আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্ঞান রচনাঃ প্রাইভেট ভার্সিটি এবং অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতা বণ্টন

কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।

[কোন জায়গার পড়াশুনার মান নিয়ে আমি কথা বলব না। এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন। তাই শিরোনামেই বিরক্ত হবার কারণ নাই। ] আমি ভাবি ঢাকা ভার্সিটি থেকে বনানী আসলে ঠিক কতদূর ? বাসের হিসাবটা জানি, কিলোমিটারের হিসাবটা বলতে পারব না।

অন্তত আর যাই হোক, বাংলাদেশ থেকে চায়নার যত দূরত্ব তার চেয়ে নিশ্চয়ই কম। কিন্তু, মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঢাবির অনেক পোলাপান চায়না সম্পর্কে যতটুকু জানে, প্রাইভেট সম্পর্কে জানে তার চেয়ে কম। নাহ,ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার কিছু নাই। আমি ভাবলাম আমিই বরং কিছু জ্ঞানদান করি। এইটা সত্যকারের রচনা হলে ক্লাস থেকে ডিমোশান শিওর।

কারন আমি বলতেছি আমার মতন করে। বনানীতে প্রাইভেট ভার্সিটি এত্তগুলা। আরও আছে এখন ধানমন্ডিতেও। কিন্তু, বাংলাদেশের সব প্রাইভেট ভার্সিটিকেই খুব সহজ তিনটা ক্যাটাগরীতে ফেলে দেয়া যায়। নামসর্বস্ব, সম্ভাবনাময় আর নিজস্ব ক্যাম্পাসঅলা(এগুলি ভাল কী মন্দ, সে বিচার হয় না, দরকারও নাই)।

এর বাইরে কিছু থাকে যেগুলাকে সাধারণ প্রাইভেট ভার্সিটি হিসেবে এদের দেখলে হবে না। কারণ এদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের মত ব্যাপার আর কী! ফ্রন্টে কখনও আসে না, কিন্তু ফেলনা না। যে জানে না সে জানল না। যে জানে তার কাছে বিশাল কিছু।

যেমন, উত্তরায় কোন ভার্সিটির একটা সাবজেক্ট আছে “ সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং” বা এখন বাংলাদেশেও বিদেশ থেকে টিচার এনে চরম স্যালারি দিয়ে পড়ানো হয় “এরোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং” , এআইইউবি তে পড়ানো হয় “সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং” বা টেক্সটাইল ইঞ্জি আছে এমন অল্প কিছু ভার্সিটি , ব্রাকে আছে “কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং” অথবা অনেক ভার্সিটির এমন কিছু সাবজেক্ট যা মাত্র গুটিকয়েক যায়গায় আছে। এগুলার মান নিয়ে কথা আসছে না, এগুলা ত শুরু। এছাড়া সাবজেক্ট বাদেও অনেক প্রাইভেট ভার্সিটি অনেক ভার্সিটি হিসেবেও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রাখে। ব্র্যাক ভার্সিটির বৈশিষ্ট্য – টার্ক। মানে হল রেসিডেন্সিয়াল সেমিস্টার।

একটা সেমিস্টার এদের বাধ্যতামূলক ভাবে সাভারে হোস্টেলে যেতে হবে। রেসিডেন্সিয়াল সেমিস্টার। হমমমম, ছেলেমেয়ে আলাদা(জিগানোর আগেই বইলা দিলাম। তাও মিয়া বিবি রাজী থাকলে কেউ ঠেকাইতে পারব না, সেটা বুঝি। তয়, জেইউর মত হামলা হইব না, মেয়েদের হোস্টেলে চরম গার্ড।

) এছাড়াও প্রাইভেট ভার্সিটিগুলার মধ্যে এদের ক্লাবগুলার এক্টিভিট ঈর্ষণীয়। ৩০০ টাকায় পাঁচদিন কক্সবাজার ঘুরায়া আনে। দুইদিন পর পর হুদাই গেঞ্জি দেয়, ক্লাব থেকে মিটিং এ গেলে খাওয়া ফ্রী, কম্পু গেমিং ক্লাবও আছে, দুইদিন পরপর বিদেশী ডিরেক্টর এনে সিনেমাটোগ্রাফী সহ আরও একগাদা জিনিসের উপর মাগনা ওয়ার্কশপ করায়। এলএসসি এর কথা বলা যায়। একবছর নাকি দেশে শিখায়, পরের চার বছর পোলাপানকে পড়াশোনা শেখাতে লন্ডনে নিয়ে যায়।

হুলুস্থুল ব্যবস্থা। আরও অনেক কিছু বলা যায়, সেটা চাহিদা সাপেক্ষে। এখন অন্য দিকে যাই। অর্থনোইতিক একটা ভুল ধারণা মানুষের মাঝে কাজ করে প্রাইভেট ভার্সিটি সম্পর্কে। বাস্তব একটা চিত্র আগে বলি।

বাকি কথা পরে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে কয়জন বনানীর ভার্সিটিগুলার আশে পাশে ঘুরছেন ?? চোখ খোলা থাকলে নিশ্চয়ই দেখছে, প্রতিটা ভার্সিটির সামনে খোলা যায়গায় বিক্রি হচ্ছে চপ,পুরি, পিয়াজু, সিঙ্গারা এমনকি চিকেন(যদিও ২০ টাকা মাত্র) !! এগুলার সামনে ভার্সিটির পোলাপানের কত ভীড় সেটা কেউ খেয়াল করেছেন? যারা ভেবে বসে আছে যে, প্রাইভেটে পড়ে মানেই বিশাল ধনী, তাদের ভাবা উচিত এতটাকা থাকতে হেলভেশিয়ায় ভিড় না করে, খোলা জায়গার খাবার পোলাপান খাচ্ছে কেন? প্রতিটা ভার্সিটির সামনে এমন। এই ব্যাপারটা মানুষের চোখ এড়িয়ে যায় কেন বুঝি না। আমাদের দেশের মানুষ জন্মের পর থেকেই টাল সামাল অর্থনোইতিক অবস্থার সামনে পড়ে। এরপরও আমাদের দেশে প্রাইভেট কারের কী অভাব??? তাইলে সবাই কী বড়োলোক ?? না রে ভাই, বেশির ভাগই লোনের টাকায় কিনা।

অথবা, গ্রামের জমি বেঁচে। আরও একটা কারণ আছে। চাকরী জীবনের শুরু থেকে গাড়ি কিনার আশা জমানো হয়েছে। বুড়া বাপ কিনেছে, পোলা আর পোলার বউ এখন সেই গাড়ি চালায়, “ উই হ্যাভ টু গো আউট উইদ ফ্রেন্ডস ড্যাডি, তুমি বরং আজকে অফিস থেকে বাসেই আস। ” এটা আসলে অনেক বড় একটা ব্যাপার।

এই জমানো ব্যাপারটা। মানুষ অনেক কারণে জমায়। ফ্যামিলিতে কারও বড় কোন অসুখ হলে খরচের জন্য, অথবা একটাফ্ল্যাট কিনার আশায় বা একটা গাড়ি কিনার আশায়। কয়েকটা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি ধরি। বাপ সকাল থেকে সন্ধ্যা জব করে, মা অসুস্থ।

ছোট ভাই একেবারেই নাবালক। ছেলে চান্স পাইছে রাবিতে। ধরা যাক, ফিজিক্সে। তাও কী বাসায় পাঠাবে? মাকে দেখবে কে? আবার, বাবা ধরি সরকারি চাকরী করে, নাটোরে পোস্ট। মা ঢাকায়।

একটাই ছেলে। ছেলে চান্স পাইল রাজশাহীতে। ছেলে গেলে মা কার সাথে থাকবে? বাপ তো ওখানে কিছু কলিগের সাথে দুই রুম ভাড়া করে থাকে। ছেলে বাধ্য হয়ে এখানে প্রাইভেটে পড়বে। রুয়েটে সিএসসি হলে হয়ত ঠিকই যাইত, কিন্তু রাবিতে কেমিস্ট্রি পড়তে এর জন্য যাবে না।

এটাই বাস্তবতা। ছেলে ঢাবিতে আর্টসের সাবজেক্টে পড়তে চায় না। কিন্তু, পরীক্ষার সময় অসুস্থ ছিল। এখন বুয়েটে পরীক্ষাই দিতে পারল না। বাপ মা কি ওকে ফেলে দিবে? পড়াবে না? এসব কন্ডিশন বাদই দেই।

ছেলে কোথাও চান্স পায় নাই। বাপ কী ছেলেকে এখন ফেলে দিবে? টাকা নাই, তবুও ব্যাংকের সব উঠাবে না সে??? ছেলের জন্য মনে হয় করবে। হয়ত লোন নিবে। এই টাকাটা হয়ত জমানো হয়েছিল চাকরী জীবনের শুরু থেকে, একটা গাড়ি কেনার আশা অথবা এক্সিডেন্টের ভয়ে। সেটা টাকাটা এখন ভার্সিটির গোড়ায় যায়।

সেই ছেলে চুল জেল দিয়ে গাড়িতে চড়ে না কিন্তু। হেলভেশিয়া তে বসা পোলাপানের দিকে উদাস চোখে তাকায়। প্রাইভেটে যারা পড়ে তারাই জানে, গ্রামের থেকে কী বিশাল পরিমাণের একটা অংশ ঢাকায় এসে প্রাইভেট পড়ে। আমি জানিনা সবাই এত টাকা পাইছে কই। চার পাঁচ লাখ ত মিনিমাম লাগেই।

এটা ত মুখের কথা না। শহরের একটা লোক যত কষ্টই হোক জমাতে পারে, কিন্তু গ্রামের? সেটা যেভাবেই হোক, এটাই সত্যি। গ্রামের থেকে একগাদা পোলাপান আসে। ছেলে আজীবন গ্রামে ছিল। গ্রামের স্যার দিয়ে পড়ে ভাল রেজাল্ট করতে পারেনি।

কিন্তু, শহরে চাকরীর স্বপ্ন সে ছাড়তে পারে নি। বাপ কে অনেক বুঝিয়ে , ভাইদের সাথে ঝগড়া করে নিজের জমির ভাগ বন্ধক দিয়ে শহরে থাকা কাজিনের সাথে যোগাযোগ করে আসছে সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। সে কী যোগ্য কী না, সে প্রশ্ন উঠবেই। উত্তরটাও আমরা জানি। এখানে সে আলোচনা আসতেছে না।

কথা হচ্ছে, প্রাইভেটের ছাত্রদের একটা বড় অংশ এরাও। এরা কিন্তু এখনও চুলে দেয়ার জেল চিনেনা। চেনার দরকারও নাই। এরা আইপড চিনে না। মেসে থাকে, বিড়ি ছেড়ে সিগারেট ধরার ফলে আর্থিক কষ্টে ভুগতেছে।

হেলভেশিয়া তে বসা পোলাপানের দিকে উদাস চোখে তাকায়। প্রাইভেটে পড়ে বলেই কী এরা ধনী? বড়লোক আছে। কয়জন? সবাই ধনী হলে সেমিস্টার ক্রেডিটে ১০ ডলার বাড়ানোর জন্য নর্থসাউথে আন্দোলন হত না। এই আন্দোলনেও কিছু ছেলে মেয়েকে সামনা সামনি দেখছি যে, তারা বলছে তাদের সমস্যা নাই। তারা নতুন সেমিস্টারে এডভাইজিং করতে বসে গিয়েছিল।

কিন্তু, ওই একই কথা আসে। কয়জন?

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.