যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
২৫ ই ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে একটা ঘটনা ঘটেছে। যাকে অনেকে বিডিআর বনাম আর্মি দ্বন্দ হিসাবে দেখাতে চাইলেও প্রকৃত পক্ষে এইটা আর্মির আভ্যন্তরীন দ্বন্দ হিসাবে দেখা যৌক্তিক। কৌশলগত কারনে বর্ডারে আর্মি যেতে পারে না - তাই বিডিআরের সৈন্যদের ভিন্ন ভাবে দেখানো হয় - দেখানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অর্ধীনে। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকেই এই বাহিনী আর্মির অধীনে কাজ করছে। এর সকল কর্তা আর্মির অফিসার।
এদের ট্রেনিং আর কর্মপরিচালনা আর্মির নিয়মানুষারে হয়ে থাকে। সুতরাং আর্মির আরো দশটা ইউনিটের মতোই এই।
কিন্তু বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিষয়ে সিপাহীরা পিছিয়ে থাকলেও বিডিআর কর্তারা কিন্তু আর্মির মতোই সযোগ সুবিধা ভোগ করে। তাই একটা বৈষম্য চলে আসছে শুরু থেকেই। তার উপর আর্মি কর্তাদের আচরন তাদেরকে সাধারন সৈনিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলো।
এই কথা সর্বজন বিদিত যে - আর্মি অফিসাররা বিডিআরকে ব্যবহার করেছে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে। তাই একটা বিভক্তির খাল কাটা হয়ে আছে দীর্ঘ দিন যাবত। বেঁচে আসা অফিসাররা সবাই স্বীকার করেছে সৈনিকদের অষন্তোষের কথা। কিন্তু শুধু জানতো না গোয়েন্দারা। নাকি জেনেও বিষয়টা কুমির আসার জন্যে উন্মুক্ত করে রেখেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুরোপরুরি ব্যর্থ হয়েছে নিজেদের মধ্যে শৃংখলা বজায় রাখতে। অতীতে অনেকবার নিজেরা নিজেদের খুন করে তাদের উপর অর্পিত মুল দায়িত্ব রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকীর সন্তুখীন করেছে। বিপুল অংকের বাজেট পেয়েও একটা কার্যকর গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সক্রিয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এই গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের বিষয়টি আবিষ্কার করেছে।
অভ্যন্তরিন শৃংখলা ও নিজেদের গন্ডগোলের খেশারত দিতে হয়েছে জাতিকে।
আর্মি অফিসার, বিডিআর সৈনিক আর সাধারন মানুষসহ অনেকে প্রান হারালো - দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকলো।
বিনিময়ে আর্মিরা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে ৪২ দফা দাবী আদায় করে নিলো। সেই দাবী গুলো কি - সেগুলো কেন সংসদে আলোচিত হবে না - এই বিষয়ে বিরোধীদল নিশ্চুপ থেকে টিভিতে ছবি দেখানো হয়নি বলে ওয়অক আউট করেছে।
বলে রাখা ভাল - একটা নির্বঅচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী সংঘাতের পথ এড়িয়ে আলোচনার পথে সমাধানের সিদ্ধান্ত অবশ্যই সঠিক ছিলো। বিশেষ করে আনসার বিদ্রোহ দমনের নামে সেনাবাহিনী যে হত্যাকান্ড চালিয়ে ছিলো - সেই বিবেচনায় বলা যায় - আজ হয়তো মৃতের তালিকায় আরো কযেকশত মানুষের নাম যুক্ত করতো।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ফলে ঘটনার সংগে ইচ্ছা বিরুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বিডিআর সৈনিকরা বেঁচে গেছে আর বেঁচে গেছে অফিসারদের পরিবারও।
কিন্তু এই ইস্যুটি নিয়ে বিরোধী দল রাজনীতি করতে ছাড়েনি। অবাক হইনি - কারন জোট সরকারের মানুষ মারার প্রকল্প হিসাবে কুখ্যাত অপারেশ ক্লিনহার্ট আর ক্রশ ফায়ার সবার জানা। আইনের শাসনের বিষয়ে ওদের যে কোন শ্রদ্ধা নেই তা বলাই বাহুল্য।
এখন দেখছি সেনাবাহিনীও এই বিষয়টি ইস্যু করেছে।
এরা বিডিআর সৈনিকদের খুন করতে না পারার ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে ৪২ দফা দাবী মানিয়ে নিয়েছে। এখন চলছে কে কত বড় আর্মির বন্ধ তা প্রমানের উলংগ প্রতিযোগিতা। কিন্তু চেই অফ কমান্ড মানার কথা সেনাবাহিনীর - আর নির্দেশ যদি ভুলও হয় তা নিয়ে প্রতিবাদ করার কোন অধিকার কি থাকে সেনাবাহিনীর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সিভিলিয়ান তাই তার নির্দেশ নিয়ে বিতর্ক করা যায় বোধ হয়। বন্দুকে জোরে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দূর্বল করে কাজটা ভাল করছে না সেনাবাহিনী।
এখন সেনাবাহিনী নিজে নেমেছে বিডিআর ধরতে। একটা কথা সবাই স্বীকার করেছে - সকল বিডিআর ঘটনার জন্যে দায়ী নয়। কিন্তু যারা সরকারের নির্দেশে কাজে যোগদানের জন্যে এসে বসে আছে খেলার মাঠে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে - বাকীদের ধরতে সেনা নেমেছে।
বিষয়টা মনে হচ্ছে বাড়াবাড়ির পর্যায় অতিক্রম করেছে।
রেবেল হান্টের নামে যদি আর একটা মানুষ মারা যায় - তার দায় দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে নিতে হবে।
দেশে আভ্যন্তরীন বিষয়ে দেখাশুনা করার জন্যে আছে পুলিশ। পুলিশের উপর নির্ভর না করে সেনাবাহিনী নিজে নেমে যদি কোন সীমা লংগন করে তবে মানুষের যে সমর্থন এরা পাচ্ছে তা হারাবে।
তাই বলছি - গোয়েন্দার বাহিনীর ব্যর্থতার কানে তাদের কোর্ট মার্শাল না করে - দায়দায়িত্ব বেসামরিক নির্বাচিত সরকারের উপর চাপিয়ে দিয়ে দফা বাস্তবায়ন করে সেনাবাহিনী আবারো পুরোনো রাষ্তা হাটলো।
অনুরোধ করছি - এবার থামুন। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যণ্ত দুই জন রাষ্ট্রপতি হত্যা, নিজেদের কোন্দলে শত শত সদস্য হত্যা, দুইজন সামরিক শাসককে সমর্থন দিয়ে সেনাবাহিনী এখন মানুষের প্রশ্নের সন্মুখিন।
অনেক প্রশ্নের জবাব মানুষ খুখে বেড়ায় - সবাই দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলেও সেনাকর্তারা কেন অভিযুক্ত হননা, কেন সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক নির্বিচারে ছাত্র নিগ্রহের বিচার হয়না ইত্যাদি।
বছরে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পোষা এই বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাই এখন সময় এসেছে। আপনারা থামুন। দরজা বন্ধ করে বসে সোল সার্চিং করুন।
তারপর অতীতের কর্মকান্ডের জন্যে ক্ষমা চান শ্রমজীবি মানুষের কাছে ক্ষমা চান কৃষকের কাছে। ক্ষমা চান শ্রমিকের কাছে। যাদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের অর্থ তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবার নামে তাদের উপর প্রভৃ হয়ে লাঠি ঘুড়াচ্ছেন। সাধারন মানুষের রক্ষক হউন।
নতুবা দেখেছে তো - দেওয়ালের লিখন ফুটে উঠেছিলো একদিনে জন্যে।
এখন শহুরে সুবিধাবাদীদের চাটুকারীতায় হয়তো কিছুটা গোলাপী রং দেওয়ালের লেখা ঢেকে ফেলেছে। কিন্তু লেখাগুলো দেওয়ালেই আছে। পড়তে চেষ্টা করুন। ৩০% নিরন্ন মানুষের দীর্ঘশ্বাস কিন্তু বড়ই নির্মম। এই অভিশাপ থেকে বাঁচতে হলে - সাধারন মানুষের কাতারে নেমে আসুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।