আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইহুদীদের সম্পর্কে: ঐশী বাণী বাস্তবায়নের ধারা ও পরিণতি

মহসিন আলম বনি ইসরাইল তথা ইহুদীদের সম্পর্কে কিছু লিখতে গেলে কিঞ্চিৎ পিছন থেকেই আসতে হয়। তাই বলছি- ইহুদীদের অস্থায়ী আবাস মিশর ছিল তথাকার কিবতী জাতির জন্মভূমি। এ কিবতিরা ছিল সেখানকার ভূমিজাত সন্তান। কিন্তু তা সত্বেও তারা ছিল নিজ দেশে পরবাসী তুল্য। আমালিক ও বনী ইসরাইল জাতি দু’টি ছিল বৈদেশিক শক্তি।

বৈদেশিক আরবীয় আমালিক জাতি সেখানে রাজ্য শাসন করত। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৮১৩ অব্দে এক ব্যবসায়ী কাফেলার হাত ধরে ইউসূফ (আঃ) এর মিশরে প্রবেশ ঘটে এবং নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি সেখানকার রাজদরবারে স্থিত হন। রাজন্যবর্গের সহায়তায় ও ইউসুফ (আঃ) এর প্রচেষ্টায় বনী ইসরাইলীদের প্যালেষ্টাইন তথা ফিলিস্তিন থেকে মিশরে প্রবেশ ঘটতে শুরু করে। কালক্রমে এরাই খ্রিস্টপূর্ব পনের শতকের শেষতক পর্যন্ত মিশরের শাসন প্রশাসনে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করতে থাকে, আর আমালিক জাতি হয়ে পড়ে নামমাত্র শাসক। খ্রিস্টপূর্ব ১৫ শতকের শেষের দিকে কিবতি জাতি এক শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করে এবং আমালিক শাসন নির্মূল করে নতুন স্বজাতীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে।

পরবর্তীতে আমালিক জাতির সহযোগী শক্তি হিসাবে বনি ইসরাইলী ক্ষমতা খর্ব করার জন্য তাদের উপর দমন নিপীড়ন শুরু করে। ফেরাউন (রাজা) দ্বিতীয় রামেসিস এর রাজত্বকালে দমন উৎপীড়ন চরম আকার ধারণ করে। সূরা বাকারার ৪৯ নং আয়াতে অত্যাচারের কাহিনী বর্ণিত আছে। ফেরাউনের কবল থেকে বনি ইসরাইলীদের উদ্ধারের জন্য আল্লাহ মুসা (আঃ) কে নবী মনোনীত করে তাঁর নেতৃত্বে তাদেরকে মিশর ত্যাগ করার সুযোগ করে দেন এবং তাদেরকে পবিত্রভূমি ফিলিস্তীনের অধিকারী হওয়ার আশ্বাসও প্রদান করেন। কিন্তু হলে কি হবে বনি ইসরাইলীদের ইতিহাস নিরবচ্ছিন্ন আল্লাহর নাফরমানীর ইতিহাস।

তাদের মিশর ত্যাগ পর্ব থেকে শুরু করে অদ্য পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে থেকে থেকে আল্লাহ তা’আলার বিরুদ্ধাচরণসহ নবী রাসুলদের ক্লেশ দিতে তারা কসুর করে নি। মুসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর প্রিয় নবী। যার নেতৃত্বে মিশরে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট থেকে আল্লাহ তালা তাদের রক্ষা করে ফিলিস্তিনে বসবাসের সুযোগ এনে দিয়েছিলেন,সেই মুসা (আঃ)-কে পদে পদে বিব্রত করতেও তারা পিছপা হয়নি। মুসা (আঃ) এর জীবদ্দশায়ই তারা তাদের পুরাতন অভ্যাসগত মূর্তি পূজায় ফিরে গিয়ে এবং আরো বহু প্রকারে দীন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে মুসা (আঃ)এর মনোপীড়ার কারণ হতে তাদের বিবেকে এতটুকু বাঁধেনি। সেই থেকে শুরু করে শেষ নবী বিশ্ব নবী পর্যন্ত সকল নবী রসুলদের বিরোধীতায় তারা হাত পাঁকিয়েছে।

এবরাহীম (আঃ) এর বংশধারার উত্তরাধিকার থাকা সত্বেও তারা বার বার সীমা লংঘনের পরাকাষ্টা দেখিয়েছে। তাই বনি ইসরাইলদের ইতিহাস (দু‘একজন নবী বাদে)সকল নবী রসুলদের বিরুদ্ধাচারণের ইতিহাস। অন্যায় অত্যাচার মিথ্যা শঠতা অশ্লীলতা নগ্নতা ইত্যাদি আল্লাহর দেয়া সীমা লঙ্ঘনে নিমগ্ন থাকার ইতিহাস। বর্তমান ইহুদীদের দাবী পবিত্রভূমি তথা ফিলিস্তিন ঐশী সিদ্ধান্তের বলে উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছেন। একথা সত্য যে আল্লাহ তালা মুসা (আঃ)-কে ঐ ব্যাপারে ওয়াদা দিয়েছিলেন।

তওরাত ও যবুরে এর ইঙ্গিত থাকলেও পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ তাদের দ্বারা সেখান থেকে মুছে ফেলা অংশটুকু সংযোজন করে দিয়েছেন। সেটা হলো-তওরাত কিতাবের পর যবুর কিতাবে লিখে দিয়েছেন যে ঐ ভূমির উত্তরাধিকার লাভ করবে আল্লাহ তালার ঈমানদার ও সালেহুন- সৎ বান্দারা (সূরা আম্বিয়া-২১ঃ১০৫), আল্লাহ এবরাহীম (আঃ) কে বিশ্ব মানবতার এমাম নিযুক্ত করেন, তার দোয়ায় তার বংশধর থেকেও এমাম করার প্রতিশ্র“তি দেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে শর্ত রাখেন যে, জালেমদের ব্যাপারে এ অংগীকার থাকবে না (সূরা বাকারা-২ঃ১২৪), অতএব দেখা যায় আল্লাহ তালার ওয়াদা নিঃশর্ত নয়, শর্ত যুক্ত, যারা অন্যায়কারী হবে তারা কখনওই এ জাতির এমাম হবে না। এমনি ভাবে বনি ইসরাইলকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে- যদি তোমরা ফিরে যাও (অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য) আমিও ফিরে আসবো (শাস্তি ও বহিষ্কারসহ) (সুরা বনি ইসরাইল-১৭ঃ৮), সাবধানীবার্তা না পাঠিয়ে কোন জাতিকে আল্লাহ শাস্তি দেন না। তাই তওরাতে বনি ইসরাইলকে সাবধান করা হয়েছিল যে তোমরা দুই বার জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং শক্তি ও মদমত্ত হয়ে অহংকারী হয়ে উঠবে।

কিন্তু সতর্ক না হয়ে তারা যখন সীমা লংঘনের চরম অবস্থা পৌঁছালো তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি অবধারিত হয়ে পড়ল। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সনে তৎকালীন ব্যাবিলনের অধিপতি বুখতনাসর-এর সৈন্য বাহিনী দ্বারা তাদের ঘরবাড়ী ইবাদত খানা সমস্ত ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল এবং তারা বন্দী জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের তওবা আল্লাহ তালার নিকট গৃহিত হবার প্রেক্ষাপটে আবারো ফিলিস্তিনে পুর্নবাসিত হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আবারও সীমা লংঘনের চরমে পৌঁছালো শুধু নয় আল্লাহ প্রিয় নবী ঈসার (আঃ) বিরুদ্ধে চরম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে গর্ব বোধ করল (আজও করে) এবং তাঁর পবিত্র মায়ের চরিত্রে কলংক লেপন করল, তখন আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি নিয়ে রোমক সম্রাট তীতাউস এর বাহিনী ৭০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়বার তাদের উপর আপতিত হলো। তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত করা হলো।

সোলায়মান (আঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তাদের এবাদত খানা ধ্বংস করা হলো এমন কি সোনা পাওয়ার লোভে ইট পাথরগুলো ভেংগে টুকরা টুকরা করা হল। তাদের কিতাবাদি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অংগার করা হলো। প্রথম বার শাস্তি অনেকটা কম হয়েছিল। কেননা তাদেরকে বন্দী করে নিয়ে ব্যাবিলনের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একত্রে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তাদের পণ্ডিতগণ তওরাত যবুর ইত্যাদি কিতাবাদির অনেকাংশ পুনঃসংকলন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কিন্তু ২য় বার শাস্তিতে সে সুযোগ আর থাকলো না। যারা বেঁচে ছিল তাদেরকে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে হয়েছিল। বিভিন্ন দেশে তাদের অবজ্ঞাত, ঘৃণিত ও দাসত্বের জীবনের করুণ অবস্থার কাহিনী ইতিহাসে লিখিত রয়েছে। প্রশ্ন হলো কালের পরিক্রমায় গত ১৯৪৮ সনে এই ইহুদীরা আবারও বর্তমান পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবস্থা থেকে ফিলিস্তিনে ফিরে এসেছে, রাষ্ট্র গঠন করেছে তদুপরী সে ইসরাইল রাষ্ট্র যে কোন ইহুদীর জন্য সেখানে ফিরে আসার দ্বার অবারিত রেখেছে। তাদের এ আপাতঃ প্রতিষ্ঠা কী আল্লাহ নিকট পূর্ব সময়ের মত কৃত তওবা কবুলের ফলোশ্র“তি? তা কিন্তু নয়।

এটি পৃথিবীর ইতিহাস থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন হবার বিদায় ঘণ্টা। কেননা তারা এবরাহীম (আঃ)-এর প্রতিশ্র“তি মত ঈমান ও সদাচারের শর্তে এখানে আসে নি। পৃথিবীর শেষ সময়ের আলামতের এক ক্রীড়নক হিসাবেই মঞ্চে তাদের আবির্ভাব। তাদের জীবনে এবরাহীম (আঃ)-এর প্রভুর কোন স্থান নেই। ঈমান ও সদাচারের কোন বালাই তাদের নেই।

পরিপূর্ণ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থায় সেখানে আজ রাজনৈতিক শিরক কুফর পরিদৃষ্ট। সুদ ঘুষ বেলেল্লাপনা পতিতাবৃত্তি নগ্নতা স্বেচ্ছাচারিতা অশ্লীলতা ইত্যাদি আজকে ইসরাইলের বাস্তবতা। ইহুদী সমাজের মন-মানসিকতা তথা নৈতিকতার বিষয়টি এক কথায় তুলে এনেছেন ২২ বছর বয়সী সংযুক্ত ছবিটির মিস ইসরাইল যিনি করমর্দনরত মিঃ ওবামা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে- ওবামা হলেন ওয়ার্ল্ড ক্লাস হাঙ্ক (বিশ্বমানের যৌন আবেদনময় পুরুষ), এভাবে কিতাবধারীর দাবীদার ইহুদী জাতির রাষ্ট্র ইসরাইলে আজ সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ব্যাপার হচ্ছে ধর্ম বিমুখতার অবস্থা এবং পরিত্যক্ত ধর্মীয় জীবনযাত্রা। জেরুজালেম পোস্ট-এর ১২ সেপ্টেম্বর ২০০০ তারিখের সম্পাদকীয় মন্তব্যটিতে যথার্থ চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে। তা হলো-‘অধিকাংশ ইসরাইলীদের কাছে ইহুদীত্ব এখন অপ্রচলিত, আদিম এবং অপ্রাসংগিক একটা ব্যবস্থা যা কেবল মাত্র ক্ষমতা ও অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রতিযোগীতা করে।

কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা বুদ্ধিবৃত্তিক আধুনিক সমাজের জন্য একটি লজ্জার বিষয়’। তওবা ও ক্ষমার পরিবর্তে এবং ঈমান ও সৎকর্ম (সুরা নূর- ২৪ঃ৫৫) ব্যতিরেকে পবিত্রভূমি জেরুজালেমে প্রত্যাবর্তন মহান আল্লাহ শাস্তির পরিকল্পনায়ই সম্পন্ন হয়েছে। সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন- ‘কিয়ামতের প্রতিশ্র“তি যখন বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সকলকে আমি একত্রে মিশ্র জাতি হিসাবে সমবেত করিব’ (১৭ঃ১০৪)। মিশ্র জাতির বিষয়টি কিছুটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে বিধায় নিুে সামান্য আলোচনা তুলে ধরা হলো। কোরআন কেয়ামত পর্যন্ত মানবাজাতির জন্য চ্যালেঞ্জ-বিস্ময়।

এর ভাব, ভাষা, বিষয়বস্তু ইত্যাদি যে নিখুঁত হবে এটা অতি স্বাভাবিক। কিন্তু এর প্রতিটি শব্দ অক্ষর ব্যবহারেও যে কতটা সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে সে বিষয়ে বিভিন্ন জ্ঞানী বিজ্ঞানীগণ বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীগণ বিস্ময়াভিভূত হয়ে তা তাদের লেখায়- বক্তব্যে উপস্থাপন করে গিয়েছেন। এখানে সে সব প্রসংগে না গিয়ে বনি ইসরাইলীদের সাথে প্রাসংগিক শব্দ “লাফিফা” (১৭ঃ১০৪) নিয়ে আলোচনায় আসা যাক। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব ইমরান নযর হোসাইনের একটি লেখা থেকে ইঙ্গিত পেয়ে বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হয়। একটু খতিয়ে দেখতে গিয়ে লক্ষ করা গেল-বাংলাদেশে প্রাপ্য পবিত্র কোর’আনের অনুবাদ গ্রন্থগুলোর সংশ্লিষ্ট আয়াতাংশের অনুবাদে বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্রে একত্রিত হওয়া ইহুদী জনগোষ্ঠী যে একটি মিশ্র জনগোষ্ঠী সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য নেই।

যেমন বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত ইসলামিক ফাউণ্ডেশনকৃত বাংলা অনুবাদ আল কোর’আনুল করিমে আয়াতাংশ ‘জ্বিনাবেকু লাফিফা’ – এর অনুবাদ করা হয়েছে- তোমাদের সকলকে আমি একত্র করিয়া উপস্থিত করিব। আধুনিক প্রকাশনীকৃত শব্দার্থে আল কুরআনুল মজীদ-এ লেখা হয়েছে-তখন আমরা সকলকে এনে উপস্থিত করব এবং আল- কোর’আন একাডেমী লণ্ডন থেকে প্রকাশিত তাফসীর ফী যিলালীল কোর’আন-এ লিখিত হয়েছে-তখন আমি তোমাদের সবাইকে সংকুচিত করে (আমার সামনে) নিয়ে আসবো ইত্যাদি। বিদেশী ভাষার অনুবাদের ক্ষেত্রে একটি সীমাবদ্ধতা থাকে এটি সর্বজন স্বীকৃত। সে হিসাবে আলোচ্য অনুবাদগুলো মোটামুটি একই ভাব প্রকাশ করেছে বটে। কিন্তু এ যে কোরআন।

এর প্রতিটি অক্ষর যে স্বয়ং আল্লাহর দ্বারা নির্বাচন করা। সাদামাটা অনুবাদ হলে যে স্বয়ং আল্লাহ অভিব্যক্তিটি যথার্থ রূপে বান্দার কাছে ফুটে উঠতে পারছে না। অতএব এতদবিষয়ে কয়েকটি আরবী-বাংলা বা বাংলা-আরবী অভিধানও পরীক্ষা করে দেখতে হলো। কিন্তু অবস্থা তথৈবচ। শেষ পর্যন্ত ইসলামিক ফাউণ্ডেশন প্রকাশিত আরবী-বাংলা অভিধান ২য় খণ্ডে লিখিত শব্দার্থটি অনেকটা যথার্থ বলে প্রতিয়মান হলো।

সুহৃদয় পাঠক নিজেরাও বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। অভিধানে কী লেখা হয়েছে। মূল শব্দ লিফুন অর্থঃ-একত্রিভূত সম্প্রদায়, জমাকৃত বস্তু-যা এদিক ওদিক থেকে সংগ্রহ করা হয় ইত্যাদি। আলোচ্য শব্দটি থেকে আগত অন্য একটি শব্দ লাফিফুন অর্থ:……সংমিশ্রিত গোত্রাবলী, বিভিন্ন প্রকৃতির লোকদের বড় সমাবেশ যাতে ভাল-মন্দ, ভদ্র-অভদ্র, সভ্য-অসভ্য, সৎ-অসৎ, নেককার-পাপী, বাধ্য-অবাধ্য ও দুর্বল-শক্তিমান হরেক রকমের মানুষ বিদ্যমান থাকে ইত্যাদি। কোর’আনে ব্যবহৃত ‘লাফিফান’ শব্দটির অর্থ অনেকটা এরূপ হলেও শব্দ দু‘টিতে বিভিন্নতা/বৈচিত্রতা বুঝানোর জন্য চয়নকৃত শব্দবন্ধ দ্বারা বিভিন্নতার আরো যে সকল ক্ষেত্র রয়েছে তা চিহ্নিত করতে পারে নি।

বৈচিত্রতার আরো অনেক বিষয় রয়ে গিয়েছে। যেমন-চিন্তার চেতনার মন মানসিকতার, দৈহিক গঠন আকার আকৃতি, বর্ণ নৃতাত্ত্বিক ও জেনেটিক বা জিনগত বৈচিত্রতা ইত্যাদি। আজকের ইসরাইলে সমবেত জনতার দিকে দৃষ্টি রেখে অর্থ করা হলে আরো পরিষ্কার হতো নিশ্চয়। যা হউক আয়াতাংশটির যথার্থ অনুবাদ হতে পারে- আমি তোমাদেরকে মিশ্র জাতি গোষ্ঠী হিসাবে একত্রিত করবো (১৭ঃ১০৪)। বৈচিত্রতার ভিন্নতা কাকে বলে তা স্বচক্ষে দেখার কোন বিকল্প না থাকলেও আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সুবিধাদির বলে টিভি, পত্র-পত্রিকায় বর্তমান ইসরাইলে বসবাসরত ইহুদীদের ছবিগুলো আমরা ভালভাবেই দেখতে পাচ্ছি।

পবিত্র কোরআনের ভাষ্য মতে শেষ যুগে পবিত্রভূমিতে অর্থাৎ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের প্রত্যাবর্তন ঘটবে এবং ২০০০ হাজার বছর ধরে বিক্ষিপ্তভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বসবাস করার ফলে ইহুদীদের মাঝে যে ভিন্নমুখীতা ও অসমতা এসে জড়ো হয়েছে তাও প্রদর্শিত হবে। এখান ‘লাফিফ’ শব্দ দ্বারা এমন জনগোষ্ঠীকে বুঝানো হয়েছে যারা সবাই এক রকমের নয়। আজকের ইসলাইলে যে ইহুদী সমাজ রয়েছে এটা তার যথার্থ বর্ণনা। সেটা হচ্ছে ইহুদীদের এক বিচিত্র জনগোষ্ঠী যা আরব ও মোসলেম বিশ্বের বিভিন্ন অংশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত, যারা বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন উপভাষার বিভিন্ন টানে কথা বলে। ভিন্ন ভিন্ন পরিচ্ছদ পরে, নানা ধরনের খাবার খায়, নিজ নিজ পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন সিনাগগে উপাসনা করে।

কিন্তু সবচেয়ে অবাক হবার মত পার্থক্য হচ্ছে বর্ণ ভিত্তিক। আর এখানেই কোরআনিক ভবিষ্যৎবাণীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেছে। আধুনিক ইসরাইলের ইহুদীদের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে নীল চক্ষু ও সোনালী চুল বিশিষ্ট নির্ভেজাল ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী। বর্তমানে বংশানুগতি সম্বন্ধীয় এমন কিছু প্রমাণ বিকশিত হচ্ছে যা প্রতীয়মান করে যে ঐ ইউরোপীয় ইহুদীরা (যাদেরকে বলা হয় আশকেনাযিম ইহুদী-Ashkenayi Jews) পৃথিবী পৃষ্ঠে বসবাসরত অন্য যে কোন জনগোষ্ঠীর চেয়ে জিনগত বৈশিষ্ট্যে সম্পূর্ণ আলাদা। একটা জনগোষ্ঠী যার সবাই এবরাহিম (আঃ)-এর বংশধর যিনি ছিলেন খাঁটি সেমেটিক।

তার বংশধরদের মাঝে যে বর্ণভিত্তিক সুষমতা থাকার কথা তা এখন অবলুপ্ত। সম্মানীত পাঠকগণ সংযুক্ত ছবিটির দিকেই লক্ষ করুন না কেন? গত মার্চ ২০১৩ এর শেষ দশকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিঃ ওবামা ইসরাইল সহ মধ্যপ্রাচ্যে সফর করেন। ছবিতে প্রথম কৃষাঙ্গী ‘মিস ইসরাইল’ ইয়েতিশ আইনো-কে ওবামার সাথে করমর্দনরত দেখা যাচ্ছে। (ছবিটি সাপ্তাহিক ২০০০, মার্চ-২৯, ২০১৩ সংখ্যার সৌজন্যে প্রাপ্ত), ইথিওপিয়ান ইহুদী এই নারী কী সেমেটিক জাতির বৈশিষ্ট ধারণ করে? নীল চক্ষু সোনালী চুল বিশিষ্ট ইউরোপীয় ইহুদীদের ব্যাপারেতো প্রশ্নই আসে না। এই ঘটনাটি যেমন একদিকে আল্লাহর বাণীর যথার্থতা প্রতীয়মাণ করে, তেমনি এ আয়াত ইহুদীদের একটি ভূখণ্ডে একত্রিত হওয়ার বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ঘনীভূত সঙ্কটের একটি আশু পরিণতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে।

মুল লেখা: ঐশী বাণী বাস্তবায়নের ধারা ও পরিণতি ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.