নামঃ জ্বীন কফিল জন্মঃ খৃস্টপুর্ব ২০১২ স্থায়ী ঠিকানাঃ ব্যাবিলন বর্তমান ঠিকানাঃ সামহোয়ারইনব্লগ অভিজ্ঞতাঃ বাদশাহ সোলায়মান (আঃ) এর রাজমিস্ত্রি।
কাউন্টার টেররিজমের তত্ববিদদের সংজ্ঞায় নাফিসের মত সন্দেহভাজন কে বলা হয় "লোন উলফ" বা নিঃসঙ্গ নেকড়ে। যারা প্রায় একাই চেস্টা করে মার্কিনী স্বার্থে কোন ধরনের ধংসাত্বক হামলা পরিচালনার।
হ্যাঁ কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস গত কয়েক ঘন্টায় বাংলা ভার্চ্যুয়াল জগতে সর্বাধিক উচ্চারিত নাম। একজন "লোন উলফ"।
২১ বছরের এক শিক্ষিত তরুনের নাম। যে নাম সম্ভবত আজকের ও আগামী কয়েক দিনের ফেসবুক, ব্লগ আর সন্ধ্যায় বাঙ্গালীর চায়ের আড্ডায় মুখরিত হবে আলোচিত হবে সমালোচিত হবে। কেউ বলবে ছেলেটা ষড়যন্ত্রর শিকার ইসলাম বিদ্বেষী মার্কিনীদের পরিকল্পিত টোপের ধরা পড়া এক বোকা তরুন। কেউ বলবে এই ছেলে হিংস্র জঙ্গী, উচিত শাস্তি পেয়েছে তার মনের গোপন অভিলাষের জন্য। তার ফাঁসি হওয়াই উচিত।
নানান বিচার বিশ্লেষন তর্ক বিতর্ক রাজনৈতিক যোগ বিয়োগ আর বিস্তর পরিমান ব্লগীয় স্পেস ভক্ষনের পর হয়তো সেই আলোচনা থামবে পরবর্তি আর একজন নাফিসের একই পরিনতি দেখার অপেক্ষায়।
কিন্তু ক্যানো নাফিসের মত ছেলেরা এই পথে যাবে ? বাঙ্গালী তরুনের ২১ বছর সময়তো রঙ্গীন স্বপ্ন দেখার সময়, বাতাসে ডানা মেলার সময়,নীল শাড়ি পড়া প্রেমিকার মুগ্ধ চোখে চোখ রেখে জীবনের স্পৃহায় গা ভাসানোর সময়। ক্রিকেটের ময়দানে সাকিবের চার ছক্কার মারে উল্লাসের চিৎকারে গ্যালারী কাঁপানোর সময়। নিজের দেশকে, মানুষকে ভালোবাসার সময়। অধিকার আদায়ে মিছিলে যাবার সময়।
যার একাডেমিক ক্যারিয়ার গ্রাফে আইডিয়াল স্কুল,ঢাকা কলেজ, নর্থ সাউথ এর মত আধুনিক আর নামি শিক্ষা প্রতিস্টান তার এই পরিনতি ক্যানো?। কোন প্রত্যন্ত মাদ্রাসায় কঠোর অনুশাষনের মাঝে কট্টর ধর্মীয় মতবাদতো সে শিখে নি। কোন পাহাড়ী জঙ্গী ক্যাম্পের ট্রেনিং আর অনিশ্চিত দুর্দশার জীবনের মধ্যে দিয়েও তাকে আসতে হয়নি। তবুও সে ক্যানো এমন একটা কান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করতে গেলো। কিসের আকাঙ্ক্ষায়? কি অর্জনের প্রত্যাশায় ?
একি শুধুই তারুন্যের হিরোইজম, বিখ্যাত হওয়ার বাসনা অথবা মগজ ধোলাই হওয়া কোন বোকা তরুনের জিহাদী অনুপ্রেরনার ফসল? সাম্রাজ্যবাদের নোংরা ট্রাপ? নাকি এর বাইরেও আরো কোন সত্য আছে, কথিত পবিত্রতা লঙ্ঘনের ভয়ে যার মুখামুখি হতে আমরা ভীত।
তার বাবা মা আর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মনের অবস্থা কেউ কি একবার ভাববে? ছোট থেকে তিল তিল করে বড় করে তোলা সন্তানের জীবনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের খবরে এই মুহুর্তে কিরকম মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ঐ মধ্যবিত্ত পরিবারটি? হ্যাঁ সেটা সহজেই অনুমেয়। দেশ থেকে সুদুর মার্কিন মুল্লুকে একাকি কোন নির্জন সলিটারি কনফাইমেন্টে বন্দী এই ছোট ছেলেটিকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিমান রাস্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রের। হয়তো প্রবল প্রতাপশালী কোন দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার দুদে কর্মকর্তাদের কঠোর জেরার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশে নরম মাটিতে মাছে ভাতে বেড়ে উঠা সদ্য কৈশোর পেরুনো এই ২১ বছর বয়সি তরুনের।
কারা কোন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুনদের আত্মবিনাশী ,রাস্ট্রবিনাশী জীবনবোধ বিহীন এই ধর্মীয় উগ্রপন্থার দিকে টানছে? সদ্য তরুন আবেগী এই সব যুবকের মনের মধ্যে ঘৃনার সৃস্টি করছে?নিজেকে খুনে বোমাবাজে পরিনত করার অনুপ্রেরনা যোগাচ্ছে? ধীরে অথচ পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ের পড়াশোনারত শিক্ষিত মেধাবী তরুন তরুনীদের মগজ মননে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে ধর্মীয় খিলাফত কায়েমের নামে হাজার বছর বয়সী উৎভট এক সিন্দাবাদের বুড়োর ভুতকে।
তার গায়েতো মাদ্রাসা শিক্ষার বহুল চর্চিত দুর্নাম নেই, অথচ উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী একজন তরুন যদি এ পথে হাঁটে তবে নিশ্চিত ভাবেই বুঝতে হবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের গলদ আছে।
সমাজে ভয়াবহ কোন ব্যাধি বাসা বাঁধছে সংগোপনে। সঠিক দিক নির্দেশনা আর আদর্শ হীনতায় ডুবছে ভবিষ্যত প্রজন্ম।
জানি বাংলাদেশ রাস্ট্র ভুল পথে চলা হতভাগ্য এই কথিত "নিঃসঙ্গ নেকড়ে"র ব্যাপারে নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্ন চিত্তে নিজের হাত ঝেড়ে ফেলবে । তার পক্ষ হয়ে রাস্ট্রের আইনি লড়াইতো সুদুর পরাহত। বাংলাদেশ স্মার্টনেস শিখে গেছে সে কবেই।
বাংলাদেশ রাস্ট্রের কাছে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ,দায়িত্ববোধ আশা করা কুঁজোর চিৎ হয়ে শোয়ার মতই অসম্ভব কিছু। ছেলেটির হয়তো ঠাঁই হবে গুয়ান্তানামো নামের একবিংশ শতাব্দীর বন্দী শিবিরে। কিন্তু তার ও তার পরিবারে এই পরিনতির জন্য আজকে যারা অনেকাংশেই দায়ি তাদের কে আইডেন্টিফাই করবে? রাস্ট্র ,জনগন, নাকি ঈশ্বর সয়ং?
মার্কিনিরা তাকে ট্রাপে ফেলে এই কাজের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বললে শুধুই মুদ্রার এক পিঠ দেখা হবে। বিশ্বব্যাপি নিরীহ তরুনদের সন্দ্বিঘ্ন বোমাবাজ বানাতে যারা ইউ টিউবে ফেসবুকে জিহাদী ক্লিপ ছড়ায়, ফ্যান পেজ চালায়, মসজিদে মহফিলে, ওয়াজে নসিহতে নিরীহ মানুষ হত্যার অনুপ্রেরনা দেয়, ধর্মের নামে জায়েজ করে পাশাবিক হিংস্রতার,তারা কবে ধরা পড়বে মনুষত্ব্যের এফবিআইয়ের হাতে? তাদের বিচার কবে হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।