আজকে রাতের টক শো-তে সবাইকে আমন্ত্রন। আজকের এই টক –শোতে উপস্থিত আছেন সরকার দলীয় এমপি গেলাম বনি এবং বিরোধী দলীয় এমপি তিলোফার শনি। প্রথম প্রশ্ন তিলোফার শনির কাছে।
সঞ্চালকঃ আচ্চা শনিআপা আপনার কাছে প্রথম প্রশ্ন- আপনাদের ম্যাডাম ত গত ৫ তারিখের রাতের সমাবেশে হেফাজতি ইসলামের কর্মীদের পাশে দাড়াতে ঢাকাবাসী এবং দলের কর্মীদের আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকাবাসী তো দূরের কথা; বিএনপি-র একজন কর্মীকেও তাদের পাশে দাড়াতে দেখা যায় নি।
এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলেন।
তিলোফার শনিঃ ধন্যবাদ আপনাকে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজ এসেছি। ম্যাকআপটাও ঠিকমত করতে পারিনি। যাই হোক যা বলছিলেন যে কেন আমাদের ম্যাডাম ঘোষনা দেয়ার পরও কেউ হেফাজতের পাশে গিয়ে দাড়ায়নি।
আমাদের ম্যাডাম যখন ঘোষনা দিলেন তখন চারিদিকে ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। অনেকে এই অন্ধকারের কারনে ঘোষনা শুনতে পায়নি। আমাদের সম্মানিত সরকারী দলীয় এমপি নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন- শব্দ চলাচলের জন্য আলো দরকার হয়।
সঞ্চালকঃ শব্দ চলাচলের জন্য আলো দরকার হয়?
তিলোফার শনিঃ হ্যা। এই ব্যাপারে আইনস্টাইন তার বিখ্যাত থিউরি অফ রিলেটিভিটেতে বলে গেছেন।
যা পরে স্যার আইজ্যাক নিউটন এসে প্রমান করছেন। এর উপরে কাজ করে গ্যালিলিও অস্কার পুরস্কারপেয়েছেন।
সঞ্চালকঃ গ্যালিলিও অস্কার পুরস্কার পেয়েছেন?
তিলোফার শনিঃ জী। আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে।
সঞ্চালকঃ গ্যালিলিও অস্কার পুরস্কার পেয়েছেন আপনাদের কাছে এই ভিডিও ফুটেজ আছে?
তিলোফার শনিঃ নাহ ম্যাডাম যখন ঘোষনা দিয়েছেন তখন যে অন্ধকার ছিল এই ভিডিও ফুটেজ আছে।
সঞ্চালক কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এবার গেলাম রনিকে প্রশ্ন করলেন-
সঞ্চালকঃ আচ্ছা রাতের অন্ধকারে যৌথ বাহিনী কিভাবে হেফাজতের এত লোককে মতিঝিল থেকে উচ্ছেদ করল বলে আপনি মনে করেন। এই ব্যাপারে দেশবাসী কিন্তু এখনো অন্ধকারেই আছেন।
গেলাম রনিঃ ধন্যবাদ। আসলে ওইদিন যৌথ বাহিনী ভুতের ভয় দেখিয়েই মূলত হেফাজতের কর্মীদের মতিঝিল থেকেউচ্ছেদ করেছে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন ওইদিন রাতে যারা ছিল তাদের বেশির ভাগই ছিলশিশু।
তাদেরকে ভূতের ভয় দেখিয়ে মতিঝিল থেকে সরিয়ে দেয়াটাই ছিল সবচেয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত। তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য প্রথমে সমস্ত লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপর সাউন্ড গ্রেনেডের মাধ্যমে প্রকট শব্দ তৈরি করে তাদের মনে আতংক তৈরি করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত শিশুদের আতংকিত চেহারা দেখলে আপনি দেখলে আপনি আমার বক্তব্যের সত্যতা টের পাবেন।
সঞ্চালকঃ আচ্ছা শনি আপা, আপনারা দাবি করতেছেন হেফাজতির লোকজন নিরস্ত্র অবস্থায় ছিল।
কিন্তু মিডিয়ায় বা বিভিন্ন খবরে দেখা গেছে তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অসংখ্য ককটেল ফুটিয়েছে। ককটেল তারা কোথায় পেল বলে আপনি মনে করেন।
তিলোফার শনিঃ দেখেন মহান আল্লাহ তাআলা রাব্বুল আলামীন দয়াময়। উনি যখন দেখলেন হেফাজতের লোকজনের উপরপুলিশ পাখীর মত গুলি করতেছে তখন আল্লাহ সাহায্য করলেন। হেফাজতির লোকজন ইটের টুকরানিয়ে তাদের নেতাদের কাছে গেলেন।
তারা ফু দিলেন- ইটের টুকরা ককটেল হয়ে গেল। কিন্তু এই ককটেলে কিন্তু কোন প্রানহানি হয় নাই। তাও কপাল ভালো আল্লামা শফি সাহেব ওইদিনছিলেন না। উনি ফু দিলে তো ইটের টুকরা পারমানবিক বোমা হয়ে যেত। আল্লাহ দয়াময় তাইরক্ষা।
সঞ্চালকঃ আচ্ছা বনিসাহেব, ৫ তারিখ রাতে ভোরবেলা গনজাগরন মঞ্চ কেন ভেঙ্গে দেয়া হলো?
গেলাম বনিঃ দেখুন গনজাগরন মঞ্চ প্রথম দিকে যখন তৈরি হলো তখন কিন্তু আমরা এর প্রশংসা করেছিলাম । আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমার মন পড়ে আছে শাহবাগে’। কিন্তু আসতে আসতে গনজাগরন মঞ্চ তার আসল রুপ নিয়ে বের হলো। এই গনজাগরন মঞ্চের যে উদ্যোক্তা তারনাম ইমরান এইচ সরকার। মানে সে নিজেকেই সরকার ভাবা শুরু করেছে।
সে আমাদেরকে সরকারের মত আদেশ দেয়া শুরু করলো। আমাদের মন্ত্রীপরিষদ মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যেতাম যে আমরা কোন সরকারের কথা শুনব। দেখা গেছে আমরা কিছু দিন দুই সরকারের কথাই শুনেছি। ইমরান এইচ সরকার বলল যে তিন মিনিট রাস্তায় দাড়াতে আমরা দাড়িয়েছি; বলেছে মোমবাতি জ্বালাতে আমরা জ্বালিয়েছি। কিছুদিন পর কিছু সিনিয়র মন্ত্রী আপত্তি করল আমরা বেতন পাই এক সরকারের কিন্তু আমাদের কথা শুনতে হবেদুই সরকারের তা তো হতে পারে না।
তখন সবার পরামর্শ অনুযায়ী গনজাগরন মঞ্চ ভেঙ্গে দেয়া হলো।
সঞ্চালকঃ আচ্ছা শনি আপা, আপনারা দাবি করতেছেন ওইদিন রাতে ২৫০০ হাজার হেফাজতি কর্মী মারা গেছে আপনার কিসিউর; আপনাদের কাছে কোন প্রমান আছে?
তিলোফার শনিঃ আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি ওইদিন রাতে ২৫০০ হাজারের উপর হেফাজতি কর্মী মারা গেছে। আর প্রমান আমাদের কাছে অবশ্যই আছে। আপনি এখনি উইকিপিডিয়া সার্চ করলে পাবেন।
সঞ্চালকঃ কিন্তু উইকিপিডিয়া তো কোন গ্রহনযোগ্য রেফারেন্স না।
এখানে যে কেউ তথ্য এডিট করে ফলস তথ্য দিয়ে দিতে পারে।
তিলোফার শনিঃ আমরা কোনমিথ্যার রাজনীতি করি না। আমি যেমন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ৭১-এর গন্ডগোলের সময় ৩ লক্ষ লোক মারা গেছে; তেমনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ৫ তারিখ রাতেও ২৫০০-এর বেশি লোক মারা গেছে। ৫ তারিখের এই গনহত্যার সাথে অনেকে ২৫ মার্চের কাল রাতের তুলনা করছে। আমি এর তীব্র ধিক্কার জানাই।
সঞ্চালকঃ আপনি এর তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছেন? কিন্তু আপনার দলের লোকেরাই তো এমন দাবি করছে।
তিলোফার শনিঃ তা দাবি করুক। শনি সত্য স্বীকার করতে কখনো পিছপা হয় না। আমি ৫ তারিখের এই গনহত্যার সাথে অনেকের ২৫ মার্চের কাল রাতের তুলনার তীব্র ধিক্কার জানাই। কারন ৫ তারিখের গনহত্যার সাথে শুধুমাত্র হিরোশিমা নাগাসিকোর ধ্বংযজ্ঞেরই তুলনা চলে।
সঞ্চালকঃ আচ্ছা বনিসাহেব আপনারা দাবি করতেছেন মতিঝিলের ঘটনায় তেমন কোন হতাহতের ঘটনা ঘটে নাই। কিন্তু ফেইসবুকের বিভিন্ন পেইজে আমরা কিন্তু নানা ধরনের হতাহতের ছবি দেখতে পাচ্ছি। এ ব্যাপারে কি কিছু বলবেন?
গেলাম রনিঃ এ ব্যাপারেএকটু বলি- ফেইসবুকের জনপ্রিয় ব্লগার অমি রহমান পিয়ালের একটা ছবি আছে উনি সৌদি আরবের বাদশার হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন। আপনি যদি ওই হতাহতের দৃশ্য বিশ্বাস করেন তাহলে এটাও করবেন। আরেকটা কথা বলি আজকে সকালে নাস্তা খাবার সময় আমার সাথে একহুজুরের সাথে দেখা।
আমি হুজুরকে দেখে বললাম আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি। উনি বললেন জী আপনি আমাকে পত্রিকায় মরে পড়ে থাকতে দেখেছেন। আমার তো চেয়ার থেকে পড়ে যাবার দশা। উনি তখন বললেন উনি সেখানে পোজ দিয়ে শুয়ে ছিলেন। এই হলো অবস্থা।
সঞ্চালকঃ আপনারা আজকে এই দুইজন বিদগ্ধ রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীর কথা শুনলেন। আমরা আশা করবো এই আলোচনা থেকেঅনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আলোচনা আরেকটু দীর্ঘায়িত করা ইচ্ছে ছিল কিন্তু আমার উনাদের কথাবার্তা শুনে আমার বুকের বা দিকটায় চিনচিন ব্যাথা করছে। আমাকে এখনি হাসপাতালে যেতে হবে। আমার জন্য দোয়া করবেন।
বেচে থাকলে আবার দেখা হবে। শুভ রাত্রি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।