আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় বিভাজন ও ঐক্য



মুজিব ও জিয়াকে সব বিতর্কের উর্ধ্বে রাখাই জাতীয় কামনা, যা এ যাবৎ কাল করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দলের অনুসারী এবং শহীদ জিয়ার দলের অনুসারী, উভয় পক্ষকে বুঝতে হবে, বঙ্গবন্ধুর অবদানকে যথার্থ ও বড় করে দেখা হলে যেমন জিয়ার অবদান খাটো হয়ে যায় না। তেমনি শহীদ জিয়ার অবদানকেও যথাযথ ভাবে মুল্যায়ন করেল বঙ্গবন্ধুর অবদান হ্রাস পায়না। এভাবে আমদের দেশের জনসমষ্টির বিভাজন করা কারোই কাম্য নয়। এছাড়াও আমাদের দেশের জনসমষ্টিকে মৌলিকভাবে দুই ভাগে বিভাজন করার এক হীন চেষ্টা করা হচ্ছে।

যাতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মৃত্যু ঘটিয়ে বাঙ্গালী জাতীতাবাদ প্রতিষ্ঠা ও দুই বাংলার মাঝে এক ও অভিন্ন সীমা রেখায় আবদ্ধ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ভুলণ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। যারা স্বাধীনতার যুদ্ধে সহযোগীতা করেছিল, তারা তখন ভেবেছিল বাংলা স্বাধীন হলে ভারতের বলয় থেকে বের হতে পারবেনা। কিন্তু তারা যখন দেখল এদেশের জনসমষ্টি নিজস্ব জাতীতাবোধ ও সংস্কৃতিতে মাথা উচু করে দাড়াতে চায়। তাদের পররাষ্ট্রনীতি ভারতকে ক্রস করে আসিয়ান মুখী করতে চায়, তারা শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয় গঠন করতে চায় এবং এই পথে আন্তর্জাতিক ভাবে তাদের নিরাপত্তা বাহিনী পার্শবর্তী দেশের চেয়ে সুনাম কুড়াচ্ছে তখন তারা পুতুল সরকারের চিন্তা করে। প্রিয় ব্লগার ভাবছেন একথগুলো আষাঢ়ে গল্প, তা নয়।

কারণ, আপনারা পত্রিকার পাতায়, টিভি পর্দায় দেখেছেন বিগত উদ্দীনত্রয় এর আমলে তারা আনুষ্ঠানিক ভাবেই একটি সংগঠনের ব্যানারে সাংবাদিক সম্মেলন ও পত্রিকার কলামের অভিন্ন বাংলার রুপরেখা প্রকাশ করে। তারা বলেনি স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে এক হতে চায় বরং তারা বলেছে, ঐ বাংলার সাথেই বাংলাদেশকে একাকার করতে। আবার এই কিছুদিন পূর্বেও ভারতের কোন মুখ্যমন্ত্রী এ দেশে কোন দলকে রক্ষার জন্য আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির উপর বৈদেশিক সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কথা বলে। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্টা পেলেও বাংলাদেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চায় বলে মন্তব্য করে। তারা নিজ দেশে ব্যার্থ হয়ে পার্শ্ববর্তী দুর্বল দেশের প্রতি সম্রাজ্যবাদী ও আগ্রাসন মূলক যে নীতি গ্রহন করেছে তা দেশের সুশীল না অশ্লীল সমাজ প্রত্যক্ষ করে স্ব-স্বার্থে নিশ্চুপ রয়েছে।

পার্শ্ববর্তী দেশের থিংক ট্যাংকগণ ভাল করেই বুঝেন যে বাংলাদেশের স্বার্থ হাসিল করার জন্য সেখানে একটি গচ্ছিত দল লাগবে। তাদের এ মাস্টারপ্লান বাস্তবায়ন করার জন্য সেই দলটি কাজ করছে। তাদের দিয়ে দেশের জনসমষ্টিকে বিভাজ করছে। তারা সেই দলটিকে দিয়ে স্বধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে বেরুবাড়ী করিডোর নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে। এদেশকে তাদের নিয়ন্ত্রনে নেবার জন্য পানি নিয়ন্ত্রন করে নদীতে বাধ দিচ্ছে, সীমান্ত পথে ইসরাইলের মত প্রাচীর তৈরি করার হীন চেষ্টা করছে, প্রতিদিন সীমান্ত পথে বাংলাদেশী নাগরীকদের হত্যা করছে, তাদের অর্থে এদেশে বড়বড় রাজনৈতিক হাঙ্গামা সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রিয় পাঠক, ভুলে গেলেন এই কদিন পূর্বে ২৮ শে অক্টোবরে লগি-বৈঠায় প্রাণ হারায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্ররা, ২২ শে আগষ্ট ছাত্র বিক্ষোভে নিহত হয় রাবিতে রিক্সা চালক,বি ডি আর বিদ্রোহের ঘটনায় ভুলণ্ঠিত হয় আমাদের পুলিশ, বি ডি আর ও সেনাবহিনীর সম্মান, এমনকি জে.এম.বি নামে যাদের সাজানো হয়েছে তাদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে যে ভারত, তা দিবালোকের মত প্রমাণিত বলে বুদ্ধিজিবীরা মনে করছেন। সকল বিষয় যখন ওপেন সিক্রেট তখন শুধু আমাদের জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণেই এর প্রতিবাদ আমরা করতে পারছিনা। প্রিয় ব্লগার, চিন্তা করুন যে বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশেও স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, চলছে, আপনি কি শুনেছেন দেশ স্বাধীন হবার ৩৮ বছর পর ও কোন দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ নিয়ে নিজস্ব জন সমষ্টিকে বিভাজন করছে? এটা তো হয়েছে সেই দুরদেশ ইরাকে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের সম্পদ দখলের জন্য তাদের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে জাতীকে বিভাজিত করেছিল। তারই ফলশ্র“তিতে ইরাক দখল। তেমনি করে ভারত বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য নষ্ট করতে আমাদের দেশের একটি দলকে পুজি করছে এবং তাদের নেতৃত্বের সেই মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করে রাজনীতি করছে, ভোট চাচ্ছে, জাতীয় বিভাজন করছে, এমনকি তারা শহীদ জিয়াউর রহমান বীর প্রতীককে পর্যন্ত কটুক্তি করতে দিধাবোধ করছেনা।

আবর গত ৩৮ বছরে ঐ দলটিও ক্ষমতায় এসেিেছল তারা কখনোই যুদ্ধপরাধী সম্পর্কে কথা বলেনি। এখন ৩৮ বছর পর কেনইবা তারা এ জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করছে। এ কথা শুরু করার পিছনে যে শক্তি কাজ করছে তারা ভারত ও ইসরাঈলের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ বলে মনে করেন অধিকাংশ বুদ্ধিজিবীরা। আর যুদ্ধপরাধী হিসাবে যাদের বলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা থেকে এ পর্যন্ত একটি জিডিওতো কোন থানায় কেহ করেনি। তারা যদি এ হীন কাজ করেই থাকে তাহলে এত বছর চুপচাপ থাকে কিভাবে? কেননা মানুষের স্বভাব পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব কঠিন।

আর এত হাজর হাজার মানুষ কিভাবে তাদের এ স্বভাব নিয়ন্ত্রন করলো আমাদের চিন্তাশীল প্রজন্ম আশ্চর্য হয়। সেই দলটিকেই ভাবতে হবে তারা কি কোন বিষয় ভাবতে যেয়ে বেশী ভেবে ফেলেছে কিনা। কেননা অতিরিক্ত সকল বিষয়-ই খারাপ। যদি তাই হয় তবে তাদেরই উচিত সেখান থেকে ফিরে নতুন করে পথ চলা শুরু করা। তারা যেহেতু স্বধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের উদার ভাবে এ সংস্কারের পথে নেতৃত্ব দেয়া।

তাদের মনে রাখা উচিত বঙ্গবন্ধুর হত্যা, জিয়া হত্যা, এরশাদের উত্থান ও পতন, ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ২৮ শে অক্টোবর ঘটনা, ২২ শে আগষ্ট ছাত্র বিক্ষোভ, ১/১১’র পট পরিবর্তন, বি.ডি.আর বিদ্রোহ সকল কিছুর মাঝেই যে দেশের জনসমষ্টি বিভাজনের রাজনীতি ও দেশের স্বাধীনতা -সার্বভৌমত্বের বিনষ্ট করার হীন চেষ্টা করছে। তারা যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের এজেন্ট তা এখন ওপেন সিক্রেট। কেননা ২১ শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার অস্ত্র-সরঞ্জামাদি ভারত থেকেই আমদানী কৃত, ২৮ শে অক্টোবর, ২২ শে আগষ্ট এর ঘটনার অর্থও ভারত থেকে এসেছিল বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার কলামে প্রকাশ পায়। আবার ভারতেই বাংলাদেশের দাগী সন্ত্রসীরা পালিয়ে আশ্রয় পায়। সেখান থেকেই অনেক আন্ডার গ্রাউন্ড সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে জয়নাল হাজারী শমীম ওসমান উল্লেখ যোগ্য। তাই এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইতহাস পরিষদের অন্যতম সদস্য, লেখক, ঐতিহাসিক, অধ্যাপক পরিতোষ কুমার কুন্ডু বলেছেন যে, “এ দেশ পরবর্তীতে কলকাতা থেকেই পরাধীন হবে। কেননা ইতিহাস ঘুরে ফিরে আসে। ” অতএব আমদের দেশের উল্লেখ যোগ্য দল সমূহ বি.এন.পি, আওয়ামিলীগ, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি নিজেদের মধ্যে ঐক্যের জন্য এক টেবিলে বসা দরকার। তা না হলে বাংলাদেশের পরিনতি হবে ইরাক ও আফগানিস্তানের মত।

যা আমাদের কখনোই কাম্য নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.