আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কথাগুলো না বলে পারলাম না

http://mazedul.blogspot.com/

যে কথাগুলো না বলে পারলাম না। ব্লগে প্রতিদিন নানা রকম লেখা আসে। ভালো লাগে সেসব লেখা পড়তে। তবে ব্লগে চার রকম পোস্ট (স্টিকি পোস্ট ব্যতিত) সবচেয়ে বেশি পঠিত হয়। ১.নাস্তিকতার সম্পর্কিত ২.ইসলাম সম্পর্কিত ৩.জামাত সম্পর্কিত ৪.তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত (টিপস) এই বেশি পঠিত পোস্ট গুলোর মাঝে চার নম্বরটি শুধু মাত্র গালাগাল মুক্ত থাকে।

ব্যক্তি আক্রমন এই ব্লগে নিষিদ্ধ হলেও প্রায়ই ব্যক্তি আক্রমন করা হয়। যেহেতু মডারেটরদের পক্ষে সব কমেন্ট মডারেশন করা সম্ভব নয়,তাই অনেক বাজে কমেন্ট থেকেই যায়। ব্যক্তি আক্রমন খুবই বাজে ব্যপার তবে তার চেয়ে আমার কাছে খারাপ লাগবে যদি কেউ শ্রী কৃষ্ণ,রাম,জিসাস,গৌতম বুদ্ধ অথবা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বাজে কথা বলে। ছোটবেলায় খবই কষ্ট পেতাম যখন আমার হিন্দু সহপাঠিকে অপর সহপাঠি তার ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করত,যথা সাধ্য চেষ্টা করতাম প্রতিবাদ করার। কিন্তু সেই ছোট বয়েসে তারা খুব কমই বুঝত,আমি নিশ্চিত এখন তারা তাদের কৃত কর্মের কথা মনে করে লজ্জিত হয়।

কিন্তু সামহোয়ারের ব্লগাররা তো ছোট নয়,বরং তারা অনেক জ্ঞানী,অন্য ব্লগের ব্লগারের তুলনায় অনেক স্মার্ট,তারা কেনো এমন করবে?সুযোগ পেলেই রাসুল (সাঃ) আর কুরআন সম্পর্কে বাজে কমেন্ট। আমি যেকোনো উগ্র আচরনের বিপক্ষে,সেটা ধর্মীয় উগ্রবাদই হোক আর নাস্তিক উগ্রবাদি হোক। নাস্তিক ব্লগারদের প্রতি কিছু কথাঃ ধর্ম নিয়ে আমার কোন বাড়াবাড়ি নেই,প্রত্যেকে তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীন ভাবে পালন করবে এটাই আমার চাওয়া। সবাই চায় নিজে যা পছন্দ করে অন্যকেও তা করতে উদবুদ্ধ করা,তাই আপনারা চান সবাই নাস্তিক হোক। এতে দোষের কিছু নেই।

কিন্তু বাই ফোর্স কোন কিছুই সম্ভব না,নিজের চরিত্রকে এমন করা উচিত যাতে মানুষ মুগ্ধ হয়ে আপনার মত হতে চায়,এটাই মূল কথা। মুক্তমনা সহ,প্রায় সব ব্লগেই নাস্তিকদের লেখা আমি পড়েছি। অভিজিত রায়,নাস্তিকের ধর্মকথা সহ অনেকেরই লেখা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। আপনাদের লেখা গুলো আমার ধর্ম বিশ্বাসের কোন ক্ষতি করেনি বরং আমার বিশ্বাসকে আরো মজবুত করেছে এবং ধর্ম সম্পর্কে জানতে আরো উদ্বুদ্ধ করেছে। এজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

তবে আপনাদের মাঝে কিছু ব্লগার একটু কম বিনয়ী,তাদেরকে উগ্রবাদি বলা যায়,তারা আবেগ দিয়ে চলে। আবেগের বসে গালিগালাজ করা তাদের স্বভাব। যার যা স্বভাব এরা ধার্মীক হলে হত ধর্মীয় উগ্রবাদী। তবে সবাই এমন নয়। তবে আপনাদের লেখা নিয়ে আমার কিছু বলার আছে।

আরবী ভাষায় একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে,ইংরেজী ভাষাতেও একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। আরবী থেকে ইংরেজী করার সময় কিছু ভুল থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক না,আর আপনারা যেহেতু ইংলিশ অনুবাদটা অনুসরন করেন তখন আবার একই শব্দের দুটো অর্থ থাকলে যেটা ইসলামের বিপক্ষে যায় আপনারা সেটাই গ্রহন করেন,এই মূহর্তে তেমন কোন উদাহরণ মনে পড়ছে না,তবে ব্লগার আকাশ পাগলার একটা যুক্তি তুলে ধরলামঃ Earth মাটিও হয় আবার পৃথিবীও হয়। কুরআনে যদি মাটিকে সমতল বলা হয়,তবে আপনারা বলছেন পৃথিবী সমতল। আর কিছু Tense ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ঝামেলা থাকে। আপনাদের এই বিষয়ে যদি খুব বেশি তর্ক করার ইচ্ছা থাকে তবে আমি ফেইসবুকে কিছু গ্রুপের লিঙ্ক দিব,যেখানে সারা বিশ্বের মুসলিমরা শুদ্ধ ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত আছেন।

আশা করি সেখানে জবাব পাবেন। আর গালিবাজদের বলতে চাই আপনার বিশ্বাস নেই ভালো কথা কিন্তু যদি আপনাদের ধারণা ভুল হয়,যদি ঈশ্বর থেকেই থাকেন তবে কি দরকার নবী-রাসুলদের গালিগালাজ করে জীবনে (পরকালে) বিপর্যয় ডেকে আনার?তবে আমি বিশ্বাস করি মৃত্যুর পর যদি আত্মা (Soul) থাকে তবে ঈশ্বরও থাকবে। জানিনা বিজ্ঞান আত্বায় বিশ্বাস করে কিনা। আস্তিক ব্লগারদের প্রতি কিছু কথাঃ প্রায়ই আস্তিকরা কুরআন ও বিজ্ঞানের তুলনা করে নানা রকম পোস্টদেন,লেখা গুলো পড়লে বোঝা যায় কিছু ব্লগার ছাড়া প্রায় সবারই (আমার নিজেরও) বিজ্ঞান ও ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব আছে। এইসব পোস্টের কারণে নাস্তিকেরা সুযোগ পায় কুরআন ও রাসুল (সাঃ) কে অবমাননা করার।

বুঝতে হবে যে কিছু কিছু অবিশ্বাসীর মতামত স্বয়ং রাসুল (সাঃ) পরিবর্তন করতে পারেনি। আমি মনে করি আমরা ইসলাম ধর্মের মানুষ হলেও আমাদের দেশের মানুষরা (আমি নিজেও) ধর্ম সম্পর্কে খুবই কম জানি,কিছু হইলেই বাসায় হুজুর ডেকে মিলাদ পড়াই আর এই অল্পশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন হজুরদের হাতে ধর্মটা ছেড়ে দিয়েই আমারা জান্নাত পাইতে চাই। ভুলটা এখানেই,ধর্মে বিশ্বাসী হলে অবশ্যই সবাইকে ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে জানতে না দেওয়ার জন্য কিছু কিছু হুজুরের ভুমিকা আছে। কয়েকজন হুজুরকে আমাকে কুরআনের অনুবাদ পড়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছিল।

এখন সময় এসেছে এই মোল্লা তন্ত্র থেকে ইসলামকে মুক্তি দেবার। আফগানিস্তানে যখন হামলা হল তখন জুম্মার খুতবায় ঈমাম সাহেব মুনাজাতে বললেন আল্লাহ আমেরিকাকে তুমি ধ্বংস করে দেও,সেই ঈমামের মত ধারনা পোষণ করা মানুষের সংখ্যা এই দেশে কম নয়। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন আমেরিকায় কত কজন মসুলিম আছে তার সংখ্যাটা জানা আছে?শুধু তাই নয় প্রকৃত মুসলমান কখনো কোন দেশ ও জাতির ধ্বংস চাইতে পারে না। প্রকৃত মুসলমান কখনো অন্য ধর্মকে হেয় করে না। এই সকল মোল্লাদের আচরন বাংলাদেশে নাস্তিক ব্যক্তির সংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করে।

মিলাদ পড়া জায়েজ কিনা এইটা নিয়া বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত দেন,কিন্তু হুজুররা বিভিন্ন বাসায় বহাল তবিয়্যতে মিলাদ পড়ায়,খানা-পিনা মাশাআল্লাহ খারাপ হয় না। কিন্তু আপনারা শুনেছেন কিনা জানি না,আমি কখনো দেখিনি অথবা শুনিনি কোন হুজুরের বাসায় মিলাদ পড়ানো হয়েছে। মসজিদে অথবা ওয়াজ-মহফিলে তাদের বক্তৃতা জুড়ে থাকে নামাজ না পড়লে দোযখের আগুনে পুড়তে হবে,আর মহিলাদের পর্দা না করলে অমুক হবে,তমুক হবে। কিন্তু সৎ কর্ম কিংবা পরপকার সম্পর্কিত কথা তারা বলে না বললেই চলে,ইসলামকে এরা কঠিন করে উপস্থাপন করে। মুসলমান হিসেবে একজন মানুষের চরিত্র কেমন হওয়া উচিত এইসব কথা তারা এড়ায় যায়।

বাংলাদেশে উদার,জ্ঞানী ও পরপকারী মুসলমান সৃষ্টি না হবার পেছনে এসব কারন দায়ী। কিভাবে মানুষ শিখবে?গ্রাম-গঞ্জের মাদ্রাসা গুলোতে যারা পড়াশোনা করছে তারা তাদের কুসস্কারাচ্ছন্ন শিক্ষকদের কাছে ইসলামের প্রকৃত আলো কিভাবে পাবে?আর জামাত-শিবিরদের জিহাদ-জিহাদ করে চিল্লাচিল্লি তো লেগেই আছে। মুসলমান হইতে গেলে আগে নিজে ভালো হতে হবে,অন্যের উপকার করতে হবে,আমরা ভালো হলেই শুধুমাত্র আমাদের দেখে মানুষ আমাদের ধর্মকে ভাল বলবে। আমাদের দেশে মসলিমদের মাঝেও অনেক বিভেদ,যেমন-তাবলীগ,জামাত,পীরের অনুসারী ইত্যাদি ইত্যাদি। এরা সবাই নিজের মত করে নিজস্ব মতামত নিয়ে ধর্ম পালন করছে,সোজা কথায় ইসলামের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে।

সকল আস্তিক মানুষদের প্রতি আমার আহবান,আল্লাহ আপনাদেরকে কুরআন দিয়েছেন,নবীর উপদেশ বানী নিয়ে আছে হাদিস গ্রন্থ,আপনারা এগুলো অধ্যয়ন করুন,দেখেবন ইসলাম কত মহৎ,কত সহজ। কেনো আপনারা নানা সম্প্রদায়ের কথা শুনে নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেন?দেখুন আজ পাকিস্তানে মসজিদে বোমা হামলা হয়,কি কারণে?নিজেদের মাঝে বিভেদের কারণে। উন্নত বিশ্ব চায় আমাদের মাঝে বিভেদ বাড়ুক,তারা এই বিভেদ বাড়ায় এর ফায়দা লুটতে চায়। একদিন আমাদের দেশেও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সচেতন না হলে। আর অন্য ধর্মের মানুষদের তাদের ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করার পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।

আমরা আমাদের মহত্ব দিয়েই শুধু অন্য ধর্মের মানুষের কাছে যেতে পারব। শক্তি প্রদর্শন করে তা কখনোই সম্ভব না। ইসলাম ও বর্তমান বিশ্বঃ বর্তমানে ইসলাম বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। পশ্চিমা দেশ গুলোতে অন্যধর্মের মানুষরা ইসলামে কনভার্ট হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। আমি কনভার্ট হওয়া কিছু মুসলিমের সাথে কথা বলেছি,তাদের মাঝে বাঙ্গালীও আছে,আমি দেখেছি তাদের ঈমান আমাদের (যারা জন্মসূত্রে মুসলিম) চেয়ে শক্ত,কারণ তারা জেনে বুঝেই কনভার্ট হয়েছে।

তাদের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব ভীত,এখন প্রশ্ন হল এত অপপ্রচার সত্ত্বেও তারা কেনো ইসলামের দিকে ঝুকছে?কারণ তারা বুঝতে শুরু করেছে একটা সম্প্রদায়ের সাথে দীর্ঘদিন থেকে অন্যায় করে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। পৃথিবীর সবখানেই এখন ইসলামকে হেয় করাকেই প্রগতিশীলতা মনে করা হয়। আল্লাহ,রাসুল (সাঃ) ও কুরআন সম্পর্কে কটুক্তি করাকে বাক স্বাধিনতা বলে,আর অন্য ধর্মের ব্যাপারে কিছু বললেই তার জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে (যদি সে মুসলমান নাও হয়)। নিচের ভিডিওটি দেখুন। আশা করি বোঝা যাবে।

অন্যদিকে আমেরিকা রাশিয়াকে নাস্তানাবুদ করতে লাদেন ও তালিবানদের উত্থান ঘটিয়ে,তাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে স্বার্থ হাসিল হবার পর তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে গোটা পৃথিবীর মুসলিম সমাজকে সন্ত্রাসি হিসেবে প্রমানের অপচেষ্টা করেছে। এখন মার্কিনীরাও বিশ্বাস করে যে টুইন-টাওয়ারে হামলা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর থেকেই করা হয়েছে। বিশ্বব্যপী ইসলামের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে তার ফল আমরাও ভোগ করছি,এর সাথে কিছু মুসলিম নামধারী ব্যক্তিরাও জড়িত আছে। ইচ্ছাকৃত ইসরাইল-প্যালেস্টাইন সমস্যা জিইয়ে রেখে লাখ লাখ নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে। ইরাক ও আফগানীস্তানে সন্ত্রাস দমনের নামে বহু নিরপরাধ প্রান কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছেন injustice (অবিচার) সন্ত্রাস সৃষ্টির অন্যতম কারন। পশ্চিমা বিশ্বের এসব নীতি জঙ্গিবাদ সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। বারাক ওবামা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারছেন বলেই আমার মনে হয়,কারণ ইতিমধ্যেই ইরানে সরকার পতনকে প্রভাবিত করার কথা স্বীকার করেছেন (রিপোর্ট আজকের প্রথম আলো)। সবশেষে আমার চাওয়া গোটা পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক। সকল অবিচার বন্ধ হোক,সকল জঙ্গী এবং উগ্রবাদী কর্মকান্ড নিশ্চিন্ন হোক।

আর এই ভালোলাগার ব্লগ হোক গালাগাল মুক্ত। বিঃদ্রঃ আমার লেখা অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে,কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে দুঃখিত। মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়,আমারো কিছু ভুল হয়ে থাকতে পারে। সবাই ভালো থাকুন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.