ভালো আছি
ফুলের জগতে এক বিস্ময়কর সৃষ্টির নাম ‘নাইট কুইন’। নাম দেখেই বোঝা যায় রাতের সঙ্গে এর বিশেষ কোন সম্পর্ক রয়েছে। হ্যা, রাত আর নাইট কুইন একান্ত ভাবেই একে অপরের পরিপুরক। দিনের আলোর সঙ্গে কি যেন এক অজানা বৈরিতা রয়েছে তার । রাতের বুক চিরে ধরণীর মাঝে এসে হাজির হয় সে, আবার রাতের অন্ধকার শেষ হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই মৃত্যু হয় তার।
এই ফুলের আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারনত ফুলের জন্ম হয় গাছের ডাল থেকে। কিন্তু নাইট কুইনের কলি বের হয় পাতা থেকে। প্রথমে পাতার যে কোন এক পাশে ছোট্ট গুটির মত একটি বস্তুর সৃষ্টি হয়। এরপর গুটিটি আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠতে থাকে।
দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে ছোট্ট গুটিটি পরিপূর্ণ কলিতে রপান্তরিত হয়।
যে রাতে ফুল ফুটবে সেদিন বিকালেই কলিটি অদ্ভুত সুন্দর সাজে সেজে ওঠে। তখন এর দিকে তাকালে, খুব সহজেই বোঝা যায়, আজ রাতেই রাতের রাণী মর্ত্যলোক মাতাতে আসবে। সন্ধ্যালগ্নে যখন চারদিক মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে শুরু করে ঠিক সেই মুহুর্ত থেকে কলিটি সজীব থেকে সজীবতর হয়ে উঠতে থাকে। সেই সাথে মিষ্টি এক ধরনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিকে।
এই গন্ধে তীব্রতা না থাকলেও এক ধরনের অদ্ভুত মাদকতা আছে, যা যে কোন মানুষকে মোহিত করে ফেলবার জন্য যথেষ্ট। পরিপূর্ণ অন্ধাকার যখন রাতকে আচ্ছাদিত করে ফেলে নাইট কুইন তখন নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে মেলে ধরে। তার ধ্র“বতা অন্ধকারের দ্যুতি হয়ে জ্বলে ওঠে। রাত যত বাড়তে থাকে তার রুপ ততই খুলতে থাকে পাতার কোলে। নিশাচর পতঙ্গেরা রাতের রাণীর মোহময় সৌরভে আকৃষ্ট হয়ে উন্মাদের মত ছুটে এসে পড়তে থাকে তার বুকে।
এভাবে শেষ রাত পর্যন্ত ফুটন্ত নাইট কুইন মাতিয়ে রাখে আধার প্রকৃতিকে। পুব আকাশে আলোর ছটা দেখা যাওয়ার কিছুণ আগে মৃত্যু ঘন্টা বেজে ওঠে নাইট কুইনের বুকে। একে একে দলমেলা সজীব পাপড়িগুলো ম্লাান হয়ে নুয়ে পড়তে শুরু করে। তার সবকিছুই অন্ধকারের জন্য , তাই আলোকে সহ্য করতে পারেনা সে। চারদিক পরিপূর্ণ আলোকিত হওয়ার আগেই তাই সে এক মৃত ফুলে রুপান্তরিত হয়।
সকালের দুর্ভাগা আলো কখনোই রাতের রাণীর অপরুপ সেন্দৈর্য দেখবার সুযোগ পায় না।
নাইট কুইন ফুল নিয়ে পৃথিবী জুড়ে বহু ধরনের কাহিনী ছড়িয়ে আছে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনীটির অবতারনা ঘটেছিল দু’হাজার বছর আগের বেতলেহ্যাম নগরীতে। তখন নগরীর প্রত্যেক বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে ঘটল এক আশ্চর্যজনক ঘটনা, প্রত্যেক বাড়ির নাইট কুইন গাছ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল।
এই বিস্ময়কর ঘটনায় কৌতুহলী নগরবাসীরা এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে দৌড়াতে লাগল। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারল না প্রকৃতি কেন আজ এই অজানা উৎসবে মেতে উঠেছে। পরে অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল। সেই রাতে বেতলেহ্যামের এক ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের, তিনি যীশু খ্রীস্ট। বেতলেহ্যামের সমস্ত নাইট কুইন তারই জন্মোৎসবে মেতে উঠেছিল সে রাতে।
আর এ জন্য এরা আজও অনেকের কাছে ‘বেতলেহ্যাম ফাওয়ার’ নামে পরিচিত।
অতীতে এই ফুলের গাছ পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি দেশে দেখা গেলেও বর্তমানে এর বিস্তার সমগ্র বিশ্বজুড়ে। এমনকী বাংলাদেশের বহু পুষ্পপ্রেমী মানুষের বাড়িতেও এখন নাইট কুইন গাছ নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, বীজ থেকে নয়, নাইট কুইনের চারা জন্মে পাতা থেকে। এক টুকরো পাতা ছেড়ে মাটিতে ফেলে রাখলে কয়েক দিনের মধ্যে ছেড়া পাতার চারদিকে চারা গজিয়ে ওঠে।
আমাদের দেশে এই ফুল ফোটে বর্ষকালে এখন ভরা বর্ষার মৌসুম। তাই পুষ্পপ্রেমীদের অনেকেই রাতের রাণীকে এক নজর দেখবার জন্য অধীর আগ্রেহে অপোয় রয়েছেন। প্রিয় পাঠক, আপনাদের প্রতি অনুরোধ, জীবনে অন্তত একবার নাইট কুইনের জন্মরাতে তার পাশে থেকে তারই মৃত্যু অবলোকন করবার চেষ্টা করুন, তা হলে দেখবেন ওই একটি মাত্র রাতই আপনার কাছে হাজার রাতের স্মৃতি হয়ে থাকবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।