সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনে অর্থ্যাৎ ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ”
পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির কো চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে ৩ (ক) ও (খ) উপধারায় ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়’ বিষয়ে বলা হয়েছে। এ উপধারা কীভাবে ব্যবহার হবে-তা নির্ভর করছে সরকার প্রধানের ওপর। ”
আসন্ন নির্বাচনের সময় ঠিক কখন হবে এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন, ২৫ অক্টোবর হবে চলতি সংসদের শেষ কার্যদিবস।
তাতে আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের অবস্থান বিপরীতমুখী।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনে নির্বাচনের কথা বললেও বিরোধী দল বিএনপি সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি করে আসছে।
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংসদের আগামী অধিবেশনে সংবিধান সংশোধনের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে রোববার জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
৫ বছর মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর ‘সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহারের’ বিষয় তুলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের এপ্লিকেশনের সুইচ প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
এ কাজটা প্রধানমন্ত্রীকে তার মেয়াদকালের মধ্যে করতে হবে। মেয়াদের ৫ বছরের মধ্যে তিনি করতে পারবেন। এর বাইরে নয়। ”
এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে-(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নববই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নববই দিনের মধ্যে:”
বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ণে জড়িতদের অন্যতম সুরঞ্জিত বলেন, “সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই সংসদ ডিজলভ করলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে [১২৩ অনুচ্ছেদের (খ) অনুযায়ী] নির্বাচন হবে।
ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ না করলে নিয়মানুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার [২৪ জানুয়ারি] আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ”
সংসদ ভেঙে দিতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই মেয়াদ শেষের ৯০ দিন আগেই তথা ২৭ অক্টোবরের আগেই রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে হবে বলে জানান তিনি।
৫৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “সংসদ ভাংগিয়া দিবার জন্য লিখিতভাবে [প্রধানমন্ত্রী] রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদান করিবেন এবং এবং তিনি অনুরূপ পরামর্শদান করিলে রাষ্ট্রপতি, …এই মর্মে সন্তুষ্ট হইলে, সংসদ ভাংগিয়া দিবেন। ”
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো প্রশ্নেরও সুযোগ নেই।
এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-“প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কি না এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।
”
নির্বাচনকালীন সময় শুরু হলে [৯০ দিন] তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যাবে জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর বা ওই ৯০ দিনে সংসদ ভেঙে দেয়ার অনুরোধের কোনো সুযোগ নেই।
“৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হলেই ইসির নির্দেশে সব চলবে। সংসদ সদস্যরা বহাল থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন। ওই সময়ে সংসদ অধিবেশনও বসবে না, সংসদ সদস্যরা আইন প্রণয়ন করতে পারবে না। সংসদ ভেঙে দিতে অনুরোধ করতেও পারবে না।
”
উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “ধরেন- প্রধানমন্ত্রী ২০ অক্টোবর রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করলেন-২০ জানুয়ারি সংসদ ভেঙে দেয়ার। তা হলে নির্বাচন হবে এপ্রিলের মধ্যে। যদি অনুরোধ না করেন তা হলে অক্টোবর থেকেই সিনে চলে আসবে ইসি। তারা জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করবে। ”
নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে বলে জানান অন্যতম সংবিধান প্রণেতা।
তিনি বলেন, “অন্তবর্তী এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা থাকবে। তাদের আকার ছোট হবে না বড় হবে সে বিষয়ে কোথাও বলা নেই। পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন হলেও একই মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে।
“মন্ত্রিসভার আকার নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার সুযোগও রয়েছে। ”
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা বিষয়ে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী থাকিবেন।
”
নির্বাচনকালে সবার জন্য সমান সুযোগ করার বিষয়টি ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন।
তিনি বলেন, “নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায় সরকারের সময়কার মতো আচরণবিধি প্রণীত হবে না; বরং অন্তবর্তী সরকারের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তা তৈরি করতে হবে। ”
ওই সময়ে ‘প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষ’ তথা নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কার্যক্রম চালাবে।
নির্বাচন বিষয়ে কোনো সংবিধান সংশোধনীর প্রয়োজন নেই বলে মত দেন তিনি।
নতুন অভিজ্ঞতা
সুরঞ্জিত জানান, যুক্তরাজ্য, ভারত, কানাডাসহ অনেক দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও বাংলাদেশের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। যদিও ৭৩ সালের নির্বাচনও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলো। ওই সময়ের চেয়ে এবার একটু ভিন্নতা রয়েছে।
১২ সেপ্টেম্বরের পরে আর নতুন অধিবেশন হবে কিনা, আগের ৯০ দিনে নির্বাচন, নাকি পরের ৯০ দিনে নির্বাচন; নির্বাচনকালে সংসদ সাসপেন্ড থাকবে- সব কিছু নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে হবে।
“আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
এ কারণে অনেক কথা হচ্ছে। অথচ এজন্যে সংবিধানের সি-ও সংশোধন করতে হবে না। ”
বিএনপির সমঝোতার সুযোগ ও ‘বিভ্রান্তি’
প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি ভাঙছেন, আবার সংবিধান সংশোধন ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার ষড়যন্ত্র- এসব অভিযোগ নিয়ে বিএনপি নেতাদের কঠোর সমলোচনা করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
মওদুদ আহমদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “উনি সংবিধান পড়েন নি; পড়লেও বুঝেন নি। হয় সংবিধান সম্পর্কে তার অজ্ঞতা।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মনগড়া কথা বলেন তিনি। ”
নির্বাচনকালীন বিষয়ে সংবিধানের আলোকেই, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে।
“মন্ত্রিসভা রয়েছে। কী আকার হবে, তাতে তারা থাকতে চান কি, কোন মন্ত্রণালয়-এসব খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা হতে পারে। একদিনে সমঝোতার কথা অন্যদিকে হুমকি- তা তো গণতন্ত্র নয়।
”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।