আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদরে ভাষা শহীদরো, র্পব-২



(আসঙ্কাজনক হলেও সত্য যে আমরা ভাষা শহীদদের নাম ছাড়া বিশেষ কিছু জানি না। এটা আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক। একজন বাংলা ভাষাভাষী হিসেবে আমার একটা দায়বদ্ধতা থেকে যায়। সেই দায়বদ্ধতা থেকে ভাষা শহীদদের সম্পর্কে লিখতে বসা। আমার এই পোস্ট যদি কারো সামান্যতম উপকারে আসে বা ভালো লাগে তবে এ লেখা সার্থক হবে।

) ময়মনসিংহের গঁফরগাঁও’র পাচুয়া গ্রাম। সেটা ছিলো বাংলায় ১৩২৬ সালের ২৬ আষিন। গ্রামের মধ্যবিত্ত গেরোস্ত হাসান আলী ও সাফাতুন নেছার কোল জুড়ে আসে এক দুরন্ত শিশু। হাসিন আলী তাঁরনাম রাখলেন জব্বার। পুরো নাম আব্দুল জব্বার।

বাবা-মার প্রথম সন্তান হওয়াই আব্দুল জব্বার আদর পেতেন বেশি। যার ফলে অভিমানীও ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই জব্বার ছিলেন দুরন্ত। অজানাকে জানার নেশা তার ছিলো প্রচন্ড। তিনি শিক্ষা জীবন শুরু করেন ১৩৩৩ সালে ধোপাঘাট কৃষিবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

মেধাবী ছাত্র হলেও স্কুলের চার দেয়ালে আটকে থাকতে ভালো লাগত না। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে তিনি বাবার সাথে রাগারাগি করে ১৩৩৮ সালে বাড়ী থেকে পালিয়ে যান। এসময় তিনি ঢাকার বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে মিশেছেন। পেটের দায়ে অনেক ধরনের কাজ করেছেন। ফলে অল্প বয়সে আব্দুল জব্বার দুনিয়া-দারির অনেক কিছুই শিখে ফেলে।

এর কয়েক মাস পরে আবার ফিরেও আসেন। বাড়ির চার দেয়ালে জীবন তাকে বেশি দিন আটকে রাখতে পারেনি। এর কিছু দিন পর তিনি দ্বিতীয়বারের মত আবার বাড়ী থেকে পালিয়ে ট্রেনে করে নারায়নগঞ্জে চলে যান। সেখান তার পরিচয় হয় বিদেশী জাহাজের ইংরেজ ক্যাপ্টেনের সাথে। ক্যাপ্টেন তাকে জাহাজে চাকরি দিবে বলে বার্মা’র (বর্তমানে মিয়ানমার) রেঙ্গুনে (বর্তমানে ইয়াঙ্গুন) নিয়ে যান।

বার্মা বারো বছর চাকরি করার পরে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে ফিরে জব্বার তরুনদের নিয়ে একটি গ্রাম রক্ষাবাহিনী গঠন করেন। তিনি ছিলেন সেই বাহিনীর কমান্ডার। এর কিছু বছর পরে জব্বার তার এক বাল্যবন্ধু বোন আমিনা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের প্রায় দেঢ় বছর পরে তাদের সংসারে আসে পুত্র যার নাম রেখেছিলেন নুরুল ইসলাম বাদল।

’৫২’র ফেব্র“য়ারির দিকে হটাৎ করে জব্বারের শ্বাশুড়ী অস্বুস্থ হয়ে পড়েন। জব্বার তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যান। পাশের গ্রামের এক ডাক্তার সিরাজুল ইসলামের সহায়তায় তিনি শ্বাশুড়ীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। পুরো ঢাকা শহর তখন আন্দোলনের শহর। চারিদিকের আবহাওয়া উত্তপ্ত।

রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে বাঙ্গালীরা তখন ক্ষুদ্ধ। শেষ সম্বল ভাষাকে আক্রমন করে “ঊর্দূ, একমাত্র র্ঊদূ হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা”- ঘোষনা শোনার পর থেকে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল, মিটিং, র‌্যালী, অসহযোগ আন্দোলন, পিকেটিং, পুলিশের সাথে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া চলছিলো। ১৯ ফেব্র“য়ারি দুপুরে খাবারের পর আব্দুল জব্বার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২০ তারিখ রাতে তিনি ঢাকায় তার দুর্সম্পর্কে আতœীয় আবদুল হাই’র বাসায় কাটান।

পরদিন সকালে তিনি শ্বাশুড়িকে দেখার জন্য হাসপাতালে যান। সেখানে কিছুটা সময় ডা. সিরাজুল ইসলামের সাথে কাটে। এরপর রোগির জন্য কিছু ফল-মূল কেনার জন্য জব্বার হাসপাতালের বাইরে যান। বাইরে তখন তুমুল উত্তেজনা। পাকিস্তান সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গে তোড়-জোড় চলছে।

সবার মুখে একই কথা। “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বাঁচার মত বাচতে চাই। ” এতো মানুষের ভিড়, তাদের প্রতিবাদের ভাষা, ভাষার জন্য আন্দোলন- নাড়া দেয় জব্বারকে। ক্ষণিকের জন্য তিনি শ্বাশুড়ি, হাসপাতাল, ফল কেনা সব ভুলে যান। এগিয়ে যেতে থাকেন তাদের সাথে।

সকলের মত “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই”শ্লোগানে সকলের সামনে এগিয়ে হাতে তুলে নেন ব্যানার। এর পর পুলিশের গুলি, চারি দিকে চিৎকার, রাস্তায় চাপ-চাপ রক্ত...। বরকতসহ আরো ভাষা শহীদদের সাথে জব্বআর দ্রুত ঢাকা মেডিকেলের জরূরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অপারেশর থিয়েটারের নেবার পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সম্ভবত তিনিই ছিলেন প্রথম ভাষা শহীদ।

বি.দ্র: পোষ্ট করার জন্য আব্দুল জব্বারের কোন ছবি খুজে পেলাম না। নেটে ঘাটা ঘাঁটি করে, বই পত্র খুজেও পেলাম না। বাংলা একাডেমীর মহা পরিচলকের কার্যালয়ের সামনে ছবি আছে কিন্তু ক্যামেরার অভাবে আনতে পারিনি। কারো কাছে ছবির সফট কপি বা কোন লিঙ্ক জানা থাকলে জানাবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.