ছেলেটির চোখে মুখে লাজুক চাহনি। চেহারায় এক ধরনের সরলতা রয়েছে। ছেলেটি যথাসম্ভব চেহারায় কাঠিন্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। এতে করে তার ছেলেমানুষি ভাব আরও প্রকট হয়ে ফুটে উঠছে। আশরাফ সাহেব হেসে ফেলেন।
১৬-১৭ বছর বয়সের এই ছেলেটি হয়ত উনাকে কিছু বলতে চায়। নার্ভাসনেসের কারণে বলতে পারছে না।
খোকা তুমি কি আমায় কিছু বলবে?
ছেলেটি কোন উত্তর দেয় না। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তার একটি হাত ধীরে ধীরে ঢুকে যায় প্যান্টের পকেটে।
একটু পর সে হাতটা বাইরে বের করে নিয়ে আসে।
আশরাফ সাহেব বিস্ফোরিত ভাবে ছেলেটির হাতের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছেলেটির হাত একটু একটু কাঁপছে। তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। ছেলেটির হাতে ধরা ছোট্র একটি আগ্নেয়াস্ত্র উনার দিকে তাক করা।
একটু আগের লাজুক সেই ছেলেটিকে তিনি আর এখন চিনতে পারছেন না।
ছেলেটিকে এখন আর দেবদূত বলে মনে হচ্ছে না। যেন তার ভেতর থেকে একটি দানব বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে।
ছেলেটি পর পর দুবার গুলি করে। আশরাফ সাহেব মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
উনার বিস্ময় ভাব এখনও কাটেনি। মনে হচ্ছে যেন এ সব কিছুই স্বপ্ন দৃশ্য। বাস্তবে ঘটছে না।
ছেলেটির কোন ভাবান্তর হয় না। যত কঠিন হবে বলে সে ভেবেছিল কাজটা তত কঠিন হয়নি।
বস ঠিকই বলে ছিল মানুষ খুন কার আসলে খুব একটা কঠিন কাজ না। একটু সাহস থাকলেই হয়। সে কোন তাড়া অনুভব করে না। তার কাজ শেষ হয়েছে। পার্টিকে এখন জানিয়ে দিতে হবে কন্ট্রাক মত সব কাজ শেষ হয়েছে।
ছেলেটি ধীর পায়ে সামনে এগুতে থাকে তার দ্বিতীয় শিকারের দিকে। পকেটে হাত দিয়ে দুই হাজার টাকার অস্তিত্ব অনুভব করার চেষ্টা করে। তার প্রথম রোজগার। নিজের উপার্জনের প্রথম টাকায় গভীর মমতা মেশানো থাকে। সে কখনই সেই মমতা অনুভব করতে পারবে না।
এই টাকা সে তার প্রিয়জনদের হাতে তুলে দিতে পারবে না। এই টাকায় রক্ত লেগে আছে। আর একজন ভাড়াটে খুনির কোন পরিবার কোন প্রিয় মানুষ থাকে না। মানুষ থেকে সে কখন দানবে রুপান্তরিত হয়ে পড়েছে তা নিজেও জানে না।
(উপরের ঘটনাটি কাল্পনিক।
রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু নীচের বর্ণনাটি মোটেও কাল্পনিক নয়। ২০ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাক থেকে নেয়া-
পিচ্চি আল আমিনের বয়স ১৭ বছর। নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর অর্থের অভাবে আর পড়াশোনা করতে পারেনি। অভাবের তাড়নায় কয়েক বছর পূর্বে ঢাকায় চলে আসে।
এর মধ্যে দুই বছর একটি গার্মেন্টএ কাজ করা কালে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পিচ্চি আল আমিনের সখ্যতা গড়ে উঠে। সন্ত্রাসীদের আড্ডায় গিয়ে অস্ত্র ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ নেয় সে। এরপর পিচ্চি আল আমিন ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হত্যাকান্ড, ছিনতাই, ডাকাতিসহ শুরু করে দেয় নানা অপরাধ।
১৫ বছর বয়স থেকে সে এই সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তার বয়সী আরও ১৫-২০ জন সহযোগী রয়েছে তার।
সম্প্রতি সে রেবের হাতে ধরা পড়ে। সে জানায় তার রেট খুব বেশী নয়। মাত্র ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দিলে সে মানুষ খুন করে। এর মধ্যে সে এক ডজন হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় কে বেঁচে আছে আর কে মরে গেছে এটা সে কখনো খতিয়ে দেখে না।
হত্যাকান্ডে তার চরম শাস্তি মৃত্যুদন্ড হতে পারে এটা সে তোয়াক্কা করছে না। গ্রেফতার হলে সে সহজে ছাড়া পেয়ে বের হয়ে আসে। এরজন্য তার বড় ভাইয়ারা তার পেছনে রয়েছে। হত্যাকান্ড সে তাদের নির্দেশে করে থাকে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র তার বড় ভাইয়ারা সরবরাহ করে থাকে।
ছবির ছেলেটির মায়াময় মুখ দেখলে কে বিশ্বাস করবে সে একজন প্রফেশনাল কিলার। মানুষ খুন করা যার পেশা। এসব ছেলের এখন স্কুল কলেজে পড়ার বয়স। এরা বড় হবে অনেক স্বপ্ন নিয়ে। সেই জায়গায় একেক জন একেকটি খুনি হিসেবে গড়ে উঠছে।
এরা নিজেরাও জানে না এরা কি করছে, কি ভয়াবহ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তারা জানে না এদের কে শুধুমাত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কোল্ড ড্রিংস খাবার পর মানুষ যেমন খালি ক্যান ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেয় এদের কেও কাজ হয়ে গেলে এক সময় ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে। কারণ এদের কাছে এরা মানুষ মারার একটি যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।