সময়কে কাধে নিয়ে চলো বন্ধু
গত ২মে শনিবার সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড ঝড় হয়। কোথাও কোথাও বজ্রপাতে মানুষ নিহত ও আহত হয়। কুমিল্লায়ও ৪জন নিহত হয়। সেদিন বেশির ভাগ সময়ই বাসায় ছিলাম।
সন্ধ্যায় ফেসবুক ব্যস্ত ছিলাম।
রাত পৌনে ৮টার সময় আমার ক্যামেরাম্যান জিকু ফোন করে জানায়, বিডিআর কুমিল্লা সেক্টরের ৩৩রাইফেল ব্যাটালিয়ন অভিযানে বের হচ্ছে। তার ফোনের সাথে সাথে আমাকে বিডিআর থেকে অপস অফিসার মেজর নাইম ভাই জানালেন যদি তাদের অপারেশনে যেতে চাই তবে মাত্র ১০মিনিট সময়। এই সময়ে আমি রাজী হয়ে জিকুকে বললাম জিকু বিডিআর অপারেশনের সময় ক্যামেরার সাথে লজিস্টিক যা প্রয়োজন ২মিনিটের মাঝে নিয়ে কোটবাড়ী রোডের উপর বার্ড গেটের সামনে চলে আসো। সে আমার কথামতো খুব দ্রুততম সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে চলে এলো। আকাশটা মেঘলা থাকায় এমন অপারেশনে যেতে মনটা কেমন যেনো করছিল।
যাক আল্লাহর উপর ভরসা করে বাসায় আম্মাকে জানিয়ে ঘর থেকে বের হলাম। মনে মনে দোয়া করতে থাকলাম আল্লাহ এই প্রথম পেশাদারী কাজে কোন মিশনে বের হচ্ছি। তুমি সফল কর আর আবহাওয়া যেন ভালো থাকে।
জিকু যথাসময়ের ৭/৮মিনিট দেরীতে উপস্থিত হলেও বিডিআরের অপারেশনের গাড়ি তখনো ব্যাটালিয়নে বের হয়নি। জিকুকে বললাম বার্ডের গেটের ভিতর তোমার মটর সাইকেলটি রেখে আসো।
অপারেশনের গাড়ি ছিল ২টি। ২টিই সিভিল মাইক্রো। চালক বিডিআরের নিজস্ব। আমরা রাস্তায় দাড়িয়েই ছিলাম। আমাদের দেখে গাড়ী থামলো।
অপারেশনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ফখরুদ্দিন ভাই। সাথে ছিলেন অপস অফিসার মেজর নাইম ভাই। তারা আমাদের খুব উৎফুল্ল হৃদয়ে গ্রহণ করলেন। আমরা গাড়ীতে উঠলাম। জিকু মেজর নাইম ভাইকে বললেন ভাইয়া অপারেশনটা কি? জানতে পারি।
তিনি হাসতে হাসতে বললেন, অপেক্ষা কর যেন সাকসেস হই। গাড়ি চলতে লাগলো ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পথ ধরে দক্ষিণ দিকে। চৌদ্দগ্রামের বাবুচি বাজার এর নিকট শহীদপুর নামক স্থানে গাড়িটি থেমে গেলো। সামনের গাড়িতে ছিল আর্মস বিডিআর জওয়ান। আর আমাদের গাড়িতে সবাই সিভিল ড্রেসে।
তারপর সবাই একটি বাউন্ডারির দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে থাকলো। বাউন্ডারিটি চতুর্দিকে উচু টিন শেড। বাইরে থেকে মনে হতে পারে ভিতরে কনসট্রাকশনের কাজ হচ্ছে। ভিতরে এলাহী কান্ড। চতুর্দিকে ড্রাম আর ড্রাম।
আমাদের হাতে পাওয়ারফূল টর্চ ছিল।
আমাদের উপস্থিতি দেখে ভেতরে শ্রমিকরা বুঝে উঠতে পারছিলনা কি করবে। সারি সারি ড্রামে ছিল পেট্রোল আর বিটুমিন (রাস্তার পিচ ধুনা)। সেখানে আমরা ৪জনকে পেলাম। তাদের বক্তব্য ছিল আমরা শ্রমিক।
আমরা কিছুই জানি না। লিডার এক শ্রমিককে ফোন করলেন মালিককে ফোন কর। সে ফোন করলে মালিক জানায় সে চট্টগ্রাম।
সবগুলোই ছিল আমদানিকৃত পেট্রোল ও বিভিন্ন জালানী। ট্রাক ড্রাইভাররা চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে নামমাত্র দামে কমপক্ষে প্রতি ট্রাক থেকে ২/৩টি ড্রাম বোঝাই জ্বালানী তেল এসব অবৈধ চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
ভারতে এসব জালানীর দাম আমাদের দেশের চাইতে বেশি বলে আমাদের দেশ থেকে একশ্রেণীর চোরাকারবারী পাশের দেশে বিক্রি করে দেয়। অথচ আমরা নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে এসব তেল ক্রয় করি। এবং মজার ব্যাপার পুলিশ ও ডিবি তাদের কাছ থেকে বখরা নেয় যা তারা স্বীকার করে।
গুদামে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮থেকে ১০টি ট্রাক ঢুকলে প্রতিটি থেকে ২-৩টি ড্রাম নামিয়ে ফেললে কি পরিমান জ্বালানী চোরাকারবারীদের হাতে চলে যায় তা সকলের বোধগম্য। আর এই গুদামটিও দীর্ঘদিন যাবৎ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
মেজর নাইম গুদামের মালিক খোরশেদ আলমকে জিজ্ঞেস করেন আপনার এই গুদামের কি কোন অনুমতি আছে? সে আছে জানালেও তার শ্রমিক মাজহার জানায়, ভেতরে কোন কাগজপত্র নেই। মেজর নাইম তাকে ধমক দিয়ে বলে আপনি ১০মিনিটের ভিতর আপনার ম্যানেজারকে কাগজপত্র নিয়ে এখানে পাঠান আর তা না হলে আমরা আপনার সব মাল সিজ করবো। তার ফোনের পর ম্যানেজারকে ফোন করলেও তার মোবাইলটি বন্ধ করে দেয় সে। একটু পর মালিক আলম আবার ফোন করলে সে মেজর নাইমের কাছে কাপা কন্ঠে জানতে চায় স্যার, আপনারা কি ডিবি পুলিশ নাকি চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ থেকে এসেছেন। তিনি ধমকের সুরে বললেন কেন? তাদের সাথে কি চুক্তি আছে নাকি? তারপর তিনি বলেন তোমার শ্রমিক একটু আগে জানালো আমরা বিডিআর থেকে এসেছি তা কি শুনতে পাওনি!
তার কথার পর লেঃ কর্ণেল ফখরুদ্দিন এর মোবাইলে একটি ফোন আসে তাতে জানানো হয় গুদামটি চৌদ্দগ্রাম থানা ছাত্রলীগের ছেলেরা নিয়ন্ত্রণ করে।
তাই তারা যেন বিশেষ অনুরোধে চলে যান। তারপর মেজর নাইম তাকে আননোন নাম্বার না ধরতে অনুরোধ জানান। কারন স্থানীয় এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামীলীগ নেতা মুজিবুল হক মুজিব।
আটককৃত মালামালের মাঝে ছিল ২৪হাজার ৭শ ৫০লিটার বিটুমিন, ১হাজার ৬শ লিটার পেট্রোল, ২হাজার ২শ ৫০লিটার পোড়া মবিল, ২শ ৫০লিটার কালো তৈল এবং তাছাড়াও ছিল ড্রাম ২শ ৭৬টি।
শুধু ঢাকা চট্টগ্রামই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের চোখের সামনে এসব চোরাকারবারীরা আমাদের দেশের জন্য আমদানী করা পন্য খুব সহজেই বাইরের দেশে পাচার করে দিচ্ছে।
আর মিডিয়ায়ও এসব বিষয় উল্লেখ করা হচ্ছে না। যার ফলে দেশে বিদেশ থেকে জালানী কিনে এনেও সংকট মিটানো যাচ্ছে না কোনভাবে।
রাত দেড়টার দিকে বাসায় ফিরি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।