আমি প্রকৃতি প্রেমি এক যাযাবর
প্রথাগতভাবে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এবারই প্রথম পাঁচ বছরের পূর্বেই বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ কার্যকর করতে যাচ্ছে। এ জন্য আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বিঘোষিত নীতি হলো সকল পর্যায়ে প্রান্তিক জনগণকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে অধিক হারে নিশ্চিত করা। এই অর্থে বর্তমান সরকারের নীতিও দলীয় ইশতেহার থেকে আলাদা কিছু নয়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নির্বাচনী মেনোফেষ্টুতে কর্মচারী/কর্মকর্তাদের জন্য নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
সরকার সেই নির্বাচনী অঙ্গীকার এখন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
পরিতাপ ও বেদনার বিষয় হলো সরকার কর্তৃক গঠিত সচিব কমিটি বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের যে পরিমাণ বেতন বৃদ্ধি করে বেতন স্কেল’০৯ চূড়ান্ত করেছেন তা কোনক্রমেই ন্যায় ও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি নয়। এতে নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীদের বেতন কম হারে বৃদ্ধি করে সর্বোচচ ৪টি গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন অধিক হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিষয়টি এভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রথম থেকে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে ৭২% থেকে ৭৪%।
এখানে ও প্রথম গ্রেড থেকে নিচের গ্রেডের বেতন বৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। পাক্ষরে ১০নং গ্রেড হতে ১৮নং গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য বেতন স্কেল ২০০৫ থেকে বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৫৬% থেকে সর্বোচ্চ ৬৯% পর্যন্ত। প্রকৃতপে কাজের মানদন্ডে বিচার করলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে এই সকল কর্মচারীরাই প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি। অথচ এই বিপুল সংখ্যক কর্মচারীদের বঞ্চিত করে সর্বোচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে ৭৪% হারে। এটা কি অনৈতিক, মানবতাবর্জিত ও বৈষম্যপূর্ণ বেতন কাঠামো নয় ? আমরা পত্রিকা মারফত জেনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বল্প বেতনভুক্ত কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
তথাপি বেতন সংক্রান্ত সচিব কমিটি ১৯ ও ২০ নম্বর গ্রেডের বেতন সামান্য বৃদ্ধি করে অধিকাংশ কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি উপো করেছেন। প্রকৃতপে সচিব কমিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বার্তাকে অবজ্ঞা করেছেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ১ জানুয়রি ২০০৫ এ যে বেতন স্কেল কার্যকর করা হয়েছিল তাতে ১৯৯৭ সালের বেতন স্কেল থেকে ১ থেকে ১০ নম্বর গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তাদের জন্য সর্বনিম্ন ৪০% থেকে সর্বোচ্চ ৫৮% বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছিল। পান্তরে ১১-২০ নং গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছিল সর্বনিম্ন ৫৬% থেকে সর্বোচ্চ ৬১% পর্যন্ত। অর্থাৎ বেতন স্কেল ২০০৫ এ কর্মচারীদের বেতন বেশী হারে বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
সুতরাং ২০০৫ সালের বেতন স্কেলে সকল গ্রেডভুক্ত কর্মচারী/কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধির আনুপাতিক পরিমাণ ও হার সঠিক ও যৌক্তিক ছিল। আমরা পঞ্চম গ্রেডভুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তা নিচু গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ ও শতকরা হার দেখে ব্যথিত হয়েছি। তাই বিবেকের তাড়নায় বিষয়টি সর্বসাধারণের গোচরে আনা প্রয়োজন মনে করছি।
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের নিকট স্বল্প বেতনভুক্ত সরকারী কর্মচারীসহ সকল শ্রেণীর নিম্ন আয়ের লোকজন অধিক মাত্রায় মানবহিতৈষি কর্মসুচি প্রত্যাশা করে। সরকারের বিঘোষিত কর্মসূচিও তাই।
কিন্তু প্রস্তাবিত বেতন স্কেল’০৯ এ সচিব কমিটি যে বেতন নির্ধারণ করেছেন তাতে কর্মচারীদের ন্যায্য ও আনুপাতিক বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি উপো করে নিজেদের বেতন অধিক হারে বৃদ্ধি করেছেন। সচিব মহোদয়গণ নির্লজ্জভাবে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ দেখেছেন। এক্ষেত্রে
উপরের শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সাথে নিচের কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য হ্রাস না করে আরো বৃদ্ধি করেছে। তাই বিষয়টির প্রতি মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় হস্তপে কামনা করি। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ন্যায় ও যৌক্তিক একটি বেতন স্কেল সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বাস্তবায়িত হবে।
***** ** *****
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।