আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিনিক্স পাখির ডিম

...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা, যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
কুক্কুরের বউ আজ একটা ডিম পেড়েছে। প্রতিদিনই পারে। কিন্তু আজকেরটা একটু ভিন্ন রকম। রোজকার মতো সাদাটে না। কেমন যেন একটু হলদেটে।

তাই ডিমটা নিয়ে পুরো পাড়ায় হুলস্থুল পড়ে গেলো। কুক্কুরদের প্রতিবেশী লাল মাথা মোরগটা এসে বেশ বিজ্ঞ ভাবে বললো, এটা আসলে ফিনিক্স এর ডিম। লাল মাথা মোরগ হলো এই খোয়ারের সবচেয়ে জ্ঞানী মোরগ। নানান বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান। তাই তার কথা শুনে সবাই চোখ বড় বড় করে বললো, ফিনিক্সের ডিম কি? তখন লাল মাথা শুরু করলো তার লেকচার।

ফিনিক্স নাকি এক প্রকার ম্লেচ্ছ প্রজাতির পাখি। উড়তে পারা পাখিদের মোরগকূলের সবাই ম্লেচ্ছ বা অচ্ছুত প্রজাতির পাখি হিসেবেই ধরে। তাদের মতে সত্যিকারের পাখি হলো মোরগকূল। ফিনিক্সের ডিমটা নিয়ে খোয়ারের সবাই নানান রকম আলোচনা সমালোচনা শুরু করলো। ডিমটাকে কি করা হবে।

এটা যেহেতু ম্লেচ্ছ প্রজাতির ডিম, আর কুক্কুরের বউই এটা পেরেছে, তাই কুক্কুর আর তার বউকে একঘরে করে ফেলা হলো। সারাদিন খাঁচায় বসে থাকে তারা। ডিমটাকে মোরগদের গোয়েন্দা টিম বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেছে। চলছে নানান রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা। বিজ্ঞানী টিম বিশেষ অধিবেশনে বসেছে।

বার্তা বাহক শুটকো মুরগী একটু পর পর সবাইকে লেটেষ্ট আপডেট জানিয়ে যাচ্ছে। এই খোয়ারের ক্ষমতায় আছে এখন হলদে পালকদের মোরগ দল। গত নির্বাচনে তারা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় বসেছে। তারা এসেম্বলিতে অবশ্য বলেছে যে, বিরোধী পক্ষের খয়েরী ঝুটি মোরগ বাহিনীই এই অপকর্মের জন্য দায়ী। তারা নাকি ষরযন্ত্র করে কুক্কুরের বউকে বিশেষ ঔষধ খাইয়ে তাকে দিয়ে ফিনিক্সের ডিম পারিয়েছে।

শুনে কুক্কুর আর তার বউয়ের যে কি পরিমান খারাপ লাগলো, তা আর বলার নয়। অবশেষে গোয়েন্দা টিম অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যখন রিপোর্ট দিলো যে এটা আসলে মুরগীরই ডিম, তখন কুক্কুর আর তার বউ ছাড়া পেলো। কয়েকদিনের মাথায় ডিমটা ফুটে যখন খুব ফুটফুটে আর তুলতুলে একটা মোরগছানা বের হলো, তখন কুক্কুর পুরো খোয়ারে একটা পার্টিও দিয়ে ফেললো। মোরগছানাটির নাম রাখা হলো, টুক্কুর। ধীরে ধীরে টুক্কুর বড় হয়ে উঠে।

মোরগদের পাঠশালায় ভর্তি হয়। কত কিছু শেখে। কিভাবে মাটি থেকে কেঁচো খুটে বেড় করতে হয়, কিভাবে সকাল বেলা গলা ফাটিয়ে কুক্কুরুক্কু ডাকতে হয়। আরো অনেক কিছু। কিন্তু টুক্কুরের এসব ভালো লাগে না।

ভালো লাগে না তার এই মুরগির খোয়ারের জীবন। চারপাশে বেড়ায় ঘেরা একটা ছোট জায়গা। তার ইচ্ছে করে খোয়ারের বাইরের পৃখিবীটা দেখতে। সেখানে কি আছে তা জানতে। একদিন সে তার বাবা কুক্কুরকে জিজ্ঞেসও করেছিলো।

কুক্কুর উত্তর দিতে পারেন নি। কুক্কুর এখন বুড়ো হয়ে গেছে। হয়তো আর কিছুদিন পরই তাকে নিয়ে যাবে খোয়ারের মালিক। বুড়ো মোরগ আর ডিম না দেয়া মুরগিদের কোথায় যেন নিয়ে যায় খোয়ারের মালিক। খোয়ারের মোরগ মুরগিরা সেটা জানে না।

তবে তারা এটা জানে, যাকে একবার নিয়ে যাওয়া হয়, সে আর ফিরে আসে না। যেভাবে একদিন নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো টুক্কুরের মা কে। টুক্কুরের বেজায় সাহস। সে প্রায়ই ম্লেচ্ছ পাখিদের মতো উড়তে চেষ্টা করে। খোয়ারের ডান দিকের উঁচু ডিবিটায় উঠে পাখা মেলে ঝাপ দিয়ে পরে।

খুব বেশীক্ষন থাকতে পারে না। ধপাস করে এসে নীচে পড়ে। তারপরও সে চেষ্টা করে যায়। তার স্বপ্ন সে একদিন ঠিকই উড়তে পারবে। জ্ঞানী লাল মাথা মোরগের কাছে সে শুনেছে, যে ডিমটা ফুটে সে জন্ম নিয়েছে, সেটা নাকি ছিলো একদম ম্লেচ্ছ পাখিদের ডিমের মতো।

টুক্কুরের খুব ম্লেচ্ছ পাখি হতে ইচ্ছা করে। পাখা মেলে উড়তে ইচ্ছা করে। লাল মাথা মোরগ তাকে আরো বলেছে, ফিনিক্স পাখির কথা। সে পাখির গায়ে নাকি একসময় আগুন ধরে যায়, আর সেই আগুনের ভষ্ম থেকে নতুন পাখির জন্ম হয়। টুক্কুর স্বপ্ন দেখে সে ফিনিক্স পাখির মতো আগুন থেকে জন্ম নেয়া এক উড়তে পারা ম্লেচ্ছ পাখি হয়ে আকাশে উড়ছে।

উপর থেকে দেখছে পুরো পৃথিবীটাকে। দু’দির পর একদিন হঠাৎ করে খোয়ারের সবাই খেয়াল করে খোয়ারের ঠিক বাইরে একটা পেন্ডেল টানানো হচ্ছে। লাল নীল রংএর কাপড় দিয়ে কি সুন্দর করে সাজানো। মনে হয় খোয়ার মলিকের কোন অনুষ্ঠান। সারদিন গান বাজনা হয় সেখানে।

টুক্কুরের বেশ মজা লাগে। কিছুক্ষন পর খোয়ার মালিক তার লোকজন নিয়ে এসে খোয়ারের গেটটা খুলে ভেতরে ঢুকে। কতগুলো বুড়ো মোরগ আর ডিম না দেয়া মুরগিকে ধরে নিয়ে যায়। সাথে ধরে নিয়ে যায় কুক্কুর কেও। টুক্কুরের বুকটা ফেটে যায় কষ্টে।

তার মাকে নিয়ে গেছে বেশ কিছু দিন আগে। এখন বাবাকেও নিয়ে গেলো। হয়তো তাকেও একদিন নিয়ে যাবে। কোথায় নিয়ে যায় এদের? সাহস করে টুক্কুর খোয়ারের ডান দিকের উঁচু ডিবিটার উপরে উঠে পরে। কিছু দূরেই একটা খোলা জায়গায় অনেকটা জুড়ে আগুন জ্বালানো হয়েছে।

বড় বড় ডেকচি রাখা আগুনের পাশে। এক কোনায় রাখা হয়েছে কিছুক্ষন আগে ধরে নিয়ে যাওয়া মোরগ আর মুরগিদের। এক কোনায় পড়ে থেকে ভীত চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কুক্কুর। দূর থেকে অসহায় বাবাকে দেখে খুব খারাপ লাগে টুক্কুরের। কিছু পরে একটা লোক এসে মোরগ মুরগিগুলো থেকে একটা একটা করে নিয়ে তাদের গলায় ছুড়ি চালাতে থাকে।

যা বোঝার বুঝে যায় টুক্কুর। আসলে তার বাবা আর অন্যদের নেয়া হয়েছে মেরে ফেলার জন্য। হয়তো এই অনুষ্ঠানের ভুড়িভোজের জন্যই। জবাই করা মোরগ আর মুরগির রক্তে ভেসে গেছে খোলা যায়গাটা। লোকটা এখন তার বাবার দিকে এগুচ্ছে।

তাহলে কি এখন তার বাবাকেও এভাবে জবাই করবে? কি করবে টুক্কুর? বসে বসে দেখবে?একটু দুরেই আগুন জ্বলছে। যা করার এখনই করতে হবে। সে কি পারবে উড়ে গিয়ে তার বাবাকে নিয়ে উড়ে পালিয়ে যেতে। তাকে যে পারতেই হবে। নিশ্চয়ই এখন সে আগুনে ঝাপ দিলে ফিনিক্স পাখির মতো সেখান থেকে সত্যিকারের উড়তে পারা পাখি হয়ে জন্ম নিবে।

হয়তো একটু কষ্ট হবে, কিন্তু সে তো তার বাবাকে বাঁচাতে পারবে। পারবে সে নিশ্চয়ই পারবে। টুক্কুর ঝাপ দিলো। বেশ কিছু দিনের প্রাকটিসের ফল। তাই টুক্কুর বেশ ভালো ভাবেই জ্বলন্ত আগুনের ঠিক ভেতরে লাফ দিতে পারলো।

তার পালকে আগুন ধরে গেলো। পালক পোড়া গন্ধ বের হলো। প্রচন্ড তাপ লাগছে টুক্কুরের। চামড়া পুড়ছে। আর কতক্ষণ লাগবে তার সত্যিকারের পাখি হতে।

ফিনিক্সের মতো পোড়া ছাই হতে উড়ন্ত পাখি হয়ে উড়ে যেতে। পেছনের কথা: ছোট বেলায় খুব লেখালেখির শখ ছিলো। অনেক গল্প, ছড়া লিখেছি। লেখা গুলো হারিয়ে গেছে আমার শৈশবের সাথে সাথে। দু’একটা যা মনে আছে, চেষ্টা করছি নতুন করে লিখতে।

সে রকমই একটা গল্প এটা। সম্ভবত স্কুলের ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিলো। গল্পের মূল থিমটাই যা মনে আছে। লেখাটা তাই সম্পূর্ণ নতুনই বলা চলে।
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।