আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিস্তি ৩: মেরিল-প্রথম আলো চলচ্চিত্র ‘সমালোচক পুরস্কারের’ রাজনৈতিক অর্থনীতি



১ম কিস্তি: Click This Link ২য় কিস্তি: Click This Link এসময় গাড়ির হর্ন বাজিয়ে কাকতালীয়ভাবে উকিল আপাও দৃশ্যপটে হাজির হন। চানমিয়া বলে, ‘আহেন উকিল আপা আহেন, তামশাটা দ্যাহেন। এরা আইছে আমার ভাড়াইট্টা মাইয়াডারে তুইলা নিতে। ’ আফরোজা বলে: ‘এরা কারা?’ এসময় রমিজ আগ বাড়িয়ে বলে, ‘আমরা বউ আপা, রাগের মাথায় বকছিলাম বইলা ঘর ছাইড়া পালাইয়া আসছে। ’ কুসুম আফরোজার পায়ের কাছে গিয়ে পড়ে, বলে যে ওর ডরেই সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে, ও তার বাবারেও খুন করেছে।

এসময় দোলনও এসে পড়ে। সে রমিজের উদ্দেশ্যে বলে, তুমি যে ওরে বিয়ে করছো, কোনো প্রমাণ আছে। রমিজ বলে, আছে। আফরোজা বলে, ‘বিয়ে করলে নিশ্চয় কাবিননামাও আছে। ’ রমিজ বলে, ‘হ, দ্যাহান যাইবো।

’ আফরোজা উকিল সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে তিন দিনের মধ্যে রমিজকে কাবিননামা নিয়ে হাজির হতে হবে, এ-কয়দিন কুসুম তার হেফাজতেই থাকবে। এরপর রমিজ, চানমিয়া, কুসুম সকলকে নিয়ে উকিল আপা থানার দিকে রওয়ানা দেয় জিডি করতে এবং স্ট্যাম্পপেপারে রমিজসহ অন্যদের সই নেয়ার জন্য। তিনদিন পার হয়, রমিজ-খালেকরা আর আসে না। উকিল আপা চানমিয়াকে পরামর্শ দেন দোলনের সাথে কুসুমের বিয়ে দিয়ে দিতে। কারণ ধাপ্পাবাজি দিয়ে কুসুমকে নিয়ে যেতে এসেছিল রমিজরা।

কিন্তু স্ট্যাম্পপেপারে সই করার ফলে এখন আর প্রতারণার সুযোগ নাই, সেহেতু রমিজ আর এমুখো হবে না- উকিল আপা এব্যাপারে নিশ্চিত। তিনি এরকম কেস আগেও অনেক দেখেছেন। বেশ জাঁক করে বিয়ে সম্পন্ন হয়। একটা গান ও নাচানাচির দৃশ্যের মধ্য দিয়ে বিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। এরপর বাসর রাতে কুসুম জানালা বন্ধ করতে গেলে, পাশে লুকিয়ে থাকা খালেক ও রমিজ তার মুখে এসিড ছুঁড়ে পালিয়ে যায়।

কুসুমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ফাতেমা ও অন্য একটি মেয়েকে কুসুমের পাশে বসিয়ে রেখে উকিল আপা দোলনকে নিয়ে ডাক্তারের কক্ষে যান। ডাক্তার বলেন, ‘একচুয়ালি এসিডদগ্ধ বা পোড়া যায়গায় যদি পানি দেওয়া যায় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। ’ ...এখন আপনাদের কিছু করার নাই, রোগী যেহেতু আমাদের কাছে এসে গেছে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো রোগীকে ভালো করে তুলতে। ’ পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হয়, পুলিশ রমিজ-খালেককে খুঁজতে থাকে।

এরকম দুইটা দৃশ্যের পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ‘বার্ন ভবন’ তার দেয়ালে সাঁটা পোস্টার ও কয়েকটি এসিড আক্রান্তের ফ্রেমবদ্ধ ছবি দেখানো হয়। কুসুমকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। এসিড-দগ্ধ ও প্রথম আলোর কল্যাণে সুস্থ হয়ে-ওঠা বাস্তবের তিনটি মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কুসুমকে উদ্দেশ্য করে বলে: ‘তোমাগো রিলিজ দিছে? বাড়ি যাইতাছো?’ কুসুম ওদের মুখের চেহারা দেখে নিজ অবয়বের কথা ভেবে আঁৎকে ওঠে। কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়ে যায়? যাহোক, কুসুম বস্তিতে ফেরে। ঘরে দোলন বসে, কুসুম আয়নাতে নিজের মুখ দেখে বিকার বকতে থাকে, আয়নাটা ছুঁড়ে ভেঙ্গে ফেলে।

আর দোলন সান্তনা দেয় সব ঠিক হয়ে যাবে, আয়নায় দেখা রূপই কি আসল। কিন্তু কুসুমের মন কিছুতেই বাধ মানে না। রাতে সিঙ্গেল বিছানায় দোলন-কুসুম শুয়ে আছে, দোলন পূর্ববৎ জিন্স ও সার্ট পড়া। দূরাগত ট্রেনের হুইসেল শোনা যায়। কুসুম সন্তর্পণে বিছানা ছেড়ে ওঠে এবং একটু পরেই রেললাইন ধরে তাকে দৌড়াতে দেখি আমরা- সে আত্মহত্যা করবে।

এদিকে দোলন বিছানায় পাশ ফেরে, হাতড়িয়ে দেখে কুসুম নেই, সেও ট্রেনের হুইসেল শোনে এবং ‘কুসুম...দাঁড়া কুসুম’ চিৎকার করতে করতে কুসুমের পিছু নেয়। ট্রেন এগিয়ে আসছে। কুসুম আগে, পিছে দোলন- একেবারে শেষ মুহূর্তে দোলন কুসুমকে নিয়ে ছিটকে পড়ে রেললাইন থেকে, আর গাড়িটা পর্দাজুড়ে ঝমাঝম করে বেরিয়ে যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে আত্মহননের আকাঙ্ক্ষা জাগা খুবই স্বাভাবিক। সেটা নিয়ে প্রশ্ন নেই।

বিরক্তি লাগে পরিস্থিতির স্টিরিওটাইপ দৃশ্যায়ন নিয়ে। এটাও দর্শক-মনে নাটকীয় অভিঘাত সৃষ্টির অতি-পুরনো সিনেমা-স্ট্যাইল। বাংলা সিনেমায় বহু পরিস্থিতিতেই নায়িকা/নারী আত্মহত্যা করতে যায়, রেললাইনে দৌড়াতে থাকে এবং প্রায় ব্যতিক্রহীনভাবে শেষ মুহূর্তে নায়ক/পুরুষ তাকে উদ্ধার করে, রেলগাড়ি ঝমঝমিয়ে বেরিয়ে যায়। দোলন কুসুমকে নিয়ে উকিল আপার অফিসে যায় ভালোমতো বুঝানোর জন্য। উকিল আপা ওকে বুঝায়, এটা করা কুসুমের একদম উচিত হয়নি, কারণ তার বর দোলন তাকে অত্যন্ত ভালোবাসে।

পুরুষ যেমন নারীকে উদ্ধার করে ব্যতিক্রমহীনভাবে, তেমনই যেহেতু পুরুষ/দোলন তাকে ভালোবাসে তাই যেন তাকে বেঁচে থাকতে হবে, নিজের জীবনের নিজস্ব লড়াইয়ের জন্য নয়- এসব প্যাট্রিআর্কিক ভাবনা আফরোজার মতো প্রগতিশীল সমাজকর্মীর মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে। আর তাছাড়া তিনি বলেন, ‘আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কল্যাণে তোমার মতো অনেক দুর্ভাগা মেয়ে আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। ’ আফরোজা বলে সে কালই কথা বলবে, মাস দুয়েক আগে একটা এনজিও কয়েকজন এসিডদগ্ধ মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে এনেছে, তারা এখন দিব্যি কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছে। পরের দৃশ্যে আমরা দেখি আফরোজা শুভ্রর স্টুডিওতে, যে শুভ্রকে আমরা প্রথম দৃশ্যে পেয়েছিলাম- গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে যে কুসুমের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। এবং তারপর একটা দৃশ্যের আমরা শুভ্রকে দেখেছি তুলি নিয়ে এক নারীর পোর্ট্রেটে পোঁচ দিচ্ছে।

তখন তার এক বন্ধু এসে বলেছিল, ‘বাহ সুন্দর তো। ’ সে ছবিটা কিনতে চায় কিন্তু শুভ্র বলেছিল ‘নো মাই ডিয়ার, ছবিটা আমি বিক্রি করব না, এটা আমার স্বপ্নের ছবি। ’ পোর্ট্রেটটা ছিল কুসুমের। যাক, আফরোজা বলে, একটা এগজিবিশনের কথা বলছিলে না...কোনো পার্টিকুলার থিমের ওপর?’ জবাবে শুভ্র জানায়, তারা তিন বন্ধু মিলে এগজিবিশন করছে, তার থিম ‘গ্রাম বাংলা’ তার আরেক বন্ধুর থিম ‘ঢাকার বস্তি’ এবং অন্য বন্ধু পপির থিম ‘ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভবন’। দোলন অধিরভাবে পায়চারি করে উকিল আপার বাড়ির সামনে, কুসুমের ব্যাপারে কিছু করতে পারলো কিনা জানতে চায়।

আফরোজা জানায়, ইতোমধেই অনেকদূর এগিয়েছে, বেশকিছু প্রতিশ্র“তি পেয়েছেন, আর লাখ দুয়েকের ব্যবস্থা হলেই কুসুমকে বিদেশে পাঠানো যাবে। দোলন জানায় সেও কিছু টাকা জোগাড় করেছে, গার্মেন্টস মালিক ৫০ হাজার টাকা ডোনেট করবেন, কথা দিয়েছেন। পরের দৃশ্যে প্রতীক্ষারত কুসুমকে কয়েক মুহূর্ত দেখা যায়। তার পরেই আরেকটা দৃশ্যে হন্তদন্ত দোলন আফরোজার ঘরে ঢোকে একটা ব্যাগ হতে, বলে, ‘উকিল আপা, এই ব্যাগে অনেক টাকা আছে, কুসুমরে আপনি কাইলই বিদেশ পাঠানের ব্যবস্থা করেন। ’ আফরোজা বলেন, ‘এই ব্যাগ তুমি কোথায় পেলে?’ দোলন বলে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে।

রাস্তায় পড়ে ছিল, তারও টাকা দরকার তাই তুলে এনেছে। আফরোজা বলেন, ‘এই ব্যাগের ওপর তোমার আমার কারো অধিকার নেই, ব্যাগটা প্রকৃত মালিকের কাছে অথবা তাকে না পেলে থানায় জমা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। ’ দোলন হতাশ হয়, স্বীকার করে কুসুমের চিকিৎসার জন্য সে ব্যাগটা হাইজ্যাক করেছে। আফরোজা ব্যাগ হাতড়িয়ে পরিচয়পত্র বের করে বলেন, ‘একটা অন্যায় অসুন্দর কাজের মাধ্যমে অর্জিত টাকায় কুসুমের সুন্দর মুখ তুমি ফিরিয়ে আনতে চাও? ওই মুখ দেখে তুমি শান্তি পাবে?’ দোলন ক্ষমা চায়, বলে কুসুমের চিকিৎসা ছাড়া আর কিছু সে ভাবতে পারছে না, তার বিবেক মনুষত্ব্য সব হারিয়ে গেছে। কাকতালীয়ভাবে এই ব্যাগটাও ছিল শুভ্রর, এবং শুভ্র তার এগজিবিশন থেকে পাওয়া টাকা থেকে এক লক্ষ টাকা দান করেন দোলনের স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য।

তখন আফরোজা এই মহানুভবতার প্রশংসা করার ভাষা খুঁজে পান না, বলেন ‘শিল্পী হিসেবে তুমি সত্যি একটা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে। ’ একটা বিমান উড়ে যায়, বুঝা গেল কুসুমকে বিদেশ পাঠানো হলো, এবং তারপর চানমিয়া দোলনকে চাঙ্গা-হওয়ার-মতো একটা খবর দেয়, রমিজ ও খালেক ধরা পড়েছে। আফরোজা উকিল বাদি পক্ষের হয়ে লড়েন। বিচারে এসিড নিক্ষেপ ও খুনের অপরাধে রমিজের ফাঁসি হয় এবং তাকে সহযোগিতা করায় খালেকেরও ফাঁসির রায় দেয়া হয়। আবারও ‘এসিড নিক্ষেপের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড’ পোস্টার দেখানো হয়।

যারা আদালতে গেছেন তারা বুঝবেন, বাস্তবের আদালত আর বাংলা-সিনেমার আদালতের মধ্যে কতোখানি ফারাক থাকে। এখানেও সেই ফারাক চোখে পড়ে। সর্বশেষ দৃশ্যে একটা বিমান অবতরণ করে। অবিকল আগের চেহারায় কুসুম ফিরে আসে- যদিও প্লাস্টিক সার্জারি করে আমাদের প্রক্তন প্রধানমন্ত্রীও অবিকল চেহারায় ফিরতে পারেননি, তার সব আলোকচিত্র একপাশ থেকে তুলতে হতো। শুভ্র এবং দোলন দূরে দাঁড়িয়ে।

ভিতর থেকে আফরোজা কুসুমকে সাথে নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ায়, বলে ‘ওই যে দোলন তোমাকে নিতে এসেছে। ’ শুভ্র বোঝে এই তার স্বপ্নের সেই মেয়েটি। কুসুম হাতের ব্যাগ ফেলে দিয়ে এক দৌড়ে দোলনের বুকে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। স্লো-মোশনে এই দৃশ্য দেখানো হয়, ব্যকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে ‘কাছে আসবে বলে ভালোবাসবে বলে...’। এভাবে মধুর মিলনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে আয়না সিনেমার।

ছবির নাম আয়না কেন আয়না একটা রূপক। ধরা হয় আয়নাতে ফুটে ওঠে বাস্তব। ‘সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ’ একথা অনেকেই বলেন। হালে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী-আরোপিত ‘জরুরি পরিস্থিতি’কালের সংবাদমাধ্যমকে কোনো কোনো উপদেষ্টা এবং সেনাপ্রধান পার্লামেন্ট বলেও ঘোষণা দিচ্ছেন। প্রথম আলোর সমালোচক বর্গে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় আয়না।

প্রথম আলো নিজেকেও সমাজের আয়না মনে করে- যদিও সে আয়নাতে কেবল তাদের কাক্সিক্ষত ইমেজই ফুটে ওঠে। আয়না চলচ্চিত্রের নামকরণে সংবাদপত্রের ‘বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা’ পরিবেশনার মতো আপ্তবিশ্বাসের ছাপ পাওয়া যায়। তিনটি ছবির মধ্যে প্রতিতুলনা পপুলার ফিল্মের একটা মৌল উপাদান হলো দ্বন্দ্ব- ভালো এবং মন্দের দ্বন্দ্ব, শুভ এবং অশুভর দ্বন্দ্ব। ভালোমন্দ মিলে জীবনের যে বহমানতা তা পপুলার ফিল্মে বিশেষ দেখা যায় না। বরং অশুভ শক্তি প্রবল এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়, জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে।

কিন্তু শেষপর্যন্ত শুভশক্তির জয় হয়। মিলনের অনাবিল আনন্দে পরিসমাপ্তি ঘটে। ভালো এবং মন্দের এই দ্বন্দ্বে দর্শক-শ্রোতার মন দ্রুত সাড়া দেয়, অশুভের বিনাশ চায়। প্রপাগান্ডার জন্যও এই কৌশল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন মার্কিন সরকার- ও মিডিয়াগুলো সেদেশের জনসাধারণের মনে সবসময় অশুভ শক্তির ভয় জাগিয়ে রাখে।

নিজেদের ‘গণতন্ত্র’ ‘মানবাধিকার’ ইত্যাদি ‘শুভ’ শক্তির সাপেক্ষে বহির্দেশে ‘অশুভ শক্তি’ নির্মাণ করতে থাকে, যারা কিনা মাকিনি ‘গণতন্ত্রের’ জন্য হুমকিস্বরূপ। আর এভাবেই বিদেশে মার্কিনি যুদ্ধগুলোর পক্ষে জনমত আদায় করে নেয়। নন্দিত নরকে এবং অন্তর্যাত্রায় আমরা শুভ-অশুভের এরূপ দ্বন্দ্ব দেখি না। কিন্তু আয়নার জোড়াতালি দেওয়া কাহিনী পুরোটাই শুভ-অশুভের দ্বন্দ্বের চাকায় ভর দিয়ে এগোয়। কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্যের দিক থেকে নন্দিত নরকে ও অন্তর্যাত্রা যতোটা সবল, আয়না সেতুলনায় ততোটাই দুর্বল।

দৃশ্যায়ন ও সম্পাদনায় অন্তর্যাত্রা অনন্য, ডিটেইলের ব্যবহারেও। নন্দিত নরকের কাহিনী সবচে শক্তিশালী হলেও সম্পাদনার ত্র“টি চোখ এড়ায় না। কিন্তু এসব কোনো দিক থেকেই আয়না অন্য দুটি চলচ্চিত্রের কাছে ভিড়তে পারে না। আয়নাতে আমরা মেক-আপের অতিরঞ্জিত ব্যবহার দেখি, আলোর সিনেমাটিক ব্যবহার একটুও দেখি না। অভিনয়ের দিক থেকে আয়নায় অতিনাটকীয়তা আছে, অবাস্তব নাচ-গান আছে।

কিন্তু নন্দিত নরকে ও অন্তর্যাত্রায় অভিনয়ে কোনো চরিত্রকে অস্বাভাবিক লাগে না, হঠাৎ খাপছাড়া নাচগান শুরু হয় না। নন্দিত নরেকে ও অন্তর্যাত্রার কাহিনী ও নির্মাণে সৃজনশীলতার ছাপ পাওয়া গেলেও আয়নায় তা একেবারে নাই- আয়না এককথায় প্রেসক্রিপশনমাফিক নির্মিত এবং প্রেসক্রিপশনদানে নিয়োজিত। আয়নাকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের পোলিটিক্যাল ইকোনমি আয়না বাংলালিংক নিবেদিত নারী নির্যাতন বিষয়ক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হতে পারতো। আয়নায় কাহিনী বা চরিত্রগুলোর অস্বাভাবিক-খাপছাড়া প্রকাশ আছে, বিকশিত হয়ে-ওঠা নেই। দেখে মনে হয় নারী নির্যাতন, বিশেষত এসিড নিক্ষেপ, সম্পর্কে একগুচ্ছ বক্তব্য প্রকাশের জন্য চলচ্চিত্রটি বানাতে বসেছেন কেউ এবং যেহেতু কাহিনী দরকার তাই যেনতেন বাজার-চলতি একটা কাহিনীর মধ্যে বক্তব্যগুলো ঠেলেঠুলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন; কাকতালীয়তা ও ফর্মুলা তাই এতো সক্রিয়।

অকাতরে উপদেশবাণীও বর্ষণ করা হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে উন্নয়ন ডিসকোর্সে ‘এন্টারটেইনমেন্ট-এডুকেশন’ নামক একধরনের কনটেন্টের আবির্ভাব ঘটেছে গত শতকের শেষের দিকে। ৪ আয়না তারই অ-পটু অনুসরণ, বার্তা এবং/বা উপদেশবাণীর ভারে কাহিনী ও চরিত্রগুলোর বিকাশ রূদ্ধ হয়ে যায়, ফলে তা কিছুতেই সিনেমা হয়ে ওঠে না। তবে, চলচ্চিত্রকে যদি আমরা সংজ্ঞায়িত করি ‘চলমান যে চিত্র’ তাহলে অন্য যেকোনো অডিও-ভিস্যুয়াল টেক্সট যেমন চলচ্চিত্র, আয়নাও তেমন চলচ্চিত্র বটে। তবু ‘সমালোচকদের রায়ে’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র আয়না, এর নায়িকা ‘নবাগতা’ সোহানা সাবা শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী (নারী) নির্বাচিত হন।

কিন্তু কেন? এখানে আয়নার সাথে প্রথম আলোর এজেন্ডাগত সম্পর্কসূত্র আমরা অনুসন্ধান করতে পারি। রুম্মান রশীদ খান ‘আর মাত্র আট দিন! কাণ্ডারি এবার আফজাল হোসেন’ (৫ই এপ্রিল) কাহিনীতে বলেন: ‘সবাই জানেন, দেশের দুই নারী তারকা সম্মানজনক সহ-উপস্থাপিকা হিসেবে পুরো অনুষ্ঠান আলোকিত করে রাখেন। এবারের সহ-উপস্থাপিকাদের নাম আবারও আপনাদের অনুমানের ওপর ছেড়ে দিলাম। দুজনেই এবার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। একজন পাঠকের ভোটে, অন্যজন সমালোচকদের ভোটে।

’ ১৯শে এপ্রিলের ‘আনন্দ’ পাতায় পার্থ সরকার লিখিত “ধন্যবাদ ‘ব’ ধন্যবাদ ‘ভ’” কাহিনী থেকে আমরা ‘অনুষ্ঠান আলোকিত করে রাখা’ ‘দুই নারী তারকা সম্মানজনক সহ-উপস্থাপিকা’ সম্পর্কে জানতে পারি: ‘অবশেষে সব জল্পকা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে যখন সাবা ও প্রভা মঞ্চে ঢুকলেন তখন দর্শকেরা অনেকেই মন্তব্য করে উঠলেন, হ্যাঁ, খাসা পছন্দ বটে। ...কালো রঙের নেটের শাড়িতে সাবা এবং ক্রিমের সঙ্গে ইট-কমলা রঙের শাড়িতে প্রভা। ’ এই ‘আনন্দ’ রিপোর্টারপ্রবর কিন্তু জানালেন না এই ‘খাসা’ পছন্দের দুই নারী তারকার মাঝখানে অবস্থানরত তারকা পুরুষ আফজাল কী পরিধান করেছিলেন! সুতরাং নারী মূল্যায়নের মানদণ্ড কতোটা শরীরকেন্দিক, সহজেই অনুমেয়। এই ‘খাসা’ সোহানা সাবা সামলোচক পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী নির্যাতন বিষয়ক সিনেমা আয়নায় অভিনয় করে সেরা অভিনয়শিল্পী (নারী) নির্বাচিত হন সমালোচকদের রায়ে। আর তাই্ ‘অল্প স্বল্প গল্প’-এর লেখক খাসা কথাটাও বলে ফেলেন, ‘পুরস্কার পাওয়ার কথা চিন্তাও করেননি সাবা।

যখন সমালোচক পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর নাম ঘোষণা করা হলো, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো সাবার কান্না। কাঁদতে কাঁদতে সাবার সাজগোজের বারোটা বেজে গেছে। ’ (‘আনন্দ’ প্রথম আলো ১৯শে এপ্রিল) কান্না পাওয়ারই কথা বটে! প্রথম আলো সূত্রেই আমরা জানতে পারি, ‘সমালোচকদের দৃষ্টিতে’ সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে প্রাথমিক মনোনয়নে যেমন অস্তর্যাত্রার স্থান মিলেছিল, তেমনই ‘সমালোচকদের দৃষ্টিতে’ সেরা পরিচালক হিসেবে প্রাথমিক মনোনয়নে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদেরও স্থান মিলেছিল। তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের বরাতে বলা হয়: ‘পুরস্কারের ক্ষেত্রে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে তিরস্কৃত হয়েই আমি অভ্যস্ত। প্রথম আলোর মাধ্যমেই আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, দেশীয় কোনো পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে আমি আমার ছবি দেব না।

তবে আমার অভিনয় শিল্পীদের স্বীকৃতিকে তো আমি দমিয়ে রাখতে পারি না। এ কারণে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে আমাদের ছবি অন্তর্যাত্রা জমা দিয়েছিলাম। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আমাদের সবার জন্যই বিশেষ কিছু। যেহেতু তিন বছর আমি চলচ্চিত্রের জুরিতে এবং এবার নাটকের জুরিতে ছিলাম, আমি জানি এই পুরস্কারের বিশ্বাসযোগ্যতা। ’ (‘আনন্দ’ ৫ই এপ্রিল ২০০৭) উদ্ধৃত অংশ থেকে বুঝা যাচ্ছে কথাগুলো বলেছেন তারেক মাসুদ, ক্যাথরিন মাসুদ নয়।

আর এই বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ যেহেতু তিনি করেননি সেহেতু ধরা যায় যেকোনো ‘স্থানীয় ও জাতীয়’ পুরস্কারের তুলনায় মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারকে অনেক উর্ধ্বে স্থান দেন তিনি। তবু আয়না যখন সমালোচকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ সিনেমা নির্বাচিত হলো তখন তিনি ভ্র“ কুঁচকে তাকিয়েছিলেন কিনা ভাবতে ইচ্ছে করে। অবশ্য, তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদকে মোরিল-প্রথম আলো একেবারে বঞ্চিত করেনি। ২০০৬ এর মোরিল-প্রথম আলো ‘শীর্ষ তালিকা’য় ‘উজ্জ্বল দম্পতি’ হিসেবে তাদের স্থান মিলেছে। (‘আনন্দ’ ১৯শে এপ্রিল ২০০৭) প্রথম আলো একটা বিজ্ঞাপন-নির্ভর ‘ব্যবসাসফল’ দৈনিক পত্রিকা।

৫ প্রথম আলো ‘বস্তুনিষ্ঠ’ সাংবাদিকতার চর্চা করে। ৬ প্রথম আলোর ধারণানুযায়ী দলনিপেক্ষ সাংবাদিকতা মানেই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা। ৭ অর্থাৎ, যে-সংবাদপত্রের কোনো রাজনৈতিক দলীয় অবস্থান নেই কিংবা পক্ষপাত নেই- তারা নিরপেক্ষ। কোনো রাজনৈকিত দলের উৎসাহী সমর্থক না-হওয়া মানেই নিরপেক্ষ অবস্থান নয়। বাণিজ্যিকতার সংস্কৃতি ও বণিক শ্রেণীর পক্ষে অবস্থান নেওয়া রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার চেয়েও প্রভাবশালী ‘রাজনৈতিক’ অবস্থান।

তাই বিচিত্র নয় যে, এখন মূলধারা মিডিয়াগুলো জন্ম নিচ্ছে জাতীয়-বহুজাতিক কর্পোরেশনের পেট থেকে এবং এসব মিডিয়া ‘নিরপেক্ষতা’ দাবি করছে। কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষা ও বাণিজ্য-অনুকূল মতাদর্শ জারি রাখা এসব মিডিয়ার প্রধান কাজ- একাজকে তারা ‘নিরপেক্ষ’ কাজ বলে জাহির করে। এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাজনৈতিক শক্তি যদি তাদের স্বার্থ না-দেখে তাহলে তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ও দলীয় রজনৈতিক শক্তির খোলনলচেও বদলে দিতে সক্ষম, আজকের বাংলাদেশই তার প্রমাণ। রাষ্ট্র ও আধিপত্যকারী রজনৈতিক দল বস্তুত বণিক শ্রেণীর কোনো না কোনো অংশেরই প্রতিনিধিত্ব করে, জনগণের নয়। তাদের ‘নিরপেক্ষতা’ বা নিরপেক্ষতার দাবি পাবলিক ডিসকোর্সে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে তাই গুরুতর তাৎপর্যপূর্ণ।

বাজার-মুনাফাকেন্দ্রিক মিডিয়া ও বণিকগোষ্ঠী নিজেদের অবস্থান ও মূল্যবোধের বৈধ্যতা তৈরি করতেও সক্ষম। কারণ সেই উপায়গুলো তাদেরই করায়ত্বে থাকে। তারা নিজেদের স্বার্থে পেশাদার বুদ্ধিজীবী নিয়োগ করতে এমনকি তারকা বুদ্ধিজীবী তৈরি করতেও সক্ষম। ৮ এই সূত্রেই, তারা ‘সুস্থ’ সিনেমার একটা বর্গ তৈরি করতে সক্ষম হন- যার মধ্যে স্থান পায় হুমায়ূন আহমেদের চন্দ্রকথা ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর-এর মতো সিনেমা। এই ‘সুস্থ’ বর্গের ভিতর থেকে তারা নিজেদের সিনেমাকে শ্রেষ্ঠত্বের পদকও দিতে পারেন, তার নির্মাণ যে মানেরই হোক না কেন- যেমন আয়না।

আয়না চলচ্চিত্রের যে এজেন্ডাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো প্রথম আলোরও এজেন্ডা। (৭ নং টীকা দেখুন) প্রথম আলো বিশেষত ‘এসিড সন্ত্রাস’ নিয়ে ক্রুসেড ঘোষণা করে। এসিড দগ্ধদের সহায়তা করতে ২০০০ সালের ১৯শে এপ্রিল প্রথম আলো গঠন করে একটি সহায়ক তহবিল। ৯ অনেক নারীকে এই তহবিল থেকে সহায়তা করা হয়েছে। যদি প্রশ্ন করি, প্রথম আলোর এই ক্রুসেড কেন চালায়? প্রথমত, এতে প্রথম আলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকাশিত হয়।

এই ক্রুসেডের কোনো মূল্য নেই, আমি তা বলছি না। কিন্তু একদিকে অতি মনোযোগদান, অন্য অনেক সামাজিক সংকটকে আড়ালও করেসেগুলো এজেন্ডা বহির্ভূত হয়ে যায়। দায়বদ্ধতার প্রকাশ আবার পত্রিকাটির জন্য প্রমোশনের কাজও করে। নারী নিপীড়নের প্রতি, বিশেষত এসিড সন্ত্রাসের প্রতি মনোযোগদান, মেরিল-প্রথম আলোর ‘আধুনিক পণ্যায়িত’ নারী তৈরির স্কিমকে আড়াল করে। ১০ ব্যক্তিক সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নের ওপর অতিরিক্ত মনোযোগ কাঠামোগত সন্ত্রাসকে আড়াল করে।

গার্মেন্টস মালিকের মহত্ব, মালিকের বিশ্বস্ত কর্মচারীর দায়বদ্ধতা ও পদোন্নতি, শ্রমশোষণের বৃহত্তর আয়োজনকে, শিশুশ্রমের ব্যবহারকে আড়াল করে। মালিক আর মাত্র হাজার-বারো’শ টাকা মাইনে পাওয়া শ্রমিকের এজেন্ডা এক হয়ে ওঠেতারা গার্মেন্টসের উন্নতিতে এবং এর মাধ্যমে জতীয় উন্নতিতে এককাতারে একসাথে অবস্থান নেয়। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী, ওভারটাইমের ন্যায্য প্রতিদান, এমনকি একটা বাস্তবসম্মত নিম্ন-মজুরী কাঠামোও আলাদাভাবে এজেন্ডা হয় না প্রথম আলোয়, বরং মালিকের স্বর বেশি প্রবল হয়ে ওঠে মজুরী-কাঠামো নির্ধারণের বেলায়। প্রান্তিক পুঁজিবাদী দেশ হওয়ার কারণে এবং স¤প্রতি বিশ্বায়নের প্রকোপে পড়ে এদেশের সাংবাদিকতা-জগতে সকল কিছুর উর্ধ্বে মুনাফামুখিতা ও ভোগবাদী সংস্কৃতিকে আশ্রয় দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ-ধারা জনগণের জন্য কল্যাণকর কিনা সেটা ভেবে দেখা জরুরি দরকার।

জনমুখী সাংবাদিকতার নামে, জনগণের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়ে পাঠককে বিজ্ঞাপনদাতদের কাছে বেচে দেয়ার, তাদের মনোজগতকে বড়লোকের বৈখকখানা বানানোর, সংবাদের সংজ্ঞাকেই আমূল বদলে দেয়ার যে-পাঁয়তারা চলছে তা রুখতে হবে। সে-জন্য সবার আগে দরকার ‘জনসেবা’র তক্মা গায়ে ওঠাতে তারা যে-কলাকৌশল ব্যবহার করে সেগুলো চিনে নেয়া এবং পাঠকের সামনে তুলে ধরা। আয়না প্রথম আলোর এডেন্ডা অনুকৃত একটা চলচ্চিত্র। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের মালিক ফরিদুর রেজা সাগর চ্যানেল আই-য়েরও কর্তা ব্যক্তি। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান চ্যানেল আই-এ স¤প্রচার করা হয়।

চ্যানেল আই প্রথম আলোর প্রধান মিডিয়া পার্টনার। মতাদর্শও অভিন্ন। সুতরাং নিজেদের কলাই তো তারা দেখাবেন, সমাজসেবার মুখোশের আড়ালে মুখটাও আড়াল করবেন। আর শিল্পী-লেখক-বুদ্ধিজীবীবা ভাড়া খাটবেন! এসব কারণে আয়না যখন প্রথম আলোর নিয়োজিত-নির্মিত বুদ্ধিজীবী ‘সমালোচকদের রায়ে’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় তখন অবাক হবার কিছু থাকে না। তেমনই সোহানা সাবার ‘শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী (নারী)’ নির্বাচনও অবাক করে না।

[আ-আল মামুন, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ]

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।