অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
এইটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সভ্য দেশের এমন বর্বর আচরণ কোনো ভাবেই মানা যাচ্ছে না।
সোহেল ভাইয়ের হাতে একটা খবরের কাগজ, সেটাই বসে বসে পড়ছিলেন, হঠাৎ এমন ক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ার মতো কোনো সংবাদ আজকের পত্রিকায় আসে নি, কিন্তু এমন ক্ষেপে গেলেন যখন, কিছু একটা ঘটেছে, যা আমাদের চোখে পড়ে নি।
সোহেল ভাই কি হইলো? ক্ষেইপ্যা গেলেন ক্যান?
আর কইস না, শালার এই অন্যায়টা মানা যাচ্ছে না, কিন্তু এইটাই নাকি প্রতিষ্ঠিত নিয়ম।
কিসের নিয়ম? কি কন বাল কিচ্ছু বুঝি না।
আরে মহামারী ঠেকানোর তরিকা নিয়া কথা কই। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন কনটামিনেটেড ডিজিজ প্রিভেনশন এবং ফাইটিং টেকনিক ঠিক করছে।
সব কথাই আমাদের মাথার অনেক উপর দিয়ে এমন কি মনে হয় ময়না ভাইয়ের দোকানের পাশের যে এপার্টমেন্ট বিল্ডিং সেইটারও উপর দিয়ে গেলো।
নান্নু মাঝখান থেকে বললো, সোহেল ভাই একটু আমাগোর মতো লেভেলে নাইম্যা কথা কন, তাইলে না কিছু বুঝবো।
'হু' মানে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেসন, মানে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারি এবং সংক্রামক ব্যধি ঠেকানোর একটা নিয়ম করছে, যেখানে আশংকা করা হবে কোনো ভয়ংকর রোগ হয়েছে সে স্থানকে একেবারে বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে।
সেখান থেকে কাউকে বের হতে দেওয়া হবে না।
আমরাও শিউড়ে উঠলাম কথা শুনে, কি ভয়ংকর কথা এইটা। একটা এলাকায় মহামারী হলো, হাজার হাজার লোক অসুস্থ, হাসপাতালে জায়গা নাই, কিন্তু সবাইকে সেই খানে গারদে আটকায়া রাখবে আর তারা মৃত্যুর অপেক্ষা করবে? এইটা কোনো নিয়ম হইলো। পৃথিবী এত খারাপ জায়গা হতে পারে না।
সোয়াইন ফ্লু হইছে এইটা জানোস তোরা?
আমরা না জানার কিছু নেই, এইটা নিয়ে ময়না ভাইয়ের চায়ের দোকানে অনেক আলোচনা হয়ে গেছে আমাদের।
এমন অবস্থা ঘরে বাইরে রাস্তায় সব খানেই সোয়াইন ফ্লু আর সোয়াইন ফ্লু।
রাশেদ সময়ের ধারাবাহিকতা দেওয়া শুরু করলো, প্রথম মেক্সিকোর একটা শহরে ধরা পড়ে সোয়াইন ফ্লু, সেখান থেকে সেটা ছড়িয়ে যায় আমেরিকায়, এখন বিশ্বের অন্তত ২১টা দেশের সোয়াইন ফ্লুর রোগী পাওয়া গেছে।
কিন্তু তোরা তো এই খবরটা দেখোস নাই, মেক্সিকোর সাথে সবার যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হইছে, হংকংএ এক হোটেলে একজনের সোয়াইন ফ্লু হইছিলো, সেই হোটেলটাকে সিল করে দেওয়া হয়েছে, সবাই চেক আপের ভিতর দিয়ে গেছে।
মানুষ বাঁচতে চায়, খুব স্বার্থপর এবং পাশবিক ভাবেই বাঁচতে চায়। এবং মানবিকতা কিংবা সহমর্মিতা বোধ বলে কিছু নেই মানুষের , জীবনের প্রশ্নে সবাই ভয়ংকর রকমের স্বার্থপর।
তারা নিজের নিরাপত্তার জন্য আরও ১০০ মানুষের মৃত্যুকেও আগ্রহ নিয়ে বরন করবে।
সুতরাং এটাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই , মেক্সিকো কেনো যদি আমেরিকার কোনো শহরে এটা শুরু হতো, সেই শহরের সব মানুষকেই বন্দী করে ফেলা হতো। সমস্ত সড়ক অবরোধ করে একটা ত্রাসের রাজত্ব সেখানে শুরু হতো। মানুষ যতটা না অসুস্থ হয়ে মরতো তার চেয়ে বেশী মরতো আতংকিত হয়ে। সেখানে সাদা মাস্ক পড়ে হেলিকপ্টার চড়ে ডাক্তার আর আর্মি অফিসার যেতো।
কয়েকজনকে নেড়ে চেড়ে ওবামার সাথে বৈঠকে বসতো, এটা যদি অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে বিশ্বকে নিরাপদ রাখবার জন্য কোনো দেশ থাকবে না।
আমেরিকা নিজেকে বিশ্বের পাহারাদার মনে করে, মনে করে তারাই পৃথিবীর নিরাপত্তার ভার নিয়ে বসে আছে, সুতরাং তাদের টিকে থাকবার এবং বিশ্বকে নিরাপদ রাখবার গুরু দায়িত্ব আছে। প্রেসিডেন্ট এর আগেও দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে মনে করে দুইটা দেশ বোমা দিয়ে ঝাঁঝড়া করে ফলেছে, এটা নিজের দেশের ১০০ মানুষ, তাদের মেরে ফেলতেও এক মুহূর্তও চিন্তা করতো না তারা।
সোয়াইন ফ্লু শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকা মেক্সিকোর সাথে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, চীন আর্জেন্টিনা তাদের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়, মেক্সিকো থেকে যে কয়জন মানুষ অন্যান্য দেশে গিয়েছে তাদের সবাইকে অন্তরীণ করে রাখা হয়। এইসব সংবাদ একটা বাস্তবতাই তুলে ধরে, সবাই ধারণ করছে বিশ্বের জনসংখ্যা রাতারাতি কমে যাবে এই ভাইরাসের আক্রমনে।
এত এত বড় বড় প্রতিষ্ঠান, মরা ধন খাঁড়ানোর ট্যাবলেট বানায়া ফেললো, তারা ভাইরাস মারার একটা ওধুধ বানাতে পারবে না? আমাদের চিরকুমার হাজারী ভায়াগ্রা খায়া ধন দিয়ে পোলভোল্ট খেলে দোতালায় উইঠ্যা যায় সিঁড়ি ছাড়া, আর একটা ভাইরাসরে কাবু করতে পারবে না তারা।
কিন্তু এইটা কেমন নিয়ম, একটা সম্পূর্ণ শহরকে চারপাশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে মহামারী ঠেকানো। এর চেয়ে বড় মাপের কোনো আতংকে কি তাহলে আস্ত শহর বোমা মেরে বিলীন করে দিবে, না কি আটম বোমা মারবে শহরে?
পৃথিবী এমনই, তোরা যেমন ভাবোস তেমন না পৃথিবী, এইজন্যই কই নাক কান চোখ খোলা রাখ, চারপাশে দেখ, আমার কথা তো শুনবি না। নিজেগোর ভিতরে মাইয়া নিয়া কামড়াকামড়ি করবি তোরা। পৃথিবীর কোনো উপকারে আসবি না।
এই জন্যই বুঝলেন সোহেল ভাই ইসলাম ধর্মে বলছে শুকরের সাথে কোনো সম্পর্ক রাইখো না। শুকরের সাথে সম্পর্ক রাখলে এইটা হবেই। বাংলাদেশে এইটা হবে না, বুঝলেন।
তোরে কইছে , প্রথম যেই মানুষটা মারা গেছে সেইটা বাংলাদেশী। যদিও বাংলাদেশে মারা যায় নি, গেছে মেক্সিকোতে।
আর ধর্ম দিয়া কি ধুইয়া পানি খাইবো, পেট আগে না ধর্ম আগে?
তা কই নাই, কিন্তু শুয়র পশুটাই খারাপ।
মানুষ পশুটা কি খুব ভালো? কোনো শুয়োররে দেখবি তুই এই রকম কইরা একটা শুয়োরের খোঁয়ার আটকায়া বইয়া বইয়া মজা দেখবে?
মারুফ অনেকক্ষণ ভেবে মুখ খুললো, আচ্ছা এইটা ছড়ায় কিভাবে?
ছড়ায় কিভাবে মানে?
না ভাইরাস তো , ভাইরাস ছড়ায় কিভাবে, ধরেন আপনার সর্দি হইলো, আপনি হাঁচি দিলে আপনার পাশের মানুষের এইটা হইতে পারে, বাতাসে ছড়াইতে পারে ভাইরাস, তো শহরটা সিলগালা কইরা ফেলাইলেও তো সেখানকার বাতাস চারপাশে যাবে, সেইটা ঠেকাবে কিভাবে?
আরে উজবুক এতটা সহজ না, ভাইরাস কি সবাইকে ধরে? যার একবার চিকেন পক্স হইছে, সে কি সেকেন্ড টাইম চিকেন পক্সে ভুগে? একটা শহরে একটা মানুষের ফ্লু হইলে কি সবার হয়ে যায়? হয় না
কাছাকাছি থাকলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। হয়তো ভাইরাসটা ভিতরেই থাকে, কিন্তু যখন জ্বর সর্দি শুরু হবে, মনে করতে হবে তারও ২ সপ্তাহ আগে এইটা শুরু হইছে।
তো ছড়াবে কিভাবে?
শুয়োরের কাছ থেকে মানুষের কাছে আসলো কিভাবে এই রোগ?
মনে কর কোনো একটা শুয়োরের হইছিলো, তার কোনো একটা অংশ এমন মানুষের কাছে গিয়েছে, যারা এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরক্ষা নাই। আর ভাইরাসতো অনেক স্মার্ট, এরা প্রতি বছরই নিজের শরীর বদলায়া ফেলে, আজকে যেইটা দেখলি, তোর গা থেকে যখন ঐটা আরেকজনের গায়ে যাবে, তখন তোর শরীরের একটা চিহ্ন নিয়া যাবে।
সন্দেহটা এইখানেই, মানুষ এইটাকেই ভয় পাচ্ছে। যদি ঐটা নিজের শরীরটাকে বদলায় ফেলতে পারে তাহলে মানুষ শেষ।
ধরেন সোহেল ভাই, পশুর শরীর থেকে যেমন মানুষের শরীরে ভাইরাস আসলো, মানুষের শরীর থেকে পশুদের শরীরে কি এই রকম ভাইরাস যাইতে পারে?
তাতো যাইতে পারেই। মানে এমন বাধা বিপত্তিতো হওয়ার কথা না। পৃথিবী আজ্জব জায়গা।
ধর একটা বোলতা আছে, যে নিজে ঘর বানায় না, কিন্তু যখন মনে হয় পরিবার বাড়ানো দরকার, তখন একটা শুঁয়াপোকা খুঁইজ্যা বাহির করে, তার পরে ঐ শুঁয়াপোকার ভিতরে ডিম পাড়ে।
সেই শুঁয়াপোকা একদিন বড় হয়, যখন প্রজাপতি হওয়ার সময় আসে, তখন সেই প্রজাপতি ফটাস করে ফেটে যায়, সেখান থেকে দুই চার দশটা বোলতা বাহির হয়।
ভাইরাসও এইরকম।
পোষক দেহ খুঁজে, যার শরীরে আশ্রয় পায়, সেখানে বড় হয়, কিন্তু সবার শরীরে তো টিকতে পারে না।
যেমন ধর মশা, তোর এইডস হইলো, আর তোকে মশা কামড়ালো, সেই মশা যদি আমাকে কামড়ায় তাহলে আমার এইডস হবে না।
মশার পেটের ভিতরে যাওয়ার আগেই সেই ভাইরাস মরে যাবে।
তাহলে তো ভালো, অন্তত ম্যালেরিয়ার মতো এইডস ছড়াবে না।
আচ্ছা বলেন দেখি, কুকুরের সর্দি হয়?
হয়তো । দেখিস নাই।
সেইটাকি মানুষের সর্দি হইলেই হবে?
মানে?
না ধরেন আমার একটা পোষা কুকুর আছে, আমার যদি ভাইরাল ফিভার হয় তাহলে কি আমার কুকুরেও ভাইরাল ফিভার হবে?
হইতে পারে।
বলা যায় না।
তাহলে কি কুকুরকে নিয়ে গিয়ে ফ্লুর টিকা দিয়ে নিয়ে আসবো?
নিয়ে আসতে পারিস। সেইটা সমস্যা না।
আচ্ছা কুকুরের কি এইডস হয়?
কি জানি, কেনো?
না বিদেশে সবারই তো পোষা কুকুর বিড়াল থাকে, তাদের পোষা প্রাণীদের কারো এইডস হইছে?
তা তো কইতে পারবো না। কেনো বলতো।
না এমনি জিগাইলাম।
ধর এইডস হয় কিভাবে? এইডস ছড়ায় যখন তুই অনেকের সাথে আনপ্রোটেক্টেড সেক্স করবি, আর তাদের কারো যদি এইডস থাকে তাহলে, আর রক্ত যদি তোর শরীরে ঢুকে, সুই সিরিঞ্জ দিয়ে।
হুমম, কিন্তু এইটাও তো একটা ভাইরাস না। ভাইরাস তো ছড়ায়।
আমরা চিন্তিত হই।
কিন্তু বিজ্ঞাপনের ভাষায় আশ্বস্ত হই, এবং তেমন উদাহরণ নেই, সামাজিক বয়কট করে অন্তত এইডসের রোগীদের কেউ আলাদা করে মেরে ফেলছে না, বিদেশে কিংবা বাংলাদেশে।
আচ্ছা যাদের এইডস আছে, তাদের পোষা প্রাণীদের কি এইডস হওয়ার সম্ভবনা আছে কোনো?
রাশেদ গম্ভীর মুখে মারুফের প্রশ্নের উত্তর দিলো।
শুন, এইডস ছড়ায় কিভাবে এইটা তো সোহেল ভাই কইলোই। তো তোর কি মনে হয় কেউ তার পোষা কুকুরকে রক্ত দিবে? মানে প্রত্যেকটা প্রাণীর রক্তের ধাঁচ আলাদা। ম্যাচ না করলে এমনি মারা যাবে, তো এইডস হইলো কিনা বুঝা যাবে না।
আর অন্যটা হইলো যৌন সম্পর্ক। পশুদের ভিতরেও এইসব নষ্টামি আছে, তারাও সুযোগ পাইলে অন্য প্রজাতির পশুদের সাথে সঙ্গম করে। মানুষেরও এইসব বদভ্যাস আছে। কিন্তু পোষা প্রাণীর সাথে কেউ কি এইরকম শাররীক সম্পর্ক করবে?
যদি করে তাহলে একটা সম্ভবনা আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।