আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহামানব না হতে পারি, অমানুষ যেন না হই

পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি।

ক্যাম্পাসের আর দশজন আফ্রিকানের মতই শারীরিক কাঠামোর অধিকারী ছিল সে। উচ্চতায় ছয় ফূটের কাছাকাছি, নিকষ কালো গায়ের রঙ, সুঠাম শরীর ও কোকঁড়ানো কালো চুল। পড়ত কম্পিউটার সায়েন্স ও ইনফরমেশন টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের সেকেন্ড ইয়ারে। খুব একটা ভাবও ছিল না তার সাথে আমার।

ওর রুমমেট ঈসা উসমান আমার সহপাঠী, সেই সাথে ভালো বন্ধুও। তাই মাঝে মাঝে ঈসার খোঁজে ওদের রুমে যেতাম। দেখতাম কখনো বিছানায় শুয়ে আছে, আবার কখনোবা নিজের ল্যাপটপে কাজে ব্যাস্ত। ক্যাম্পাসে দেখা হলেও বড়জোড় "হাউ আর ইউ ব্রাদার?" পর্যন্তই কথা হত। হয়তো কিছুটা লাজুক ছিল বলেই।

বরং ওর ভাই আমর মূসার সাথেই কথাবার্তা হত বেশি। ক্যাফেটেরিয়ায়, প্লেগ্রাউন্ডে, স্টুডেন্ট সেন্টারে। রবিবার দুপুরে খবর পেলাম বিলাল মূসা আশঙ্কাজনক অবস্থায় অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি। আমি যখন খবরটা শুনি তখন সে রীতিমত কোমাতে। কৃত্তিমভাবে চলছে তার হার্ট পাম্প করার কাজ।

প্রথম তো এতগুলি পরিচিত নাইজেরিয়ানের ভেতর বিলাল মূসা কোনজন বুঝতেই পারিনি। পরে যখন শুনলাম আমর মূসার ভাই, তখন বুঝলাম। সেই বিলাল মূসা এখন অতীত। শনিবার রাতের এক অনাকাংখিত ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিভে গেছে তার প্রাণপ্রদীপ। বাংলাদেশে নাইজেরীয় দূতাবাস না থাকায় তার লাশ পাঠানো সম্ভব হয় নি।

তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বাংলাদেশে আসতে ৭ দিনের বেশি সময় লাগবে। তাই আজ তাকে গাজীপুর পৌরসভা গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সেখানেই চিরদিনের মত ঘুমিয়ে থাকবে বিলাল মূসা। তার সাথে দুর্ঘটনার আরেক শিকার জামিল (আরেক নাইজেরিয় ছাত্র) এখনো হাসপাতালে ভর্তি। বিডিনিউজ ২৪ এ বলা হয়েছে বাসে কন্ডাক্টরের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বিলাল মূসাকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়।

click this link এই বিষয়ে ব্লগার নিরব হাসির পোস্ট দুর্বৃত্তের হাতে আইইউটির এক নাইজেরিয়ান ছাত্রের মৃত্যু রাত দশটার দিকে এয়ারপোর্ট রোডে দুজন বিদেশীকে সামান্য কথা কাটাকাটির কারণে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হবে এটাই বা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য ও মানবিক? বাসে অন্য কোনো যাত্রী ছিল কিনা তাও জানা যায় নি। রাত দশটা এমন বেশি কিছু রাত না। আর যে বাসই হোক এয়ারপোর্টে আসার আগেই ফাঁকা হয়ে যাবে এ বিষয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে। জামিল সুস্থ হলেই হয়তোবা জানা যাবে সেই রাতে আসলে কি ঘটেছিল । সবশেষে কিছু প্রশ্ন।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে আসা দুজন ভীনদেশী তরুণও কী দুষ্কৃতিকারীদের নির্মমতা থেকে রক্ষা পাবে না? আমরা কী আমাদের লালসা ও পশুবৃত্তি থেকে বিদেশী অতিথিদেরও রেহাই দেব না? জানি, শুধু প্রশ্নগুলো করাই সার। উত্তর পাব না। শুধু একবার সবাইকে চিন্তা করতে বলি শোকাতুর সেই মা'র কথা যিনি নিজের নাড়ীছেড়াঁ সম্পদকে শেষ দেখাটুকুও দেখতে পারলেন না। নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন। দেখুন, আপনার বিবেকের কাছ থেকে কী জবাব পান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.