সান্তাফে পাব।
ইউনিভার্সিসিট অব মেরিল্যান্ডের ছাত্রছাত্রীদের হুল্লোড়ে মুখোর। ফ্রাইডে নাইটের জমজমাট আসর। তীব্র মিউজিক, লাইট আর পান-ভোজন।
কালো লেদার জ্যাকেট, উলেন ট্রাইজার আর নরম স্নিকার পায়ে রাশেদ কোনার টেবিলে বসে নিরবে পান করছে।
এই উদ্দাম উচ্ছলতা তাকে এতোটুকু স্পর্শ করছে না। ভিড়ের মধ্যে একটা নির্জন দ্বীপের মতো একা এক টেবিলে বসে আছে বেশি কিছুণ। আপাত দৃষ্টিতে তাকে বেশ শান্ত দেখাচ্ছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা অসহ্য অস্থিরতা তাকে তাড়া করে ফিরছে। নভেম্বরের প্রচন্ড ঠান্ডাতেও কপালে জমে উঠছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
নিজের এই রূপটিকে চেনে রাশেদ, আর সে জন্যই বোবা আতঙ্ক ভর করছে তার উপর।
বিত্তশালী এবং সে কারণে স্বাভাবিক নিয়মে চরম পরাক্রমশালী বাবার প্রভাবে কখনো রাশেদের শরীরে বিন্দুমাত্র আঁচ লাগেনি। নয়তো এতোদিনে কমপক্ষে তিনবার ফাঁসি হয়ে যেতো তার। প্রথমবার তেমন কোনো প্রমাণ ছিল না। কিন্তু পরের দুবারতো প্রায় হাতেনাতে ধরা পড়েছে।
টাকা আর কানেকশন দিয়ে সবকিছুই ম্যানেজ করা সম্ভব। এ জন্যই খুনের দায়ে নিশ্চিত সাজার হাত থেকে পালিয়ে মার্কিন মুল্লুকে আরামে দিন কাটাচ্ছে রাশেদ।
যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর গত দেড় বছরে কোনো রকম সমস্যা হয়নি। মনে মনে ভেবেছে রাশেদ, হয়তো সমস্যাটা কেটে গেছে। কিন্তু আজকে বুঝতে পারছে; কিছুই বদলায়নি।
হয়তো নতুন পরিবেশে এসে কিছুদিন এই আদিম প্রবৃত্তিটা চাপা পড়ে ছিল। আজ আবার রক্তের মধ্যে সর্বনাশা কাঁপন অনুভব করছে। এ লণ তার চেনা। সেই ছেলেবেলা থেকেই। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাড়ির পোষা ময়নাটাকে গলা টিপে হত্যার মধ্যদিয়ে যে অশুভ অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিলো, দিনে দিনে সেটা বেড়ে মানুষ খুনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশেদের চরিত্রের এই কালো দিকটা প্রথম উপলব্ধি করেন তার বাবা জাফর শিকদার। একমাত্র ছেলেকে রার জন্য সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছেন তিনি। দেশ-বিদেশের নামকরা মানষিক চিকিৎসকদের কাছে ছুটে গিয়েছেন ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। বার বার বহু হাঙ্গামা করে ছেলেকে খুনের দায় থেকে বাঁচাতে হয়েছে।
চিকিৎসকের পরামর্শে শেষ চিকিৎসা হিসেবে নতুন পরিবেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন রাশেদকে। ভাগ্যক্রমে মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটিকে অ্যাডমিশন পেয়ে যায় রাশেদ। আর এখানে এসেতো প্রথমে খুব ভালো ছিলো সে। এর মধ্যে দুবার এসে বাবা-মা তাকে দেখে গেছেন। মাত্র মাস তিনেক আগেও তারা রাশেদকে দেখতে এসেছিলেন।
সবকিছু স্বাভাবিক দেখে স্বস্তি নিয়ে ফিরে গেছেন তারা।
কিন্তু আজকে আবার সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক তৃষ্ণা অনুভব করছে রাশেদ। নির্জলা হুইস্কিতেও পিয়াস মিটছে না। চাই অন্যকিছু।
শিকারী বেড়ালের দৃষ্টিতে চারদিকে চোখবুলায় রাশেদ। নাহ্.সব জোড়ায় জোড়ায় ঢুকছে। তার দরকার একা কাউকে।
এক্সকিউজ মি; মে আই হ্যাভ ইউর লাইটার।
ঋাবনার গভীর থেকে উঠে আসে রাশেদ।
দু চোখ মেলে তাকায় মেয়েটির দিকে। চোখে আমন্ত্রণের দৃষ্টিটা নজর এড়ায় না। এ যেন মেঘ না চাইতে জল।
পকেট হাতড়ে জিপোটা বের করে দেয়। নিজেও মার্লবোরোর প্যাকেটটা হাতে তুলে নেয়।
নো স্মোকিং পাব থেকে বাইরের ঠান্ডায় এসে সিগারেট ধরায় দুজন। কয়েকপ্রস্ত শীতবস্ত্র ছাপিয়ে মেয়েটার শরীর বাঁকগুলো স্পষ্ট ধরা দেয় জাফরের চোখে। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে জাফরের দিকে হাত বাড়ায় মেয়েটি
জুয়ানা, জুয়ানা তোহ।
জাফর শিকদার। ইউ ক্যান কল মি রাশেদ ।
বন্ধুরা আমাকে রাশেদ বলে ডাকে।
ভেতর থেকে প্রচন্ড তাড়া অনুভব করছে জাফর। অনেক কষ্টে মুখে হাসি ধরে রাখে। শরীরের প্রতিটি লোমক’প দিয়ে আগুনের হলক বেরুচ্ছে। জুয়ানাকে নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভভ নিজের অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার তীব্র তাগিদ অনুভব করছে।
কিন্তু কিভাবে!
পথ খুলে দেয় মেয়েটি
এই উৎসবেও দেখলাম তুমি একা একা পান করছো। মন খারাপ?
ঠিক তা নয়। আমি ভিড় পছন্দ করি না। একজনের অপোয় ছিলাম। মনে হয় আর আসবে না।
সো আই অ্যাম লিভিং নাউ। তুমি কী করছো?
উমম, তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তোমার কী কোনো এক্সাইটিং প্ল্যান আছে?
তুমি চাইলে আজ রাতটাকে আমরা দুজন মিলে চরম এক্সাইটিং করে তুলতে পারি। চোখ মটকে বলে রাশেদ।
ক্যাম্পাস লাগোয়া অ্যাপার্টমেন্টে কয়েক মিনিটেই রাশেদের গাড়িটা পৌছে যায়।
জুয়ানারটা পাবের পার্কিং লটে থেকে যায়।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আর এক মুহুর্তও তর সয়না রাশেদের। ঝাঁপিয়ে পড়ে জুয়ানার উপর।
সারা রাত পার্টির পর রাশেদের অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের ভোরবেলা পুলিশের গাড়ির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। স্ট্রেচারে করে রক্তাক্ত মৃতদেহটা নিয়ে যায় পুলিশ।
ডিটেকটিভ মার্ক ডেলিস কপাল কুঁচকে ভাবেন, কতোটা সৃশংস হলে মানুষ এভাবে একজনকে হত্যা করতে পারে। দীর্ঘ ২৩ বছরের পুলিশের চাকরিতে এমন নৃশংস ঘটনা আর চোখে পড়েছে বলে মনে পড়ে না।
ঠিক তখনই একটু দূরে সান্তাফে পাবের পার্কিং লটে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ঝিমুচ্ছে জুয়ানা। চোখে-মুখে পরম তৃপ্তি। বহুদিন পর এতো সরেস শিকার মিলেছে।
টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম। স্যাম ঠিকই বলেছিলো। সাদাদের রক্তটা একেবারে আলুনি, কেমন পানসে। আর কালোদের রক্ততো মুখেই দেওয়া যায় না, এমন কড়া। এই বাদামীগুলোর রক্ত- ওহ্ এক কথায় অনবদ্য।
গত বছরের সেই ভারতীয় মেয়েটাও ছিল এমন স্বাদের।
আহ্ পরম তৃপ্তী। (শেষ)
উৎসর্গ: ব্লগার হাসান মাহবুব। তার ব্লগে একটি গল্পের ছবি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে এ গল্পটা লিখলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।