আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্ম উন্নয়ন প্রক্রিয়া (পর্ব - ৩)

এলোমেলো ভাবনা সারাক্ষণ মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে

কনসেপ্টঃ কনসেপ্ট হলো তিন প্রকার যথা: থট কনসেপ্ট : এ্যাডাল্ট গণ থট কনসেপ্ট এ বিশ্বাস করে। তারা কথা বলার চেয়ে কাজ করতে পছন্দ করে । তারা চিন্তা ভাবনা করে দেখে ,শুনে ,বুঝে কাজ করে । যেমন,গবেষকরা দেখে শুনে বুঝে কাজ করে । এ্যাডাল্ট গণ যা শিখে তা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেয় ।

তারা নেতিবাচক ইমোশণকে দূরে ঠেলে দেয় এবং মেপে মেপে কথা বলার চেষটা করে । তারা অন্যের উপর কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে না । উন্নয়নের জন্য এই ধারনা খুবই জরুরী । এটা আমাদের চিন্তার দ্বার উম্মোচন করতে সহায়তা করে । টট কনসেপ্ট : পেরেন্ট গণ টট কনসেপ্ট এ বিশ্বাস করে ।

তারা কাজ করার চেয়ে কথা বলা বেশি পছন্দ করে । যারা এই ধারনা পোষণ করে তারা ক্রমাগত শিশুদের উপর তাদের ধারনা আদেশ, উপদেশ ইত্যাদির মাধ্যমে চাপিয়ে দিচ্ছে । ফেল্ট কনসেপ্ট : এই ধরনের লোক থট কনসেপ্ট এর লোকদের অনুসরণ করে। তারা একটু চুপচাপ ও সৃষ্টিশীল হয় । তারা কথার আড়ম্বরে যেতে চায় না ।

অনেক কথা মেনে নেয় । আর এটাকে দুর্বলতা ভেবে টট কনসেপ্ট এর লোকজন ফেল্ট কনসেপ্ট এর উপর দুর্ব্যবহার করে । টট কনসেপ্ট এর লোকজন ৯৯% ধারনা শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । শিশুরা এই চাপিয়ে দেয়া ধারনা ঠিক ভেবে অনুসরন করতে থাকে । তারা কথায় কাজে অন্যকে মমতার বাহাদুরী দেখাতে চেষ্টা করে এবং অন্যের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করে না ।

এই ধরনের শিশুরা পরে কাজ করার স্পৃহা হারিয়ে ফেলে । পেরেন্টস যদি তার অবস্থানে থাকে তা হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না এবং শিশুর বিকাশ কখনোই হবেনা। শিশুর মানসিক বিকাশ যাতে পরিপূর্ণ হয় এর জন্য সকলকে সহায়তা করতে হবে । আমরা সমাজে তিন ধরনের আচরনের ও চিন্তার লোক দেখতে পাব । সকলকে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে ।

লাইফ পজিশন: আই এ্যাম ওকে, ইউ আর নট ওকে - শিশুকে আদেশ , উপদেশ ইত্যাদির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় । পিতা মাতা সব কাজ করে দেয় ,শিশুর যে কোন সিদ্ধান্ত পিতা মাতা দেয় । তখন ঐ শিশু পিতামাতার প্রতি নির্ভরর্শীল হয়ে পড়ে । এতে শিশুরা মনে করে সে যা কিছু করছে তা ভুল করছে । অন্যরা যা করছে তা ঠিক ।

এতে একদিকে যেমন নিজের স্বকীয়তা ও আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় ,অপরদিকে শিশু অন্যদের অনুসরন করে । আই এ্যাম নট ওকে, ইউ আর নট ওকে - শিশু অনাদরে মানুষ হলে এবং সব কাজে বাধা আসলে শিশুর মনে এ ধরনের বিভ্রান্তি জন্মাতে পারে । সে সব সময় মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগে । পিতা মাতার প্রতি তার আস্থা থাকে না । অন্যদের প্রতিও তার বিশ্বাস থাকে না।

এ ধরনের শিশুরা বদরাগী হয় । সে ভাবে যে সে যা করছে তা ঠিক নয় এবং অন্যরা যা করছে তাও ঠিক নয় । আই এ্যাম ওকে, ইউ আর নট ওকে - শিশুকে কোন কাজে জোড় ,করে করাতে বাধ্য করলে ,মারধর করলে তার মনে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় । বাবা মার নিকট থেকে আঘাত পেলে শিশু নিজের সিদ্ধান্তকে বড় বলে মনে করে । সে এক পর্যায়ে প্রতিবাদ করে এবং মনে করে আমি যা করছি তাই ঠিক ।

অন্যরা যা করছে তা ঠিক নয় । আই এ্যাম ওকে, ইউ আর ওকে - ছোটবেলা হতে শিশুকে বন্ধুত্বসুলভ পরিবেশে ও স্বাধীনভাবে বড় হতে দিলে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে । সে বুঝতে ,ভাবতে ও বিশ্লেষণ করতে শিখে । সে তার নিজের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে পারে এবং নিজের সমালোচনা করতে পারে । সকলকে সে বিশ্বাস করতে শিখে ,শ্রদ্ধা করতে শিখে ।

তখন তার মনে ভাবনা তৈরি হয় সে যা করছে তা ঠিক এবং অন্যরা যা করছে তাও ঠিক । শুধুমাত্র শিশু যদি ' ‌‌ওকে ' থাকে একং পেরেন্ট যদি ‌‌'ওকে' না থাকে তাহলে উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত হবে না । আমাদের শিশুদের সাথে এ্যাডাল্ট আচরণ করতে হবে । ভুল নমনীয় ভাবে শুধরে দেয়া, সঠিক প্রশ্নটি তুলে ধরা, মতামতের প্রাধান্য দেয়া, শেয়ারিং সুযোগ দিতে হবে। তাদের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ ভাবে মিশতে হবে ,নমনীয় ভাব দেখাতে হবে ,সত্য বলা ,স্নেহ,ভালবাসা ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুর বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করতে হবে।

তখন শিশুরা বিচার বিবেচনা করে কাজ করতে শিখবে । আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের শিশুরা আগামী দিনগুলোতে যে কোন ক্ষেেত্র নেতৃত্ব দিবে । সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে । নিম্নের বিষয়গুলো তুলে ধরা যায় : পেরেন্ট টু চাইল্ড: প্যারেন্ট হিসেবে শিশুদেরকে স্নেহ,ভালবাসা ,আদর দিতে হবে। তাদের সাথে সত্য কথা বলতে হবে,নমনীয় আচরণ করতে হবে ।

চাইল্ড টু পেরেন্ট: শিশু সচেতন নয়। প্যারেন্টদের আচরণ সে অনুকরণ করছে এবং সেভাবেই আচরণ করছে । তাই শিশুদের সামনে ভাল আচরণ করতে হবে যা সে অনুসরণ করবে । এ্যাডাল্ট টু চাইল্ড: এ্যাডাল্টদের উচিত শিশুদের ভুল শুধরে দেয়া ,মতামতের গুরুত্ব দেয়া ,সেয়ারিং এর সুযোগ দেয়া,সঠিক পথ বাতলে দেয়া ,সকল কাজে সুযোগ দেয়া । পেরেন্ট টু এ্যাডাল্ট: যিনি পেরেন্ট তার উচিত হবে না এ্যাডাল্ট দের সাথে মাতুব্বরী সুলভ আচরণ করা ।

এ্যাডাল্ট দের সাথে এ্যাডাল্ট আচরণ করতে হবে । বন্ধত্বসুলভ আচরণ করা ,ভাল কাজে উৎসাহ দেয়া ,কোন কাজে ভাল বললে তা গ্রহণ করতে হবে । এ্যাডাল্ট টু পেরেন্ট: এ্যাডাল্ট দের উচিত পেরেন্ট দের সাথে এমন আচরণ করা যাতে পেরেন্ট রা এ্যাডাল্ট আচরণ করে । পেরেন্ট রা বুঝতে পারবে যে সে যে আচরণ করছে তা ঠিক নয় এবং ধীরে ধীরে তার মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে । সর্বোপরি এ্যাডাল্ট দের সমাজের জন্য আরো ভাল কিছু করার চিন্তা করতে হবে ।

এ্যাডাল্ট টু এ্যাডাল্ট : এ্যাডাল্ট রা কখনও নিজেদের বড় মনে করেনা । তারা বিবেচক হয় এবং বিচার বিবেচনা করে কাজ করতে পছন্দ করে। একজন এ্যাডাল্ট যখন আর একজন এ্যাডাল্ট এর সাথে কোন বিষয় বা কাজ নিয়ে আলোচনা করবে তখন তারা একে অপরের প্রতি সহনশীল আচরণ করতে হবে। 'আমি সব জানি'- এই ভাব ত্যাগ করতে হবে । কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের পজেটিভ সমালোচনা করতে হবে ।

যেমন,আপনার কোন মতামত থাকলে দিন,আরো একটু ভেবে দেখা যায় কিনা ,বিষয়টি এভাবে না করে এভাবে করলে কেমন হয় ইত্যাদি । আর্কাইভ : আর্কাইভ হলো কোন কিছুকে বিশেষ একটা জায়গায় সংরণ রাখা । যেমন , লাইব্রেরীর কিছু বই নিরাপদ জায়গায় সংরণ রাখা হয় যা লাইব্রেরীয়ান ছাড়া অন্য কেউ জানে না । ঠিক তেমনি যা কিছু শিশু রেকর্ডিং করে তা সে তার ব্রেইনে আর্কাইভ করে রাখে । শিশু যে ভাবে বড় হয় তার ভিতর আর্কাইভ ঐ ভাবে গড়ে উঠে ।

পরিবর্তন: আমাদের মনে যা কিছু রেকর্ড হয় তা যদি আমরা চেষ্টা না করি তবে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয় । ব্যাক্তির অনুভুতি রেকর্ডির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে । এর জন্য নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে । হঠাৎ কোন তথ্য বা সত্য পেয়ে গেলে অনেক সময় ভিতর হতে পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করে । এ পরিবর্তন একদিনে সম্ভব নয় ।

ধীরে ধীরে ব্যাক্তির আচার আচরণে পরিবর্তন ল্য করা যাবে । গৌতম বুদ্ধ নিজেকে পরিবর্তনের জন্য বনে যেয়ে মেডিটেশণে বসেছিলেন । এর মধ্যে দিয়ে তার ব্রেইন মডিফাই হয়েছিল । নিজাম ডাকাত হতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়া হয়েছিলেন। প্রতিদিন নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে ,নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে আমার কি করার কথা ছিল ,কতটা করতে পেরেছি ,কেন পেরেছি এবং কেন পারি নাই ।

কে আমার আচরণে কষ্ট পেয়েছে ,কেন পেয়েছে। আমি কি সকলের সাথে ভাল ব্যাবহার করছি? সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেেত্র আমাদের কাজ করে যেতে হবে। ট্রানজেকশন: ট্রানজেকশন তিন ধরনের , যথা : ক্রস ট্রানজেকশন : এ্যাডাল্ট এর সাথে কেউ ঝগড়া করতে চাইলে এ্যাডাল্ট কখনও তা পাত্তা দেন না । তিনি বিষয়টি বিশ্লেষণ করেন এবং বিবেচনা করে কথা বলেন । তিনি সহজেই উত্তেজিত হয়ে কোন কথা বলেন না ।

প্যারেন্ট এর সাথে চাইল্ড এর ঝগড়া হয় । কারন তারা বিষয়ের গভীরে না যেয়ে কথা কাটাকাটি করে । অনেক ত্রে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয় তা ক্রস ট্রানজেকশন কমপ্লিমেন্টারী ট্রানজেকশন / বহুমুখী যোগাযোগ: অনেক ক্ষেেত্র এই যোগাযোগের ফলে একজনের সাথে অপর জনের সম্পর্ক সুন্দর ও বন্ধুত্ব হয় । আবার বিপরীতও ঘটতে পারে। যেমন ,বিয়ে গাড়ীতে অনেক যাত্রী থাকে ।

সেক্ষেেত্র কিছু যাত্রী তারাতারি বাস চালাতে বলে । কেউ আবার আস্তে চালাতে বলে । আবার অনেকে অন্যের দোষ খুজে বেড়ায় । একে অন্যের দোষ নিয়ে আলোচনা করে । অহেতুক সময় কাটানোর জন্য গল্প করে ।

আল্টারিওন ট্রানজেকশন : একজন অপরজনকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে এবং এতেই সে আনন্দ পায় । এডাল্ট কখনই এভাবে কাউকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে না । যেমন ,কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি ভাত দিতে দেরী হয় বা অন্য কোন সমস্যা হয় তখন একজন আরেক জনের উপর দোষ চাপান হয়। উপরোক্ত আচরণগুলো অনেক ক্ষেেত্র সমস্যা তৈরি করতে পারে । যদি গ্রাহক বুঝতে না পারে বা প্রেরক ভুল ভাবে তার বার্তা গ্রাহককে প্রেরণ করল ।

এখানে একজন যে আচরণ করল তা অন্যজন ফেরত দেয় বা দেয়ার চেষ্টা করে । ফলে সমস্যা তৈরি হয় । আবার অনেক েেত্র এ ধরনের যোগাযোগের মাধ্যমে উদ্দেশ্য সফলও হতে পারে । তবে তা খুব কম। এজন্য এটাকে অনেকে ট্রানজেকশন প্রবলেম বলেছেন ।

(........................ চলবে.................)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।