আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাউদ হায়দার

বাংলাদেশের আরেক নির্বাসিত কবি ও সাংবাদিক হচ্ছেন দাউদ হায়দার। তিনি ১৯৭৪ সাল থেকে নির্বাসিত। নির্বাসনের শুরুতে তিনি কলকাতায় অবস্থান করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি জার্মানি চলে যান এবং বর্তমানে সেখানেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি জার্মানির একজন ব্রডকাস্টিং জার্নালিস্ট। বাংলাদেশের সত্তর দশকের আধুনিক কবিদের মধ্যে অন্যতম দাউদ হায়দারের বিখ্যাত কাব্যের নাম জন্মই আমার আজন্ম পাপ।

সত্তর দশকের শুরুর দিকে তিনি দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। তখন থেকেই কবি হিসেবে তার খ্যাতি ছড়াতে থাকে। ১৯৭৩ সালে লন্ডন সোসাইটি ফর পোয়েট্রি দাউদ হায়দারের একটি কবিতাকে 'দ্যা বেস্ট পোয়েম অব এশিয়া' বলে আখ্যা দিয়েছিল। এর পরপরই সংবাদের সাহিত্য পাতায় দাউদ হায়দারের একটি কবিতা ছাপা হয়। কবিতার শিরোনাম ছিল 'কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়'।

ওই কবিতায় তিনি হজরত মোহাম্মদ (সা.), যিশুখ্রিস্ট এবং গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে অবমাননাকর উক্তি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। কবিতাটি সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। ফলে দেশের ভেতর এই কবিতা নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। ঢাকার এক কলেজ শিক্ষক আদালতে এ ঘটনায় দাউদ হায়দারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। অন্যদিকে জনতার রোষও বাড়তে থাকে।

ফলে দাউদ হায়দারের জীবন হুমকির মুখে পড়ে। ফলে ১৯৭৩ সালে কবিকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৪ এর ২০ মে সন্ধ্যায় তাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে এই মুক্তির উদ্দেশ্য যে নির্বাসন ছিল, তা টের পাওয়া যায় পরদিন। অর্থাৎ ২১ মে।

ওইদিন সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি রেগুলার ফ্লাইটে করে তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়। ওই ফ্লাইটে তিনি ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিলেন না। তার কাছে সে সময় ছিল মাত্র ৬০ পয়সা এবং কাঁধে ঝোলানো একটা ছোট ব্যাগ (ব্যাগে ছিল কবিতার বই, দুই জোড়া শার্ট, প্যান্ট, স্লিপার আর টুথব্রাশ)। কলকাতা ছিল তার কাছে একদম অচেনা। সেখানকার কাউকেই চিনতেন না।

কলকাতায় তিনি প্রথম গৌরকিশোর ঘোষের কাছে আশ্রয় পান। পরে আশ্রয় পান অন্নদা শংকর রায়ের বাসায়। তিনি সেখানে লেখালেখি শুরু করেন। কলকাতার কঠিন বাস্তবতার মাঝে তিনি দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। এর পর এগিয়ে যেতে থাকে তার নির্বাসিত জীবন।

নির্বাসিত অবস্থায় ১৯৭৯ সালে তিনি ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নবায়নের জন্য পাসপোর্ট জমা দিলে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। দাউদ হায়দারকে ভারত থেকেও নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে পেন আমেরিকান সেন্টারের ২০০০ লেখকের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে দাউদ হায়দারকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। জার্মানির নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সহযোগিতায় ২২ জুলাই ১৯৮৭ সালে তিনি জার্মানির বার্লিন শহরে যান এবং তারপর থেকে সেখানেই আছেন। উল্লেখ্য, তিনি বার্লিন যাত্রায় পাসপোর্টের পরিবর্তে জাতিসংঘের বিশেষ ট্র্যাভেল পাস ব্যবহার করেছেন।

দাউদ হায়দার প্রায় ৩০টির মতো বই লিখেছেন। জার্মান, হিন্দি, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জাপানিজ ও স্প্যানিশ ভাষায় লেখা বইও রয়েছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.