কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।
এই গল্পটি খন্দকার মোহম্মদ ইলিয়াছের --- কিন্তু আমার বাবার কাছ থেকে শোনা। যখনই কোন শুঁচিবায়ুগ্রস্থ লোকের কথা উঠত বা মানসিক সংকীর্নতা পুর্ন কাউকে দেখা যেত তখনই বাবা এই গল্পটি বলতেন।
আমার এক প্রতিবেশি আছেন তাকে দেখলেই আমার এই গল্পটি মনে পড়ে। সেই প্রতিবেশি হোটেলে তৈরী খাবার খান কিন্তু কোন মুসলমানের বাসায় জলও স্পর্শ করেন না।
বাসায় আসলে যতক্ষন থাকেন দাঁড়িয়ে থাকেন কোথাও বসেন না। অফিস থেকে বাসায় এসে বাড়ির বাইরেই কাপড় জুতা খুলে-- কাপড় হাতে করে, গামছা পরে সোজা বাথরুমে চলে যান। কী ভাবে যে দিনানিপাত করেন সেটাই আমার বড় বিস্ময়।
অসীম জাতে ব্রাক্ষ্মন। গিয়েছে বিলেতে ট্রেনিং নিতে।
কিন্তু শুচীবায়ুগ্রস্থ অসীম ভোলেনি তার বদনা আর খড়ম নিতে।
লন্ডনে যে বাসায় উঠেছে সেই বাসার ল্যান্ডলেডি চার পাঁচ দিন তাকে খেয়াল করে ডেকে বলল --তুমি ঐ হাতির শুঁরের মত পানির পাত্রটি কখনও টয়লেটে নিয়ে যাবে না। আর এত পানি ব্যবহার করবে না। টয়লেটের দেয়াল ও মেঝেতে পুরু ওয়াল পেপার মোড়া। পানি পেলে তা নষ্ট হয়ে যাবে।
তা ছাড়া মেঝেতে পানি থাকলে আমাদের ঘৃণা লাগে, আমরা পানি পরিষ্কার করতে অভ্যস্ত নই।
অসীম তাকে জিজ্ঞাসা করে, পানি না ব্যাবহার করে কি ব্যবহার করবে?? মহিলা তাকে কাগজ ব্যবহার করার কথা বলে। অসীমের জন্য মহিলা দিনে এক প্যাকেট করে টিস্যু পেপার দিতে রাজি। এতে অসীম ক্ষেপে যায় এবং বলে ম্লেচ্ছ দেশে এসেছে বলে সে তার জাত খোয়াতে পারবে না।
মহিলা তাকে হাসতে হাসতে বলে ঃ শুনেছি তোমাদের দেশের লোকজন নাকি মাটির ঢেলা ব্যবহার করে, মাটির চেয়ে কাগজ ভাল নয় কি??
অসীম তা মানতে একেবারেই নারাজ- ফলাফল ল্যান্ডলেডি তাকে পরদিন বাড়ি ছাড়তে নোটিশ দেন।
অসীম এবার নতুন বাড়িতে। এই ল্যান্ডলেডী একজন বৃদ্ধা। একদিন তার চিৎকারে বাড়ির সবাই বের হয়ে আসে। হাতের ইশারায় সবাইকে দেখিয়ে তিনি বলেন-- চক্রবর্তী সিঁড়ির দামী কার্পেটটি দুই দিনেই পঁচিয়ে ফেলবে। ডার্টি বোর্ডার কোথাকার।
অসীমতো ভয়ানক ক্ষেপে গেল তাকে ডার্টি বোর্ডার বলার কারনে। অসীমের রাগ দেখে বুড়ি বলল ঃদোষতো তোমার নয়, দোষ তোমার ঐ “উডেন স্যান্ডেলের। “ বাথরুম থেকে যখন বের হয়ে আসো তখন ঐ স্যান্ডেলের পানির দাগ কেমন করে কার্পেটে পরেছে দেখ, তা তুমি একজোড়া স্লিপার কিনে নিলেই এই সমস্যা হবে না।
অসীম তা মানতে রাজী নয়। সে বিলেত ছাড়তে পারে কিন্তু খড়ম ছাড়তে পারবে না।
বুড়ি তাকে বলে ঃ--- তোমাদের দেশ পানি কাদায় পূর্ন সেখানে এই খড়ম না হলে চলে না কিন্তু এখানে তো কার্পেট এই জায়গায় তো স্লিপার ই যথেষ্ট।
অসীম বুড়িকে বোঝাল যে সে ব্রাক্ষ্মন তার পক্ষে খড়ম ছাড়া চলা সম্ভব নয়। অগ্যতা আবারও পরদিন বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পেল সে।
বাড়ি খোঁজ়ার বিরাট ঝামেলায় সে পড়ল। সব বাড়িতেই টয়লেটে কাগজ মোড়া, নয় কার্পেট।
বহু খোঁজা খুঁজির পর একটা বাড়ি পেল যেখানে কাগজ ও নেই কার্পেটও নেই। সিঁড়িতে একপাটি ভাঙ্গা খড়মও পরে থাকতে দেখা গেল। আসীম মহা খুশি। কে বলে এ দেশে সত্যিকারের মানুষ নেই-- ধর্ম নেই?! খুশিতে অসীম তৃপ্তির হাসি হাসে।
কয়েকদিন পরের ঘটনা।
অসীম চক্রবর্তী হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে নার্সদের বলে ঃ মাননিরা একটু জ়ল দাও। একটু জল দাও।
নার্স এনে দেয় গ্লুকোজ, অসীম বলে --“একটু তাল মিছরী গুলিয়ে জল দাও । “ নার্সতো আর তাল মিছরি চেনে না। সাতদিন জ্বরে বেহুঁশ থাকার পর তার জ্ঞান ফিরল।
তখন সে ডাক্তারকে ডেকে বলল ঃ “প্রতিদিন সূর্য উঠার আগে আমাকে প্রাতঃ স্নান করিয়েছেন কি??”
ডাক্তার তো অবাক ঃ “প্রাতঃস্নান???? এই জন্যই আপনার নিউমেনিয়া ধরেছিল। মরে যাবেন মশাই স্রেফ মরে যাবেন। “
অসীম তাকে বলল ঃ “ আমার বয়স হয়েছে চল্লিশ বছর, জ্ঞান হবার পর থেকে কোন দিন ও সূর্য আমার স্নানের আগে উঠতে পারেনাই। “
শীত প্রধান দেশের মানুষ ডাক্তারের গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। তার দাঁতে দাঁত লেগে ঠকঠক শব্দ হতে লাগল প্রায়।
আসীম তাকে বলে চলল ঃ ” সে বাংলাদেশের মানুষ। তদুপরি জাত ব্রাক্ষ্মন। সূর্যদয়ের পূর্বে স্রোতস্বিনীতে স্নানে মানস সরোবরে স্নানের ন্যায় পূণ্য পাওয়া যায়।
ডাক্তারও রসিকতা জানেন তিনি বললেন ঃ “তা প্রাতঃস্নান যদি করতেই হয় তবে পাইপের পানিতে না করে টেমস নদীতে যান না কেন? সেখানে স্রোত ও আছে পূন্যও বেশী হবে। “
অসীম বিজ্ঞের মত মাথা দোলাতে দোলাতে বলল ঃ “আপনাদের টেমস নদী হিমালয় থেকে নির্গত নয়।
নিদেন পক্ষে যদি তাপ্তী - কাবেরীর মতো বিন্ধ্যচল থেকে ও উৎপত্তি লাভ করতো , তবে নিশ্চই যেতাম। কিন্তু এ যে হিমালয় বা বিন্ধ্যপর্বতের ধারে কাছেও যায়নি। একেবারেই ম্লেচ্ছ ও অচ্ছুৎ নদী এই টেমস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।