আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোহেল ভাই ০০৮

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

সোহেল ভাইয়ের জরুরী তলব পেয়ে প্রায় বিছানা ছেড়েই উঠে আসলাম ময়না ভাইয়ের দোকানে, এসে দেখি মারুফ, নান্টু, নান্নু, রাশেদও একই রকম হতভম্ব ভাব নিয়ে অপেক্ষা করছে ময়না ভাইয়ের দোকানের সামনে, কিন্তু সোহেল ভাইয়ের পাত্তা নাই। আমরা একে অন্যের চেহারা দেখছি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। অবশ্য সবারই একই রকম আকাশ থেকে পড়া অবস্থা, কেউই কিছু বুঝছে না। সোহেল ভাই কাউকে এমন সাত-সকালে তলব করবার মানুষ না। তুই কিছু জানোস? সবাই মাথা নাড়ায়।

সোহেল ভাইকে দেখে আহ্লাদিত হলাম এমনটা বলবো না, বরং একটু চাপা আশংকাই তৈরি হলো মনের ভেতরে। সে আশংকা কোনো মতে চেপে সোহেল ভাইকে বললাম, মহারাজ কি কারণে এ জরুরী তলব? যুদ্ধে যেতে হবে? ফাজলামি রাখ, সকালে যাচ্ছিলাম বন্ধুর বাসায়, তো রোড আইল্যান্ডের কাছে দেখলাম মৃনাল হক দাঁড়িয়ে আছে। ঘটনার কিছুই বুঝলাম না আমরা, আমাদের রাস্তাটা যেখানে গিয়ে বড় রাস্তায় উঠেছে তার একটু সামনেই রোড ডিভাইডার তৈরি হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক আমলে করা কাজ, তখন ট্রাফিক সিস্টেম ভালো করবার অনেক প্রচেষ্টাই ছিলো হয়তো। কিন্তু এর সাথে মৃনাল হককে জড়ানোর কোনো অর্থ খুঁজে পেলাম না আমি। তো কি হইছে সোহেল ভাই? মারুফ নির্দোষ প্রশ্নটা করলো।

ব্যাটা এলাকার ছেলে হিসাবে আমাদের একটা কর্তব্য আছে না। মৃনাল হকের নজর পড়বার আগেই ঐটা দখল করে ফেলতে হবে। ঐখানে একটা জীবন্ত ভাস্কর্য বানায়া ফেলবো বুঝলি। আমরা পরস্পরের চেহারা দেখি, সবাই আমার মতোই বাকরুদ্ধ, সোহেল ভাই এবং ভাস্কর এই দুটো বিষয়কে কেউই এক করতে পারছে না। নান্নু বললো মৃনাল হক ব্যাটা কেডায়? রাশেদও তার সমর্থনে মাথা নাড়লো- আচ্ছা আগে বলেন তো সোহেল ভাই, মৃনাল হক লোকটা কে? ও রোড আইল্যান্ড দেখলে ক্ষতির কি আছে? মারুফের দিকে তাকিয়ে হতাশায় মাথা নুইয়ে সোহেল ভাই বললো, উজবুক দুইটাকে তুই বুঝা তো মৃনাল হক কেডা।

ঐটাতো আমারও প্রশ্ন সোহেল ভাই। সুতরাং সোহেল ভাইকেই খোলস খুলতে হলো। ঢাকা শহরে যত রোড আইর‌্যান্ডের ভাস্কর্য আছে, ধল শেরাটনের সামনে, মিন্টু রোডের সামনে, তেঁজগাও, এয়ারপোর্ট রোড, সবগুলা কাজই এই একজনের করা। তিনিই মৃনাল হক। কিন্তু আপনি কি করবেন? আপনি কি জীবনে কোনো দিন মাটি দিয়া ইট বানাইছেন ? একটা ভাস্কর্যের আপনি কি বুঝেন? ঐ ব্যাটাই বা কি বুঝে ক? মৃনাল হক আমাদের মহল্লার সামনের রাস্তায় সড্য গজিয়ে উঠা রোড আইল্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এটা দেখে সোহেল ভাইয়ের ধারণা জায়গাটাতে মৃনাল হকের নজর পড়েছে, সে এখানে একটা ভাস্কর্য তৈরি করার আগেই সোহেল ভাই এটার দখল নিতে চায়।

আমি সমঝদারের মতো মাথা নাড়াই- তো আপনার ভাস্কর্য কেমন হবে? একটা লাইভ ভাস্কর্য বুঝলি, কাশ বাগানে বাঁশঝাড়। থুতনিতে বালির স্পর্শ্ব পেলাম মনে হলো, কাশ বাগানে বাঁশ ঝাড়ের মরতবা বুজি নি আমি, এবং অন্য সবার অবস্থাও আমার মতোই করুণ। দেখ এইখানে আগে ছিলো জলা, সে জলায় ছিলো কাশ বন, সেই কাশ বন দখল করে প্রকৃতিকে বাঁশ দিয়ে আমরা একটা উপনগর বানাইছি, এই হইলো ভাকর্যের বক্তব্য। এইটা সিম্বলিক একটা জিনিষ, তোরা বুঝবি না। তো আমাদের কি কাজ হবে? তোরা কাশ ম্যানেজ করবি, আমি বাঁশ ম্যানেজ করতে পারবো নার্সারি থেকে।

সকাল বেলা ইরাক যাওয়ার খবর পেলেও এতটা মেজাজ খারাপ হতো না আমার, কিন্তু সোহেল ভাইয়ের সামনে এইসব প্রকাশ করা যাচ্ছে না। সোহেল ভাই আপনাকে চায়ের বিল দিতে হবে, বুঝতেছেনই তো কাশ বন হওয়ার মতো নদী কিংবা পানি এখানে নাই, সেইটার ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের। অনেক জটিল কাজ। সেইটা আমি দেখতেছি, তোরা কাশ বন ম্যানেজ কর।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।