...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
১:আবিষ্কার
পঞ্চবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে পৃথিবী থেকে দু’হাজার আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্রহে মানুষের মতো এক প্রকার প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়। পৃথিবীর বড় বড় মহাকাশ গবেষনা সংস্থা সমূহ একযোগে ঐসব মানব সদৃশ্য প্রাণীগুলোর স্বভাব এবং সভ্যতার বিশ্লেষণে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় গবেষনা করে এবং দূর নিয়ন্ত্রীত রবোট পাঠিয়ে যেটা জানা যায়, তা ছিলো খুবই হতাশা জনক। গ্রহটির মানব সদৃশ্য প্রাণীগুলো নেহাতই একদল জংলী প্রাণী। তারা পশু শিকার করে খায়।
তাদের মধ্যে নেই তেমন কোন পারিবারিক ব্যাবস্থা, রীতি-নীতি। এই প্রজাতির মধ্যে পরবর্তীতে উন্নত প্রজাতির প্রাণী হিসেবে বিবর্তিত হবার সম্ভাবনা খাকলেও এই প্রকার জীবন ধারায় খুব সম্ভবত তারা অচিরেই অন্যান্য বন্য প্রাণীদের মাঝেই হারিয়ে যাবে।
এধরনের সংবাদ নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের হতাশ করলো। তবে অবশেষে পৃথিবীর গবেষক মহল সেখানকার মানব সদৃশ্য প্রাণীগুলোকে সঠিক পথে বিবর্তিত করতে সেখানে একজন দূত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলো।
২:প্রথম চেষ্টা
নিম্নোক্ত শ্লোকটিতে এই মর্ত্যলোকে দেবতার আবির্ভাবের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে:
"অতঃপর তিনি দুই বাহু উদ্ধত করিয়া স্বর্গলোক হইতে নামিয়া আসিলেন।
তাহার বাহন ছিলো এক অশ্ব, যাহার চারিপার্শ্ব হইতে অগ্নি নির্বাপিত হইতেছিলো। তিনি নিয়া আসিলেন বর্ণমালা। তিনি মর্ত্যবসী গনকে বর্ণ শিক্ষা দান করিলেন। বর্ণমালা পবিত্র। সেই বর্ণমালায় লিখিত পুস্তকও পবিত্র।
তিনি মর্ত্যবাসীকে পবিত্র পুস্তক দান করিলেন। সেই পবিত্র পুস্তক যাহা আমাদিগকে বলিলো, হে মানব সম্প্রদায় তোমরা জোড়া করিয়া জীবন যাপন কর এবং তোমাদের সঙ্গীনিকে অন্যের নিকট যাইতে দিও না। তিনি শিখাইলেন মহান রীতি। তাহার নির্দেশে আকাশ বিদীর্ন হইয়া অগ্নি আসিয়া অবিশ্বাসী গনকে পুড়াইয়া মাড়িলো। তিনি বলিলেন, হে মানব গোষ্ঠী, তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো।
আমি তাহার দূত। যাহারা বিশ্বাস আসিবে, তাহার মৃত্যুর পরে স্বর্গে যাইবে। স্বর্গ হইলো অসীম সুখের স্থান। আর যাহার অবিশ্বাস করিবে, তাহারা নরকে পুড়িয়া মরিবে। "
আকাশ থেকে নেমে আসা সেই দেবতাটি ছিলো পৃথিবীর মানুষের পাঠানো একটি রোবট।
যেটাকে আদিম বুনো মানুষগুলো দেবতা ভেবেছিলো। এরপর ধাপে ধাপে সেখানে আরো কিছু রোবট পাঠানো হয়। যারা প্রাণীগুলোকে সঠিকপথে বিবর্তিত হতে সাহায্য করে। সবই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুশাসন জারি করে। কিন্তু সবই একসময় তারা ভুলে যায়।
৩:শেষ চেষ্টা
গ্রহটির বুনো মানুষগুলো ততদিনে সভ্যতা গড়ে তুলেছে। কিন্তু তারা মাঝে একে অপরকে ধ্বংস করার খেলায় মত্ত। তারা সেই প্রথম আসা দেবতাদের ভুলে গেছে। সেই পবিত্র পুস্তিকা গুলোকে তারা নিজেদের মতো পরিবর্তন করে নিয়েছে। দূর থেকে পৃথিবীর গবেষকরা, বিজ্ঞানীরা হতাশ হলেন।
তাদের পরিকল্পিত সুশিক্ষিত সভ্যতা তো এরা গড়ে তুলছে না। তাই তারা আবারো একজন দূত পঠালেন সেই গ্রহে। এবার আর রোবট না। রক্ত মাংসের মানুষ। সেই মানুটি আবারো গ্রহটির বিপথগামী সেইসব মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে এলো।
আর শুনিয়ে গেলো সাবধান বানী।
সেই মানুষটিকে নিয়ে গ্রহটিতে সংরক্ষিত জাদুঘরে একাধিক পুস্তক পাওয়া যায়। সেখানে লেখা আছে,
"তিনি ছিলেন মহিমাময়। তিনি সরাসরি ঈশ্বর থেকে আসিয়াছিলেন আর মর্ত্যলোকের বিপথগামী মানুষদের ঠিক দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন তোমাদের শান্তি তোমাদের হাতেই নিহিত।
তোমরা যদি মারামারি, হিংসার পথ পরিহার করো, তবে তোমরা উন্নত জীবন এবং ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করবে। মনে রেখো ঈশ্বর এবং তার আমর্ত্যগন তোমাদের সর্বদা পর্যবেক্ষন করছেন। তোমাদের সকলের সকল কাজের হিসাব রাখছেন। যদি তোমরা অন্যায় কর তবে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। এই গ্রহের শেষ দিনটি হবে ভয়াবহ।
যারা অন্যায় করবে তাদের জন্য তা হবে আরো ভয়াবহ। তখন অজানা রোগে তোমরা আক্রান্ত হতে থাকবে। সকলে সকলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে, একে অপরের সাথে জুলুম করবে। তখনই মনে রেখো, এই গ্রহের শেষদিন উপস্থিত হবে। যারা বিশ্বাস করবে কেবল তারাই পুরষ্কার লাভ করবে।
অন্যরা ধ্বংস হয়ে যাবে। "
৪:অবশেষে ব্যার্থতা
বহুদিন পর। গ্রহটিতে তখন চরম অরাজকতা বিরাজ করছে। সবাই সেইসব দূতদের কথা ভুলে গেছে। সকলে সকলকে অবিশ্বাস করে।
একদল আর একদলের সম্পদ লুটে নেয়। যে যেভাবে পারে প্রভাব বিস্তার করে। তারা সেখানে একটা সভ্যতা গড়ে তুলেছে ঠিকই তেবে সেই সভ্যতাই তাদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি গ্রহটিকে বসবাসেরও অনুপযোগী করে তুলেছে। প্রথমদিকে আসা দূতদের পুস্তকগুলোকে যে যার সুবিধা মতো বদলে নিয়েছে।
অন্যায় করে খুব সহজেই তারা অদৃশ্য ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চেয়ে মনে করছে তিনি মাফ করে দিয়েছেন।
দূর থেকে পৃথিবীর বড় বড় গবেষক আর বিজ্ঞানীরা সব দেখে চড়ম হতাশ হলেন। এতো অসংখ্যবার চেষ্টায় ও এই প্রজাতিটিকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা যায় নি। অবশেষে সকলে মিলে ঠিক করলেন এই অবিবেচক প্রজাটিকে ধ্বংস করে অন্তত গ্রহটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
অবশেষে পৃথিবী থেকে এক প্রকার সহজে বিস্তারযোগ্য ভাইরাস পাঠিয়ে প্রজাটিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।
ঠিক যেমনটি বলে গিয়েছিলেন পূর্বে আসা দূতগণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।