আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মরুজীবন। ১০। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিজ্ঞতা - কাপালিক হতাশ

দ্য কাপালিক ইজ ব্যাক

"একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করছি। এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। আপনি কি সাইন করবেন?" "আপনে অন্যদিকে যান। " মাথার মধ্যে রক্ত উঠে যায়। "একাত্তরে যারা হত্যা করেছে, লুট করেছে, বাড়ী-ঘরে আগুন দিয়েছে, ধর্ষণ করেছে, তাদের বিচার হোক সেটা চান না?" "না চাইনা।

কে করছে? কে সাক্ষী আছে? ৩৭ বছরে বিচার হইলো না, এহন হইবো কিয়ের বিচার? আপনেগো শেখ মজিব সবাইরে ক্ষমা কইরা গেছে না? তাইলে এহন কিয়ের বিচার?" তার সাথের লোকদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনারা সাইন করবেন?" "না। না। না" "আন্তাজি কোন জাগাত সাইন করতাম? আমরা কিছু দেহিও নাই, জানিও না। কোনহান সাইন কইরা বেজালত পড়তাম?" কথা হচ্ছিল কাতারের রাজধানী দোহার ন্যাশনাল এলাকায়। এটি বাঙ্গালীদের মিলনস্থল।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এবং শুক্রবারে এখানে বাঙ্গালীরা জড়ো হয়। প্রায় সবাই শ্রমীক। একটু আগে ফর্ম ডাউনলোড করে ফটোকপি করেছি বিশটি। বাসা কাছেই হওয়ায় ভাবলাম কাজে নেমে পড়া যাক। এটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হলেও প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারনে আজ লোকজন নেই।

১৫/২০ জন চত্বরে ঘোরাফেরা করছে। আমার ধারনা ছিলো এই রকম একটা কাজে যাকে বলব সেই চোখ বন্ধ করে সাইন করে দিবে। হয়ত দু-একটা পাকিস্তানী জারজ সন্তান এর ব্যাতিক্রম হবে। কিন্তু ঘটনা দেখে সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছি। যুদ্ধপরাধী বিষয়টা নিয়েই মানুষ বিভ্রান্তিতে আছে।

এরা ধরেই নিয়েছে আমি আওয়ামীলীগ কর্মী, আর যুদ্ধাপরাধী বলতে আমি পুরো জামাত এবং বিএনপির জোটটাকে বোঝাচ্ছি। বৃথাই এদের বোঝাতে চেষ্টা করি আওয়ামীলীগের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই, এবং যুদ্ধাপরাধী বলতে আমি শুধুমাত্র তাদের কথাই বলছি যারা একাত্তরে খুন-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ-লুটতরাজের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলো, তারা জামাত-বিএনপি-আওয়ামীলীগ যে দলেরই হোক না কেনো। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কিন্তু আশার কথা হলো, এ ব্যাপারে তরুনদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার। তারাই শুধু দেখলাম এককথায় সাইন করে দিল। "কেন করুম না? যারা অপরাধ করছে অবশ্যই তাগো বিচার চাই।

" এবারের জাতীয় নির্বাচনে তরুনদের ভোটই নাকি সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। এ কথার সত্যতাই আজ প্রমান পেলাম। বই-পুস্তকে ইতিহাসের এত বিকৃতির পরও তরুনদের দৃষ্টিভঙ্গি এতটা পরিষ্কার হয় কি করে, ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে। হতাশা ঠেলে মনে আশা জাগে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি তাদের জীবদ্দশায় করা সম্ভব নাও হয়, আর বিশ বছর পরে যখন এই তরুন প্রজন্ম দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে, তখন এদেশের প্রতিটি মানুষের মনে নির্বাচনী জোটের হিসাব-নিকাশকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সমানভাবে যুদ্দাপরাধীদের জন্য থাকবে শুধুই ঘৃণা। তাদের কবরে গিয়ে সবাই থুথু দিয়ে আসবে।

হয়ত সেটাই হবে তাদের সবচেয়ে বড় বিচার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।