আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন পতিতা ও একটি টোকাইয়ের গল্প-২



সোবহান মিয়ার আগমন যতটা না আড়ষ্ঠ করে তুলল সাবিনাকে তার চেয়েও বেশি বিরক্ত করল টুনুকে। সাধারণত পান খাওয়া মানুষগুলো একটু আমুদে স্বভাবের হয়; হয়ত ছিলও, কিন্তু ঠিক এখন সে একজন দায়িত্বপ্রবণ দালাল ছাড়া আর কিছুই নয়। সোবহান: কি হইছে? ঘুমাও কেন? তোমার কোন আক্কেল আছে? সাবিনা: আসলে শরীরটা একটু গরম... টুনু: বু আইজকা যাইতে পারব না। তুমি যাওগা। সোবহান: ওই ফকিরনীর পো্লায় এত কথা কয় কে? শো্নো সাবিনা, কাস্টমার রাইখ্যা এইহানে তো্মার কাছে আইছি পিরিত করনের লাইগা না।

তাড়াতাড়ি আস। ব্যবসা একদিনের না... রেগেমেগে বেরিয়ে গেল সোবহান। স্বার্থপর কাঁটাতারে যেন টুনুর সব আনন্দের বেলুনগুলো ঠুস ঠাস ফুটতে লাগল। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঠান্ডা হাওয়া।

কবিরা হয়ত কবিতা লিখবে এই রাতে, কোন সুখী দম্পতি সুখ সুখ ভাব নিয়ে বিছানায় যাবে কিংবা ব্যালকনিতে বসে গরম চা খাবে আর বৃষ্টির শব্দে উহ আহ করে উঠবে। এ সব কিছুর মধ্যেও সাবিনা বের হবে। অপরিচিত নাগরের জন্য রুগ্ন শরীরটাকে ঘষে-মেজে উত্তেজক মাংসপেশীতে পরিণত করবে। সাবিনা বেরিয়ে পড়ল সো্নিয়া হয়ে। টুনু কোন শব্দ করল না।

সাবিনা বের হওয়ার সাথে সাথেই বৃষ্টির গতি যেন বাড়তে শুরু করল। এইটুকুন টুনুও জানে ঝড় এলে কি করতে হয়! চালের ফুটো দিয়ে অনায়াসে পানি পড়ছে অনর্গল ধারায়। ঘরে অত বড়ো কিছুও নেই যে পানি ধরবে। বাসন কো্সন, বালতি বদনা সব জড়ো করল টুনু। সব ভর্তি হওয়ার পর শেষমেষ হাল ছেড়ে দিয়ে বিছনায় বসে পড়ল পানিতে পা ভিজিয়ে।

ওদের শৈশব যেন অবাঞ্ছিত পানিতে ভাসানো পা! গভীর রাতে তিনজন কাস্টমারকে বিপুল আনন্দ দিয়ে সাবিনা যখন ঘরে ফিরছিল তখন তার দেখা রঞ্জু হাওলাদারের সাথে। বাংলা মদ খেয়ে সে এখন তিন আসমানের উপরে অবস্থান করছে। তারপরও একলা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সাবিনাকে দেখে যেন তার নেশাটা আবার চরে উঠল। রঞ্জু: আয় সাবিনা, বৃষ্টি কি থামছে? সাবিনা: চোখের কি ডিস্টাব আছে নি মিয়া? দেহ না...(বৃষ্টি আসলে থেমে গেছে)।

রঞ্জু: সোনিয়া, তুই মালা মতির প্রেম সিনেমাডা দেখছত? রাজ্জাক যহন মাল খাইয়া মালার বাড়ির সামনে আইছে...আহা, কি প্রেম তার অন্তরে? তুই তো জানস আমি তোরে তার চাইয়াও...(শেষ করতে পারল না ভীষম খেয়ে)। সাবিনা: যে জিনিস খাইয়া হজম করতে পারনা, হেইডা খাও কে? তোমার তো আসলেই দম নাই। কথা শেষ করতে না করতেই লো্কটা হু হু করে কেঁদে উঠল। বলল, আমার বউ আমারে ফালাইয়া গেছে গা। সাবিনার ভীষণ খারাপ লেগে উঠল।

প্রিয়তা কোন মানবশিশু নয়, যার জন্মাতে দশ মাস দশ দিন সময় লাগবে, নির্দিষ্ট কোন গর্ভ লাগবে। যে কোন সময় যে কারোর জন্য এর জন্ম হতে পারে। হয়ত সেরকমই কোন কারণে সারা জীবনের জন্য না হোক, কিছু মূহুর্তের জন্য হলেও রঞ্জুর ভীষণ আপন হতে ইচ্ছে হল তার। সাবিনা রঞ্জুকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে যখন বাসায় ফিরল, তখন পাখি ডাকছে। এসে দেখল পুরো ঘরে পানি।

টুনু ঘুমিয়ে আছে। ওর পা পানিতে ডোবানো। টুনুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভীষণ বিরক্তি লাগছে সাবিনার। অথচ হঠাৎ তার সেই পুরোনো খেলাটা খেলতে ইচ্ছে করল।

সাথে সাথে নিউজপেপারের পাতা দিয়ে নৌকা বানানো শুরু করল। টুনু কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, "বু কি কর?" সাবিনা: নৌকা বানাই। তুই ভাসাইবি? টুনুর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। সাবিনা: একলগে নৌকা ভাসামু, যারটা আগে ডুববো হেয় হারব, আর তুই জিতলে তোরে একটা উপহার দিমু।

টুনু : আর তুমি জিতলে তোমারে আমি দিমু। খেলা শুরু হল... (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.