আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্কিনীদের কাছে, গাযা-অভিযানের অন্যরকম স্বাদ



গাযায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ব্যাপারে মার্কিন মিডিয়ার প্রচারণা এবং প্রতিবেদনের ধরন থেকে বোঝা যাচ্ছে ইসরায়েল কতোটা শক্তিশালী! স্থল অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার শীর্ষ স্থানীয়পত্রিকা ওয়াশিংটন পোষ্টের একটি প্রচ্ছদ এবং শিরোনামে দেখা গেলো, মার্কিন মিডিয়ার চোখে কিভাবে এই অসম যুদ্ধকে দেখছে মার্কিনীরা! প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের বা'দিকে ৫ সন্তানকে হারিয়ে উন্মাদপ্রায় এক ফিলিস্তিনী মায়ের ছবি, আর ডান দিকে, একই মাপের ছবি, ইসরায়েলী এক মহিলার, যার চোখেমুখে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট হামলায় উদ্বেগের ছায়া! অন্তত: ক্যাপশনে তাই-ই লেখা। কান্নারত ফিলিস্তিনী মা' নিজেও আহত। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত তার চেহারা। অন্যদিকে, ইসরায়েলি মহিলার মুখে ক্ষতর কোনো চিন্হ নেই। তবু সে প্রায় ক্রন্দরতা! প্রতিবেদনটি পড়ার আগে, শুধু এই প্রচ্ছদ ছবি দেখেই প্রশ্ন জাগে, একই ঘটনার উল্টোচিত্রে কি হতো? হামাসের রকেট হামলায় ৫ সন্তান হারানো ইসরায়েলি মা আর ইসরায়েলের হামলার আশংকায় উদ্বেগরত ফিলিস্তিনী মায়ের বেলাতেও কি প্রথম পাতায়, প্রচ্ছদে একসাথে, একই মাপে এ দুটি ছবি ঠাই পেতো? ৩০ ডিসেম্বর এই ছবি ছাপিয়ে যখন ওয়াশিংটন পোষ্টের রিপোর্টখানা বেরিয়েছে, ততক্ষণে ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশ।

ইসরাইলি পক্ষে মত্র ৪! যদি উল্টোটা হতো, ইসরাইলি পক্ষে সাড়ে তিনশো মারা যেতো, ওয়াশিংটন পোষ্ট এটাকে কিভাবে চিত্রায়িত করতো? অবাক হওয়ার কোনো ব্যাপার অবশ্য নেই। কারন যুক্তরাষ্ট্রের তাবৎ নামজাদা মিডিয়ার মতোই, ইসরাইলের বিপক্ষে কাভারেজ দেয়ার মতো সাহস ওয়াশিংটন পোষ্টেরও হয়নি। তাই, ন্যাক্কারজনক ভাবে এক অসম লড়াইয়ের তথ্য জানাতে গিয়ে আশ্চর্য বিশ্লেষনের আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদের। উদাহরনস্বরূপ বলা যায়, ওই প্রতিবেদনে, ইসরাইল মিলিটারী এবং এবং বেসামরিক জণগনের উল্লেখ করা হয়েছে অন্তত: ৯বার, একবারও একজন ফিলিস্তিনীর নাম উল্লেখ করার আগে! অথচ, এমন প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সাড়ে তিনশো ফিলিস্তিনীর নিহত হবার খবরটি আগে আশার কথা এথিক্যালিও বটে। প্রথম ৭টি প্যারাগ্রাফ জুরে শুধুই ইসরাইলি সামরিক কৌশলের ফিরিস্তি, তারা কিভাবে, কি উদ্দেশ্যে এই মহান আগ্রাসন চালাচ্ছে, এইসব! ৯ নম্বর প্যারায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, হামাসের বর্বর রকেট হামলার ব্যাপারে সাধারন নিরীহ, ইসরাইলীদের উদ্বেগের কথা, সীমান্ত এলাকায় যারা আতংকে দিন কাটাচ্ছেন্আশ্রয়কেন্দ্রে।

অথচ, ২৩ নম্বর প্যারাগ্রাফের আগে, নিরাপদ আশ্রয়টুকুও জুটেনি, এমন ফিলিস্তিনীদের কোনো কথাই নেই! প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটির এই তাক লাগানো চমকের পর, কিছুটা ব্যালান্স করতে, ৫ সন্তান হারানো ফিলিস্তিনী মা'কে নিয়ে ছোট কলামে একটি আর্টিকেল অবশ্য ছাপিয়েছেন তারা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইসরায়েলের সাড়ে তিনশো মানুষ মারা গেলেও কি এই ভূমিকা নিতেন তারা? এই ট্রিটমেন্ট দিতো মার্কিন মিডিয়া?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.