আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আক্ষেপ



সেনা সদর দফতর থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি এসেছে, ৭২ জন সেনাকর্মকর্তা নয় বরং আর মাত্র ৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছেন। তারা বলেছেন এত বড় নৃশংস ঘটনার পর সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া তাৎক্ষণিক ভাবে সম্ভব ছিলো না। এই সেনা কর্মকর্তারাই বলছেন, তারা জরুরী অবস্থায়, যুদ্ধকালীন অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তুলবার যাবতীয় যোগ্যতা রাখেন, এবং ঠিক এ কারণেই তাদের সাধারণ মানুষের তুলনায় একটু উঁচু বলে গণ্য করা হয় সরকারী ভাবে, সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরা দিতে পারেন না, বৈদেশিক শত্রুর আক্রমন হতে দেশ ও দেশের জনগণকের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন সেনাবাহিনী একটি নৃশংস ঘটনায় তাৎক্ষণিক ভাবে সুনর্দিষ্ট তথ্য প্রদানে অক্ষম। যদি দেশ আক্রান্ত হয় তখন তাদের এই অদক্ষতার মাশুল গুনবে কে? বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার প্রধানই পদাধিকার বলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রধান এবং তিনিই সর্বাধিনায়ক এই প্রতিরক্ষাবাহিনীর। তবে বিক্ষুব্ধ এবং উচ্ছৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তার কিয়দংশ দাবি জানিয়েছিলো, পিলখানা থেকে বিডিআর সদস্যদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রদান, নানক মির্জা আজম সহ যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাসদস্যদের হাতে হেনেস্তা[ নির্যাতিত] হয়েছিলো তাদের সমঝোতার দায়িত্ব প্রদান, এবং বিডিআর সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবার জবাবদিহিতা করতে হবে স্বয়ং শেখ হাসিনাকে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে।

আরও কয়েক দফা দাবি তাদের ছিলো, বিডিআরকে সম্পূর্ণ সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা, বিডিআরের নাম পরিবর্তন, এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা সহ এইসব দাবির সবগুলোই শেখ হাসিনা মেনে নিয়েছেন। সেনাসদস্যের সামনে জবাবদিহিতা করে ফিরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যদিও বিক্ষুব্ধ অবস্থা এখনও কাটে নি, সামরিক বাহিনী ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে, তার কিছু বিবরণ আমরা পেয়েছি দৈনিকের পাতায়, এরই ভেতরে নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিটা নিহত সেনাসদস্যদের পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার যাবতীয় ব্যয় বহন করবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। তাদের জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এবং সেনাসদস্যগণ দাবি করেছেন, তাদের প্রত্যেকের নামেই ১ কোটি টাকা এবং একটি সরকারী ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হোক। এরই ভেতরে অন্য একটি বিজ্ঞপ্তিতে সাউথইস্ট ব্যাংকএই জঘন্য হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে এবং কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ১০ বছর ১০ জন সেনাসদস্যের পরিবারের ছেলে মেয়ের শিক্ষা বরাদ্দ বাবত তারা প্রতি পরিবারকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করবে। বাংলাদেশের শিক্ষা বৈষম্যের যুগে প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা বিবেচনা করে একটি পরিবারের শিক্ষার্থীদের পেছনে বছরে ৩ লক্ষ টাকা খরচ করতে দেখে নিজেদের হীন মনে হয়।

বাংলাদেশের এক একটি প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন সব মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এবং অনেক সরকারী এমপিওভুক্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিয়মিত বেতন পান না, গ্রামের অনেক প্রাথমিক শিক্ষকই শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজ করেন এবং তাদের প্রধান জীবিকা শিক্ষকতা নয়, কৃষিজীবি প্রাথমিক শিক্ষকের মাসিক ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন নিয়মিত প্রদান করতে পারে না রাষ্ট্র। সরকারী অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা ৩ থেকে ৪ জন। অর্থ্যাৎ সাউথইস্ট ব্যাংক নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের পেছনে মাসিক যে বরাদ্দ রেখেছে, সেটা দিয়ে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের বেতন হয়ে যেতে পারে। এমন কি অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল কর্মচারী এবং শিক্ষকের বেতন হয়ে যেতে পারে এই অর্থে।

সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে যদি একটি প্রায় মৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাবদ মাসিক ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো অন্তত ৫০০ জন শিক্ষার্থীকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা যেতো। এই অর্থে অন্তত ৫০০০ শিক্ষার্থীকে আগামী ১০ বছর সাক্ষর করে তোলা যেতো। এই বৈষম্যমূলক বিবেচনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা এক একজন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের তুলনায় কত হীন। আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকের মাসিক বেতনের অঙ্ক এখনও ৫০০০ টাকার কম। অথচ একজন সেনা কর্মকর্তার সন্তানের শিক্ষার পেছনে মাসিক বরাদ্দ ৫ জন অভিজ্ঞ গার্মেন্টস শ্রমিকের তুলনায় বেশী।

এবং একজন গার্মেন্টস শ্রমিক এই অর্থে কায়েক্লেশে অপুষ্ঠিতে বেঁচে থাকেন প্রতি মাসে। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর যেকোনো কর্মকর্তার মাসিক বেতনের তুলনায় বেশী অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে একজন সেনাসদস্যের সন্তানের শিক্ষার পেছনে। এই লজ্জাটা আদতে কার? একজন প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসার এবং সহযোগী অধ্যাপকের বেতনক্রম এখনও ১৮ হাজার টাকার নীচে। একজন সহযোগী অধ্যাপক, যিনি সপ্তাহে অন্তত ২০টি ক্লাশ নেন এবং অন্তত ৩০০ ছাত্রেকে পড়ান, তার বেতন বাবদ সরকার মাসে প্রদান করে ১৮ হাজার টাকারও কম অর্থ, এবং এই অর্থ দিয়ে তার পরিবারের ভরণপোষণ চলে, তার সন্তানের শিক্ষাব্যয়, তার চিকিৎসাব্যয় এবং অতিথিআপ্যায়ন খরচ, সব মিলিয়ে তার জন্য বরাদ্দকৃত মাসিক ১৮ হাজার টাকার তুলনায় বেশী অর্থ একজন বরাদ্দ করেছে একটি পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার পেছনে। আমি লজ্জিত হই, তবে আমাদের ব্যবধান কমবে না।

আমাদের নারী শিক্ষার প্রদত্ত উপবৃত্তির অঙ্কের বাৎসরিক হাক ২৫ হাজার টাকার কম, এমন অনেক সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসেব কষে দেখানো যায়, বিক্ষুব্ধ সেনাসদস্যগন যারা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধানকে হেনেস্তা করতে পারে এবং যারা বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের প্রধন তাদের সর্বাধিনায়ক, সেই সর্বাধিনায়ককে তাদের দরবারে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া এই দুর্বীনিত সেনাসদস্যদের আহত থাবার রজনীগন্ধা গুঁজে দিয়ে এসে হয়তো শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন সঙ্ঘবদ্ধ অস্ত্রবাজ, যারা রাষ্ট্রের বেতনভুক এবং সঙ্ঘবদ্ধ অস্ত্রবাজ যাদের নির্মূলের জন্য সদাতৎপর আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনী, তাদের উভয়ের কাছেই সাধারণ মানুষের অধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে। এই দুর্বিনীত সেনা কর্মকর্তাদের তোয়াজ করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন আদতে তারাই সর্বেসবা, এবং তাকেই এই বিষধর সাপকে ঝাঁপিতে পুরতে হবে। আমরা আশা করবো এই উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সরকার এমন একটি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন যেনো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যদিও সেনাসদস্যেরা অনেক বেশী সরকারী সুযোগ সুবিধা পায় কিন্তু তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের অনুগত একটি বাহিনী। এখনও ঘোড়াই গাড়ী টানছে, গাড়ী ঘোড়াকে টানছে না বাংলাদেশে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।