আগার তাহার বিভীষিকাভরা ,_জীবন মরণময়!
সমাজের বুকে অভিশাপ সে যে,_সে যে ব্যাধি,_সে যে ক্ষয়;যৌনকর্মীদের সম্পর্কে জীবনানন্দ দাশের ভাবনার খোঁজ পেলাম ঝরা পালকে। কবিতার নাম পতিতা। একেবারে সাধারণ মধ্যবিত্তের ভাষা। ভালোবাসার লেশ মাত্র নাই পতিতাদের প্রতি। অন্তত প্রথম লাইনে।
আর কবিতার প্রথম দুই লাইনে অনেক নেতিবাচক শব্দের মিছিল। বিভীষিকা, জীবন মরণময়, অভিশাপ, ব্যাধি এবং সবোর্পরি ক্ষয়।
প্রেমের পসরা ভেঙে ফেলে দিয়ে ছলনার কারাগার
রচিয়াছে সে যে, _দিনের আলোয় রুদ্ধ করেছে দ্বার!
বিস্ময়! কীভাবে পারে যৌন কর্মী? যার জন্য সবচেয়ে বড় ত্যাগ দেখায় মানুষ,_সেটা প্রেম। আর কবিতো হয় প্রেমের পূজারী। সেই প্রেমের পসরা যখন অবলীলায় ভেঙে দিয়ে ছলনায় বন্দী করে প্রেমিককে তখন তা কারাগার লাগে।
বোঝতে পারে কী পুরুষ? যা প্রেমে হয় ছলাকলা, হয় শীৎকারের মধুময় স্মৃতি, তা দিয়েই কারাগার বানায় যৌনকর্মী। তাকে হতে হয় আরো কৌশলী। সে আফিমওয়ালী, সে বাঁধে , সে ভূলায়।
সূর্যকিরণ চকিতে নিভায়ে সাজিয়াছে নিশাচর,
কালনাগিনীর ফণার মতন নাচে সে বুকের “পর!
সমান্তরাল এক সমাজে যৌনকর্মীদের চলে যাবার বিষয়টি অবশ্য ভালো লিখেছেন জীবনানন্দ। যাকে ভদ্রলোকরা বলে অসামাজিক।
ওরা হয়তো সমাজবদ্ধদের বলে ভদ্দরনোক!
চক্ষে তাহার কালকূট ঝরে,_বিষপন্কিল শ্বাস,
সারাটি জীবন মরীচিকা তার,_প্রহসন পরিহাস!
ছোঁয়াচে তাহার ম্লান হয়ে যায় শশী তারকার শিখা,
আলোকের পারে নেমে আসে তার আঁধারের যবনিকা!
হ্যা, এইতো পাওয়া গেলো জীবনান্দকে। যে লিখেছে, চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদীশার নিশা......
তাঁর হাতেই আসতে পারে এমন নেতিবাচক বর্ণনা। আর এক কথাতেই এক অনিশ্চিত অথচ সামনেই অনাবিল আনন্দের হাতছানি মাখা সময়ের স্বপ্নে বিভোর এক জীবনের ছবি আঁকা।
সারাটি জীবন মরীচিকা তার,_ প্রহসন পরিহাস।
কার সাথে এই প্রহসন?
নিজের সাথে? সমাজের সাথে? নিজের বলতে তাহলে কী বোঝাবে? আর কীই বা সমাজ তার কাছে, যে সমাজে লুকিয়ে থাকে আর তার দু উরুতে আশ্রয় নিতে যায় সমাজপতিরা?
কবিতার শেষ দুই লাইন আরো বিস্ময়কর।
জীবনানন্দ লিখেছেন,
সে যে মন্বন্তর,_মৃত্যুর দূত,_অপঘাত,_মহামারী,
মানুষ তবু সে,_ তার চেয়ে বড়ো,_সে যে নারী, সে যে নারী!
জীবনানন্দের ভেতরের কবি সত্ত্বা বেরিয়ে এলো শেষ লাইনে। এতো কিছু বলার পরও ভুলতে পারলেন না, যাকে বলা হলো এতোসব নেতিবাচক শব্দ সে,_ মানুষ । মানুষের চেয়েও বড় হয়ে ওঠলো যে বিষয়,_ তা হলো নারী। সে কি বিস্ময় কবির। একই লাইন দুইবার লিখলেন তিনি।
সে যে নারী,_ সে যে নারী । তার আগে গালাগালি করতেও ভুললেন না তিনি। মহামারী, অপঘাত,মন্বন্তর,মৃত্যুর দূত এসবতো ভদ্রলোকের গালিই হয়।
তা হলে জীবনানন্দ কি বলতে চাইলেন মানুষ এতো নেতিবাচক হতে পারে। নাকী বললেন এতো কিছু নেতিবাচক থাকার পরও নারী বিস্ময়কর?
কবিতাটি পড়ার পর থেকে ভাবছি তা....
এবার একটা গল্প বলি।
জীবনান্দের বাড়ীতে এক মহিলা ভাড়া থাকতেন। তিনি ছিলেন বাঈজী। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তার বাসায় গানের আসর বসতো। আসতো অনেক লোক। প্রভাবশালীরাও আসতো সেখানে নিয়মিত।
ফলে সে ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে পারছিলেন না তিনি। আবার প্রকৃতিপ্রেমী এই কবি কোলাহলটা মেনে নিতেও পারছিলেন না। সেটা তাঁকে অনেক বিরক্ত করেছিলো। আর কতোটা বিরক্ত হলে একজন কবি এমন একটা কবিতা লিখতে পারেন!!!!!!!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।