অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
আর ভাল্লেগা না ভাই, পুরা শুকায়া গেলাম অভাবে, পকেটে পয়সা নাই। পকেট এমন শুকনা হইছে হাত ঢুকাইতে হইলেও তেল লাগায়া ঢুকাইতে হয়, নাইলে হাত ছিল্যা যায়। কি করুম আপনিই কন?
সোহেল ভাই নড়েচড়ে বসলো বেঞ্চে, ময়না ভাই একটা চা।
আমরাও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে বসলাম, বেশ বড় একটা অর্থনৈতিক বক্তৃতা শুনতে হবে আমাদের।
তোর কত টাকা দরকার?
নান্নু মিনমিন করে বললো, যত পাওয়া যায় সব, ধরেন বাংলাদেশটা কিনে ফেললাম এই রকম টাকা দরকার।
তুই এত কিছু থাকতে বাংলাদেশ কিনবি ক্যান? তুই কিন্যাই বা করবি কি? তালুকদারি সিস্টেম তো বাতিল হয়ে গেছে।
আপনিও সোহেল ভাই, আমি কি সত্যি সত্যি কিনবো না কি, মানে অনেক অনেক টাকা দরকার, টাকা থাকলেই ক্ষমতা হবে, প্রচুর ক্ষমতা দরকার। জীবনটাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে উপভোগ করা দরকার বুঝলেন ভাই। এখন একটা উপায় বলেন?
কি রকম উপায় চাস?
মানে সহজ কোনো উপায়। ঝক্কি নাই তেমন কিন্তু পয়সা আছে এই রকম কোনো উপায়।
হুমমমমমম… আছে একটা উপায়, কিন্তু…….
আমরা সোহেল ভাইয়ের কথায় নড়েচড়ে বসলাম। সস্তায় টাকা উপার্জনের একটা রাস্তা বাতলে দিলে আমরাও সে পথ অনুগমন করে বিস্তর অর্থকড়ির মালিক হয়েও যেতে পারি।
কিন্তু কি?
মানে তোর লিমিট কি সেইটা বল, তাহলে একটা উপায় বলি তোকে। তুই কতটুকু দুই নাম্বারি করতে পারবি?
সেইটা তো পারি না ভাই। ধরেন ফটকাবাজি শিখে যাবো, হাতে পুঞ্জি আসলেই ফটকা হওয়ার সুযোগ নিয়া নিবো।
সোহেল ভাই হতাশায় মাথা নাড়েন, তাহলে…
হঠাৎ করেই ব্রেক কষে আচমকা কথার মোড় ঘুড়িয়ে বললেন, তো তোর টাকা পয়সা কিজন্য দরকার, মানে হঠাৎ করে এই বয়সে এই রকম বৈষয়িক চিন্তার মানে কি?
বললাম তো ভাই ক্ষমতা চাই, ভোগ করতে চাই জীবনটাকে।
তোর দায়বদ্ধতা কি? মানুষের চাহিদার উপরে নির্ভর করে পয়সার চাহিদা, ধর চাওয়া, দায় আর সেইটা পুরণের অসঙ্গতি নির্ধারণ করে তুই কত টাকা চাচ্ছিস সেটা।
আমাদের মুখ তিতা হয়ে যায় সোহেল ভাইয়ের ভাষণে, দরকারী কথা না বলে অন্য কোর্টে বল ঘুরানোর কোনো মানে খুজে পাই না আমরা।
ধর বাংলাদেশে টাকা কামানোর সহজ উপায় হলো কোনো ক্ষমতাবানের সাথে পরিচয় থাকা, সেই পরিচয় বেচে তুই সহজে উপার্জন করতে পারবি, যেমনটা করে মনে কর এমপির পিএ, প্রেসিডেন্টের বৌ, উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টার ছেলে মেয়ে। কিংবা মন্ত্রী মিনিস্টারের আশে পাশে থাকা রাজনৈতিক চামচারাও এই কাজ করতে পারে।
কিন্তু তোর দৌড় তো মহল্লার মাস্তান পর্যন্ত, তার সাথেও তোর তেমন পরিচয় নাই, মানে ভালো পরিচয় নাই।
নান্নু শুকনো মুখে বসে থাকে,
তবে সেটারও বিকল্প আছে, জমির দালালি কর, ইজি মানি, কিন্তু সময় আর কানেকশন লাগবে, সেইটা তৈরি করতে হবে, নেটওয়ার্ক বানাইতে হবে, বাড়াইতে হবে। তুই জমি ধরবি জমি ছাড়বি। পয়সায় পয়সা। সব হালাল।
কিন্তু এত পরিশ্রম করতে পারবো না সোহেল ভাই।
তাহলে মোসাহেবী কর।
সেইটাও তো পারি না।
তাহলে এক কাজ কর, খুঁজে খুঁজে বৃদ্ধা মহিলা বের কর, তাদের সাথে ফ্লার্ট কর। তাদের অঢেল আছে কিন্তু সুখ নাই, দৈহিকএবং মানসিক সুখ দিবি, বিনিময়ে পয়সা পাবি।
এইটাও খারাপ আইডিয়া না।
কিন্তু সেইটাতে তো মিথ্যা বলতে হবে, ধরেন বুড়িকে দেখতে জঘন্য লাগতেছে কিন্তু তাকে দেখে বলতে হবে আপনাকে চমৎকার লাগছে ম্যাডাম, সেইটা তো পারবো না।
অর্থোপার্জনের জন্য মিথ্যা বলা জায়েজ আছে বেটা। জীবিকা আর লড়াইয়ের ময়দানে সব জায়েজ।
এইসব না কইরা কোনো উপায় নাই?
তোর দরকার ক্ষমতা, জীবনকে চুটিয়ে উপভোগ করা, এইটার জন্য তো পয়সা লাগে না।
সাহস লাগে।
কিন্তু সোহেল ভাই, ক্ষমতার সাথে আসে সাহস, আমার ক্ষমতা থাকলে আমি সাহসী হবো, সমাজকে উপেক্ষা করে নিজের স্বাধীনতা মতো জীবনযাপন করতে পারবো।
ধুরো ব্যাটা বেক্কল, তোর কি মনে হয় যাদের অনেক পয়সা তাগোর অনেক সাহস।
এইটা ভুল ধারণা, যাগোর অনেক টাকা তাগো অনেক ঝামেলা, মনে কর, তুই চাইলেই যাকে তাকে যা কিছু বলতে পারবি না, অনেক হিসাব করতে হবে, প্রতিটা কানেকশন মূল্যবাদ, কাউকে চটানো যাবে না, এইটা অনেক হিসাবের মামলা, জীবনকে উপভোগ করতে চাইলে কপর্দকশূণ্য হয়ে যাওয়াটাই ভালো
ধর একটা ফকির তোর মুখের উপরে খাটাশ বলতে পারবে কিন্তু তুই কাউকে মুখের উপরে খাটাশ কইতে পারবি না, কারণ তোর সাথে ওর স্বার্থের সম্পর্ক, ফকিরের সেইসব নাই, ও এ না থাকলে ওর কাছে ঠিকই হাত পাইত্যা পয়সা পাইবো কিন্তু তোর কানেকশন বিগরাইলে তোর পয়সা উপার্জনের একটা রাস্তা বন্ধ।
সেইজন্য বললাম, সহজ উপায় হলো জমির দালালি, জমি ধর আর ছাড়, ছাড় আর ধর, লিগাল মানি, ইজি মানি।
অনেক বেশী নিশ্চিত, ফটকাবাজি করে জেলে যাওয়ার ঝুঁকি নাই।
কিন্তু সেইটা একটা লম্বা প্রসেস, আমার শর্টকাট দরকার, ধরেন রাতারাতি কিছু হইবো না।
তাহলে আরও একটা উপায় আছে, নাটক লিখা ধর, এখন ১০০ চ্যানেল, নাট্যকার নাই, তুই যা লিখবি সেইটাই পাব্লিক খাইবো,
কিন্তু সোহেল ভাই আমার তো সেইরকম সৃষ্টিশীলতা নাই, আমি তো কিছুই লিখতে পারি না।
বৈধ এবং সহজ উপায় এইগুলাই, অন্য সব উপায়ে ঝুঁকি আছে কিন্তু সেইটাও হইতে পারে, ধর তুই ব্যাঙ্ক ডাকাতি করলি,
মারুফ ব্যাঙ্ক ডাকাতির কথা শুনে প্রায় ছুটে এসে বসলো, সোহেল ভাই কোথায় ব্যঙ্ক ডাকাতি।
না নান্নুর টাকা পয়সা দরকার অনেক, রাতারাতি বড়লোক হইতে চায়, সেইরকম বাংলা সিনেমায় হয় সেই রকম।
না রে ভাই, ব্যাঙ্কে থাকলে কত থাকবে, ১ কোটি, ২ কোটি , ৫ কোটি। আমার দরকার অন্তত ১০০ কোটি টাকা।
মারুফ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, একটা বিকল্প উপায় আছে, সেইটা অনেক সহজ।
আমরাও উৎসাহ নিয়ে মারুফের দিকে তাকাই-
তোকে একটা ছিঁড়া কাথা কিনতে হবে। সেইখানে শুইলে এই রকম কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন দেখতে পারবি।
ধুরো ব্যাটা।
নাইলে এক কাম করতে পারিস, তুই হাত মাইরা এক একটা শুক্রানু বেচতে পারিস এক টাকায়, যদি সম্ভব হয় তাহলে রাতারাতি বড়লোক হইয়া যাবি।
ব্যাটা তুই গরম হচ্ছিস কেনো।
আরে না, বিষয়টা চিন্তা কইরা দেখ, ডিফিকাল্ট কিন্তু যদি করতে পারিস সেইটা কিনবার মানুষ কম হবে না।
এক একটা ইন্ডিভিজুয়াল স্পার্ম আলাদা করা কি রকম ঝক্কির কাজ ভাবছিস একবারও? সেই রকম স্পার্ম আলাদা করে এক একটা স্লাইড বানাইলি, প্রতিটা স্লাইড ১০ টাকা, কিনবার মানুষ কি কম?
ধুরো ব্যাটা কি বলিস।
ভাইব্যা দেখ ব্যাটা, তুই ধর বড় শিল্পী হইয়া গেলি, যা আঁচর দিবি সেইটাও শিল্পকর্ম, এইটাও তেমন, তুই এক একটা স্লাইড বানাবি, ছাপচিত্রের মত, প্রতিটা স্লাইডই একটার সাথে অন্যটার পার্থক্য নাই কোনো, তার উপরে প্রতিটাতেই তোর জেনেটিক সিগনেচার থাকবে। মানুষ তোর এইসব স্লাইড কালেকটর এডিশন হিসাবে কিনবে……
এত মেয়ে কি পাওয়া যাবে?
তোর কি ধারণা শুধু মেয়েরাই এইটা কিনবে?
না ধর স্পার্ম ব্যাঙ্কে……..
স্পার্ম ব্যাঙ্কে জমা দিয়া এত টাকা কামাইবি, এইটা মোটেও ভালো আইডিয়া না, ঐটা সম্ভব না বুঝলি, ওত বার করলে ধন খুইল্যা রাইখ্যা আসতে হবে ঐখানে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।