আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্য: মাধবীরাতের ক্যাম্পফায়ার এবং অদূরে ট্রামলাইন হাতছানি

ডুবোজ্বর

০১. যে এসে বুকের ভাঁজ খুলে রেখেছিলো ভুলহাত, যে এসে চোখের কূলে বুনেছিলো নদীর প্রপাত... বোবাকান্নার পেখম ভেঙে ময়ূর ভুলে যায় যাকিছু ছল। ডুবুরি সকল ভাসমান উজানে যা জানে পড়ে নেয় সন্তরণ। গাছবনে নিভে যায় গুল্মের নিঃশ্বাস। অন্ধকারের গন্ধ চিনে নিয়ে আমি জেগে রই, জেগে রই, জেগে রই পিথিয়া-যাতনা বিষে। হাত খুলে দেখি রেখাবলি দীঘল পরমায়ু ধরে দাঁত কামড়ে ছুটে গেছে উত্তর দিগন্তে।

০২. ছুটে আসছে ট্রামলাইন; মিলু, তুই বাঁপাশে তাকা। আমি তোর বুকের ভিতর শালবন হয়ে ঝিরিঝির ঝিরিঝির...। তুই কি জানিস, ধনেশের চঞ্চুতে কীসের অসুখ দীঘলহলুদ? তুই কাহাকে স্বাধীনতা দিয়া বাঁধিয়াছিলি বোকারাম? কে এসে কেড়ে নিলো তোর সকল পাখি আর পাখিনীর খড়? চাঁদ এসে শুষে নাও সূর্যের দাহ। কিংবা সূর্য আসো, খুন করো জোছনার বিরাগ। সেজেছি পশ্চিমের রঙ।

কড়িকাঠে নিভে গিয়েছি আকাশপ্রদীপ। ০৩. শিকল আর শকলের ছাপ এখনো লেগে আছে ত্বকে; ঘোর এবং ঘোরের ভিতর নৃত্য এবং মৃত্যু নিশ্চিতপরম। হাড় ছুঁয়ে যে যন্ত্রণা বিস্তারিত-- তার ভিতর একটি পাখি, দুইটি পাপ, তিনটি নারী এবং ছয়টি বনের স্পষ্ট পটমঞ্জরী খুব নীরবে বলে যায়, নতজানু কাম এসো নখের সুতো ধরে। ০৪. মাধবীরাতের ক্যাম্পফায়ার জ্বলে উঠে আরও পরে, কোথাও সঘনবনের অস্থিরতায়। পতিত দিনের রোদে ভরে গেছে হাওয়াচর পাখিদের চোখের প্রাচীর, রোদের উরুমূলে চাক চাক ছত্রাকসুখ।

দেয়ালের ছায়ায় রক্তরহিত তপ্ত ভোরের উদ্ভাস, আমাদের জলঘুম-- অন্তর্গত হাহকার নিঝুম। আমাদের রঙহীন চেতনা যে নদী বাজায় আনমনে-- অন্যদিন একটি রোদের সুড়ঙ্গে তাকে বইয়ে দেবো উড্ডীন পথের পারে। আমরা ভীষণ নিষাদ এসে নুয়ে পড়ি সেই জলতলে, আমাদের পদমূলে চিরচিন্ময় আগুন জ্বলে... ০৫. মানুষ শৈশব অতিক্রম করলেই আমাদের সমাজ নারী-পুরুষ বিভাগ করে ফেলে। সুতরাং চৌদ্দবছর বয়সকে নারী বললেও ভুল বলা হবে না। কিন্তু কথা হচ্ছে-- আমি মেয়েটিকে নারী কোথাও বলি নি।

আমি যে বাক্যে নারী শব্দটি লিখেছি-- বাক্যটি পড়ার সময় হয়তো আপনার মনোসংযোগ ছিন্ন হয়েছিলো। আমি নারী বলেছি সাতকাহনের দীপাবলিকে-- যে নিজের চেষ্টায় আইসিএস পাশ করার পর সরকারের প্রশাসনিক পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর নানামুখী সমস্যা এবং সংগ্রামের ভিতর দিয়ে পথ চলতে চলতে একসময় হোছট খেয়ে তার ঠাকুর মা মনোরমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে, তখন তাকে আমি নারী বলেছি। এটা উদাহরণ। হ্যাঁ? কালীদাস মেঘ আর হাতি একাকার করেছেন বলেই যে আপনি আকাশে এখনো গাধা কিংবা খচ্চর দেখবেন, আর আমি অভাজন মূর্খ সেটা বলতে পারবো না, এইটা তো মশায় বিরাট অনাচার। ০৬. যার বই পড়ার অভ্যাস আছে সে কি "নারী"র মতো সহজ একটা বই পড়তে পারে না? আর যেখানে বই যে দিয়েছে তার সাথে পাঠোত্তর আলোচনার সুযোগ থাকছে।

আর বইটিকে আমি খুবি গুরুত্বপূর্ণ বই মনে করি, সিমোন দ্য বোভোয়ারের "দ্য সেকেন্ড সেক্স" এর পর। এবং এই বইটিকে আমি প্রতিটি নারী ("যে নারী হয়ে জন্ম নেয় না, ক্রমশ নারী হয়ে উঠে") র জন্য গীতাবৎ মনে করি। কেননা এটি তার নিজেকে চিনতে শেখায়। তার অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। নারী নয়, মানুষ হিশেবে তার ঔচিত্যবোধকে জাগ্রত করে।

আর পাতা আর পাপড়ির পার্থক্য শেখায়। পরের জন্মে আমি নারী হবো। ০৭. আমরা এমন অনেক বই খুবি কম বয়সে পড়ে ফেলি, যা পুরোপুরি বুঝতে পারি না। কিন্তু বইটা যদি ভালো হয় তবে বইটির স্মৃতি আমাদের মাথার ভিতর রয়ে যায়, ফলত পরে আবার অনেকবার পড়া হয়। ব্যাপর টা আসলে এমনই।

আমি ঠাকুর মার ঝুলি খুলবার আগেই বড়দের একটা বই পড়েফেলেছিলাম। প্রেমের উপন্যাস। ০৮. রামগিরিতে যে-যক্ষ নির্বাসিত-- তার কাছে সারাবছরই আষাঢ় মাস। নাহলে সে মেঘকে দূত করে অলকায় পাঠাতে পারে না। সে বিরহ-স্রস্ত, তার হাতের বলয় খসে পড়েছে, সে এমনই শীর্ণকায় হয়েছে... আষাঢ় তাকে বাঁচিয়ে রাখে... কুবের আমাকে ভুল শাস্তি দিলেন ঠিকই।

কিন্তু বিনয় হয়ে চুপিচাপ বলে গেলেন, এরূপ বিরহ ভালো... ০৯. মা, কোথাও ভোর হচ্ছে। কোথায় ভোর? বালক বোদলেয়ারের কান্নায় নিভে যাবে পুনর্বার সূর্য এবং সারস, “আমাকে ডুবে যেতে দাও তোমার চোখের নীরব উপাখ্যানে...” মা, তোর স্তনে ফিরিয়ে নে আমাদের তৃষ্ণাতুর ওষ্ঠাধর, চোখ খুঁড়ে বানিয়ে দে সোনালি জলাশয়, জলাশয়ে শাদাহাঁস শান্তি-- সন্তরণে ভেঙে দেবে ছায়া আর ছায়া। ১০. এইখানে যাকিছু সুর ও তাল প্রাচুর্য নিয়ে শুয়ে আছে-- কাহাদের গাঁয়ে যেনো বিভিন্ন মৌতাতে নড়ে উঠে, নড়ে উঠে-- নড়ে উঠে খড়। এইকম্পন ঠোঁটের বুকের নখের আতনু চিবুকের ভিতর প্রবাহিত হয়। ধূলিতীরে আছে রেখাগীত বেদন।

এইধূলি একদিন আমাদের আঙুলের ফাঁক গলে, কখনও উতল সমুদ্রের ফেনায় মিলে থকথকে কাদাবন মাধুর্য। ১১. তাদেরকে তারা দেখতে আমাকে তৈরি করে হাসে-- যদি আপনি ভালো জানেন না, আপনি সুন্দর পরিবার থেকে তারা সমস্ত ভেবেছিলো। কিন্তু আমাকে বলতে দিন; কালো শাড়িতে সেই একটি নারী তেরোবছর অপেক্ষা করে বিয়ে করেছিলো। সে তাকে পরিবারের নামে গ্রহণ করে। তারপর চিকিৎসা করা হয়, পছন্দ করা হয়।

১২. আপনি কি জানেন সে কারণে একটি সে গবাদি পশু তার হাড় ত্যাগ করে উর্ধ্বগমন করে এবং তার নাম হয় বুরাক। আর ধরুন সেটা যদি গাভী হয় তবে চুক্তেয় কামধেনু। কিন্তু যারা রাস্তায় সে বসনে পরিণত তারা আপনি যে সুন্দর তা নিজের হাড়দ্রব্য গুনে আর ভাবে। গাভীটি মুখমণ্ডলে বাণীদেবী, স্তনে বিশাখা। আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস কতোটুকু, মান্যবর? ১৩. আমাদের পাঁজর খুলে বুনে দে হিজিবিজি গোলপাতার বন, আমরা মাওয়ালির ঘরের জীর্ণছাউনি হবো কোনোদিন শীত আর চৈত্রে, ফিরে যাবো মধু আর মাধবীর কাছে... ................................................................................................... রচনাকাল: ১৩-০১-০৯.


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।