আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পিত ২৫০০ লাশের গায়েবানা জানাজা

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। গায়েবানা জানাজা নিয়ে আলেম ওলামারা দ্বিধা-বিভক্ত; বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য, আমার এক শ্রদ্ধেয় ইমাম সাহেবকে ফোন করি। তার বক্তব্যে নিশ্চিত হই যে, আলেমরা গায়েবানা জানাজা নিয়ে বহু তর্ক বিতর্কের পরও বিষয়টি অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে গায়েবানা জানাজা নিয়ে ভন্ডামি আছে, তা বহুবার দেখেছি। সরকারকে বিতকির্ত করতে এবং নিজেদের ইসলামের সেবক হিসেবে গণমানুষের মনে স্থান করে নিতে এ দেশে এমন বহু গায়েবানা জানাজার নজির বিএনপি ইতোমধ্যেই স্থাপন করেছে।

গত ০৬ মে বিএনপির এক উচ্চপর্যায়ের জরুরী বৈঠকে আরও একটি গায়েবানা ভন্ডামির সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের প্রায় শেষের দিকে জনাব সাদেক হোসেন খোকা উত্তেজিত হয়ে শিষ্টাচার বর্জিতভাবে বলে উঠলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছে, প্রয়োজনে এবার ৬০ লাখ মানুষ শহীদ হবে; কিন্তু তিনি গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেবেন না। তার এ বক্তব্যটি প্রদানের সময় দলীয় নেত্রীসহ দলের সিনিয়র-জুনিয়র প্রায় অনেক নেতাই উপস্থিত ছিলেন। ৬০ লাখ প্রাণের মূল্য কত এবং তার এ বক্তব্য প্রদানের অধিকার আছে কি না জানি না। তবে খোকা সাহেবের এ আশাবাদটি যদি সত্যি হয় তাহলে বিএনপিকে দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি বাদ দিয়ে হয়ত জানাজা-গায়েবানা জানাজা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে।

আর ৬০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়ার খায়েস তার মনে কেন এলো তাও বোধগম্য নয়। অবশ্য তার মুখে এ জাতীয় বক্তব্যে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই; কেননা তার দল বিএনপির বেসিক থেকেই তিনি এ কথা বলেছেন। এম.কে আনোয়ার সাহেবের কল্পিত ২৫,০০ লাশের ফাঁদা গল্প যেমন বিস্ময়কর, এর চেয়ে বিস্ময়কর হলো- এই লাশের স্বজনরা তাহলে কোথায়? কেন তারা নিখোঁজদের সন্ধান করছেন না। অভিযান চলাকালে এত টিভি, ক্যামেরাকে ফাঁকি দিয়ে কি করেই বা সম্ভব হলো লাশগুলো গুম করে ফেলা? ভেবেছিলাম দেশের মানুষ ও মিডিয়ার প্রতিবাদের মুখে বিএনপি হয়ত তাদের এ ভাঙ্গা ঢোল বাজানো বন্ধ করবে, কিন্তু বিদেশের মাটিতে তারেক রহমানের বক্তব্যের পর মনে হলো এ উচ্ছিষ্ট নিয়ে বিএনপি এখনো ব্যর্থ রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। যদিও মানুষ এখন এ গল্পটিকে গাঁজাখোরি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি বক্তব্যটি একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি? না, তাও নয়- আসলে এটাই বিএনপির বেসিক। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে কোন কিছুরই একটা ‘বেসিক’ থাকে। ‘বেসিক’ কখনো কেউ ত্যাগ করতে পারে না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে কিভাবে হত্যা করেছিলেন আদালতের রায় জাতির সামনে তা পরিষ্কার করে দিয়েছে। এটাই বিএনপির ‘বেসিক’।

জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জন্মগতভাবেই বিতর্কের উর্ধে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাঙালী জাতীয়তাবাদ বুকে ধারণ করে এদেশের মানুষ দেশকে স্বাধীন করেছিল। কিন্তু, বিএনপি প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নামে অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় এবং অনাকাক্সিক্ষত এক বিতর্কিত তত্ত্ব নিয়ে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়ে জাতির মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করা হয়েছে। এ নামটির মাঝেও লুকিয়ে আছে এক হিংসাত্মক শাব্দিক অর্থ- যেমন, বাংলাদেশী ‘জাতীয়তাবাদ’- তার মানে এখানে নিরপেক্ষতার ধার না ধেরে প্রতিপক্ষ দাঁড় করানো হয়েছে জন্মলগ্নেই।

অর্থাৎ প্রচ্ছনভাবে বিবাদীর সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জাতি তার নিজস্ব জাতীয়তাবাদ বুকে নিয়েই দেশকে ভালবাসে। আমরা সম্মিলিতভাবে যেখানে বাঙালী জাতীয়তাবাদ সেখানে অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অদ্ভুত উদ্ভব নিতান্তই নিষ্প্রয়োজন। নামের মাঝে তার বিপরীতে অন্য একটি পক্ষকে দাঁড় করানো হয়েছে, যা হিংসাত্মক। এর অর্থ হলো দলটি যারা না করে তারা তার বিবাদী পক্ষ- অথচ এ নামটি নিরপেক্ষও হতে পারত।

এ দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিল প্রতিহিংসার এর জলন্ত দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু হত্যায় তিনি কিভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন জাতির কাছে আজ তা পরিষ্কার। কারণ জাতীয় সংসদে খুনীদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। শুধু তাই নয় সামরিক পোশাকে অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসার-সৈনিককে হত্যা করেছিলেন ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে। যদিও গায়েবানা জানাজায় অভ্যস্ত বিএনপি নিহত ঐ সকল সৈনিক-অফিসারদের কোন গায়েবানা জানাজার আয়োজন আজও করেনি।

যাক বলছিলাম- দলটির নামকরণ নিয়ে, ‘জাতীয়তাবাদী’ দল তাহলে- আমরা কি জাতির বিবাদী পক্ষ? জাতীয়তাবাদ কি আমাদের অন্তরে লালিত নয়? প্রশ্নটি রয়ে গেল সবার জন্য। তিনি যে প্রক্রিয়ায় দলটির জন্ম দিয়েছিলেন তা কোন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের জন্ম প্রক্রিয়া নয়। কারণ রাজনীতি সেনা ছাউনির বাইরের বিষয়। অথচ বিএনপির জন্ম হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টে এবং পরবর্তীতে তিনি এ অপকর্মটিকে হালাল করার জন্য (ভুতুড়ে ভোট) হ্যাঁ-না ভোটের আয়োজনসহ কত কিছুই না করেছেন। এমনকি তার এ অপকর্মকে অনুসরণ করে জেনারেল এরশাদও এ দেশের গণতন্ত্র নিয়ে একই খেলায় মেতেছিলেন।

প্রত্যেকটি বিষয়ের সঙ্গে নিয়মের প্রসঙ্গটি জড়িয়ে থাক। অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পেশী শক্তির মাধ্যমে হয়ত অনেক কিছুই করা সম্ভব কিন্তু তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিএনপি প্রতিষ্ঠায় তা অনুসরণ করা হয়নি বলেই এ দলটি অনিয়মতান্ত্রিক কা- ঘটাবে এটাই স্বাভাবিক। বৈধ সরকারকে তাদের ভাল লাগে না, অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা। জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এসব তারা করবেই।

কারণ তাদের জন্মের ইতিহাস বিতর্কিত এবং ‘বেসিকে’ বার বার তারা ফিরে যাবেই। আমরা এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম। রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনের পাশাপাশি সামাজিক রীতি রেওয়াজ আমাদের নিকট অনেক মূল্যবান। রাষ্ট্রীয় অনেক ক্ষেত্রে এমনকি উচ্চ আদালতেও রেওয়াজের স্থান, মর্যাদা ও ব্যবহার অনেক শক্তিশালী। শুধু আমাদের দেশেই নয়, গোটা বিশ্বে রেওয়াজ এক গ্রহণযোগ্য কনসেপ্ট. সংক্ষিপ্ত ব্রিটিশ সংবিধানে লিখিতের চেয়ে রেওয়াজের গুরুত্ব অপরিসীম।

বিএনপি নেত্রী তার জন্ম তারিখ নিয়ে বার বার জনগণের সঙ্গে যে প্রতারণা করেছেন তা দেশের মানুষ জানে। বিএনপির জন্মের ইতিহাস, খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ, গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র, তার পুত্রদের অনৈতিক অর্থ লেনদেন করাসহ জাতির সঙ্গে প্রতারণা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত এখনই তার বিরুদ্ধে কঠিন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তার ব্যক্তি জীবন, তার পৈত্রিক পারিবারিক ইতিহাস, দেশের জনগণ যতটা জানে তাতে তার ‘বেসিক’ ত্যাগ করা অসম্ভব। কোন রকম আর্থিক সমস্যা না থাকার পরও নিজের দুটি মাত্র সন্তানকে তিনি পারেননি সুশিক্ষিত করে মানুষ করতে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হওয়ার পরও নিজেদেরকে তারা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি সমাজের সম্মানজনক অবস্থানে।

দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার প্রশ্রয়ে তার দুটি সন্তানই জড়িয়ে পড়ে অপকর্ম আর অবৈধ অর্থ উপার্জনের নেশায়। বিদেশী কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিয়ে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। যে অর্থ বিদেশ হতে বর্তমান সরকারের আমলে ফেরত এসেছে এবং আরও আসছে। এসব তারা করবেনই; কারণ একটাই বেসিক। কাজেই বিএনপির নেত্রীর মুখে বিসমিল্লাহ,্ পাশে রাজাকার আর মৌলবাদ নিয়ে ষড়যন্ত্রের জবাব সরকারকেই দিতে হবে।

না হলে আইএসআই-এর যোগসাজশে মৌলবাদীদের নিয়ে দেশের বারোটা তিনি বাজিয়ে ছাড়বেন। জামায়াত ও হেফাজতীদের নিয়ে এত অপকর্মের পরেও যদি বিএনপিকে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে এটা হবে আওয়ামী লীগের এক বিরাট রাজনৈতিক ভুল, যার মাসুল শুধু আওয়ামী লীগকে নয়, গোটা জাতিকেই দিতে হবে। গত কিছুদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করলে তা বুঝতে খুব বেশি ভাবতে হবে বলে আমার মনে হয় না। সুত্র  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।