জন্মে ছিলাম যে নদীর পাড়ে সেই নদী আজ সাগর বক্ষে...
ছাত্রলীগ গত চার পাঁচ মাসে প্রায় সব কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। এবার একটু এই চাটুকারদের থামান। বাংলাদেশ ব্যংকের আওয়ামীলীগ পন্হি সিবিএর নেতারা সাবেক গভর্নর কে অপদস্ত করেছে বিদায়ের শেষ দিনে। জিম্মি করে দাবী আদায় করতে বাধ্য করেছে। এই সব সিবিএর নেতাদের মাঝে আমি বিএম বাকের কে দেখতে পাইতেছে।
এরা আপনার দিন বদলের সনদ পেলো কিভাবে? তারা নাকি সিবিএ’র নতুন ইতিহাস গড়তে কাজ করছেন!
নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার সব কিছুতেই হাত
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিতাস সবখানেই কালো থাবা বিস্তার করেছে সিবিএ রাজনীতি। ক্ষমতার পালাবদলের পর এ রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক সিবিএ নেতারা। তারা এখন বেপরোয়া। নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। প্রশাসনকে জিম্মি করে চলছে ঢালাও বদলি বাণিজ্য।
ব্যাংকঋণ পেতে প্রতি লাখে তাদের কমিশন দিতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন বিএনপি’র ইউনিয়নগুলোর নেতারা। এ সংগঠনের অনেক অফিসেই ঝুলছে তালা। ভিন্নমতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি ও বদলি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সিবিএ রাজনীতি নিয়ে সম্প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেছেন, সিবিএ’র কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। অবশ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শ্রমিক নেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অতীতের লুটপাটের চিত্র বদলে তারা সিবিএ’র নতুন ইতিহাস গড়তে কাজ করছেন। জরুরি অবস্থার কারণে প্রায় দু’বছর বন্ধ ছিল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নগুলোর কার্যক্রম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ সময়ে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হয়। তবে মূলত গত পাঁচ মাসে ইউনিয়নগুলো গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়।
এ সময়ে একদিকে সরকারি দলের সমর্থক সংগঠনগুলো শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলে, অন্যদিকে তালা ঝুলতে থাকে বিএনপি’র সংগঠনগুলোর কার্যালয়ে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে সব রাজনৈতিক সরকারের সময়েই সিবিএ নেতাদের দৌরাত্ম্য ছিল। সিস্টেম লসের নামে কোটি টাকার গ্যাস চুরি ছিল সাধারণ ঘটনা। সেই সঙ্গে ছিল বদলি বাণিজ্য। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এখানে নেতা-কর্মীদের দু’টি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠে।
দু’পক্ষই নিজেদের সরকারি দলের একনিষ্ঠ অনুসারী হিসাবে দাবি করে। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে দু’বার। বর্তমানে সিবিএ কার্যালয় দখলে রেখেছে তিতাস গ্যাস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। তাদের কথাতেই চলছে তিতাস প্রশাসন। গত পাঁচ মাসে তারা অন্তত এক শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেছে।
এর প্রায় সব ক্ষেত্রেই মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়েছে। এমনকি নিজের দলের সদস্যদেরও পছন্দসই জায়গায় বদলি করার জন্য টাকা নিয়েছেন নেতারা। পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে। তিতাস গ্যাস কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. কাজীমুদ্দিন জানান, সম্প্রতি ব্রাক্ষণবাড়ীয়া শাখার মোশাররফ হোসেন ও মুন্সীগঞ্জের আজিজুল হককে নারয়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বদলি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এ ইউনিয়নের সভাপতি মোতালেব হাওলাদারের চাকরি রয়েছে আর মাত্র নয় মাস।
শেষ সময়ে তাই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার হাত দিয়ে কোন কাজই টাকা ছাড়া হয় না। তবে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, অতীতের রেকর্ড ভেঙে তিতাস এখন সবচেয়ে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ১০ ভাগ পর্যন্ত সিস্টেম লস ছিল। এখন আমরা তা দুইয়ের নিচে নামিয়ে এনেছি।
ওই সময়ে গ্যাস চুরি ও বদলি বাণিজ্যে নেতারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এখন সেসব কিছুই হচ্ছে না। আর আমাদের শ’ শ’ নেতা-কর্মীকে হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছিল। এর মধ্যে গত পাঁচ মাসে মাত্র ৩৩ জনকে বদলি করে ঢাকায় আনতে পেরেছি। কারণ, প্রশাসন আমাদের কথা গ্রাহ্য করে না।
টাকার বিনিময়ে বদলির তো প্রশ্নই ওঠে না। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের চিত্রও প্রায় একই। এখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সিবিএ ইউনিয়ন তিনটি। অন্য সময়ে তাদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও এখন তারা একসঙ্গে কাজ করছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা বিএনপি সমর্থিত অগ্রণী ব্যাংক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির পাঁচ শতাধিক সদস্যকে হয়রানিমূলক বদলি করে।
গত সপ্তাহে এ সংগঠনের পিরোজপুর অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে ভোলায় এবং ভোলার সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমারকে পিরোজপুরে বদলি করা হয়। ব্যাংক প্রশাসনকে তারা জিম্মি করে ফেলেছে। কোন কর্মকর্তা তাদের কথা না শুনলেই তাকে গালাগাল শুনতে হয়। সম্প্রতি এক লাখ টাকার মোটরসাইকেল ঋণ দেয়ার জন্য নেতারা পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। এছাড়া সিবিএ অফিস দখলের অভিযোগ রয়েছে।
কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মেহেদী আলী খান বলেন, প্রধান শাখা, আমিন কোর্ট করপোরেট শাখা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করপোরেট শাখার সিবিএ কার্যালয়সহ বেশ কিছু দলীয় অফিস আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দখল করেছে। তারা এই অফিসগুলোর আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছবি সরিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। নির্বাচনে তারা জয়ী হলে তাদের নেতৃত্ব আমরা মেনে নেবো। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অগ্রণী ব্যাংক কর্মচারী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল গফুর দেওয়ান বলেন, তাদের কর্মকাণ্ডের কারণেই সিবিএ শব্দটি হয়রানি, লুটপাটের সমার্থক হয়ে গেছে।
তারা টাকা কামানোর জন্য হয়রানিমূলক বদলি করেছে। গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার নামে প্রচুর অর্থ আত্মসাৎ করে সিবিএ’র সুনাম নষ্ট করেছে। এখন নিজেদের গা বাঁচাতে তারা পাল্টা অভিযোগ তুলেছে। গত পাঁচ মাসে এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। সিবিএ কার্যালয় দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওগুলো আমাদেরই অফিস ছিল।
বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দখল করেছিল। এবার তারা নিজেরাই সরে পড়েছে। আমরা নিজ কার্যালয়ে ফিরেছি। আর জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছবি তারাই সরিয়েছে। আমরা শুধু তাদের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি নামিয়েছি।
জনতা ব্যাংকেও শুরু হয়েছে ভিন্নমতের কর্মকর্তাদের হেনস্তা ও বদলি বাণিজ্য। এ পর্যন্ত শতাধিক বদলির ঘটনা ঘটেছে। প্রতি ক্ষেত্রে লেনদেন হয়েছে পাঁচ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সিলেট বিভাগে সহজে কেউ বদলি হয়ে যেতে চায় না। এজন্য অন্য সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সেখানে হয়রানিমূলক বদলি করা হয়।
এরপর সেখান থেকে সুবিধাজনক জায়গায় বদলির জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নেন নেতারা। এক কথায় টাকা ছাড়া কোন বদলিই হয় না। গৃহনির্মাণ ঋণ টাকা কামানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। ১০ লাখ টাকা পেতে নেতাদের দিতে হয় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত গণতান্ত্রিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের পদোন্নতির ঘোষণা এসেছে সাত মাস আগে।
সিবিএ নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য তারা সেই আদেশ বাতিলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রশাসন এখনও তাদের কথাতেই ওঠে-বসে। সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম পদোন্নতির বিষয় ছাড়া অন্যান্য সব অভিযোগকে ‘মনগড়া’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, একজনকেও হয়রানিমূলক বদলি করা হয়নি। এখনও তাদের নেতা-কর্মীদেরই সুবিধাজনক স্থানে বদলি করা সম্ভব হয়নি।
জনতা ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, সিবিএ কার্যালয় এখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দখলে। প্রশাসনসহ সব কিছু তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতির দায়ে জেলে যান বিএনপি সমর্থিত সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশনের সভাপতি বিএম বাকীর হোসেন। এছাড়া সংগঠনের বেশ কিছু শীর্ষ নেতাকে পদোন্নতি দেয়ায় নেতৃত্বে সঙ্কট তৈরি হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সংগঠন সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এখন দ্বিধাবিভক্ত।
একাংশের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন দাবি করেন, তারাই আওয়ামী লীগের মূলধারা। তিনি বলেন, তাদের কমিটি নিয়ে অপর পক্ষ (আজম গ্রুপ) মামলা করেছে। এটি বিচারাধীন থাকায় প্রশাসন এখনও কার্যালয় খোলার অনুমতি দেয়নি। তবে এভাবেই তারা কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। প্রশাসনকে কোন বিষয়ে অনুরোধ করলে তারা সেটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
ঢাকা ওয়াসাতেও সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনের সভাপতি হাফিজ উদ্দীন বলেন, সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী হিসেবে আমরাই সিবিএ কার্যালয়ে বসছি। তবে সাংগঠনিক কাজ-কর্ম তেমন কিছু এখনও হচ্ছে না। অফিসের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তিনি জানান, ১৯৯২ সালে শেষ তিতাস গ্যাস সিবিএ নির্বাচন হয়।
এতে তারাই জয়লাভ করেন। এরপর থেকে নানা আইনি জটিলতায় নির্বাচন আটকে আছে।
http://www.manabzamin.net/lead-02.htm
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।