আমি কিছুই লিখব না।
ঐক্যবদ্ধ বিএনপি কিংবা সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাধা দলটির ভেতর থেকেই আসছে। মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও তার অনুসারী ছাড়াও একটি অংশ এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এর সঙ্গে যুক্ত গুলশান অফিসের দু'একজন কর্মকর্তা; যাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিভেদ সৃষ্টি করে দলে গুরুত্বপূর্ণ থাকা। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার আনুকূল্য লাভ।
ফলে অনেক চেষ্টা করেও সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বরং পাওয়া না পাওয়ার বেদনা থেকে দলটির মধ্যে বিরোধ ক্রমশ চাঙ্গা হচ্ছে। সূত্র জানায়, দেলোয়ার এবং তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অনুসারী বিভেদ জিইয়ে রাখার ব্যাপারে মূল ভূমিকা পালন করছেন। আর তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন গুলশান অফিসের দু’একজন পদস্থ কর্মকর্তা। তাদের ধারণা, পুরো বিএনপি একীভূত হলে দলে তাদের গুরুত্ব কমে যাবে।
বিশেষ করে কমিটিতে স্থান পেতে এখন যেভাবে সবাই মহাসচিব ও তার সমর্থকদের শরণাপন্ন হন একীভূত হলে তা আর থাকবে না। দলের নিয়ন্ত্রণ তাদের বাইরে চলে যাবে বলে আশংকা তাদের। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ পেতে এখন যেভাবে গুলশান অফিসের কর্মকর্তাদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কমে যেতে পারে তাও। ফলে গুলশান অফিসের সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তারা ছাড়া দেলোয়ারের অনুসারীরা এখন একজোট হয়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্রের দাবি, কমিটি গঠনসহ আরও দু একটি ইস্যুতে তাদের মধ্যে সমঝোতাও হয়েছে।
অথচ দেলোয়ার ও তার সমর্থকদের সঙ্গে ওই কর্মকর্তাদের ক দিন আগেও বৈরী সম্পর্ক ছিল। একে অন্যকে বলতেন এজেন্সির লোক। কিন্তু স্বার্থগত কারণে এখন তারা এক হয়ে গেছেন। ফলে তাদের বাইরে অন্য নেতা কিংবা তাদের সমর্থকরা এখন আর গুলশান অফিসে গিয়ে সুবিধা করতে পারছেন না। এমনকি স্থায়ী কমিটিরও কেউ কেউ এ কারণে গুলশান অফিসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
তাদের মতে, বিএনপিকে একীভূত ও শক্তিশালী করার বদলে দেলোয়ারের সমর্থন নিয়ে গুলশান অফিসের বিশেষ দু’একজন কর্মকর্তা দলকে দুর্বল করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা গুলশান অফিসে যেতে পারি না।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমি মনে করি বিএনপি ঐক্যবদ্ধই আছে কোন বিরোধ নেই। এর বেশিকিছু বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। স্থায়ী কমিটি আরেক সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের মতে, বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার বাধা দলের ভেতর থেকেই আসছে।
কারও নাম না নিয়ে তিনি বলেন, দু একজন নেতা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে দিচ্ছেন না। তিনি জানান, এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম সবাইকে একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানাবেন। বলবেন, অনেক হয়েছে এবার সবাই জাতীয়তাবাদী শক্তির পতাকাতলে একতাবদ্ধ হোন। মাহবুব বলেন, দলের বা বাইরের যে অংশটি বিরোধ জিইয়ে রাখতে চাইছে তারা দলের মঙ্গল চায় না।
এদের চিহ্নিত করা উচিত। না হলে বিএনপিরই ক্ষতি হবে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান এমকে আনোয়ার বলেন, কারা বিভক্তি সৃষ্টি করছে সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে সৃষ্ট এই বিভেদ যত দ্রুত ঘোচানো যায় বিএনপির জন্য ততই মঙ্গল। তার মতে, সংস্কারপন্থী হিসেবে যারা কিছুটা দূরে চলে গেছেন তাদের নিজেদেরও ফিরে আসার চেষ্টা থাকতে হবে।
তাহলে এক হতে সুবিধা হবে। তবে তার মতে, ওয়ান-ইলেভেন বা যে কারণেই হোক বিএনপিতে সৃষ্ট বিভেদরেখা খুব সহজে দূর হবে না। তবে কেউ দলের পক্ষে কাজ করতে চাইলে তাকে যেমন বাধা দেয়া ঠিক হবে না। আবার তেমনি দূরে চলে যাওয়া নেতাদেরও দলের জন্য নিজ উদ্যোগেই কাজ করা উচিত।
সূত্র জানায়, ওয়ান-ইলেভেনপরবর্তী পরিস্থিতির মেরুকরণ ছাড়াও নানা কারণে ছিটকে পড়া নেতাদের বিএনপিতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দলটির মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।
শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছাড়াও ‘প্রেসার গ্র“প’ বলে পরিচিত বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকেও একাধিকবার বিএনপিকে ‘এক’ করার কথা বলা হয়েছে। এরপর লে. জেনারেল (অব.) মাহবুব, মেজর (অব.) হাফিজ, ড. ওসমান ফারুকসহ আরও অনেককে বিভিন্ন ইস্যুতে খালেদা জিয়া গুলশান অফিসে ডেকেছেন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তারা কাজও করেন। কিন্তু এতে ওয়ান-ইলেভেনপরবর্তী সেই বিভেদরেখা আজ পর্যন্ত ঘোচানো যায়নি। বরং মাহবুবুর রহমানসহ দু’একজনকে অপদস্ত হতে হয়েছে। আবার কাউকে কাউকে কর্মী বাহিনী দিয়ে ‘টিজ’ করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।
সর্বশেষ, জেলা কমিটি গঠন নিয়ে সংস্কার-অসংস্কার প্রশ্নে বিভেদ আরও স্পষ্ট হয়েছে। মান্নান ভূঁইয়াকে ফিরিয়ে নেয়া দূরের কথা; বরং জেলা কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে ‘সংস্কারপন্থীদের অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-সাংসদকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ড. ওসমান ফারুক, ড. মঈন খানসহ অনেকেই গুলশান অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে দেলোয়ার ও তার অনুসারী ছাড়া বর্তমান কয়েকজন সাংসদ নিয়মিত গুলশান অফিসে যাতায়াত করেন। অন্যরা খালেদা জিয়া না ডাকলে সহজে যেতে চান না।
সমমনা নেতাদের নিয়ে বাসায় বাসায় তারা শলাপরামর্শ করেন। আর এভাবেই দলের মধ্যে নানামুখী মেরুকরণ তৈরি হচ্ছে।
সূত্র মতে, নানামুখী বিরোধে বিএনপিতে এখন তিন ধরনের মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে। মূল সেটাতে দাবিদার একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মির্জা আব্বাসসহ আরও কিছু নেতা। দল মূলত এ অংশের নেতৃত্বেই রয়েছে।
তারা কোনভাবেই সংস্কারপন্থীদের দলে ভিড়তে দিতে চাইছেন না। বলতে গেলে এ প্রশ্নে দলের মধ্যে তারা একরকম ‘যুদ্ধ’ করে যাচ্ছেন। দেলোয়ারের মতে, দুর্দিনে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন এবং ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি তাদের সুযোগ দেয়া যাবে না। মান্নান ভূঁইয়াসহ অনেককে দলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দেলোয়ারকে রাজি করানো যায়নি বলেই আজ পর্যন্ত তাকে বাইরে থাকতে হয়েছে। অবশ্য নীতিগতভাবে বিরুদ্ধে অবস্থান সত্ত্বেও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সংস্কারপন্থীদের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় বলে জানা যায়।
কারণ একসময় তার ঘনিষ্ঠ চৌধুরী কামাল ইবনে ইফসুফ, ড. ওসমান ফারুক ও আবদুল আলীমসহ অনেকেই সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। ফলে তিনি মান্নান ভূঁইয়াসহ সবাইকে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন।
অন্যদিকে, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. ওসমান ফারুক, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ড. আবদুল মঈন খান, আবদুল আলীম, জহিরউদ্দিন স্বপনসহ অর্ধশতাধিক সাবেক মন্ত্রী-সাংসদের নেতৃত্বে দলের পৃথক একটি বলয় বিএনপিতে থাকলেও দেলোয়ারের নেতৃত্বের প্রতি তারা রুষ্ট। কারণ তারা ঐক্যবদ্ধ বিএনপির পক্ষে। ফলে এ ধারার নেতাদের ডাক না পড়লে তারা গুলশান অফিসে যাচ্ছেন না।
আর খালেদা জিয়ার মুক্তির পর থেকেই মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি অংশ বিএনপির বাইরে আছে। বিএনপির সাবেক এই মহাসচিবকে ঘিরেও বেশকিছু নেতাকর্মী পৃথক রাজনৈতিক দল গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে ওয়ান-ইলেভেনের আগের বিএনপি এখন তিন ভাগে বিভক্ত। কিন্তু দলীয় কর্মকাণ্ডে কার্যকর বা সক্রিয় আছে কেবল দেলোয়ারের নেতৃত্বাধীন অংশ। বাকিদের খালেদা জিয়ার ডাকে মাাঝে-মধ্যে গুলশান অফিসে দেখা গেলেও ইস্যুভিত্তিক কাজ করেই তারা চলে যান।
যেমন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মনোভাব সবাইকে অ্যাকোমোডেট করার পক্ষে। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কিছুদিন তিনি চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু দেলোয়ার এবং তার সমর্থকদের বিরোধিতায় তা পণ্ড হয়ে গেছে। উপরন্তু তাকে সংস্কারপন্থীদের পক্ষের লোক বলেও অভিযুক্ত করেছে কেউ কেউ। এম. শামসুল ইসলামও সবাইকে একত্র করে দলকে শক্তিশালী করার পক্ষে এবং দেলোয়ারের আচরণে রুষ্ট।
তবে কৌশলগত কারণে প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে তার কোন অবস্থান নেই। আইনগত ইস্যুর বাইরে কোন আগ্রহ দেখান না খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমাদ। আর নিয়মিত ইস্যুভিত্তিক কাজ আর সব বিতর্কের বাইরে থেকে চলে যান এমকে আনোয়ার। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পারতপক্ষে নিজের এজেন্ডার বাইরে কারও পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেন না। সংস্কারপন্থীদের ব্যাপারে কখনও তার ভূমিকার কথা শোনা যায়নি।
তবে মহানগরী প্রশ্নে তিনি অবশ্য সাদেক হোসেন খোকাকে সমর্থন করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।