অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
বুঝেলেন সোহেল ভাই, একটা জিনিষ জানলাম, এখন যেইখানে কলাভবন সেইখানে আগে ছিলো নবাবদের চিড়িয়াখানা, আর যেইখানে মধুর ক্যান্টিন সেইটা ছিলো নবাবদের বাঈজীঘর, ঐখানে নবাবরা বাঈজি নাচাইতো।
নান্টুর কথা শুনে আমরা চমৎকৃত হলেও সোহেল ভাইয়ের ভাবান্তর নেই, সোহেল ভাই ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে বললো, তো কি হইছে, এখন কি কোনো পরিবর্তন আসছে?
আমরা আরও কিছু শোনার প্রত্যাশায় তাকিয়ে থাকি, ময়না ভাইও চা বানানো থামিয়ে তাকিয়ে আছে সোহেল ভাইয়ের দিকে। নবাব আর বাদশাহদের গল্প শুনতে কখনই বিরক্ত লাগে না কারো।
দেখ কলাভবন এখনও নবাবদের খপ্পরেই আছে, আগে একটা নবাব ছিলো, এখন নবাব হইছে ৪০০, বিরোধী দল, সরকারী দল, তাদের সব নেতা, সবাই নবাব, কলাভবনে এদের অনুগত কর্মীরা ঘুরে, খাঁচায় রাখা বাঘের মতো রক্তপিপাসু, একে গুলি করছে, তাকে জখম করছে, আর নবাবদের চিরিয়াখানা এখন শাহবাগে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত বাংলাদেশে।
মধুর ক্যান্টিনে এখনও রাজনীতির বাঈজীরা বসে নাচে, একবার এই দল থেকে ডিগবাজী খেয়ে আরেক দলে যায়, এই নেতার কোলে নাচে আর অন্য নেতার কোলে নাচে, এই নাচানাচির শেষ হবে কবে কেউ জানে না।
মিলটা মারাত্মক বলতেই হয়, হঠাৎ করেই শেখ হাসিনার অভিভাবকত্ব হারিয়ে ছানাপোনাসহ ছাত্রনেতারা যেমন মা মা রবে হাহাকার করে অনশনে গেলো, তাতে তাদের ছাত্রনেতা কিংবা দেশের ভবিষ্যত কান্ডারী মনে না হয়ে মনে হয়েছে প্যাম্পার্ড বেবী, হঠাৎ করেই ডায়াপারে গু করে দিয়ে কান্নাকাটি করে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে তারা।
রক্তপিপাসু হয়ে উঠাটাই নিয়তিনির্ধারিত ছিলো, অন্তত ৫ বছরের জন্য দেশতা নবাব- আমত্যদের কব্জায় গেছে, তারা যা বলবে সেটাই আইন, ঢাকা প্রকাশে একটা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিলো ১০০ বছরেরও আগে, ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহ সেখানে লিখেছিলেন, আমার চিড়িয়াখানার জন্তুদের কেউ কেউ হত্যা করছে, তাদের জানানো যাচ্ছে, যদি তারা আমার কোনো জন্তুকে আহত করে কিংবা ক্ষতিসাধন করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখনও পরিস্থিতি সে রকমই, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী নেতা আর কর্মীদের পুলিশ নিজ পাহারায় রাখছে, এইসব পশুগুলোকে এমন কি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও ঘাঁটানোর সাহস পাচ্ছে না। তারা নির্বিঘ্নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে, আশে পাশের ক্ষেত আর জনসাধারণের ক্ষতিসাধন করছে ক্ষমতা প্রদর্শনের নামে। এবং তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে রাষ্ট্র তার সম্পূর্ণ ক্ষমতা নিয়েই এইসব অভিযোগকারীকে হেনেস্তা করছে।
আমরা সবাই সেই পুরোনো বাঈজীর দরজার বাইরের মানুষ, নবাবেরা মৌজ-মাস্তি করে উচ্ছিস্ট ফেলে যাবে, হুল্লোর করবে সারা রাত, আমাদের দুচোখের পাতা লাগবে না, নির্ঘুম ভয়ার্ত সময় কাটিয়ে আমরা ভোর বেলা নবাবের দরজায় গিয়ে বলবো, আপনাদের উল্লাসের সময় আমাদের জানিয়ে দিয়েন, আমরা সে মোতাবেক আমাদের ঘুমের নিয়ম বেঁধে নিবো।
সোহেল ভাই কোনো কথা না বলে খরচোখে তাকিয়ে বললেন, শালার এমন একটা দেশ, এইখানে আইন মেনে চলার উপায় নাই। শুন ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ওভারব্রীজ বানাইছে, বলছে জনসাধারণ যেনো ওভারব্রীজের উপর দিয়ে রাস্তা পারাপার করে, আমি নিয়ম মেনে অন্য সবাই যখন রাস্তার মাঝখানে দিয়ে অন্ধের মতো ছুটে, তখনও আমি কষ্ট করে সিঁড়ি ভেঙে অভারব্রীজ দিয়েই রাস্তা পার হই, কিন্তু আজকে সেটাও পারলাম না।
ওভারব্রীজের উপরে ১০টা পুলিশ দাঁড়ানো। তাদের কাছে গিয়ে বললাম একটু ওপারে যাবো।
এদিক দিয়ে যাওয়া যাবে না, অন্যদিক দিয়ে যান।
কিন্তু-
কোনো কিন্তু না এখন প্রাইমমিনিস্টার যাবে।
তখনই বুঝলাম রাস্তার দুইপাশে এমন বিকট জ্যামের কারণ কি। অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাস্তা বন্ধ, ঢাকা শহরে এমনিতেই পূর্ব পশ্চিমের রাস্তা কম, সেখানে সেই রাস্তা ১৫ মিনিট আটকে রাখা মানে পুরো শহরকে অন্তত ১ ঘন্টার জন্য থমকে দেওয়া। কিন্তু প্রাইম মিনিস্টার যাবেন, তার নিরাপত্তবহর যাবে, সুতরাং সমস্ত শহর থমকে তাকে সম্মান জানাবে, প্রচন্ড গরমে পুড়তে পুড়তেও আমাদের নবাবজাদীকে সম্মান দেখাতে হবে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হলাম, আর তখনই তিনি পোঁ পোঁ করে হুইসেল বাজিয়ে উঠলেন রাস্তায়।
এই মিয়া থামেন, আমি নিরীহ গোছের চেহারা করে পুলিশের অফিসারকে দেখলাম, আহসান হাবীব, তিনি আমার দিকে কঠোর চোখে তাকিয়ে বললেন, থামতে কইছি না?
এমন কি রাস্তার দুইপাশের গাছের পাতা নড়লেও সন্ত্রস হয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত তাবত দেশের পুলিশ- সামরিক বাহিনী, বুঝলি, একটা কলাম লিখবো,
কলাম মানে কি সোহেল ভাই? আপনি কি কলাম লিখবেন?
আরে পেপারে, লিখবো যদি তাদের এত প্রাণের মায়া, তাহলে সমস্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদর দপ্তর অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই স্থাপন করা হোক, প্রতিটা মন্ত্রীর বাসায় বসুক সচিবালয়, তাদের গমনাগমনের জন্য সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে, নিজের বাসাকে দুর্গ বানিয়ে তারা সারাদিন নিরাপদে থাকুন সেখানে, সমস্যা নেই, কিন্ত তারা রাস্তায় নামলে বানের পনির মতো গাড়ী জমে যায় শহরের আনাচে কানাচে, সব রাস্তাই গাড়ীর বহরে তলিয়ে যায়।
এইটা লিখবেন আপনি?
ক্যান না লিখার কি আছে? তুই কি মনে করস আমার সেই হ্যাডম নাই?
আরে না মিয়া আপনের সাহস নিয়া কে কইতেছে, কইতাছি সংবাদপত্রের কথা , তাদের এই হ্যাডম আছে না কি যে তারা এই কলাম ছাপাবে।
আরে ছাপাইবো, বুঝলি, এইগুলা সব ব্যবসা। সবাই ব্যবসা করে নিজের মতো কইরা।
আপনের তো অনেক বুদ্ধি,
নান্নুর দিকে তাকিয়ে সোহেল ভাই বললেন, তো তোর কি মনে হয়?
নাহ আপনার প্রশংসাই তো করলাম।
তুই কিন্তু বিচ্ছু হইয়া গেছোস, তোরে দেইখা মনে হয় পিচ্চি পোলা, নাক চিপলে দুধ পড়বো, কিন্তু তোর মাথা ভর্তি শয়তানি,
তোরে বাচ্চা বাচ্চা লাগলেও, বুঝলি তোর নাক টিপলে টপটপ কইরা মাল পড়বো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।