আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টিরা জানে কখন ঝরতে হয়: অস্টম শতকের চিনের কবি দু ফু-র কবিতা

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
কবি দু ফু। চিনের কবি। দুঃখী কবি।

বেঁচে থাকতে কবি হিসেবে মর্যাদা পাননি। লিখেছিলেন: “ বাতাসে আমার দুঃখগুলি লিখছি এক আঙুলে । ” একাদশ শতকে তাঁর কবিতা আবিস্কৃত হলে হইচই পড়ে গেছিল। তাঙ যুগের কবি দু ফু। তাঙ রাজাদের সময়কাল ৬১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দ।

সেই সময়কালের ঘটনাবলী দু ফুর কবিতায় রয়েছে- সে জন্য দু ফু-র অভিধা- ঐতিহাসিক কবি। কবির বড় ইচ্ছে ছিল রাজকর্মচারী হওয়ার। মন্দ ভাগ্য। ৭৫৫ খিস্টাব্দে চিনে ভয়ানক এক বিদ্রোহ হয়েছিল: এন লুশান বিদ্রোহ। কোটি কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল সে বিদ্রোহে।

৭৫৫ খিস্টাব্দ থেকে পরের ৭/৮ বছর দু ফু আর তাঁর পরিবারকে কাটাতে হয়েছিল চরম অনিশ্চয়তায়। সেই অভিজ্ঞতা দু ফু-র ‘পেং-আ সড়ক’ কবিতায় রয়েছে। আমার মনে আছে - আমরা উত্তরাঞ্চলের ভয়ঙ্কর গিরিখাতের ভিতর দিয়ে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। মধ্যরাত্রির চাঁদটা জ্বলজ্বল করছিল সঙ্কীর্ণ পেং-আ সড়কে আমরা হাঁটছিলাম; বিধস্ত-প্রায়- পথে আগুন্তকদের মুখোমুখি হতে আমাদের সঙ্কোচ হচ্ছিল। অল্প সংখ্যক পাখি ডাকছিল উপত্যকায় নীড়ে ফেরা পাখিদের অবশ্য চোখে পড়েনি।

আমার ক্ষুধার্ত মেয়েটি আমায় কামড়াচ্ছিল খিদের জ্বালায় চিৎকার করছিল নেকড়েদের কানে যাবে বলে আমি ওর মুখ চেপে ধরি ও ছটফট করে কাঁদতে থাকে। আমার ছেলেটা পরিস্থিতি বোঝে ও আশেপাশে খাবার খুঁজছিল। তারপর শুরু হল প্রবল বৃষ্টি একটানা পাঁচ দিন ... ঠান্ডা কাদা ঠেলে আমরা হাঁটছি আমাদের পোশাক নেই, আশ্রয় নেই আমরা ভিজে শীতল পোশাক পরে আছি এভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে প্রতিদিন এক মাইল দু’-মাইল এগোন যায়। বুনো ফলমূল খাচ্ছি গাছের ডালই আমাদের ছাদ ভোরে নদী পেরুলাম সন্ধ্যায় দূরে তাকিয়ে ধোঁওয়া সন্ধান করলাম তারপর একটা জলাভূমির কাছে পৌঁছলাম জায়গাটা পেরুনোর সময়ই সুনের সঙ্গে দেখা সুনের ক্ষমতা আকাশ-ছোঁওয়া আমরা অন্ধকার থেকে এসেছি দরজা খুলে প্রদীপ জ্বালিয়ে দিল ভৃত্যরা আনল গরম জল আমরা আমাদের আহত পাগুলি ধুয়ে নিলাম আমাদের সম্মানে তারা কাগজের ব্যানার টাঙ্গাল। সুন তার বাচ্চাদের নিয়ে এল বাচ্চারা আমাদের দুর্দশা শুনে কাঁদল।

আমার বাচ্চারা ক্লান্ত; ঘুমিয়ে পড়ল পরে ওদের খেতে ডাকলাম। আমার আশ্রয়দাতা শপথ করল: সে চিরদিন আমার ভাই হয়েই থাকবে; আর, তার ঘরটা আমাদের ঘর হবে আমাদের সুখের নিমিত্তে। এমন দুঃসময়ে কে ভাবতে পারে আকস্মিক এমন উদ্ধার সম্ভব? সেই ভয়াল রাতের পর এক বছর কেটে গিয়েছে। এখনও বর্বরেরা যুদ্ধ করছে! আমার যদি হাঁসেদের মত ডানা থাকত আমি তার কাছে উড়ে যেতাম! তখন আমি বলছিলাম। বেঁচে থাকতে কবি হিসেবে মর্যাদা পাননি।

একাদশ শতকে তাঁর কবিতা আবিস্কৃত হলে হইচই পড়ে গেছিল। হইচই পড়ার কারণ শেষের দুটো চরণে নিহিত বলে আমার বিশ্বাস। যা হোক। তাঙ রাজবংশের রাজধানী ছিল চাঙান। মানচিত্র।

দু ফুর সময়ে চিন। দু ফুর জন্ম চাঙান। জন্মের পরই মা মরে গিয়েছিল। বাবা আবার বিয়ে করেন। অনেকগুলি ভাইবোন ছিল।

তাদের কথা কবিতায় এলেও সৎমায়ের কথা আসেনি। ছেলেবেলায় নিশ্চয়ই কবিতা লিখতেন। সেই কবিতাগুলি পাওয়া যায় নি। দু ফুর গ্রামের বাড়ি রাজকীয় পদ গ্রহনের উদ্দেশে তরুণ বয়েসে পড়ালেখা করে কাটান। বিশেষ করে, কনফুসিয়াসের রচনাবলী।

দেশভ্রমনে বেরুলেন। চাঙান ফিরে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিলেন- ব্যর্থ হলেন। পরের যুগের পন্ডিতেরা এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন দুবোর্ধ্য গদ্য লেখাই দু ফু-র ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। অনেকে অবশ্য মনে করেন দু ফুর মামা-কাকার জোর ছিল না।

যাক। মনের ভিতরে ব্যর্থতার বিষাদ। আবার দেশভ্রমনে বেরুলেন। পরে আবার রাজধানী ফিরলেন। বিয়ে করলেন।

পাঁচটি ছেলেমেয়ে হল। যাদের কথা ‘পেং-আ সড়ক’ কবিতায় রয়েছে। দু ফু-র হাঁপানি ছিল। সেই কষ্ট। যাক।

৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে চাকরি পেলেন। মন্দ ভাগ্য। এন লুশান বিদ্রোহ সূত্রপাত হল। যে বিদ্রোহ দমন করতে ৮ বছর লেগেছিল। দু ফু সরকারী কর্মচারী- বিদ্রোহীদের লক্ষ।

তাইই পালিয়ে যাওয়া- ৭৭০ খ্রিস্টাব্দে চ্যাঙশা প্রদেশে কবির মৃত্যু। এবার দু ফুর আরও কটা কবিতা পাঠ করা যাক। তুষারের মুখোমুখী যুদ্ধ, কান্না- আরও অনেক ভূত আমিও বুড়িয়ে গেছি- বিষন্ন হয়ে পাঠ করছি কবিতা। বুনো মেঘের দল নিচু হয়ে স্পর্শ করছে ক্ষীন সন্ধ্যাকে । ঘূর্নায়মান বাতাসে দ্রুত তুষারেরা নাচছে পরিত্যক্ত কলস; পানপাত্রে নেই সবুজ মদ শূন্য উনুনে অবশ্যি আগুন এখনও লালাভ কোনও সংবাদ নেই, প্রদেশগুলি বিচ্ছিন্ন বাতাসে আমার দুঃখগুলি লিখছি এক আঙুলে ।

ভগ্ন রেখা নদীটা এতই নীল হয়ে রয়েছে যে- পাখিদের সাদা মনে হয় সবুজ পাহাড়ের ফুলগুলো রক্তবর্ণের বসন্ত কি ফুরিয়ে যাচ্ছে? আমি কি বাড়ি ফিরতে পারব? দু ফু-র কবিতা গ্রামের নদী গ্রামটাকে ঘিরে ফেলতে স্বচ্ছ নদীটি বেঁকে গেছে এই দীর্ঘ গ্রীস্মে এখানেই সবই উদ্বেগহীন পাখিরা আসে আর যায় চিরকালের মতোই হাঁসেরা ছটফট করছে জলে আমার বউ ছবি আঁকছে আমার ছেলে বড়শীঁতে সুতো ভরছে আমার বন্ধুরা যতদিন আমাকে আশ্রয় দেবে আমার তুচ্ছ শরীর আর কী চাইবে। বসন্তের রাতে বৃষ্টি বৃষ্টিরা জানে কখন ঝরতে হয়। ভরা বসন্তেই বৃষ্টিরা আসে ... বাতাসে ভেসে এসে রাত্রিতে বিলীন হয়ে যায় শব্দহীন ভিজিয়ে দেয় সব। কালো নির্জন পথ- কালো মেঘ নদীতে নৌকা; সেই আলো শুধু। ভোরে সবই লাল আর ভেজা ফুলে ফুলে ভরে আছে চারপাশ দু ফুর কুঁড়েঘর চন্দ্রিমা রাত আজ রাতে ফুঝুনের আকাশে উঠেছে চাঁদ আমার বউ একাই দেখবে অনেক দূরে আমি আমার সন্তানের কথা ভাবছি যাদের চাঙান-এর কথা মনে নেই।

সুগন্ধী কুয়াশায় মেয়েটি নম্র চুল ছড়ায় স্বচ্ছ জ্যোস্নায় শীতল নিটোল বাহু শূন্য পরদার মাঝখানে কখন আমরা ঝুঁকব? আমাদের মুখে শুস্ক কান্নার আলো। কবির কবিতার লিঙ্ক http://www.blackcatpoems.com/f/du_fu.html
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।