ২দিন যুদ্ধ করে জয়ী হলাম। কিন্তু একটা ম্যাসেজ অপেক্ষা করছিল--------
""শেষ পর্যন্ত আমি মার কোলে ফিরে আসলাম।
দেখলি তোর পরে রওনা দিয়েও আমি কেমন কচ্ছপের মত আগে বাগেরহাট এলুম। আর তুই খরগোশের মত লাফিয়ে লাফিয়ে আগে রওনা দিয়েও এখনো বাগেরহাট পৌঁছাতে পারলিনা। ""
তবে যাই হোক আমার মনে হয়েছিল---
War is life, War is universal---এই বানীটা Hitler আমার জন্যই দিয়েছিল।
বাড়িতে পৌঁছালাম কিন্তু----------------
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।