আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেঘপঞ্জিকা - বারতা পেয়েছি মনে মনে

মনের জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবনাগুলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখি। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ হয়ে, ঐ দূর দিগন্ত পানে...

ট্রেনে আজ কাজ থেকে ফেরার পথে রবিঠাকুরের রাশিয়ার চিঠি পড়ছিলাম। পড়াতো হলোই না মাঝখানে এতো কঠিন কঠিন তত্ত্বকথা মাথায় ঢোকাতে যেয়ে মাথাটায় ঝিম মেরে এলো। মাথাটা তুলতে যাব একটা দৃশ্য দেখে দৃষ্টি সেখানেই স্থির হয়ে গেল। আমার সেই দৃশ্য বর্ণনা করার জন্য মহীন্দ্রকুমারের শরণাপন্ন হওয়া যাক - "..তখন আমার আর কিছু দেখিবার অবসর হয় নাই, কেবল দেখিয়াছিলাম, একটি ষোড়শী যুবতী হাতে একখানি বই লইয়া মস্তক আনমিত করিয়া পদচারণা করিতে করিতে অধ্যায়ন করিতেছে।

ঠিক সেসময়ে কোনোরুপ তত্ত্বালোচনা করিবার ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু কিছুদিন পরে ভাবিয়াছিলাম যে, দুষ্যন্ত বড়ো বড়ো বাণ শরাসন বাগাইয়া রথে চড়িয়া বনে মৃগয়া করিতে আসিয়াছিলেন, মৃগ তো মরিল না, মাঝে হইতে দৈবাৎ দশমিনিট কাল গাছের আড়ালে দাঁড়াইয়া যাহা দেখিলেন, যাহা শুনিলেন, তাহাই তাঁহার জীবনের সকল দেখাশুনার সেরা হইয়া দাঁড়াইল। আমিও পেন্সিল কলম এবং খাতাপত্র উদ্যত করিয়া কাব্যমৃগয়ায় বাহির হইয়াছিলাম, বিশ্বপ্রেম বেচারা তো পালাইয়া রক্ষা পাইল, আর আমি দুইটা জামগাছের আড়াল হইতে যাহা দেখিবার তাহা দেখিয়া লইলাম; মানুষের একটা জীবনে এমন দুইবার দেখা যায় না। ..." রবিঠাকুরের অধ্যাপক গল্পে কিরণবালা কে গাছের আড়াল হতে দেখে মহীন্দ্রকুমারের এই হলো গিয়ে প্রতিক্রিয়া। আমার ক্ষেত্রে ফারাক এই ছিল যে যুবতী ট্রেনের দরজায় হেলান দিয়ে বই পড়ছিল। আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম আশেপাশে দাঁড়ানো যাত্রীদের ভিড়ের ফাঁকে ফাঁকে।

কাগজ বের করাই ছিল। কলম বের করে কাব্যমৃগয়ায় যাওয়া আর হলো না, ট্রেনের ঝাকুনীর জন্য। যুবতীর বর্ণনা কয়েক লাইন যাও লিখেওছিলাম এখন সেগুলো মনঃপূত হচ্ছে না। মহীন্দ্রকুমারের-ই জয় হল। "..ইতিপূর্বে প্রকৃতি আমার কাছে বিক্ষিপ্ত ছিল, নদী বন আকাশ সমস্তই স্বতন্ত্র ছিল।

আজ সেই বিশাল বিপুল বিকীর্ণতার মাঝখানে একটি সুন্দর প্রতিমূর্তি দেখা দিবামাত্র তাহা অবয়ব ধারণ করিয়া এক হইয়া উঠিয়াছে। আজ প্রকৃতি আমার কাছে এক ও সুন্দর, সে আমাকে অহরহ মূকভাবে অনুনয় করিতেছে, "আমি মৌন, তুমি আমাকে ভাষা দেও, আমার অন্তঃকরণে যে-একটি অব্যক্ত স্তব উত্থিত হইতেছে তুমি তাহাকে ছন্দ লয়ে তানে তোমার সুন্দর মানবভাষায় ধ্বনিত করিয়া তোলো!" প্রকৃতির সেই নীরব অনুনয়ে আমার হৃদয়ের তন্ত্রী বাজিতে থাকে। বারম্বার কেবল এই গান শুনি, "হে সুন্দরী, হে মনোহারিণী, হে বিশ্বজয়িনী, হে মনপ্রাণপতঙ্গের একটিমাত্র দীপশিখা, হে অপরিসীম জীবন, হে অনন্তমধুর মৃত্যু!".." এমন সুন্দরের সান্নিধ্য পেলে মৃত্যুকেও অনন্তমধুর বলতে দ্বিধা নেই। বারতা পেয়েছি মনে মনে গগনে গগনে তব নিশ্বাসপরশনে, এসেছ অদেখা বন্ধু দক্ষিণসমীরণে। কেন বঞ্ছনা কর মোরে, কেন বাঁধ অদৃশ্য ডোরে- দেখা দাও, দেখা দাও দেহ মন ভ'রে মম নিকুঞ্জবনে।

দেখা দাও চম্পকে রঙ্গনে, দেখা দাও কিংশুনে কাঞ্ছনে। কেন শুধু বাঁশরির সুরে ভুলায়ে লয়ে যাও দূরে, যৌবন-উৎসবে ধরা দাও দৃষ্টির বন্ধনে। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।