জীবনের এই গতিপথ...পূর্ব-পশ্চিমে যেন এক নিছক অন্বেষণ
১।
ইউনিভার্সিটিতে কালচারাল সপ্তাহ হচ্ছে। তামাম দেশের পোলাপানরা নিজেদের দেশের সর্বস্ব নিয়া আসছে। ব্যাতিক্রম খালি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এম্বাসী বাংলার পোলাপানগুলারে কিছু পোষ্টার আর দুইটা ঝুড়ি দিয়া বিদায় দিছে।
কিন্তু বাংলার পোলাপানরা তো ত্থেমে থাকবেনা। তারা নিজেদের সব নিয়া হাজির হইছে। বউয়ের গা থেকে শাড়ি-গয়না সব খুলে আনছে। যাদের বউ নাই, তারা তাদের দেশী গার্লফ্রেন্ডের সর্বস্ব আনছে। যাদের গার্লফ্রেন্ড নাই, তারা খাবার তৈরী করে আনছে।
আর আমার মত ধান্দাবাজ কি করছে? সে করছে কি, নিজের রূমের মালয়শিয়ান কার্পেটটাকে, খোদ মালায়শিয়ায়, বাংলাদেশের প্রোডাক্ট বলে চালিয়ে দিছে।
ভালো কথা। খুব দৌড়ের উপরে ছিলাম। কারণ আমার তো বউ, গার্লফ্রেন্ড কিছুই নাই, তাই সব কাজ আমাকেই দুই হাতে সামলাইতে হবে। ভালই সামলাইতেছিলাম।
বিকাল বেলা কাজ করতে করতে হটাৎ খালিদের উপর চোখ পড়ল। সোমালিয়ার ছেলে...ইয়া মোটা। আগে যখন আমার ফিলিপিনো গার্লফ্রেন্ড ছিল (এখনও আছে, তবে সে এখন ফিলিপাইন-এ), তখন সে আমার পিছে পিছে ঘুরত। পরে শুনছি, যেই ছেলের গার্লফ্রেন্ড আছে, খালিদ তার পিছে পিছেই ঘুরে। কারণ তার বিশ্বাস, অন্যের গার্লফ্রেন্ড একদিন দয়াপরবশ হয়ে তার সাথে প্রেম প্রেম খেলা খেলতে চাইবে।
দিলাম খালিদরে ডাক। বেশ কিছুদিন পরে দেখা। সে আমার কাছে এসেই, ইয়া একটা থাবড়া দিয়া বলল, হাই আরাফাত, হোয়াটস আপ? ইজ এভরিথিং অলরাইট? সব সময় সে এই কথাটা দিয়ে কথা শুরু করে।
আমি বললাম, চল বাইরে যাই।
বাইরে এসে এই কথা সেই কথার পরে ওকে বললাম, তোর হাতে এখন কোন মেয়ে আছে? নারী ছাড়া আমার লাইফটা একেবারে হেল হয়ে গেলো।
এই টাইপ কথা আমি সবাইকে বলি, কি দেশ, কি বিদেশ।
সে বলল, এখন নাই, তবে নেক্সট সেমিস্টার থেকে অবশ্যই থাকবে।
আমি বললাম, কেন, নেক্সট সেমিস্টার থেকে থাকবে? এখনই থাকবেনা কেন?
আমার প্রশ্ন শুনে সে যা বলল, তা হল এইরকম। ওর ভাষাতেই বলি। সে বলল, আরাফাত তুমি জান, আমি একটু মোটা, কারণ আমি ম্যাগী বেশি খাই।
তাই আমি ম্যাগী খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছি। ম্যাগীতো বেশি খাওয়া ভালো না। তাছাড়া এই সেমিস্টারে আমি নিয়মিত জিমে যাব। এটা আমার বডিটাকে সুন্দর করবে। রোদে বেশি বের হচ্ছিনা।
তাতে আমার রঙটা একটু সুন্দর হবে। আর বেশি করে সবজি আর পানি খাচ্ছি। সবাই জানে যে, সবজি আর পানি শরীরের জন্য কতটা উপকারী। এইসব করার ফলে, নেক্সট সেমিস্টারে আমি দেখতে খুব সুন্দর হয়ে যাব। তখন আমার আপনা আপনি গার্লফ্রেন্ড হবে।
আর আমি টাকা জমাচ্ছি। কারণ গার্লফ্রেন্ড হলে তো আবার পকেটে টাকা থাকতে হবে। বুজছো আরাফাত, এটা একটা লং ওয়ে। আমি অবশ্যি এতে কামিয়াব হব।
সব শুনে আমি বললাম, গুড লাক।
হোপ ইউ উড গেট আ নাইস গার্ল। আই হ্যাভ সাম গার্লস রাইট নাউ। কাম টু মাই হোম। আই উইল ইনট্রুডুউস দেম টু ইউ।
গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করতে এত পরিশ্রম করতে হয়, তা আগে আমি জানতাম না।
যাই হোক, পাঠকেরা। আমি খালিদের ছবি এই পোস্টের সাথে দিলাম। তোমরা দেখে মন্তব্য কর যে, তোমরা কতটুকু আশাবাদী, খালিদের নেক্সট সেমিস্টারে গার্লফ্রেন্ড থাকবে?
২।
ফো ফো ইরিত্রিয়ার ছেলে। আমার চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি ধান্দাবাজ।
আমার খুব ভালো বন্ধু। ইয়োইয়ারও ভালো বন্ধু।
নিউ ইয়ার, ২০০৯। খালিদ, ইয়োইয়া, ফো ফো আর আমি আমার বাসাতে মুভি দেখতেছি আর কি করা যায় ভাবতেছি। হটাৎ ফো ফো বলল, বীয়ার খাবে।
কি আর করা, আমি টাকা দিলাম।
তারপর থেকে ফো ফো আমাকে দেখলেই বলে আমি নাকি প্রিন্সের ছেলে, আমাকে দেখলেই তা বুঝা যায়।
প্রিন্সের ছেলে হওয়া যে এত সহজ, তা আমি আগে জানতামনা।
৩।
তখন, আমার সাথে একটা নাইজেরিয়ান ছেলে থাকে...নাম ইয়োইয়া।
এমনি কিছুদিন ধরে সে আমার সাথে আছে। আফটার অল, আমি হলাম গিয়ে প্রিন্সের ছেলে। খুবই ভালো কথা।
তাই ইয়োইয়া সম্পর্কে কিছু কথা বলি।
ক) দুনিয়ার তাবৎ মেয়ে ওর কাছে “সো গর্জিয়াস”।
সেটা কি ইউরোপিয়ান, কি ইন্ডিয়ান কালো মোটা তামিল।
খ) কাঁচা ডিম আমি কখনো কাউকে ডিপ ফ্রিজে রাখতে দেখি নাই। খালি ওকেই দেখছি।
গ) ইয়োইয়ার আত্মসম্মান বোধ খুব বেশি, কারণ সে নাকি এক গোত্রপতির ছেলে ছিলো। বর্তমানে তাঁর পিতা পরলোকে বসবাস করছেন।
তার পিতার দুইটা বউ ছিলো। আর বর্তমানে আছে সতেরোটা জীবিত ছেলেমেয়ে। যাইহোক, এই গোত্রপতির পুত্রের গাড়িতে উঠলে আমাকে খুব ঝামেলাতে পড়তে হয়। কারণ কি? কারণ হল, ইয়োইয়ার গাড়ির এসিটা নষ্ট। কিন্তু গাড়ির জানালা খোলা যাবেনা।
আমি গরমে ছটফট করতে থাকি, আর ওকে বারবার বলি, ইয়োইয়া প্লিজ জানালাটা একটু খোল। সে নিজেও ঘামতে থাকে আর বলতে থাকে, আরাফাত আর একটু কষ্ট কর। এইতো আমরা প্রায় জায়গামত চলে আসছি। ওর ধারণা, গাড়ির জানালা খুললে সবাই নাকি বুঝে ফেলবে যে, ওর গাড়িতে এসি নাই। তাতে নাকি ওর গোত্রের আর ইজ্জত থাকেনা।
ঘ) সর্ব নারীভুকের মত, ইয়োইয়া সর্ব খাদ্যভুক। ভাতের সাথে তরকারি হিসাবে যে বিস্কুটও খাওয়া যায়, সেটা ইয়োইয়া না থাকলে জানা যেতনা।
ঙ) আমার একবার প্রচন্ড জ্বরের সময় ইয়োইয়া প্রায় সারারাত আমার মাথাতে পানি ঢেলেছিলো। তাই ওর প্রতি আমার সবসময় একটা টান আছে।
যাইহোক, গল্পটা এবার বলি।
একদিন ইউনিভার্সিটি থেকে বাসাতে আসছি। এখন গোসল করব। গোসলের আগে দাঁত মাজতে গেলাম। দেখি টুথপেষ্ট শেষ। কারণ কি? দুইদিন আগে একটা বড় পেপসোডেন্ট কিনছি।
তাহলে সেটা গেলো কোথায়?
ডাক দিলাম ইয়োইয়ারে। তারে জিজ্ঞেস করলাম, টুথপেষ্ট কই?
সে বলল, খিদা লাগছিল, তাই খাইয়া ফেলছি।
আমি তো শুনে একেবারে থ। আমি বললাম, তোর খিদা লাগছে বলে তুই পুরা একটা পেস্ট খেয়ে ফেলবি?
সে আমাকে বলল, এমনি এমনি তো খাই নাই। চিনি দিয়া খাইছি।
আমি তো শুনে আবার থ। দৌড় দিয়ে পাকঘরে গেলাম। চিনির বোয়াম খুলে দেখি, আমার এক কেজি চিনি শেষ।
সে চিনির সাথে পেপসোডেন্ট মিশিয়ে খাইছে।
তারপর থেকে ওর সাথে আমি আর এক রুমের মধ্য একা থাকি না।
কোন দিন না আবার ওর খিদা লাগে, আর আমাকে কেটে খেয়ে ফেলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।